মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করুন কার্যকরী ডায়েটের সাহায্যে!

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করুন কার্যকরী ডায়েটের সাহায্যে!

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খাবার

দিন দিন মনে হচ্ছে সব ভুলে যাচ্ছি।  আগে এতো ভুল হতো না সব কাজে।এই অভিযোগ কম বেশি আমাদের সবার। ডায়েট বললেই আমাদের শুধু মনে আসে ওজন বাড়ানো বা কমানোর ডায়েট। এটা একটি ভুল কথা। অসুখ যেমন আলাদা হয় তেমনি এর পথ্যও আলাদা হয়। আজকে আমরা আপনাদের জানাবো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার ডায়েট সম্পর্কে।   

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী ডায়েট

মাইন্ড (MIND) ডায়েট

এই ডায়েট বিশেষভাবে বয়সজনিত কারণে মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং ডিমেনশিয়া (Dementia)এর প্রতিরোধে কাজ করে। এটি মেডিটেরিয়ান  ড্যাশ ডায়েটের মিলিত রূপ “MIND” এর পূর্ণরূপ হলো Mediterranean-DASH for Neurodegenerative Delay বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এটি রক্তচাপ কমায় ও ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।      

মেডিটেরিয়ান (Mediterranean) ডায়েট কী

৬০ এর দশকে ইতালি গ্রীসের মানুষ যে ধরনের খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত ছিল তার উপর ভিত্তি করেই মেডিটেরিয়ান ডায়েটের সূচনা। এই ডায়েটের মূল বিষয়গুলো হলোঃ 

  • শাকসবজিফলমূল, হার্ব, বাদাম, শস্য বিচি জাতীয় খাবার খেতে হবে। 
  • মাছ, সামুদ্রিক মাছ অলিভ য়েল খাবারে অবশ্যই উপস্থিত থাকবে।   
  • মুরগির মাংস, ডিম, পনির, টকদই পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকতে হবে। 
  • রেড মিট যেমন গরু খাসির মাংস পরিহার করা। 
  • প্রক্রিয়াজাত মাংস, রিফাইন্ড চালচিনি বা ময়দা, মিস্টি পানীয় এবং অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার বাদ দিতে হবে।

ড্যাশ (DASH) ডায়েট কী?

    

ড্যাশ ডায়েটের পুরো নাম ডায়েটারি অ্যাপ্রোচেস টু স্টপ হাইপারটেনশন (Dietary Approaches to Stop Hypertension) গবেষণায় দেখা গেছেযেসব মানুষ সবজি পাতা জাতীয় খাবারের উপর বেশি নির্ভরশীল তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা কম। ড্যাশ ডায়েট যে শুধু সুস্থ মানুষেরই উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা কমায় তা না, এটি উচ্চ রক্তচাপ রোগীরও রক্তচাপ কমায়। 

  •  উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা কমানো বা প্রতিরোধ করা
  •  হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো

এছাড়াও এটি আরও বিভিন্নভাবে আমাদের সাহায্য করে থাকে। যেমন-

  • ওজন কমাতে সাহায্য করে
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
  • কিছু পরীক্ষা থেকে পাওয়া যায় যে, এটি মেটাবলিক সিন্ড্রোম (Metabolic Syndrome) এর সম্ভাবনা প্রায় ৮১% পর্যন্ত কমায়

এই ডায়েটের মূল বিষয়গুলো হলো

  • শাক সবজি ফল পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া
  • শস্য জাতীয় কার্বোহাইড্রেট নিয়মিত গ্রহণ করা
  • চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস, মাছ গ্রহণ করা
  • এক চা চামচ (২৩০০ মিগ্রা) এর চেয়ে বেশি লবণ গ্রহণ না করা

MIND ডায়েটের খুঁটিনাটি

নিচের বেশ কয়েকটি খাবার মাইন্ড ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নিয়মিত এগুলো খাদ্য তালিকায় থাকা মানে শুধু যে আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তা নয়, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্যও এগুলো উপকারী। 

চলুন এক নজরে দেখে নেই সেই খাবারগুলো 

১. সবুজ শাকসবজি

পাতা জাতীয় সবজি শরীরের জন্য আগাগোড়াই খুব উপকারী। কচু শাকপালং শাক, লেটুস এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সপ্তাহে বার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় থাকা মানে একই সাথে যেমন আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকে আপনি দূরে থাকবেন, তেমনি ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা থেকে মিলতে পারে মুক্তি। 


অন্যান্য সবজি

উপরের সবজিগুলো বাদে মৌসুমি নানা ধরনের সবজি আপনার খাবারের প্লেটে নিয়মিত রাখার চেষ্টা করুন। তেল মশলা কম দিয়ে রান্না করা এসব সবজি কম ক্যালরির হয়ে থাকে, যা আপনার ইন্টারনাল সিস্টেমকে ভালো রাখবে।

৩. বেরি 

বেরি সপ্তাহে অন্তত  বার খাওয়া উচিত। স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি খাওয়ার অভ্যাস রাখতে হবে।

. বাদাম

যদিও ঠিক কোন ধরনের বাদাম এই ক্ষেত্রে উপযোগী তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া না গেলেও এই খাবারটি পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। 

. অলিভ অয়েল 

রান্নায় অলিভ অয়ে ব্যবহার উচিত সবারই। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি এটি শরীরের ওজনও সহজে বাড়তে দেয় না। 

৬. ডাল বিচি জাতীয় খাবার

চেষ্টা করুন সপ্তাহে অন্তত চার বার বিচি জাতীয় সবজি যেমন এই খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকায় রাখার। কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচিসহ সব রকমের বিচি। সয়াবিন ও মসুর ডালও এর মধ্যে আছে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এই খাবারগুলো খুবই প্রয়োজনীয়।

৭. মাছ

প্রাণিজ প্রোটিনের এই উৎসটি শিশুদের শরীরের বৃদ্ধির জন্য যেমন সহায়ক বড়দের জন্যও কম উপকারী নয়। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ যেমনঃ স্যামন, টুনা, রূপচাঁদা ইত্যাদি। এই মাছগুলো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

. মাংস

এর মধ্যে আছে চিকেন টার্কি সপ্তাহে বার আপনি অনায়াসে খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন ফ্রাইড চিকেন বা অতিরিক্ত তেল মশলা দিয়ে রান্না করা মাংস এর অন্তর্ভুক্ত নয়।  

আপনি যদি উল্লেখিত সার্ভিং অর্থাৎ যতবার খাবারগুলো খান ততবার খাবার না খান বা খেতে পারেন তাও এই খাবারগুলো খাওয়া ছেড়ে দেবেন না হঠাৎ করেই। কারণ পরিমিতভাবে মাইন্ড ডায়েট মেইনটেইন করলেও আপনার আলঝেইমার রোগ (Alzheimer’s Disease) হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়। এটা কারোর মুখের কথা নয়, গবেষণাপ্রাপ্ত ফলাফলের তথ্য।    

কোন খাবারগুলো বাদ দিবেন?

১. মাখন ও মার্জারিন

এগুলো যতোটা পারেন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

২. পনির

মাইন্ড ডায়েট সপ্তাহে একবারেরও কম পনির খাওয়ার পরামর্শ দেয়।

৩. লাল মাংস

খাসি, গরু সহ যে কোন ধরনের রেড মিট পরিহার করার চেষ্টা করুন।      

সর্বোপরি, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে আপনার খাবারে সম্পৃক্ত ফ্যাট কম রাখার পরামর্শ দেয়। তাহলে আজ ব্রেইন ফুড সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হলো, তাই না? আশা করছি, ফিচারটি হেল্পফুল ছিলো। ভালো থাকবেন।

 

ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক

 

30 I like it
2 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort