বয়সভেদে স্কিন কেয়ার | জেনে নিন ৫ ধরনের এজ গ্রুপের ত্বকের যত্ন

বয়সভেদে স্কিন কেয়ার | জেনে নিন ৫ ধরনের এজ গ্রুপের ত্বকের যত্ন

skincare

আমাদের প্রত্যেকের স্কিনই আলাদা। তবে, বয়সের সাথে সাথে আমাদের স্কিন কিন্তু পরিবর্তন হয়। আর আমাদেরও উচিত বয়সভেদে স্কিন কেয়ার করা যেহেতু বয়সের সাথে সাথে স্কিনের ধরনও পরিবর্তন হয়। কারণ স্কিন যখন ম্যাচিউর হতে থাকে, তখন তার কেয়ারের ধরনটাও সেই অনু্যায়ী ভিন্ন হওয়া উচিত। ক্লেনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং-এর রেগ্যুলার রুটিন ফলো করার পাশাপাশিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিন কেয়ারে ভিন্নতা আনাটা গুরুত্বপূর্ণ। বয়স যত বাড়বে স্কিনের টেক্সচার চেঞ্জ হবে, রিংকেল পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আমি বলছি না, সঠিক স্কিন কেয়ার করেই একদম সেটাকে আগের অবস্থানে ফেরত আনা যাবে। বয়সের সাথে সাথে স্কিনে চেঞ্জ আসবেই। তবে, হেলদি লুকিং স্কিন বলে যে কথা টা আছে। সেটাতো অ্যাচিভ করা যেতেই পারে। তাই না? আর এর জন্য, বয়সভেদে স্কিন কেয়ার করার দিকে নজর দেয়াটাও ইম্পরট্যান্ট। তার জন্যে জেনে নেয়া দরকার যে কিভাবে বয়সভেদে স্কিন কেয়ার মেনটেইন করতে হবে।তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই, বয়সভেদে স্কিন কেয়ার ধরন সম্পর্কে!

বয়সভেদে ত্বকের যত্ন যেভাবে হবে

স্কিন টাইপ বুঝুন

স্কিনের ধরন - shajgoj.com

প্রথমেই যে বিষয়টার উপরে গুরুত্ব দিতে হবে, তা হচ্ছে বয়সভেদে স্কিন কেয়ার করার জন্য স্কিনের টাইপটাকে বোঝা। এতে করে, আপনি স্কিন কেয়ারের জন্য কী ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন, তা বুঝতে পারবেন এবং প্রোডাক্টগুলো আপনার স্কিনের জন্য সঠিক হবে। আপনার স্কিনের টাইপ কী? নরমাল, ড্রাই, অয়েলি নাকি কম্বিনেশন? এটা জানতে, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে একটা টেস্ট করতে পারেন। ঘুম থেকে উঠে মুখের স্কিনে হাত বুলিয়ে দেখুন। যদি, আপনার স্কিন সফট ফিল হয়, তেমন ব্লেমিশ বা প্যাচ না থাকে এবং স্কিনে অয়েল ব্যালেন্সড থাকে, তবে আপনার নরমাল স্কিন। আর যদি স্কিনটা স্মুদ ফিল না হয়, ড্রাই প্যাচ, ডাল ফিল হয়। তবে আপনার স্কিন টাইপ ড্রাই। আর যদি স্কিন তৈলাক্ত ফিল হয়, পিম্পল, ব্রেক আউটস, পোরস ইত্যাদি থাকে, তবে আপনার স্কিন টাইপ অয়েলি। আপনার স্কিনের টি-জোন যদি তৈলাক্ত হয় এবং ফেইসের অন্য অংশগুলো শুষ্ক হয়, তবে আপনার কম্বিনেশন স্কিন।

টিনেজারদের স্কিন কেয়ার

 

১. ক্লেনজিং

টিন এজারদের হরমোনাল অনেক চেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর এই সময়ে মুখে অতিরিক্ত তেল তৈরি করে। যার ফলে স্কিনের পোর বড় হয়ে যেতে পারে। তাই এই সময়ে স্কিন ক্লিন রাখার দিকে নজর দিতে হবে খুব বেশী। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ক্লেনজার, ক্রিম এবং অয়েল ফ্রি ময়শ্চারাইজ ভালো বন্ধু হতে পারে টিন এজারদের।

২. এক্সফোলিয়েট

স্কিনের ডেড সেলস দূর করতে এবং পোর ক্লগিং বন্ধ করতে এক্সফোলিয়েট করা খুবই জরুরি। সপ্তাহে ২ দিন এক্সফোলিয়েট করবেন। তবে, ন্যাচারাল ইনগ্রিডিয়েন্টস যেমন – চালের গুড়া, ওটসের গুড়া, বাদামের গুড়া ইত্যাদির সাহায্যে এক্সফোলিয়েট করা ভালো হবে টিন এজারদের স্কিনের জন্য।

৩. প্রোটেকশন

টিন স্কিনে পিম্পল কিন্তু কমন ব্যাপার। কিন্তু, আপনি জানেন কি, একটা পিম্পল যখন হিল হয় এবং সেটা সূর্যের রশ্মির নিকটে আসে, তখন সেটা হাইপার পিগমেন্টেশনে রূপ নেয়। তাই বাইরে বের হওয়ার আগে অন্তত এস পি এফ ৩০+ যুক্ত সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত।

৪. যা এরিয়ে চলবেন

কিশোরীদের ত্বকে যে সকল ইনগ্রিডিয়েন্টসগুলো ব্যবহারের চেষ্টা করবেন, তা হলো- ক্লে বেইজড প্রোডাক্ট, স্যালিসাইলিক এসিড, টি ট্রি অয়েল ইত্যাদি। রিচ ফুড, গরুর দুধ, হেভি ডেইরি ফুড ইত্যাদি। কারণ, এগুলো হরমোনার ব্রেক আউট ঘটায়।

২০+ বয়সের স্কিন কেয়ার

 

১. রেগ্যুলার স্কিন কেয়ার রুটিন

২০+ স্কিনে রেগ্যুলার স্কিন কেয়ার রুটিন যেমন – ক্লেনজিং,  টোনিং, ময়শ্চারাইজিং তো ফলো করবেনই। এর সাথে সাথে, ডাবল ক্লেনজিং, স্কিন হাইড্রেটিং এবং সান প্রোটেক্টিংও কিন্তু জরুরি!

২. অ্যান্টি এজিং কেয়ার

২০+ বয়সে স্কিন ম্যাচিউর হয় না। তবে, যখন আপনি ২৫ বছরের বেশি হবেন, তখন থেকে টুকটাক অ্যান্টি এজিং প্রোডাক্ট ব্যবহার শুরু করতে পারেন। এতে করে, আগে থেকেই স্কিন প্রিপেয়ার হয়ে থাকলো এবং হুট করে স্কিন ম্যাচিউর হয়ে যাওয়া বা রিংকেল পড়ে যাওয়াটা দেখতে হবে না আপনাকে।

৩. স্কিন ট্রিটমেন্ট

টিন স্কিনে ওইভাবে স্কিন ট্রিটমেন্টের দরকার পড়ে না বা না করাই ভালো। তবে আপনি এখন ২০ বছরের বেশি, তাই আপনার স্কিনের যত্নে বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট যেমন- মাইক্রোডারমাব্রেশন (Microdermabrasion) করতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফেসিয়ালতো রয়েছেই।

৪. যা এরিয়ে চলবেন

২০+ স্কিনে যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ইনগ্রিডিয়েন্টস ব্যবহার করবেন। যেমন – ভিটামিন সি, গ্রিন টি ইত্যাদি। যা আপনার ত্বককে রক্ষা করবে। আর যা যা অ্যাভয়েড করবেন তা হলো- অতিরিক্ত প্রোডাক্টের ব্যবহার এবং ত্বকের যত্নকে অযথা জটিল করে ফেলবেন না অর্থাৎ যে প্রোডাক্টই দেখবেন, তাই মুখে মাখার অভ্যাস থাকলে তা বন্ধ করুন।

৩০+ বয়সের স্কিন কেয়ার

 

১. সিরাম ব্যবহার 

আপনার বয়স যখন ৩০ বছরের বেশি তখন একটা ভালো মানের সিরাম ব্যবহার করাটা খুবই জরুরি। কারণ, সিরাম স্কিনের একদম গভীর স্তরে গিয়ে স্কিনকে রিপেয়ার করে এবং স্কিনটাকে ভালো রাখে। কারণ, ৩০ বছরের বেশি বয়স হলে স্কিনের কোলাজেন ভাঙতে শুরু করে, স্কিন অয়েল প্রোডিউস কমিয়ে দেয়। তাই এই সময় স্কিনটাকে প্রোপার ট্রিটমেন্ট দেয়াটা ইম্পরট্যান্ট।

২. স্কিনের সাথে জেন্টল হোন

যখন স্কিনে কোনো প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করবেন, তখন অবশ্যই তা জেন্টলি অ্যাপ্লাই করবেন। অবশ্যই আলতো হাতে ত্বকের পরিচর্যা করবেন। সিরাম বা ফেসিয়াল অয়েল অ্যাপ্লাইয়ের সময় প্রতিদিন স্কিনটাকে একটা হালকা ফেসিয়াল ম্যাসাজ দিন। এতে করে, স্কিনে কোলাজেন স্টিমুলেট হবে।

৩. যা এরিয়ে চলবেন

৩০ স্কিনে যে সকল ইনগ্রিডিয়েন্টস ব্যবহারের চেষ্টা করবেন তা হলো- ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ক্যামোমাইল, হায়ালুরনিক এসিড (hyaluronic acid),  কোলাজেন ইত্যাদি। আর কোনোভাবেই রাত জাগা যাবে না।

৪০+ বয়সের স্কিন কেয়ার 

 

১. আই ক্রিম ব্যবহার

৪০ বছরের থেকেই কিন্তু একটা ভালো মানের আই ক্রিম ব্যবহার জরুরি। অ্যান্টি এজিং ফর্মুলা সমৃদ্ধ আই ক্রিম বেছে নিন যাতে কোলাজেন, রেটিনল ইত্যাদি রয়েছে। এই ধরনের আই ক্রিম চোখের নিচের রিংকেলস, ফাইন লাইন দূর করতে সাহায্য করবে।

২. হাইড্রেশন

এই বইয়সে স্কিন অনেক বেশী ডিহাইড্রেটেড হওয়া শুরু করে। এটা হচ্ছে, স্কিন মলিকুলস ভেঙ্গে যাওয়ার ফল। এজন্য, সপ্তাহে ১-২ দিন একটা হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই গ্লিসারিন, অ্যালোভেরা, হায়ালুরনিক এসিড যুক্ত হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহারের চেষ্টা করবেন।

৩. যা ব্যবহার করবেন ও যা এরিয়ে চলবেন

৪০+ স্কিনে যে সকল ইনগ্রিডিয়েন্টস ব্যবহারের চেষ্টা করবেন তা হলো- রেটিনল, হায়ালুরনিক এসিড, আমন্ড অয়েল, রোজ অয়েল, ভিটামিন সি, গ্রিন টি ইত্যাদি। তবে এই বয়সে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো হার্শ ইনগ্রিডিয়েন্টস অর্থাৎ অতিরিক্ত স্ক্রাব গ্র্যানিউল আছে এমন কিছু ইউজ করা যাবে না এবং ফোম ক্লেনজার এভয়েড করবেন।

৫০+ বয়সের স্কিন কেয়ার

 

১. রিচ ফর্মুলাযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার

৫০ বছরের বেশি বয়সে ময়শ্চারাইজার, সিরাম, ফেইস অয়েল, আই ক্রিম ইত্যাদি যা-ই ব্যবহার করেন না কেন, খেয়াল রাখবেন তা যেন রিচ ফর্মুলাযুক্ত হয়। স্কিনের জন্য নায়াসিনামাইড, হায়ালুরনিক এসিড, ভিটামিন সি ও কোলাজেন যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন।

২. ভেষজ উপাদান ব্যবহার

৫০ বছর বয়সে ভেষজ উপাদান বা বোটানিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্টসযুক্ত প্রোডাক্টস স্কিনের জন্য বেশ ভালো হবে। স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট রিচ, হাইড্রেটিং ইনগ্রিডিয়েন্টসের পাশাপাশি বোটানিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্টস আছে কিনা তা খেয়াল রাখুন। ক্যামোমাইল, ওটমিল ইত্যাদি খুব বেশি ম্যাচিউর স্কিনের জন্য বেশ ভালো কাজ করে।

৩. রেগ্যুলার চেকআপ

বয়স ৫০ বছরের দিকে স্কিন ক্যান্সার হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। প্রতি সপ্তাহে নিজেই নিজের স্কিন খেয়াল করুন এবং স্কিনে কোনো নতুন ডার্ক স্পট দেখতে পেলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন। আর প্রচুর প্রোটিনযুক্ত খাবার খাবেন।

৪ . যা ব্যবহার করবেন ও যা এরিয়ে চলবেন

এই বয়সে রেটিনল, কোলাজেন, শিয়া বাটার, রোজ অয়েল, আমন্ড বাটার ইত্যাদি স্কিনের ডিপ নারিশমেন্টের জন্য খুবই ভালো। ফোম ক্লেনজার, হার্শ ইনগ্রিডিয়েন্টস বা বেশি স্ক্রাবারযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না। আর ফেসিয়াল পিল অফ মাস্ক কিন্তু একেবারেই না!

এই তো জেনে নিলেন, বয়সভেদে স্কিন কেয়ার সম্পর্কে। আশা করছি, আপনাদের অনেক বেশী হেল্প হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর সবাইকে হ্যাপি নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা!

ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; সাটারস্টক

38 I like it
15 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort