বিয়ের কনের যত্ন | কোকোনাট মিল্কেই হবে ত্বক, চুল ও হাত-পায়ের কেয়ার?

বিয়ের কনের যত্ন | কোকোনাট মিল্কেই হবে ত্বক, চুল ও হাত-পায়ের কেয়ার?

body milk

এই সময়ে যাদের বিয়ে হতে যাচ্ছে তাদের মনে একটাই প্রশ্ন সেটা হলো, “কীভাবে নিব বিয়ের আগে নিজের স্কিনের যত্ন?” আমার মনেও ছিল ঠিক এই প্রশ্নটিই। আমার বিয়ে হয়েছে মাত্র ২০ দিন আগে। হুট করেই বিয়েটা ঠিক হয়। আমার কথা ছিল এটাই যে বিয়ের প্রোগ্রাম হোক যেমন তেমন, কিন্তু বিয়েতে যেন আমাকেই সবচেয়ে সুন্দর লাগে। আমার মনে হয় শুধু আমার না বিয়ের আগে প্রতিটি মেয়েরই এই স্বপ্নটা থাকে। অথচ বিয়ের কনের যত্ন সঠিকভাবে কেমন হবে তা নিয়ে কিন্তু সবাই জানি না।

বিয়েতে নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর দেখানোর আসল উপায় হলো নিজের স্কিনকে সুন্দর রাখা। স্কিন যদি সুন্দর থাকে তবে বউয়ের যেকোন সাজই ফুটে উঠে অনেক বেশি। তাই স্কিন কেয়ার নিয়ে একটু টেনশনেই ছিলাম আমি। অনেকের কাছেই জানতে চাইতাম কীভাবে যত্ন নেয়া উচিত আর আমার বিয়ে ঠিক হবার দেড় মাসের মধ্যেই বিয়ের প্রোগ্রাম হবার কথা হয়। বুঝতেই পারছেন সময়ও খুব বেশি ছিল না। তার উপর সেই পুরোটা সময়ই আমি নিজের স্কিনের কেয়ারের জন্য পাচ্ছি তা নয়। সাথে আছে নানা ধরনের কাজের ঝামেলা। বুঝেই পাচ্ছিলাম না কীভাবে কী করব।

এরই মধ্যে আমার এক কলেজের বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হলো, দাওয়াতও পেলাম। গেলামও বিয়েতে। গিয়ে দেখলাম ওকে এত বেশি সুন্দর লাগছে বিয়েতে যে রীতিমত চোখ সরানোটা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। বিয়েতে সাজলে সবাইকেই ভালো লাগে কমবেশি। তবে ভেতর থেকে যে সৌন্দর্যটা ফুটে উঠে তার একমাত্র রহস্য কিন্তু গ্লোয়িং স্কিনই! যেমনটা আমি চেয়েছিলাম আমার জন্য আমার বান্ধবীর ত্বকে যেন আমি সেই জিনিসটাই দেখতে পাই। ওর বিয়ের ঝামেলাটা শেষ হবার পরপরই আমি ওর কাছে জানতে চাই, কীভাবে ওর ত্বকের যত্ন নিয়েছিলো বিয়ের আগে এবং আমাকে খুবই সহজ এবং সুন্দর উপায় বলে দেয় আমাকে। যেটা আমার আসলেই অনেক উপকারে আসে।

বিয়ের কনের ত্বকের যত্ন যেভাবে করবেন

প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমার গ্লোয়িং স্কিনের আসল জাদু ছিল কোকোনাট মিল্ক। সবাই নিশ্চয়ই কোকোনাট মিল্কের গুণাগুণ সম্পর্কে কম বেশি জানেন। আমিও জানতাম ঠিকই কিন্তু ব্রাইডাল স্কিন কেয়ারে এটা এতটা কার্যকরি হবে তা ভাবি নি। চলুন তবে জেনে নেই বিয়ের কনের ত্বকের যত্ন কিভাবে হওয়া উচিত?

মুখের যত্ন

মুখের যত্ন নেয়াটা অনেক বেশি জরুরি। আর মুখের যত্নের কতগুলো ধাপ আছে তা হলো-

১. ক্লেনজিং

ক্লেনজিং এর জন্য আমি ব্যবহার করেছি শুধুমাত্র কোকোনাট মিল্ক। একটি কটন বলে কোকোনাট মিল্ক লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিলেই হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, কোকোনাট মিল্ক লাগানোর আগে আমি আমার মুখ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুছে নিতাম।

২. স্ক্রাবিং

 

স্ক্রাবার বানাতে আমি যা যা ব্যবহার করেছি তা হলো- চালের গুঁড়া/ ব্রাউন সুগার, কোকোনাট মিল্ক এবং লেবুর রস। এই তিনটি উপাদান দিয়েই অনেক সহজেই স্ক্রাব বানিয়েই আমি বিয়ের আগে আমি ব্যবহার করেছি। এই স্ক্রাব দিয়ে ১-২ মিনিট স্ক্রাবিং করার পরই ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ নিলেই হয়ে যায়!

৩. ময়েশ্চারাইজার

ময়েশ্চারাইজার বানানোর জন্য আমি যে যে উপাদানগুলো ব্যবহার করেছি তা আপনাদের সুবিধার জন্য দিয়ে দিলাম। যেন আপনারা চাইলে খুব সঝজেই নিজে তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।

সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে ভালো করে। এরপর তুলা দিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে নিতে পারেন। তবে এই ময়েশ্চারাইজার হাত, পা এমনকি পুরো শরীরেও আমি ব্যবহার করেছি। আপনারাও চাইলে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। ফলাফল কিন্তু ভালোই।

আমি কোকোনাট মিল্কের এই ক্লেনজার এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেছি প্রতিদিনই। তবে স্ক্রাবারটা সপ্তাহে শুধু একদিন করতাম। কারণ স্কিনের জন্য প্রতিদিন স্ক্রাবার ব্যবহার করা ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।

হাত এবং পায়ের যত্ন

 

হাত এবং পায়ের যত্নেও আমি কোকোনাট মিল্কই ব্যবহার করেছি। হাত পা প্রতিদিন ভালো করে পরিষ্কার করে কোকোনাট মিল্কের তৈরি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেছি। যা আমার হাত পায়ের ত্বকে এনেছে এক্সট্রা গ্লো। আর স্কিনকে অনেক কোমলও করে। তাই হাত পায়ের যত্নেও কোকোনাট মিল্ক অনেক উপকারী।

জানলে অবাক হবেন যে- আমি আমার হাত, পা, চুল আর মুখের যত্নেতো কোকোনাট মিল্ক ব্যবহার করেছিই এমনকি বডি ওয়াশও আমি কোকোনাট মিল্কেরই ব্যবহার করেছি। তবে ওটাও আমি নিজেই বাসায় তৈরি করেছি। সেটার তৈরি প্রণালীটাও আমি শেয়ার করছি আপনাদের সাথে।

  • সাবান কুঁচি- ১ টি
  • কোকোনাট মিল্ক- ১/২ কাপ
  • মধু- ১/৩ কাপ
  • অলিভ অয়েল– ১ চা চামচ
  • গ্লিসারিন- ১ চা চামচ

একটি পাত্রে এই সবগুলো উপাদান ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর সেগুলো আইস ট্রে-তে করে ফ্রিজে রাখুন। এবং যখন প্রয়োজন বের করে ব্যবহার করুন। আর হয়ে উঠুন সুন্দর ত্বকের অধিকারিণী।

চুলের যত্ন

চুলের জন্যতো কোকোনাট মিল্ক কতটা কার্যকরী তা আমি বললে যতটা বুঝবেন তার চেয়ে বেশি বুঝবেন যদি আপনি নিজে ব্যবহার করার পর। সত্যিই আমি মনে হয় এর আগে কখনও কোনকিছু ব্যবহার করে এতটা ভালো ফলাফল পাইনি তাও এত কম সময়ে। চুলের যে প্যাকটি আমি ব্যবহার করেছি তার রেসিপিটা আমি জানিয়ে দিচ্ছি নিচে-

  • কোকোনাট মিল্ক- ২ টেবিল চামচ
  • অলিভ অয়েল- ২ টেবিল চামচ
  • লেবুর রস- ১ টেবিল চামচ

সবগুলো উপাদান একটি পাত্রে ভালো করে মিশিয়ে তৈরি করে নিন এই প্যাকটি। চুলে ৩০ মিনিট লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। এবং এরপর চুলে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুল ওয়াশ করে নিন। আমি চুলের কন্ডিশনার হিসেবে কিন্তু কোকোনাট মিল্কই ব্যবহার করেছি। চাইলে আপনারাও করতে পারেন। কোকোনাট মিল্কের এই প্যাক আমি সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করেছি আর এতে আমার চুল হয়ে উঠেছে শাইনি, সিল্কি আর মসৃণ।

দেখলেন তো আমি সবকিছুতেই ব্যবহার করেছি কোকোনাট মিল্ক। আসলে ত্বকের যত্ন হোক আর চুলের যত্ন কোকোনাট মিল্ক আসলে খুবই উপকারী একটা উপাদান। কোন ত্রুটি নেই এটির ত্বকের যত্নে এবং চুলের যত্নে। আমার বিয়ের গ্লোয়িং স্কিনের জন্য যদি আমি ধন্যবাদ কিছুকে জানাতে চাই তবে তা হবে এই কোকোনাট মিল্ক। আসলেই কোকোনাট মিল্কে রয়েছে জাদু। যেই জাদুর ছোয়াতে আমি আমার বিশেষ দিনটিতে ছিলাম এতটা সুন্দর।

ছবি- সংগৃহীত: থিংস ওয়েল মেক.কম

4 I like it
1 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort