হেয়ার ও স্ক্যাল্পের pH লেভেল ব্যালেন্স করা কেন জরুরি?

হেয়ার ও স্ক্যাল্পের pH লেভেল ব্যালেন্স করা কেন জরুরি?

1 (6)

‘দিন দিন চুল রাফ ও ফ্রিজি হয়ে যাচ্ছে। কত ধরনের হেয়ার মাস্ক, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার কত কিছুই তো ইউজ করছি, কোনো লাভই হচ্ছে না!’ আসল সমস্যা না বুঝে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ইউজ করলে এই সমস্যার সমাধান একদমই মিলবে না। হতে পারে প্রবলেম আসলে কোনো প্রোডাক্টে নয়, আপনার স্ক্যাল্প ও হেয়ারেই! হ্যাঁ। ঠিকই বলছি। যদি আপনার হেয়ার ও স্ক্যাল্পের pH লেভেল ঠিক না থাকে তাহলে যা-ই ইউজ করুন না কেন হেয়ার প্রবলেমের সল্যুশন সহজে হবে না। কিন্তু স্কিনের pH এর কথা শুনেছি, চুলের pH আবার কী, আর কীভাবেই বা ব্যালেন্স করতে হয়? যারা এই বিষয়ে একদম জানেন না অথবা যারা কিছুটা জানেন তাদের আবারও এ বিষয়ে ঝালাই করে নেয়ার জন্যই আজ কথা বলবো।

হেয়ার ও স্ক্যাল্পের pH লেভেল কী?

হেলদি হেয়ার ও স্ক্যাল্প পাওয়ার জন্য পিএইচ লেভেল ব্যালেন্স করা জরুরি। কিন্তু এটি আসলে কী? pH এর অর্থ হচ্ছে Potential Hydrogen. এই চিহ্নটি অ্যাসিডিটি বা ক্ষারের মাত্রা নির্দেশ করে। পিএইচ লেভেলের রেঞ্জ ০-১৪ পর্যন্ত। এই রেঞ্জের ৭ নম্বর সংখ্যাকে নিউট্রাল ধরা হয়। ৭ এর নিচে অ্যাসিডিক/অম্লীয় এবং ৭ এর উপরে হলো ক্ষারীয় বা অ্যালকালাইন। সে অনুযায়ী সবচেয়ে অ্যাসিডিক হলো ১ এবং ১৪ হলো সর্বোচ্চ অ্যালকালাইন।

চুলের স্ট্যান্ডার্ড পিএইচ রেঞ্জ ৪.৫ থেকে ৫.৫ এবং স্ক্যাল্পের ৫.৫ পর্যন্ত। আমাদের স্ক্যাল্প ও হেয়ারের এই অ্যাসিডিক অবস্থা বজায় থাকা জরুরি। এতে চুলের ময়েশ্চার বজায় থাকে, চুল থাকে শাইনি এবং স্ক্যাল্পও হেলদি থাকে, যার কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস গ্রো করে না। চুল যদি অ্যালকালাইন স্টেজে চলে যায় তাহলে চুল ড্রাই ও ফ্রিজি হয়ে যাবে। স্ক্যাল্পের পিএইচ লেভেল যদি অ্যালাকালাইন স্টেজে চলে যায় তাহলে স্ক্যাল্প ড্রাই হয়ে যায়, ফলাফল ড্যানড্রাফ। হেয়ার ও স্ক্যাল্পের এসব সমস্যা যেন না হয়, সেজন্য পিএইচ ব্যালেন্স ধরে রাখা খুবই জরুরি।

হেয়ার ও স্ক্যাল্পের pH লেভেল

হেয়ার ও স্ক্যাল্পের সুরক্ষায় pH এর গুরুত্ব 

স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাওয়ার জন্য pH লেভেল ব্যালেন্স করা কেন জরুরি তার কিছু কারণ আমি উপরেই বলেছি। চলুন এবার এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-

১) ব্যাকটেরিয়া থেকে সুরক্ষা দেয়

চুলের পিএইচ লেভেল যদি নরমাল থাকে তাহলে হেয়ার কিউটিকল সিলড থাকে, আনওয়ান্টেড ব্রেকেজ প্রিভেন্ট হয় এবং ন্যাচারাল অয়েল লক থাকে। সেই সাথে স্ক্যাল্পেও ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস সহজে আক্রমণ করতে পারে না। ৪.৫ থেকে ৫.৫ এর মধ্যে pH লেভেল ব্যালেন্স মেনটেইন করতে পারলে এ সমস্যাগুলো থেকে দূরে থাকা যাবে।

২) হেয়ার গ্রোথ বাড়ায়

যে সব প্রোডাক্টে ক্ষারের পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলো ব্যবহারে হেয়ার ফলিকল এক্সপ্যান্ড হয়ে ময়েশ্চার বেশি রিলিজ হয়। আর ময়েশ্চার বেশি লস হওয়া মানে হেয়ার গ্রোথ থেমে যাওয়া, সেই সাথে স্ট্র্যান্ড ড্রাই হয়ে ভেঙে যাওয়া। পিএইচ লেভেল ব্যালেন্স করবে এমন প্রোডাক্ট ইউজ করলে স্ক্যাল্প ক্লেনজিং এর সাথে সাথে বিল্ড আপ প্রোডাক্ট ও ডেড স্কিন সেলস রিমুভ হয়ে যাবে। সেই সাথে হেয়ার গ্রোথ বাড়বে।

হেয়ার ও স্ক্যাল্পের pH লেভেল ব্যালেন্স করলে হেয়ার গ্রোথও বাড়ে

৩) ময়েশ্চার লেভেল মেনটেইন হয়

গর্জিয়াস, গ্লসি ও হেলদি হেয়ারের জন্য সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট হচ্ছে ময়েশ্চার ধরে রাখা। যদি পিএইচ লেভেল ব্যালেন্সড থাকে তাহলে হেয়ারও ময়েশ্চারাইজড থাকে। ময়েশ্চার কমে গেলে চুল ড্রাই হয়ে ভেঙে যায়। সিবাম হচ্ছে ন্যাচারাল অয়েল যা স্ক্যাল্পকে সুরক্ষিত রাখে এবং চুল রাখে হেলদি ও ময়েশ্চারাইজড। তাই ময়েশ্চার ধরে রাখবে এমন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত।

কীভাবে বুঝবেন pH কমে যাচ্ছে কিনা?

আমাদের একেকজনের চুলের ধরন একেক রকম। তবে গরম পানির ব্যবহার, অতিরিক্ত চুল ধোয়া, ধুলোবালি ও সূর্যরশ্মি ইত্যাদি নানা কারণে সব ধরনের চুলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই হেয়ার কেয়ার রুটিনে পরিবর্তন আনার আগে সবার আগে জানতে হবে স্ক্যাল্প ও চুলের পিএইচ লেভেল কমে যাচ্ছে কিনা। কীভাবে এটি বুঝবেন সে সম্পর্কে চলুন জেনে নেই-

১) যদি আপনি ইচি স্ক্যাল্পের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে হতে পারে আপনার হেয়ার ও স্ক্যাল্প অ্যালকালাইন স্টেজে চলে গিয়েছে। এতে একজিমাসহ বিভিন্ন ইনফেকশন হওয়ার চান্স বেড়ে যায়। এ সমস্যা কমাতে মাইল্ড অ্যাসিডিক শ্যাম্পু ইউজ করতে পারেন।

২) যদি আপনার চুল ন্যাচারালি কার্লি হয়, তাহলে আগে থেকেই হেয়ার কিউটিকল ওপেন থাকার কারণে চুল ড্রাই বা ফ্রিজি দেখাতে পারে। কিউটিকল বন্ধ করার জন্য মাইল্ড অ্যাসিডিক শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার বেশ হেল্পফুল।

৩) যদি আপনি সম্প্রতি হেয়ার কালার অথবা কেমিক্যাল স্ট্রেইটিং করে থাকেন, তাহলে বার বার অ্যালকালাইন ও অ্যাসিডিক ট্রিটমেন্টের কারণে হেয়ারে স্ট্রেস পড়তে পারে। এক্ষেত্রে আবারও অ্যাসিডিক হেয়ার প্রোডাক্টের কথা বলতে হয়। এগুলো ব্যবহারে হেয়ার কিউটিকল ভালো থাকবে, ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

৪) যদি আপনার চুল ন্যাচারালি স্ট্রেইট হয় এবং কোনো ড্যামেজ না থাকে, তাহলে চুলের হেলথ মেনটেইনের জন্য পিএইচ ব্যালেন্সড শ্যাম্পু ইউজ করতে পারেন।

pH Balance of Hair

ন্যাচারালি pH লেভেল ব্যালেন্স করার উপায়

চুলের পিএইচ লেভেল কমে গেলে ড্রাইনেস, ইচিনেস বা চুলের আগা ফাটার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এই লেভেল ব্যালেন্স করার জন্য অ্যাসিডিক কিছু ইনগ্রেডিয়েন্ট হেল্প করতে পারে। চলুন এগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-

অ্যালোভেরা জেল

অ্যালোভেরা জেলে আছে প্রচুর পরিমাণে লেকটিন প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম। এর pH রেঞ্জ ৪.৫ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত। চুল বা স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল pH লেভেল ব্যালেন্স করার জন্য অ্যালোভেরা জেল সরাসরি অ্যাপ্লাই করতে পারেন। চাইলে হেয়ার মাস্ক বানিয়েও অ্যাপ্লাই করা যায়। হেয়ার মাস্ক বানানোর জন্য লাগবে-

  • ১/২ কাপ অ্যালোভেরা জেল
  • ২ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
  • ১ চা চামচ মধু
  • পরিমাণমতো পানি

সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার সেকশন অনুযায়ী চুল ভাগ করে নিয়ে অ্যাপ্লাই করুন। সার্কুলার মোশনে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। ড্যানড্রাফ দূর করার জন্যও এই মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যালোভেরা জেল দিয়ে হেয়ার ও স্ক্যাল্পের pH লেভেল ব্যালেন্স

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার

ঘরোয়া জীবাণুনাশক বলা হয় অ্যাপেল সিডার ভিনেগারকে। এর পিএইচ রেঞ্জ ৩। স্ক্যাল্পের ইনফেকশন বা ইচিনেস কমাতেও এটি বেশ কার্যকর। ২ কাপ পানিতে ২ টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের পর এই পানি দিয়ে স্ক্যাল্প ও চুল ধুয়ে নিন। ২/৩ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন। যারা ভিনেগারের কড়া স্মেল নিতে পারেন না তারা পানিতে ১ ফোঁটা অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। যারা এভাবে ভিনেগার ব্যবহার করতে চান না, তারা চাইলে এই ইনগ্রেডিয়েন্ট যুক্ত শ্যাম্পুও ইউজ করতে পারেন।

 

চুল হেলদি ও শাইনি থাকুক, এমনটাই সবাই চাই। কিন্তু pH লেভেল সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানার কারণে এবং ভুল প্রোডাক্টস ব্যবহারের জন্য এমন চুল আর পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই আপনার চুলের ধরন কেমন, পিএইচ লেভেল ব্যালেন্সড আছে কিনা সে সম্পর্কে আগে জেনে নিন। এরপর সে অনুযায়ী প্রোডাক্ট চুজ করুন। অথেনটিক হেয়ার ও স্কিন কেয়ার, মেকআপ প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন সাজগোজে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ণ মল্লিকা, ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।

ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক

4 I like it
2 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort