সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব | ১০টি উপায় গড়ে তুলুন সন্তানের সাথে সুন্দর একটি সম্পর্ক

সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব | ১০টি উপায় জানা আছে কি?

সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব করতে সন্তানকে জড়িয়ে ধরেছেন একজন মা

একটি সন্তান জন্মের সাথে সাথে জন্ম হয় বাবা-মায়ের। জন্মের পর থেকে পাঁচ-ছয় বছর পর্যন্ত আপনার শিশুকে যা শেখাবেন কিংবা যা শিখবে সেটাই আপনার শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠন করে। বাচ্চাকে শেখানোর জন্য আপনাকে গড়ে তুলতে হবে আপনার সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব। সন্তানের সাথে ভালো বন্ধুত্ব করার কিছু কার্যকরী পদ্ধতি নিয়ে আজকে আমরা কথা বলবো। চলুন জেনে নেই পদ্ধতিগুলো, যার সাহায্যে আপনি গড়ে তুলতে পারেন আপনার সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব।

সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব গড়ার পদ্ধতি

১. খাবারে আনুন আকর্ষণীয়তা

একদম শৈশব থেকেই যেসব সমস্যা শুরু হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাচ্চারা খেতে চায় না। তাই বাচ্চাকে তার মতো খেতে দিন। খাবার টেবিলে বসে খাওয়ান। সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব করার প্রধান ধাপই হচ্ছে খাওয়ার টেবিল। বাড়ি ঘুরে কিংবা টিভি দেখিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করবেন না। ক্ষিদে লাগতে দিন। প্রয়োজনে দিনের এক বেলার খাবার বাদ দিন, ক্ষিদে পেলে এমনি খাবে। বাড়ির তৈরি নানা রকম সুস্বাদু খাবার দিন, উপস্থাপন করুন ভিন্নভাবে, আনুন আকর্ষণীয়তা। তবে এক খাবার প্রতিদিন দিবেন না। নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। চিপসের মতো স্ন্যাক্স, ভাজা-পোড়া টাইপ খাবার যত কম খাওয়াবেন তত ভাল। বেশি বেশি করে সবুজ শাক-সবজি খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।

২. মতামতকে গুরুত্ব দিন

২ থেকে ৫ বছর বয়সের বাচ্চাদের নিয়ে আরো একটি গুরুতর সমস্যা হলো বাচ্চা কথা শোনে না। তাই বাচ্চাকে পরিণত মানুষ হিসেবে দেখুন। বাচ্চাদের মতামতকে গুরুত্ব দিন। ‘ও তো বাচ্চা, কিছু বোঝে না/ও কি বুঝবে?’ এ ধরনের মন্তব্য ওদের সামনে করবেন না। আপনার সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন।

৩. আচরণ ঠিক রাখুন

নিজেদের আচরণ ঠিক রাখুন। কারণ এই বয়স থেকেই বাচ্চারা অনুকরণ করতে শেখে। বাচ্চাদের সমস্যার কথা মন দিয়ে শুনুন। তুচ্ছ মনে হলেও শুনুন। কারণ সেখানেই লুকিয়ে থাকে বড় বড় সমস্যার বীজ।

সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করতে সন্তানকে আদর করছে একজন

৪. অতিরিক্ত শাসন করবেন না 

অতিরিক্ত শাসন থেকে কখনও যেন সন্তান কষ্ট না পায় অর্থাৎ যাতে হতাশাগ্রস্থ না হয় খেয়াল রাখুন। অন্যের সামনে বকাবকি করবেন না। অফিস বা ব্যবসার টেনশন বাড়িতে আনবেন না। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে শ্রদ্ধা করুন। আপনার শিশুও শ্রদ্ধাবোধ শিখবে।

৫. ছোটখাটো উপহার দিন

এই বয়সে বাচ্চার আঙ্গুল চোষার মতো বিভিন্ন বদ-অভ্যাস সৃষ্টি হয়। মনে থাকা উদ্বেগ, আকাঙ্খা, নিরাপত্তার অভাবে দুই-আড়াই বছর বয়স থেকে মুদ্রাদোষ তৈরি হয়। রাতারাতি মুদ্রাদোষ ছাড়ানো সম্ভব নয়। মুদ্রাদোষ ছাড়ানোর জন্য ছোটখাটো উপহার দিন। বাবা মায়ের একাকীত্বে অনেক বাচ্চা মনে করে তারা আর তাদের ভালোবাসা পাচ্ছে না।

৬. বিছানা ভেজানো

বিছানা ভেজানোর সমস্যা এড়াতে পেপার টয়লেট ট্রেনিং দিন। সন্ধ্যার পর পানি খাওয়ানোর পরিমাণ কমান। মাঝরাতে একবার উঠিয়ে টয়লেট করান। ৫ বছর বয়সের পরেও বিছানা ভেজালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৭. সন্তানদের সময় দিন 

দ্বিতীয় বাচ্চার পর প্রথম বাচ্চার প্রতি বাবা-মায়ের যত্নে খানিকটা ভাটা পড়ে। এতে বাচ্চারা ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডারে’ (Attention Deficit Hyperactivity Disorder) ভোগে। উদ্বেগ ও অবসাদ থেকে এই রোগ হয়। আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পারে না। তাই সন্তানদের সময় দেয়ার চেষ্টা করুন। পরিবারে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখুন।

সন্তানের সাথে সময় কাটাচ্ছেন একজন মা

৮. স্কুলভীতি দূর করুন 

বাচ্চারা যখন স্কুলে ভর্তি হয় তখন অস্বস্তিবোধ করে। এটা খুবই স্বাভাবিক। নিজে সঙ্গে করে নিয়ে বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। স্কুলের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকুন। পরীক্ষা নিয়ে তার ভয় এড়াতে তাকে বোঝান পরীক্ষাটি তেমন ভয়ের কিছু না। সাফল্য না পেলে হতাশাজনক কথা বলবেন না। ভয় কাটাতে ভয় দেখাবেন না। কাঁটা দিয়ে সব সময় কাঁটা তোলা যায় না।

৯. সাহস দিন

যুক্তি দিয়ে বাচ্চাদের ভয় কাটানো যায় না। বাচ্চাদের সাহস দিন। যে জিনিস বাচ্চা ভয় পায় সেটা নিয়ে আলোচনা বা হাসাহাসি করবেন না।

১০. বাচ্চার আয়া সম্পর্কে সচেতনতা 

চাকরিজীবী বাবা-মায়েরা বাচ্চার আয়া সম্পর্কে সচেতন থাকুন। অসময়ে বাড়িতে ফিরে গিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন।

ছোট মেয়ের বাবা যারা, তাদের জন্য রয়েছে বোঝার কিছু নিয়ম 

১. পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ছোট মেয়েটির ধারণা শেখা শুরু হয় বাবার মাধ্যমেই। মায়ের বিকল্প হতে চাইবেন না। বরং বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বাচ্চার প্রিয় কার্টুন বা হিরোর খোঁজ সে পায় আপনার কাছেই কারণ মেয়ের কাছে বাবাই তার জীবনের প্রথম সুপার হিরো। তাই আগে বন্ধু হোন, পরে অভিভাবক

২. বাচ্চা যদি গান, ছবি আঁকা শেখে তার সাথে আপনিও মাঝে মাঝে তাল মেলানোর চেষ্টা করুন।

৩. আপনি পুরুষ বলে বাবা হিসেবে কোমল মনোভাব থেকে বিরত থাকবেন না। এর ফলে দূরত্ব বাড়বে। স্নেহ-মমতা প্রকাশ করুন।

৪. মেয়েরা ভালোবাসা ও যত্ন পেতে পছন্দ করে। এর মাধ্যমে বন্ধন দৃঢ় হবে।

৫. বাবা বলে প্রভুত্ব না খাটিয়ে খোলাখুলি কথা বলে সমস্যার সমাধান করুন। আপনার যথাযথ সঙ্গ আপনার মেয়ের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে।

আপনার পূরণ না হওয়া স্বপ্নগুলো বা চাওয়ার প্রতিফলন সন্তানের মধ্যে দেখার মনোভাব বাদ দিন। সিদ্ধান্ত নিতে শেখান, নিতে সাহায্য করুন। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিবেন না। ভাল কাজে উৎসাহ দিন। ভেবে বের করুন, আপনি যেসব আনন্দ বা মুহূর্ত থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন সেগুলো থেকে আপনার সন্তান যেন বঞ্চিত না হয়। বাস্তবতার নিরিখে আপনিই নিতে পারেন আপনার সন্তানের সঠিক যত্ন। মনে রাখবেন, আজকের শিশুর হাতেই আমাদের আগামীর পৃথিবীর ভার।

 

ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক

12 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort