গর্ভকালীন ডায়াবেটিস | লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা কী?

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস | লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা কী?

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস চেক করছে একজন

একজন নারী মা হওয়ার শুরু থেকে সন্তান জন্ম দেয়া পর্যন্ত নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে সময় পার করেন। যেমন রক্ত স্বল্পতা, ব্লিডিং, বমি, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ইত্যাদি। এছাড়া অনেকে একটোপিক প্রেগনেন্সি বা জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণসহ নানান সমস্যায় পড়ে। আজ আমি আপনাদের জানাবো আমার সাথে ঘটা সমস্যা নিয়ে।

আমি তখন সাড়ে ৩ মাসের প্রেগন্যান্ট। প্রথম প্রেগন্যান্সি। আমার মা – বাবা নেই, আর ঢাকা শহরে থাকি ও একা। প্রেগন্যান্সিতে যেটা হয় সবার, প্রথম ট্রাইমেস্টারে বমি হওয়া, ব্লাড প্রেশার কমে যাওয়া, মাথাব্যথা, ক্লান্তি – এসবই আমার ও ছিল। ডাক্তার ওষুধ দিয়েছিলেন যেন বমি বন্ধ হয় আর খাওয়াদাওয়ার রুচি বাড়ে। এরপরে সেই ওষুধ খেয়ে যেই ঘটনা ঘটলো তা হলো, এইবার আমার সবই খেতে ভালো লাগে! ভয়াবহ মাত্রায় ভালো লাগে! নুডলস খেতে বসলে ভাতের প্লেটে এক প্লেট খেয়ে ফেলি, চার পদের ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে বসলে আনলিমিটেড ভাত।

যারা যারা আমাকে দেখতে আসে সবাই হাতে করে নিয়ে আসে মিষ্টি জাতীয় কিছু, সেগুলো ও খেয়ে বসে থাকি। কিছুদিন পর যেটা হলো, সেটা হচ্ছে, প্রেগন্যান্সির ৪ মাসেই আমার পেট টা বেশ বড় দেখাচ্ছে। আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে জানা গেলো পেটে অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের লেভেল বেশি, সহজ ভাষায় পেটের পানি বেড়ে গিয়েছে। ডাক্তার এবার ব্লাড সুগার চেক করে দেখলেন আমার ব্লাড সুগার লেভেল হাই, ঐটা র‍্যান্ডম সুগার চেক ছিল। এরপর প্রপার চেক করে অর্থাৎ ফাস্টিং এবং ব্রেকফাস্টের দুই ঘণ্টা পরে ব্লাড সুগার এবং ইউরিন টেস্ট করে ডাক্তার জানালেন আমার জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হয়েছে।

আমার মতো অনেকেরই কিন্তু এখন গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেসটেশনাল ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) হচ্ছে, সংক্ষেপে যেটাকে বলা হয় জিডিএম (G.D.M.)। এবং আগে যেটা দেখা যেত যে যারা ত্রিশ পার করার পর মা হচ্ছেন, তাদের এই সমস্যাটা বেশি হত, কিন্তু খন যেকোন বয়সীদেরই জিডিএম হচ্ছে।

জেসটেশনাল ডায়াবেটিসের লক্ষণ 

(১) ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া।

(২) ঘনঘন গলা শুকিয়ে যাওয়া, তৃষ্ণা পাওয়া।

(৩) ক্লান্ত লাগা।

(৪) দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া।

(৫) ইউরিন ইনফেকশন হওয়া।

জেসটেশনাল ডায়াবেটিসের কারণ

(১) কারো প্রি-ডায়াবেটিস থেকে থাকলে।

(২) আগের প্রেগন্যান্সিতে ডায়াবেটিস থাকলে।

(৩) নিকট আত্মীয় যেমন বাবা বা মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে।

(৪) পলিসিস্টিক ওভারী সিন্ড্রোম থাকলে।

(৫) অতিরিক্ত ওজন হলে (বি এম আই ৩০ এর বেশী হলে)।

(৬) ৩০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়স হলে।

(৭) ইতিমধ্যে ৪ কেজি বা ৯ পাউন্ডের বেশী ওজনের বাচ্চা জন্ম দিলে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কি?

প্রেগন্যান্সির ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বিশেষ এক ধরনের ডায়াবেটিস, যেটি কিনা কেবল প্রেগন্যান্সিতেই হয়ে থাকে। হরমোনের লেভেল ও নতুন শারীরিক পরিবর্তনের কারণে মায়ের শরীর সঠিক পরিমান ইনসুলিন তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। ইনসুলিন এক ধরনের হরমোন, যা অগ্ন্যাশয়ে তৈরি হয়। এটি শরীরকে রক্তের গ্লুকোজের লেভেল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যখনি শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণও বেড়ে যায়। যাকে ডাক্তারী পরিভাষায় জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস মেলিটাস বলা হয়। সাধারণত ডেলিভারির পর এইটা চলে যায়। তবে, অনেকের ক্ষেত্রে টাইপ ২ এর মতো থেকেও যেতে পারে। তবে থাকুক, আর নাই থাকুক, অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মধ্যে থাকতে হবে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে করনীয় কী?

(১) গ্লুকোজ টেস্ট

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস পরীক্ষায় গ্লুকোজ টেস্ট - shajgoj.com

নিয়মিত গ্লুকোজ টেস্ট করাবেন। সবচেয়ে ভালো হয় বাসাতেই একটা গ্লুকোমিটার কিনে নিলে। সকালে খালি পেটে, ব্রেকফাস্টের দু ঘণ্টা পর, আবার লাঞ্চের দু ঘণ্টা পর, এভাবে নিয়ম করে মাপবেন, এবং একতা চার্টে লিখে রাখবেন যেন ডাক্তারকে পরবর্তী চেকআপের সময় দেখাতে পারেন।

(২) হাঁটা-চলার বিকল্প নেই

শারীরিকভাবে অ্যাক্টিভ থাকার চেষ্টা করবেন। নিয়মিত কমপক্ষে আধঘণ্টা করে হাঁটবেন। নিজের কাজগুলো নিজে করার চেষ্টা করবেন। অযথা শুয়ে বসে থাকবেন না।

(৩) কার্বোহাইড্রেট এবং মিষ্টি জাতীয় জাতীয় খাবারে সাবধানতা

কার্বোহাইড্রেট এবং মিষ্টি জাতীয় জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিবেন, এবং সিম্পল কার্বের পরিবর্তে কমপ্লেক্স কার্ব খাওয়ার চেষ্টা করবেন। ডায়েটে প্রোটিন রিচ ফুড বেশি রাখবেন। তাজা ফলমুল, শাকসবজি, মাছ-মাংস, বাদাম, দুধ এবং অন্যান্য ডেইরি প্রোডাক্ট বেশি রাখবেন। মনে রাখবেন, ফুড ইনটেক-ই আপনাকে একটা হেলদি প্রেগন্যান্সি দিতে পারে।

(৪)  দুশ্চিন্তাকে দূরে ঠেলুন

দুশ্চিন্তা করবেন না। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এখন খুব কমন একটা ব্যাপার। অনেকেরই হয়। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন আর সঠিক খাদ্যাভ্যাসই আপনাকে একটা হেলদি প্রেগন্যান্সি দিতে পারে।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওরাল মেডিসিন অথবা ইনসুলিন নিতে হতে পারে। এইবার শেষ কথা বলে বিদায় নিই। অনেকেই ভাবেন যে, ডায়াবেটিস হলেই নরমাল ডেলিভারি অসম্ভব! কথাটা কিন্তু ভুল। যদি আপনার জেসটেশনাল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আপনার অন্য কোন শারিরিক সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্যই নরমাল ডেলিভারির জন্য ট্রাই করতে পারেন। আমার নিজের কিন্তু নরমাল ডেলিভারিই হয়েছিল। এবং আমার এখন ডায়াবেটিস নেই, তবে আমি নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করার চেষ্টা করি।

SHOP AT SHAJGOJ

     

    সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

    ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক

    8 I like it
    1 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort