পুরনো ছবি যত্নে রাখুন সহজ কয়েকটি উপায় মেনে

পুরনো ছবি যত্নে রাখুন সহজ কয়েকটি উপায় মেনে

old picture

অতীতের আনন্দের মুহুর্তগুলো আশ্রয় নেয় ছবি হয়ে। সেসব স্মৃতি নিয়ে এগোতে হয় সামনের নতুন সময়ে। আগের দিনে নেগেটিভ থেকে ছবি ওয়াশ করে রাখা হতো। কেউ ফ্রেমবন্দি করে রাখতেন আবার কেউ পছন্দের অ্যালবামে জমিয়ে রাখতেন। এখন ছবি তুলে সংরক্ষণ করে রাখাটা যেমন সহজ সেটা আগে ছিল না। এখন ছবি ফ্রেমে বা অ্যালবামে রাখার থেকে সবাই ঘরের কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলে রাখেন। পুরনো ছবি হাতে নিয়ে হয়তো সময় হয়ে ওঠে না স্মৃতিগুলোতে আরেকবার চোখ বুলানোর।

এই যুগে ব্যস্ততায় হয়তো সেই পুরনো ছবি ও তার আবেগ অনুভূতিগুলো আলমারির কোনো এক কোণায় পড়ে থাকে অযত্নে। হঠাৎ অনেকদিন পর সেসব পুরনো ছবি অযত্নে দেখলে মন ঠিকই খারাপ হয়ে যায়। সুন্দর স্মৃতিগুলো যেন টিকে থাকে সব সময় এটাই সবাই চাই। তবে পুরানো দিনের নেগেটিভ আর ছবিগুলো ঠিকমতো সংরক্ষণ করতে না পারলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে যেকোনো সময়। তাই আপনার অবসর থেকে অল্প কিছু সময় বের করে পুরানো ছবি সংরক্ষণ করুন সঠিকভাবে।

পুরনো ছবি ভালো রাখতে যেভাবে যত্ন নিবেন 

১) ভালো মানের অ্যালবামে ছবি রাখা   

ছবি সংগ্রহের জন্য কমবেশি আমাদের সবার বাসাতেই অ্যালবাম আছে। বাড়িতে কেউ বেড়াতে এলে, পরিবারের সবার সঙ্গে একসাথে বসে পুরনো ছবি দেখা অথবা স্মৃতি হাতড়াতে নিজেই ছবিগুলো বের করে দেখা হয় অ্যালবাম থেকে। অ্যালবামকে তাই স্মৃতি জমানোর বই বললেও ভুল হয় না, তাই না? এবার আপনিই বলুন যেখানে এত এত মুহুর্ত জমা থাকবে সেটি যদি ভালো না হয় তাহলে কেমন হবে? তাই অ্যালবাম কেনার সময় অবশ্যই ভালো দেখে কিনুন।

পুরনো ছবি যত্নে থাকুক অ্যালবামে

২) ছবি মুখোমুখি না রাখা 

ছবি প্রিন্ট করার পর অপরপাশ সাদা থাকে। চেষ্টা করুন এই সাদা অংশের উপর আরেকটি ছবি রাখার। কারণ একটি ছবির সাথে আরেকটি ছবি কখনো মুখোমুখি করে রাখা উচিত নয়। এভাবে বেশি দিন রাখলে ছবি দুটো আর আলাদা করা যায় না, ফলে নষ্ট হয়ে যায়।

৩) ছোট বক্সে নেগেটিভ রাখা  

ছবির নেগেটিভগুলোর জন্য আলাদা জায়গা করে রাখুন। প্লাস্টিকের অ্যালবামে রাখার চেয়ে আলাদা ছোট বক্সে নেগেটিভ সংরক্ষণ করলে সেগুলো অনেকদিন ভালো থাকবে।

৪) কাগজের বক্সের ব্যবহার 

ছবি রাখার জন্য শক্ত কাগজ দিয়ে বানানো বক্স ব্যবহার করতে পারেন। এতেও ছবি ভালো থাকবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে বক্স যেন কখনো পানির সংস্পর্শে না আসে। আর অবশ্যই ছবির মাপ দেখে বাক্সটি ঠিক করুন। অনেক সময়ে বাক্সের মাপ একটু বড় না হলে, মুড়ে গিয়ে ছবির ধার নষ্ট হতে পারে। তখন নিজের ভুলের জন্য নিজেকেই দোষারোপ করতে থাকবেন!

পুরনো ছবি রাখতে কাগজের বক্সের ব্যবহার

৫) পেন্সিল দিয়ে নাম তারিখ লেখা

নাম, তারিখ ইত্যাদি তথ্য ছবিতে লিখে রাখেন অনেকেই। ছবির সাথে ছবির তথ্য সংরক্ষণ করতে ছবির পিছনে পেন্সিল দিয়ে এসব তথ্য লিখুন। কলম ব্যবহার করবেন না। দরকার হলে অ্যালবামে ছবির সাথে আলাদা তথ্য কাগজে লিখে ছবির নিচে রেখে দিন।

৬) আলাদা অ্যালবাম রাখা 

অনেকের ছবি তোলার শখ থাকে কিন্তু বর্তমানে আর আগেরমতো ছবি তোলা হয় না। আগের সেই শখের ছবিগুলোর আলাদাভাবে যত্ন নিন। সেগুলো আলাদা একটি অ্যালবামে করে রেখে দিন ড্রেসিং টেবিল বা ওয়্যারড্রবের উপর।

৭) বসার ঘরে সাজিয়ে রাখা 

পুরনো খুব পছন্দের ছবিগুলো বসার ঘরে সাজিয়ে রাখতে পারেন। চাইলে একটি পছন্দের ছবি বড় করে ওয়াশ করিয়ে রাখতে পারেন চমৎকার একটি ফ্রেমে। ছবিও যত্নে থাকবে আর আপনার দেখতেও ভালো লাগবে।

৮) জায়গা পরিবর্তন করা

ছবি যদি অনেকদিন একই জায়গায় থাকে তাহলে সেটার জায়গা পরিবর্তন করুন। বক্স বা অ্যালবামে নতুন করে ছবি সাজিয়ে রাখুন। মাঝে মাঝে ছবির জায়গা পরিবর্তন করলে ছবিতে বাতাস লাগে আর ছবি ভালো থাকে।

মাঝে মাঝে ছবির জায়গা বদলে দিন

৯) শুষ্ক জায়গায় ছবি রাখা  

ছবি কখনো বারান্দা কিংবা বেজমেন্টে সাজিয়ে রাখবেন না। এসব জায়গা স্যাঁতস্যাঁতে হয় এবং সহজেই ছবির কাগজ নষ্ট হতে শুরু করে। বদ্ধ জায়গায় ছবি রাখবেন না। এতে ছবি নোংরা হবে আর নষ্ট হবে। শুষ্ক এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা আছে এমন স্থানে ছবি সংরক্ষণ করুন। ছবি খুব বেশি রোদ আসে এমন জায়গায় রাখাও ঠিক না। তীব্র রোদে ছবি নষ্ট হয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যায়।

১০) স্কচটেপ ব্যবহার না করা 

ছবিতে স্কচটেপ বা আঠা জাতীয় কিছু ব্যবহার করবেন না। এসবের সাথে ছবির কাগজ ছিঁড়ে যেতে পারে। তখন চাইলেও হয়তো ছবি রিকভার করা যাবে না। তাই সাবধান হতে হবে আগে থেকেই।

১১) ভালো ফটোফ্রেম ব্যবহার করা

পুরনো দিনের ছবি সাজিয়ে রাখতেই বেশি পছন্দ করেন সৌখিন মানুষরা। তাই নিজের ঘরে বা বসার ঘরের দেয়ালে কিংবা শোকেইসে ছবি ফ্রেমে সাজিয়ে রাখুন। ছবির জন্য ভালো ফটোফ্রেম ব্যবহার করুন এবং সেটা এক সপ্তাহ অন্তর অন্তর পরিষ্কার করুন।

ফটোফ্রেম

১২) ডিজিটাল ব্যাকআপ রাখা

ছবি সংরক্ষণের জন্য ডিজিটাল ব্যাকআপ রেখে দিন কয়েক কপি। সেটা হতে পারে আপনার পিসি বা ল্যাপটপ অথবা মেইলবক্স। এছাড়া ফেইসবুকে আলাদা অ্যালবাম করে নিজের মতো প্রাইভেসি দিয়ে রাখুন। এতে যখন তখন ছবি হারিয়ে গেলেও দুশ্চিন্তা হবে না। অনেক ছবির হয়তো নেগেটিভ বা অন্য কোনো ডিজিটাল কপি নাও থাকতে পারে। সেই ছবিগুলো স্ক্যান করে নিজের কাছে আলাদা ফোল্ডার করে রেখে দিন।

সময় চলে গেলেও ছবি রয়ে যায়। ছবির সঙ্গে থাকা স্মৃতিগুলোই আমাদের পুরনো দিনের কথা ঘুরেফিরে মনে করিয়ে দেয়। তাই স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলেও পুরনো ছবির যত্ন নেওয়া উচিত। মুহুর্তকে ধরে রাখুন নিজের মতো করে।

 

ছবি – সাটারস্টক

6 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort