সিজার ও নরমাল ডেলিভারি | নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কী চান?

সিজার ও নরমাল ডেলিভারি | নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কী চান?

সিজার ও নরমাল ডেলিভারি

কিছুদিন আগে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি ঘোষণা বেশ আলোচনায় এসেছে। এখানে বলা হয়েছে অপ্রয়োজনীয় সিজার হলে ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। গাইনোকোলজিস্ট হিসেবে কিছু প্রশ্ন এসে যায়, তা হচ্ছে সিজারের দায়ভার সবই কি ডাক্তারের? এবং কীভাবে? একটা সমস্যার শিকড়ে না গিয়ে যদি আগা নিয়ে ঝাড়ফুঁক করা হয়, তাহলে সমাধান কখনো আসবে না। আমাদের সামাজিক এবং মানসিক অবস্থাও বিবেচনা করতে হবে। আমি দেখেছি প্রেগন্যান্ট রোগীরা সিজার ও নরমাল ডেলিভারি এর ব্যাপারে মোটামুটি তিন ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেন।

নেগেটিভ পেশ্যান্ট 

এরা কনসিভ করার সাথে সাথেই সিজারের জন্য প্রস্তুতি নেয়। লেবার পেইন এড়ানোর জন্য তারা সময়ের আগেই ইলেক্টিভ সিজারের ডিসিশন নেয়। তাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ইঞ্জেকশন দিতেও ভয় পান। এই রোগীদের সিজারের দায়ভার কীভাবে ডাক্তারের হয় বুঝতে পারছি না।

Sale • Foot Care, Acne Treatment, Face Wash

    নিউট্রাল পেশ্যান্ট

    কাউন্সিলিং-এর পর এরা নরমাল ডেলিভারি করাতে রাজি হন। কিন্তু ব্যথা শুরু হলে কোনভাবেই আর ব্যথা সহ্য করতে চান না, যার ফলে ডাক্তারকে ইমার্জেন্সি সিজার করতে হয়, যা অনেক সময় ম্যানেজ করা সময় সাপেক্ষ এবং কষ্টকর ব্যাপার। ফলে অনেক ভুক্তভোগী এবং অভিজ্ঞ ডাক্তার রোগীকে নরমাল ডেলিভারির কাউন্সিলিং-এ না গিয়ে সিজার করাই নিরাপদ মনে করেন।

    পজেটিভ রোগী

    যারা সত্যিকার অর্থেই নরমাল ডেলিভারি চান এবং এরাই প্রকৃতপক্ষে ভুক্তভোগী। দুঃখজনক হলেও সত্য শহরের শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে এমন রোগীর সংখ্যা অনেক কম। এই রোগীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দালালদের খপ্পরে পড়েন এবং দালালদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে খুশি রাখতে গিয়ে এরা সিজারের মাধ্যমে বলি হন। এক্ষেত্রে ক্লিনিক এবং হাসপাতালের মালিকেরা নেপথ্যের নায়ক হলেও সামনে থাকে যন্ত্রমানব ডাক্তার। খুবই আজব হলেও সত্যি এই সিজার করে তারা তথাকথিত দালাল বা কোয়াকদের চেয়েও কম সম্মানি পেয়ে থাকেন।

    একজন প্রেগনেন্ট নারী

    যাই হোক, এটা অস্বীকার করা যাবে না, নরমাল ডেলিভারি আমাদের দেশে শুধু রোগীদের জন্যই ভীতিকর নয়, অনেক ডাক্তারও আ্যভয়েড করতে চান। এর কারন বহুবিধ। সৌদি আরবে কিছুদিন চাকুরী করার কারণে আমাদের ঘাটতিগুলো অনুমান করতে পারছি, যার কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম-

    (১) বেশিরভাগ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নরমাল ডেলিভারি-তে অভিজ্ঞ মিড ওয়াইফ/সিস্টার/ডিউটি ডাক্তার থাকে না, যার ফলে কনসালটেন্ট-রা তাদের রোগীদের ফলোআপ করানোর জন্য কারো উপর ভরসা রাখতে পারেন না, যার ফলে রিস্ক না নিয়ে সিজার করেন।

    (২) লেবারের সময় বাচ্চার অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য সিটিজ, ডপলার, বেডসাইড আলট্রাসনোগ্রাম-এর সুবিধা না থাকা।

    (৩) আমাদের দেশে ডেলিভারির ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট প্রটোকল / নীতিমালা নেই। উন্নত দেশে ডাক্তাররা নীতিমালা মেনে চিকিৎসা করার পরেও যদি রোগীর কোন সমস্যা হয়, তবে সে আইনগত জটিলতা এড়াতে পারেন, যার কারণে সেফটি নিয়ে কাজ করা সম্ভব। অন্যদিকে আমাদের দেশে রোগীর কোন সমস্যা হলে চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্লেষণ না করেই যেকোন সমস্যার দায়ভার চিকিৎসকের উপর দেয়া হয়। ডাক্তারদেরও অনেক সময় শারীরিক এবং মানসিক লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে হয়, ফলে অনেকেই রিস্ক নিয়ে সঠিক  প্রটোকলে ( নরমাল ডেলিভারি) না গিয়ে,  সেফটি জোন হিসেবে সিজার করাই যুক্তিযুক্ত মনে করে।

    সম্প্রতি বহুল জনপ্রিয় একটি হাসপাতালে এক বাচ্চার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও ফেসবুকে দেখলাম। যেহেতু ঘটনা সম্পর্কে সবাই অবহিত তাই বিশ্লেষণ করছি না। তবে রোগীর যা বলেছেন (যেমনঃ লেবার পেইন বাড়ানোর স্যালাইন দেয়া, কিছুক্ষণ পর পর পিভি করা,পানি ভাঙা ইত্যাদি),  তা নরমালভাবেই লেবারের নিয়ম অনুযায়ী করা হয়ে থাকে। এরপর যখন এই ভিডিও-এর প্রতিক্রিয়ায় জনসাধারণের আক্রমণমুখী কমেন্টগুলো পড়লাম, তখন বুঝতে পারলাম আমরা জাতি হিসেবে কত অস্থির আর প্রতিক্রিয়াশীল। চারদিকে হাজারো অনিয়ম দেখতে দেখতে সবাই আজ হতাশাগ্রস্থ। তাই ডাক্তাররা সিজার করতে চাইলে ভাবে টাকার জন্য আর নরমাল ডেলিভারি করতে চাইলে ভাবে কি কারণে এই কষ্ট দেয়া হচ্ছে? এটা ভুলে গেলে চলবে না টাকার চেয়ে জীবনের মায়া সবার ক্ষেত্রেই বেশি। আর একজন ডাক্তারের কাছে রোগীর জীবনের উপর রিস্ক নেয়া আর নিজের উপর রিস্ক নেয়া সমান ব্যাপার। সিজার ও নরমাল ডেলিভারি সম্পর্কে জানলেন। আশা করি, আজকের আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল।

     

    লিখেছেন- ডা: নুসরাত জাহান, সহযোগী অধ্যাপক (গাইনী), ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মিরপুর ১, ঢাকা

    ছবি – Shutterstock

    1 I like it
    1 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort