মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কোন খাবারগুলো খাবেন?

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কোন খাবারগুলো খাবেন?

1 (6)

সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত মস্তিষ্কের উপর দিয়েও বেশ ধকল যায়। ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া, বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করা, অফিস বা বাসায় সব সময় কাজ করতে থাকা- সব মিলিয়ে মস্তিষ্কেরও সচল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু নানা কাজের ব্যস্ততায় মাঝে মাঝে মস্তিষ্ক ঠিকঠাক কাজ করে না। যার কারণে কাজের ক্ষেত্রে প্রায়ই ভুল হয়ে যায়। এমন হলে মাঝে মাঝেই বেশ বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়। সত্যি বলতে স্মরণশক্তি কমে যাওয়া নিয়ে আমরা অনেকেই বেশ বিপাকে পড়ে যাই। এই সমস্যার সমাধান যেমন একদিনে সম্ভব নয়, তেমনই একবারে অসম্ভবও নয়। এজন্য আপনাকে একটি হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করতে হবে এবং খেতে হবে কিছু ব্রেইন ফুড। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য উপকারী কিছু খাবার সম্পর্কে জানাবো আজকের আর্টিকেলে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য খাবার 

গ্রিন টি

স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে গ্রিন টি বেশ পরিচিত। স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি এই চা যে মস্তিষ্ক সচল রাখতে সাহায্য করে এটা আমরা অনেকেই জানি না। গ্রিন টি’র ক্যাফেইন মস্তিষ্ককে সচল রাখার জন্য দারুণ কার্যকরী। ক্যাফেইন আমাদের ব্রেইনের অ্যাডিনোসিন নিঃসরণ কমিয়ে ঘুম ঘুম ভাব দূরে রাখে, একইসাথে শরীরকেও সতেজ করে তোলে। আলঝেইমার কিংবা পারকিনসন ডিজিজ ঠেকাতেও এই ক্যাফেইন বেশ ভালো কাজ করে। গ্রিন টি তে আরও আছে এল-থায়ানিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, যা মস্তিষ্কে উদ্বেগের মাত্রা কমিয়ে দেয়। কফির তুলনায় এই চায়ে ক্যাফেইনের পরিমাণ কম থাকে। তাই একে মস্তিষ্কের জন্য বেশি উপকারী মানা হয়।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে গ্রিন টি

আঙুর ও জাম

এই দুটো ফলকে ব্রেইন ফুড কেন বলা হয়, জানেন? কারণ এগুলোতে আছে পলিফেনল। আমাদের দেহে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এই পলিফেনল। সেই সাথে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। আঙুর ও জাম দুটো ফলই পলিফেনল সমৃদ্ধ হওয়ায় মস্তিষ্ক সচল রাখতেও এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ডার্ক চকলেট

চকলেট খেতে ভালোবাসেন? তাহলে আপনাকে একটা সুখবর দেই! এখন চকলেট খেয়েও আপনি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারবেন! তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, সেটি ডার্ক চকলেট হতে হবে। কারণ এ ধরনের চকলেটে প্রায় ৭০ শতাংশ কোকো থাকে। এই কোকোতে আছে ফ্ল্যাভানল নামক একটি উপাদান। এটি মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়। যার কারণে মস্তিষ্ক সচল থাকে। এছাড়া ডার্ক চকলেট সেরাটোনিন ও ডোপামিন হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে। এই হরমোনগুলো এনার্জি বাড়ায়, মেজাজ ফুরফুরে রাখে। তবে বেশি পরিমাণে নয়, স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য দিনে ৩০-৬০ গ্রাম চকলেটই যথেষ্ট।

আখরোট

আখরোটে আছে ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপাদানগুলোর উপস্থিতির কারণে একে ব্রেইন ফুড বলা হয়। কারণ এই বাদামটি আপনার মেমোরি সেল নষ্ট হওয়ার মাত্রাকে হ্রাস করে। একইসাথে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এটি বেশ ভালো কাজ করে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে আখরোট

কফি

আপনি কি কফি লাভার? দিনে অন্তত ৩/৪ কাপ কফি আপনাকে পান করতেই হয়? তাহলে আমার পরামর্শ হচ্ছে, এই ভালোবাসার পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনুন। কারণ অতিরিক্ত কফি পান শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে আমি কিন্তু একবারে বন্ধ করতে বলছি না! কারণ হচ্ছে, এই কফিতে থাকা ক্যাফেইন আপনার মস্তিষ্কের জন্য বেশ কিছু উপকার করবে। যেমন- পারকিনসন ডিজিজ আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ অকেজো করে ফেলে। ফলে শরীর ক্রমেই দুর্বল হতে থাকে। এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ দূর করতে সাহায্য করে ক্যাফেইন। মস্তিষ্কের আরও একটি রোগ হচ্ছে আলঝেইমার। এ রোগে মানুষের স্মৃতি কমে যেতে থাকে। এমনকি চিন্তাভাবনা ও আচরণেও আসে বদল। কফিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এই সমস্যা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। অনেকের কফি পানে রাতে ঘুমে সমস্যা হয়। তাই সন্ধ্যার পর কফি পান না করাই ভালো।

ডিম

শরীর ভালো রাখার জন্য ডিমের উপকারের কথা তো আমরা কমবেশি সবাই জানি। মস্তিষ্ক সচল রাখার জন্য ব্রেইন ফুড বলা হয় এই ডিমকেও। এতে কোলিন নামে একটি উপাদান আছে যা নিউরোনের ট্রান্সমিশনের জন্য জরুরি। এই উপাদানটি মস্তিষ্কের কার্যকক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং মনোযোগ ধরে রাখতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

হলুদ

কি, অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন তরকারিতে ব্যবহার করা হলুদ কীভাবে মস্তিষ্ককে ভালো রাখবে? হলুদে আছে অ্যারোমেটিক টারমেরোন। মস্তিষ্কের নিজেই নিজের ক্ষত সারিয়ে তোলার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এই উপাদানটি। তাই নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে উপকার মিলবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে হলুদ গুঁড়ো দুধের সাথে মিলিয়েও খেতে পারেন।

কাঁচা হলুদ

সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল

আমাদের মস্তিষ্কে ৬০ শতাংশ ফ্যাট রয়েছে। তাই মস্তিষ্ক সচল রাখার জন্য এমন খাবার খেতে হবে যেগুলোতে ফ্যাট রয়েছে। সামুদ্রিক মাছ এক্ষেত্রে খুব ভালো একটি অপশন হতে পারে। মাছের তেল ব্রেইনের সেল গঠন করতে সাহায্য করে। এছাড়া মাছের তেলে ওমেগা-থ্রি পাওয়া যায়, যা মস্তিষ্কের জন্য বেশ উপকারী।

এই তো জানিয়ে দিলাম, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য কয়েকটি সুপার ফুড সম্পর্কে। যদি আমার মতো আপনিও হুটহাট ভুলে যাওয়া রোগে ভুগে থাকেন, তাহলে হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইনের সাথে সাথে এই খাবারগুলোও প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করে ফেলুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 

ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক

6 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort