সিজারের পর নেক্সট প্রেগনেন্সিতে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব কি?

সিজারের পর নেক্সট প্রেগনেন্সিতে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব কি?

pregnant-mom4

আমাদের দেশে অনেকেরই ধারণা একবার সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি হলে পরবর্তী প্রতিটি প্রেগনেন্সিতে সিজার করার দরকার হয়। আমেরিকান প্রেগনেন্সি এ্যাসোসিয়েশন এর রিপোর্ট অনুযায়ী সিজারিয়ান ডেলিভারির পরও ৯০% মায়েরা পরবর্তী প্রেগনেন্সিতে নরমাল ডেলিভারি করানোর জন্য উপযুক্ত থাকেন। এদের মধ্যে ৬০-৮০% মায়ের কোন সমস্যা ছাড়াই সিজারের পর নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি হয়। কিন্তু ডেলিভারি ট্রায়াল দেয়ার আগে দেখে নিতে হবে কোন কোন মায়েরা এই ডেলিভারির জন্য উপযুক্ত। এজন্য আগের সিজার সম্পর্কে কিছু তথ্য নিতে হবে। সিজারের পর নেক্সট প্রেগনেন্সিতে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব কিনা, চলুন জেনে নিই বিস্তারিত।

সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি কখন সম্ভব? 

১. পূর্বের সিজারের সংখ্যা

যাদের পূর্বে একটি  সিজার হয়েছে, তারাই  কেবলমাত্র পরবর্তীতে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি ট্রায়াল দিতে পারবে।

২. কী কারণে প্রথমবার সিজার হয়েছিল?

সিজার এমন কিছু কারণে হয়েছিল যা পুনরাবৃত্তি হবার সম্ভাবনা কম যেমন, বাচ্চার অ্যাবনরমাল পজিশনের কারণে সিজার হলে কিংবা বাচ্চা বা মায়ের কোনো সমস্যার কারণে সিজার হলে যা বর্তমান প্রেগনেন্সিতে অনুপস্থিত।

৩. পূর্বের সিজারের স্থানটি কতখানি মজবুত আছে? 

Lower uterine caessarean section বা LUCS (জরায়ুর নিচের অংশে সেলাই) এর ক্ষেত্রেই কেবল পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারি ট্রায়াল দেওয়ার সুযোগ থাকে, এক্ষেত্রে পূর্বের সেলাই ফেটে যাবার সম্ভাবনা ০.৫  থেকে ১.৫%। অন্যদিকে  ক্লাসিক্যাল সিজারের ক্ষেত্রে সেলাই ফাটার হার  ৪ থেকে ৯%।

৪. দুই প্রেগনেন্সির মধ্যে অন্তত দুই বছরের গ্যাপ থাকা উচিত, পূর্বের সেলাইয়ের স্থানটি মজবুত হয়।

সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয় প্লাসেন্টা প্রিভিয়াতে - shajgoj.com

৫. পূর্বের প্রেগনেন্সিতে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে বা সিজারের পর ইনফেকশন হলে সেলাইয়ের স্থানটি দুর্বল করে ফেলে যা পরবর্তীতে ফেটে যাবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

সিজারের পর নেক্সট প্রেগনেন্সিতে নরমাল ডেলিভারি

১. বর্তমান প্রেগনেন্সিতে মায়ের অন্যান্য জটিলতা যেমন উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে তাকে নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি ট্রায়ালের জন্য উপযুক্ত ধরা হয় না।

২. বাচ্চার ওজন চার কেজির কম থাকা এবং প্রসবের রাস্তা যথেষ্ট প্রশস্ত থাকাও নরমাল ডেলিভারির একটি পূর্ব শর্ত।

৩. সবকিছু ঠিক থাকলে এই ডেলিভারির সুবিধা অসুবিধা মা এবং অভিভাবকদের অবহিত করতে হবে। ডেলিভারি এমন হাসপাতালে ট্রায়াল দিতে হবে যেখানে ইমারজেন্সি সিজার করার দরকার হলে তা দ্রুত অ্যারেঞ্জ করা সম্ভব। বাচ্চা এবং মায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করাটা এক্ষেত্রে জরুরি বিষয়। উন্নত দেশে লেবারের সময় CTG (cardio-tocograph) মেশিনের মাধ্যমে বাচ্চাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়।

২০ থেকে ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে পরের বার নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয় না এবং ইমার্জেন্সি সিজারের দরকার হয়। এই ডেলিভারির সময় সঠিক মনিটরিং না হলে মা ও বাচ্চার জটিলতা বেড়ে যায়। অপরদিকে সফল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির মাধ্যমে শরীরে বাড়তি অস্ত্রপাচার এড়ানো যায়। শরীরে অস্ত্রপাচারের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে টিস্যু এডহেশন এবং টিস্যু ইনজুরির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আমাদের দেশে সিজারের পর নেক্সট প্রেগনেন্সিতে নরমাল ডেলিভারি প্র্যাকটিস সাধারণত করা হয় না। এর কারণ দক্ষ লোকবলের অভাব, মা ও বাচ্চার মনিটরিং এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা এবং নরমাল  ডেলিভারিতে মায়েদের অনিহা ও ভীতি। কিন্তু অনেক হাসপাতালে এখন এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, যেখানে লেবার রুমে মায়েদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। যদি নরমালে ট্রাই করতে কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়, সাথে সাথেই সিজার করিয়ে ডেলিভারির সুযোগ থাকে। তাই আগেই আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিতে হবে, কোনো রিস্ক আছে কিনা, হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা। শুভ কামনা সকলের জন্য!

লিখেছেনঃ ডা: নুসরাত জাহান

সহযোগী অধ্যাপক (গাইনী-অবস)

 

ছবিঃ সংগৃহীত – সাটারস্টক

45 I like it
3 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort