তৈলাক্ত ত্বকের বেসিক স্কিন কেয়ারের এ টু জেড

তৈলাক্ত ত্বকের বেসিক স্কিন কেয়ারের এ টু জেড

3 (20)

তৈলাক্ত ত্বক নিয়ে অভিযোগের যেন শেষ নেই! গ্রিজিনেস, মেকআপ করলেই কিছুক্ষণ পর কালচে হয়ে যাওয়া, একনে, ওপেন পোরস, এমন আরও কত সমস্যা! কিন্তু, একটু জেনে বুঝে যদি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট সিলেক্ট করেন আর ঠিকঠাকভাবে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন, তাহলে অয়েলি স্কিন নিয়ে আপনার কোনো আক্ষেপ থাকবে না। কেন স্কিন বেশি তৈলাক্ত হয়ে যায়, কোন কোন ইনগ্রেডিয়েন্টস আপনার ত্বকের জন্য ভালো, কীভাবে যত্ন নিলে স্কিন প্রবলেমগুলো কমিয়ে আনা যায়, এই বিষয়গুলো আগে বুঝতে হবে। আশা করছি, এই আর্টিকেল থেকে আপনার অয়েলি স্কিনের জন্য ওভারঅল একটা সল্যুশন পাবেন। চলুন তাহলে জেনে নেই, তৈলাক্ত ত্বকের বেসিক স্কিন কেয়ার সম্পর্কে।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিয়ে যত কথা

স্কিন অয়েলি হওয়ার কারণ কী?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের কারণ হচ্ছে জেনেটিক্যাল ও হরমোনাল ইমব্যালেন্স। এছাড়া আবহাওয়াগত কারণ ও ডায়েটের উপরও এটি নির্ভর করে। শরীরে যদি তেল উৎপাদনকারি হরমোন বেশি অ্যাকটিভ থাকে, সেক্ষেত্রে স্কিনে অতিরিক্ত সেবাম উৎপন্ন হয়, এটাই স্বাভাবিক। টেস্টোস্টেরন হরমোনের (Testosterone hormone) প্রভাবে বয়ঃসন্ধিকালে সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড (Sebastian Gland) বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। স্কিনকেয়ারের কিছু ভুলও এই তৈলাক্তভাব বাড়িয়ে দেয়। ওভার ওয়াশ অর্থাৎ বার বার ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া, ভুল প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই, প্রোপারলি ময়েশ্চারাইজিং না করা- এগুলো কিন্তু অয়েলিনেসের পরোক্ষ কারণ। আবার ফুড সিলেকশনে ভুল হলেও স্কিনের অয়েল প্রোডাকশন বেড়ে যায়।

কীভাবে বুঝবেন আপনার তৈলাক্ত ত্বক? 

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপনার ফেইসের স্কিন হাত দিয়ে ফিল করুন ও আয়নায় দেখুন। তৈলাক্ত ত্বক কিনা সেটা বোঝার সবথেকে ভালো উপায় এটি। যদি ফেইস গ্রিজি লাগে, তবে বুঝবেন আপনার স্কিন টাইপ অয়েলি। মুখ ধোয়ার কিছু সময় পরেই আবার তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া, এনলার্জ পোরস বোঝা যাওয়া, গ্রিজিনেস, বার বার একনে বা বাম্পস দেখা দেওয়া এগুলোও অয়েলি স্কিনের বৈশিষ্ট্য।

কোন ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে ইউজ করবেন?

স্কিন কেয়ারের কিছুই বুঝি না, যা মাখি তাতেই ব্রণ হয়!”, “স্কিন এতো তেলতেলে, কীভাবে এটা কমাবো?”, “অয়েলি স্কিনের জন্য কোন কোন প্রোডাক্ট ভালো হবে?” এমন প্রশ্ন অনেকেই করেন। আসলে বিভিন্ন স্কিন টাইপের জন্য বিভিন্ন উপাদানের কার্যকারিতা আলাদা! এখন জেনে নিন, অয়েলি স্কিনের জন্য কোন কোন ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো সবচেয়ে ভালো। যখন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনবেন, এই ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো আছে কি না সেটা একবার দেখে নিতে পারেন।

১) স্যালিসাইলিক অ্যাসিড

স্যালিসাইলিক অ্যাসিড হলো এক প্রকার বিএইচএ (BHA) বা বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড। অনেকেই জানেন, এই উপাদানটি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস রিমুভ করে পোরস ক্লিন রাখে। ত্বক এর সেবাম ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণ করে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন কমিয়ে ফেলে। এছাড়া আরও অনেক স্কিন বেনিফিটস আছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন অয়েলি স্কিনের যত্নে এই উপাদানটি হলিগ্রেইল।

২) টি ট্রি অয়েল

টি ট্রি অয়েলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল (Anti-bacterial) এবং ন্যাচারাল অ্যান্টি-সেফটিক (Anti-Septic) প্রোপারটিজ আছে। বাম্পস, একনে, ফাঙ্গাল ইনফেকশন অর্থাৎ অয়েলি স্কিনে যে ধরনের প্রবলেমগুলো বেশি দেখা যায়, সেগুলো কমিয়ে আনতে টি ট্রি অয়েল দারুণ কাজ করে।

৩) গ্লাইকলিক অ্যাসিড (Glycolic acid) 

তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে এই উপাদানটি বেশ ভালো কাজ করে। গ্লাইকলিক অ্যাসিড হচ্ছে এক প্রকার আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (Alpha hydroxy acid)। এই স্কিনের অতিরিক্ত তেল বা শাইনিভাব কমাতে হেল্প করে। সেই সাথে পোরস বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করে এবং ব্রেকআউটস প্রিভেন্ট করে। গ্লাইকলিক অ্যাসিড স্কিনের টেক্সচার মেনটেইন করে, যার কারণে স্কিন হেলদি ও ফ্ললেস দেখায়।

৪) হায়ালুরোনিক অ্যাসিড (Hyaluronic acid)

হায়ালুরোনিক অ্যাসিড স্কিনে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা লক করে রাখে। হাইড্রেশন লেভেল ঠিক না থাকলে স্কিনে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। অয়েলি স্কিনে সেবাম বেশি থাকে, তার মানে এই নয় যে এটা হাইড্রেটেড স্কিন! অয়েলি স্কিনেও হাইড্রেশন ব্যালেন্স ঠিকঠাক রাখা জরুরি।

৫) গ্রিন টি 

গ্রিন টি তে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও স্কিনের জন্য উপকারী পলিফেনল (Polyphemus) পাওয়া যায়, যেটা একনে প্রন ও অয়েলি স্কিনের জন্য খুব ভালো কাজ করে। ব্যাকটেরিয়াল গ্রোথ ও হরমোনাল একনে কমানোর জন্য গ্রিন টি অত্যন্ত কার্যকরী।

৬) অ্যালোভেরা

স্কিন কেয়ারে বহুল ব্যবহৃত একটি হারবাল ইনগ্রেডিয়েন্ট হচ্ছে অ্যালোভেরা। এটি স্কিনে খুব দ্রুত মিশে যায় এবং সার্ফেস লেয়ারে (Surface Layer) ময়েশ্চার ধরে রাখে। অ্যালোভেরাতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রোপারটিজ থাকায় র‍্যাশ ও ব্রণের প্রকোপ কমাতে অনেকটাই সাহায্য করে। এছাড়াও এটি স্কিনের এক্সট্রা অয়েল শোষণ করে এবং রোমকূপ পরিষ্কার রাখে। তাই অয়েলি স্কিনের জন্য অ্যালোভেরা বেশ ভালো কাজ করে, যদি এই উপাদানে অ্যালার্জি না থাকে!

কীভাবে স্কিন কেয়ার করবেন? 

খুব সিম্পল ও বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করে তৈলাক্ত ত্বককে সুন্দর রাখা যায়! এক্ষেত্রে উপাদান ও ফর্মুলা দেখে প্রোডাক্ট সিলেক্ট করবেন। তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে এই স্টেপগুলো ফলো করতে হবে। মিলিয়ে নিন তো ঠিকভাবে আপনি স্কিনের যত্ন নিচ্ছেন কি না!

১. ক্লেনজিং 

লো পি-এইচ যুক্ত, নন কমেডোজেনিক (non-comedogenic) জেল বা ওয়াটার বেজড ফেইসওয়াশ বেছে নিন। আমাদের যাদের স্কিন অয়েলি, তাদের বার বার মুখ ধোয়ার স্বভাব আছে। এতে ত্বকের উপরিভাগ ড্রাই ফিল হয় কিন্তু সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড (Sebasiase Gland) আরও সেবাম উৎপন্ন করে ব্যালেন্স আনার চেষ্টা করে। তাই ওভার ওয়াশ করবেন না। মর্নিং ও নাইট স্কিন কেয়ারে একবার করেই ক্লেনজিং করাই ভালো।

২. এক্সফোলিয়েশন

অয়েলি স্কিনের জন্য সপ্তাহে দুইবার এক্সফোলিয়েট করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সাজেশন থাকবে, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বেইজড কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বেছে নেওয়ার। একে তো ক্রমাগত সেবাম সিক্রেশন, তারপর ডেড সেলস জমে গেলে স্কিনের কী অবস্থা হবে, নিশ্চয় বুঝতে পারছেন! ডার্ট, অয়েল, ব্ল্যাকহেডস, প্ল্যুশন এগুলো প্রোপারলি ক্লিন না করলে স্কিনে তো প্রবলেম হবেই। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী সপ্তাহে এক অথবা দু’বার কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ইউজ করতে হবে।

 

৩. আইস ম্যাসাজ 

পোর ক্লিন করার পাশাপাশি সেটা মিনিমাইজ করাটাও তো জরুরি। তাই সপ্তাহে তিন বা চার দিন ফেইসে আইস ম্যাসাজ করে নিন। তৈলাক্ত ত্বক ভালো রাখার জন্য এই সিম্পল স্টেপটি কিন্তু বেশ কার্যকরী। সরাসরি আইস রাব করবেন না, টিস্যু বা পাতলা কাপড়ে পেঁচিয়ে ফেইসে রাব করে নিন। আইস কিন্তু কোনো পার্মানেন্ট সল্যুশন দেয় না, সাময়িক সময়ের জন্য স্কিনে সুদিং ও কুলিং ফিল দেয় ও অয়েল কন্ট্রোল করে স্কিনে ফ্রেশনেস ফিরিয়ে আনে।

৪. টোনিং

অ্যালকোহল ফ্রি, ন্যাচারাল এক্সট্যাক্টযুক্ত বা অয়েলি স্কিনের জন্য বেনিফিসিয়াল উপাদান আছে; এমন টোনার আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে। টোনার স্কিনের পি এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে, তৈলাক্তভাব কমাতে সাহায্য করে এবং অন্যান্য স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যেন ভালোভাবে কাজ করে ত্বকে সেটার জন্য প্রস্তুত করে। তাই টোনিং স্কিপ করা উচিত নয়।

৫. ময়েশ্চারাইজিং  

এবার আসছে ময়েশ্চারাইজিং এর পালা। ম্যাট ফিনিশিং এর জন্য অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার নিতে হবে। ক্রিমি ও থিক ফর্মুলার ময়েশ্চারাইজার এড়িয়ে যাবেন। জেল বেইজড প্রোডাক্ট বেছে নিন যাতে পোরস ক্লগড না হয়ে যায়। অনেক কারণেই স্কিনের ময়েশ্চার লেভেল বা প্রোটেকটিভ লেয়ার ড্যামেজ হয়ে যায়। আর তখনই অয়েল প্রোডাকশন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ঠিকঠাক ময়েশ্চারাইজার বেছে নেওয়া খুবই জরুরি!

৬. সান প্রোটেকশন

সানস্ক্রিন সব ধরনের স্কিনের জন্যই মাস্ট। তবে অয়েলি ত্বকে ঘাম বেশি হয়। স্কিন আরও বেশি তেলতেলে হয়ে যাবে, এই ভয়ে অনেকেই সানস্ক্রিন স্কিপ করেন বা এড়িয়ে চলেন! এতে কিন্তু আপনার স্কিনের ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। জেল বেইজড (Gel based), অয়েল ফ্রি, ম্যাটিফাই ইফেক্ট (Mattify effect) দেয় ও লাইট ওয়েট ফর্মুলার সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

 

৭. তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে ফেইস মাস্ক বা প্যাক

সাপ্তাহিক স্কিন কেয়ার রুটিনে ফেইস মাস্ক বা প্যাক রাখুন। রেডিমেড মাস্ক বা প্যাক ইউজ করতে চাইলে অয়েল কন্ট্রোল করবে এমন উপাদান আছে কি না সেটা দেখে নিন। যেমন- মুলতানি মাটি, অ্যাকটিভেটেড চারকোল (Activity charcoal), চন্দন গুঁড়া, টি ট্রি অয়েল, গ্রিন টি ইত্যাদি। ক্লে মাস্ক অয়েলি স্কিনের জন্য হলিগ্রেইল।

৮. সিরাম অ্যাপ্লাই 

আপনার বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন যদি ঠিক থাকে তাহলে বিশ বছর বয়সের পর থেকে সিরাম অ্যাপ্লাই করতে পারেন। বিভিন্ন স্কিন প্রবলেমকে টার্গেট করে আলাদা আলাদা সিরাম সাজেস্ট করা হয়। যেমন- অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ারে পেপটাইড সিরাম (Peptide Serum), রেটিনল (Retinol), অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Ascorbic acid) ভিটামিন সি ইত্যাদি ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন। যাদের ওপেন পোরের প্রবলেম আছে তাদের জন্য নিয়াসিনামাইড (Niacinamide), ব্রণের সমস্যা থাকলে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড (Salicylic acid) ইত্যাদি। তবে একসাথে দু’ বা ততোধিক অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট স্কিনকেয়ার রুটিনে রাখা যাবে না। সিরাম ব্যবহার করলে সান প্রোটেকশন কিন্তু মাস্ট, কেননা এগুলো ফটো সেনসিটিভ।

আশা করছি, তৈলাক্ত ত্বক নিয়ে আপনাদের কনফিউশনগুলো দূর করতে পেরেছি। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, অয়েলি বা ফার্স্টফুড থেকে দূরে থাকুন আর ত্বকের ধরন বুঝে স্কিন কেয়ার শুরু করে দিন। ব্যস্ততার অজুহাতে আমরা অনেকেই নিজের যত্ন নেই না। কিন্তু স্কিনকে সুন্দর রাখার জন্য আর নিজের কনফিডেন্স লেভেল আরও বাড়ানোর জন্য এইটুকু সচেতন তো থাকতেই হবে, তাই না?

তাহলে এভাবে নিজেই নিজের যত্ন নিন আর থাকুন কনফিডেন্ট! আপনি চাইলে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলো কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।

ছবিঃ সাজগোজ

360 I like it
33 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort