জাপানি একটি প্রবাদ আছে- “বাঁশের নল দিয়ে পুরো আকাশ দেখা যায় না।“ সত্যিই তো তাই। প্রাণ ভরে পুরো আকাশ দেখেতে হলে আপনাকে ঘরের বাহিরে দু’পা বাড়াতেই হবে। আপনার একঘেয়ে ব্যস্ত জীবনে একটি ছোট্ট ভ্রমণও এনে দিতে পারে কর্ম উদ্দীপনা। ছুটির দিনে তবে কোথাও একটু বেড়িয়েই আসুন না! ঢাকা শহরের ঠাস বুনোট থেকে নিয়মিত জীবনের খানিকটা সময় যাক না চুরি! অল্প সময়ের জন্য কোথায় যেতে পারেন তাই ভাবছেন বুঝি? একদিনে সময় করে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার কাছেই টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া জমিদার বাড়ি থেকে। পরিবার নিয়ে ছিমছাম সময় কাটাতে জায়গাটি মন্দ নয়। ঢাকার অদূরেই টাঙ্গাইল জেলাটি অবস্থিত। উল্লেখ্য যে এটি ঢাকা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় জেলা। চলুন তাহলে আজ আপনাদের জানাই আমার গ্রামের করটিয়া জমিদার বাড়ি নিয়ে!
করটিয়া জমিদার বাড়ি নিয়ে যত কথা
করটিয়া জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেন?
সড়কপথে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। টঙ্গী থেকে টাঙ্গাইল যেতে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। বাসে করেই ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে চলে যেতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে টাঙ্গাইল বাস টার্মিনাল অর্থাৎ মহাখালী বাস টার্মিনালে যেতে হবে। সেখানে টাঙ্গাইল যাত্রা করার উদ্দেশ্যে পেয়ে যাবেন নিরালা, ঝটিকা, ধলেশ্বরী, বিনিময় ইত্যাদি বাস। এই বাসগুলো নিয়মিত টাঙ্গাইলে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া হবে প্রায় ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা মাত্র। বাস থেকে নামতে হবে করটিয়া বাইপাসের কাছে। সেখান থেকে রিক্সায় করেই আপনি পৌছে যেতে পারবেন। রিক্সা ভাড়া নিবে প্রায় ৩০ টাকা। এছাড়া ট্রেনে করেও টাঙ্গাইলে যেতে পারেন। উত্তরবঙ্গের যে সকল ট্রেন টাঙ্গাইল হয়ে যায়, সেগুলোর খোঁজ নিতে পারেন। ট্রেন যখন টাঙ্গাইল স্টেশনে থামবে তখন নেমে যেতে পারবেন।
কী দেখতে পাবেন করটিয়া জমিদার বাড়ি?
করটিয়া জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। শহর থাকে দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। জমিদার বাড়িটি পুটিয়া নদীর তীরে অবস্থিত। জমিদার বাড়িটি ১০০০ মিটার × ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। প্রথমেই করটিয়া জমিদার বাড়ির বাহিরে অবস্থিত সুন্দর একটি মসজিদ দেখতে পাবেন। এটি জমিদার বাড়ির মসজিদ হলেও সর্ব সাধারণের জন্যেই উন্মুক্ত। আর জমিদার বাড়িটি চারদিক প্রাচীর ঘেরা। প্রাচীরের ভেতরে রয়েছে লোহার ঘর, রোকেয়া মহল যা আগে জমিদার বাড়ির অন্দর মহল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে বর্তমানে এখানে একটি স্কুলের কার্যক্রম চলে। আরও রয়েছে রাণীর পুকুর ঘাট, ছোট তরফ দাউদ মহল ও মোগল স্থাপত্যে নির্মিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ।
করটিয়া জমিদার বাড়ির মসজিদে মোট আটটি গম্বুজ ও ১৫ ফুট উঁচু একটি সুন্দর মিনার রয়েছে। আর চারপাশের সবুজ শ্যামল প্রকৃতি আপনার মনে এনে দিবে অনাবিল প্রশান্তি। চারপাশ ঘুরে দেখতে দেখতে নরম ঘাসের বুকে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলে পাবেন দূষণমুক্ত বিশুদ্ধ ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়া। এভাবেই পরিবার ও বন্ধুদের সাথে হাসি খেলায় মেতে উঠে কখন যে সময় গড়িয়ে যাবে তা টেরই পাবেন না।
কোথায় খাবেন?
টাঙ্গাইলে খাওয়ার জন্য অনেক হোঠেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। শহরের মোড়েই অবস্থিত নিরালা হোটেলটি বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। আর নিরালার কাছাকাছি দূরত্বে পাবেন আরও কিছু খাবার হোটেল। আর হ্যাঁ, টাঙ্গাইল গেলে এর বিখ্যাত পোড়াবাড়ির চমচম খেতে একটুও যেন ভুল না হয়। এমন মন ভোলানো মিষ্টি স্বাদ আর কোথাও পাবেন না।
থাকার ব্যবস্থা
টাঙ্গাইলে রাত্রিযাপন করতে চাইলে আগে থেকে পল্লী বিদ্যুৎ ও এলজিইডির সরকারি রেস্ট হাউজে খোঁজ নিয়ে রাখতে পারেন। সেখানে তাহলে যোগাযোগ করে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। তাছাড়া আরও কিছু ভালো হোটেল রয়েছে তার মধ্যে সুগন্ধা হোটেল, ভাই ভাই হোটেল, নিরালা হোটেল, ইসলামিয়া গেস্ট হাউজ, শালবন রেসিডেনশিয়াল হোটেল ইত্যাদি ভালো মানের। আর কম খরচে থাকতে চাইলে করটিয়া বাজারে কিছু হোটেল রয়েছে সেখানেও থাকতে পারেন। আর রিসোর্টে থাকতে চাইলে যমুনা রিসোর্ট ও এলেঙ্গা রিসোর্টে থাকতে পারেন।
করটিয়া জমিদার বাড়ি পরিদর্শনে কিছু পরামর্শ
বর্তমানে করটিয়া জমিদার বাড়ির প্রধান ফটক তালা বন্ধই থাকে। বর্তমানে যখন তখন যে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয় না। তবে আপনি যদি আগে থেকেই এই দর্শণীয় স্থানটি পরিদর্শনের অনুমতি নিশ্চিত করতে পারেন, তবে আপনার ভ্রমণ স্বার্থক হবে। নয়তো, আশায় মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবেন না। তবে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গিয়েছে যে, বৈশাখ মাসের ১ ও ১২ তারিখ সহ দুই ইদের দিন জমিদার বাড়িটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শণীয় স্থান
করটিয়া জমিদার বাড়ির কাছে অন্যান্য স্থানসমূহ দেখতে চাইলে, যেতে পারেন ঐতিহ্যবাহী আতিয়া মসজিদ, দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি, মাওলানা ভাসানীর সমাধি ও জাদুঘর, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আর করটিয়া সাদাত কলেজ।
সবশেষে মনে করিয়ে দেই কিছু ভ্রমণ টিপস। যখন কোথাও বেড়াতে যাবেন, অবশ্যই সেখানকার পরিবেশ সুন্দর ও পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করবেন। অর্থাৎ কোনো খাবার যেমন- চিপস, বিস্কুট, বাদাম ইত্যাদির প্যাকেট যেখানে সেখানে ফেলবেন না। পানির বোতল শেষ হয়ে গেলেই তা যেখানে ইচ্ছা সেখানে ফেলবেন না। মনে রাখবেন, পরিবেশ সুন্দর থাকলেই আমরা পাবো সুন্দর পৃথিবী আর আমাদের ভ্রমণও হবে আনন্দের।
ছবি- সংগৃহীত: ট্রিপ অ্যাডভাইজর.কম; অফ রোড বাংলাদেশ.কম; সাজগোজ