গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা প্রিভিয়া | গর্ভফুল জরায়ুমুখে লেগে থাকলে করণীয় কী?

গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা প্রিভিয়া | গর্ভফুল জরায়ু মুখে লেগে থাকলে করণীয় কী?

গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা প্রিভিয়া আছে কিনা দেখছেন একজন ডাক্তার

আজকে আমি যা নিয়ে লিখতে যাচ্ছি, তা আমার নিজের জীবনের ও একটি অধ্যায় ছিল এবং বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন গর্ভবতী নারীরা এই গর্ভকালীন জটিলতায় ভোগেন, যেটা হলো গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Placenta Previa), সহজ বাংলায় বলতে গেলে গর্ভফুল নিচের দিকে থাকা।

গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল তৈরি হয়, যা জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে লেগে থাকে। মা ও ভ্রূণের যোগাযোগ এই গর্ভফুলের মাধ্যমে হয়। ভ্রূণকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগানোর ব্যবস্থা করে এই গর্ভফুল, আম্বিলিকাল কর্ডের মাধ্যমে। এখন এই গর্ভফুল বা প্লাসেন্টাটি সাধারণত জরায়ু মুখের চেয়ে অনেক দূরে উপরের দিক থেকে লেগে থাকে। কিন্তু গর্ভফুলটি যদি জরায়ুর একদম নিচের দিকে বা জরায়ু মুখে লেগে থাকে, তাহলে এই মেডিকেল কন্ডিশনকে গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলে।

গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার লক্ষণ - shajgoj.com

প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলে গর্ভস্থ সন্তানের মাথা সাধারণত সঠিক অবস্থানে থাকে না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথা উপরের দিকে বা আড়াআড়ি থাকতে দেখা যায় , যেটাকে বলা হয় ব্রীচ পজিশন। এবং এ সমস্যায় সাধারণত গর্ভবতী নারীরা স্পটিং (Spotting) বা হালকা থেকে ভারী রক্তপাতের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। কিন্তু এ রক্তপাতের সময় কোন ব্যথা অনুভূত হয় না। যদিও এমনটি হলে সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তার নির্দেশমত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা প্রিভিয়া সাধারণত তিন রকমের হয় –  

(১) যদি গর্ভফুল জরায়ু মুখকে পুরোপুরি ঢেকে রাখে তাহলে সেটা হলো কম্পলিট/টোটাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Complete/Total Placenta Previa)।  

(২) যদি গর্ভফুল জরায়ুমুখকে আংশিক ঢেকে রাখে, সেটাকে বলা হয় মার্জিনাল বা পার্শিয়াল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Marginal/Partial Placenta Previa)।  

(৩) আর যদি জরায়ুমুখের ২ সেন্টিমিটারের মধ্যে থাকে গর্ভফুলটি, কিন্তু জরায়ুমুখকে ঢেকে রাখেনি, এই সমস্যাকে বলা হয় লো লায়িং প্লাসেন্টা (Low Lying Placenta)।  

সাধারণত কারা থাকেন ঝুঁকিতে?  

বর্তমানে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, প্রতি ২০০ জন গর্ভবতী নারীর মধ্যে অন্তত একজন এই প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার সমস্যায় আক্রান্ত। যদিও প্লাসেন্টা প্রিভিয়া কেন হয়, এইটার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো অজানা, কিন্তু কিছু কিছু বিষয় এ সমস্যাকে ট্রিগার করে বলে মেডিকেল সায়েন্সে বলা হয় সেগুলো হলো –  

(১) পূর্বে সিজারিয়ান ডেলিভারি হলে।

(২) বয়স ৩৫ এর অধিক হলে।

(৩) জরায়ুতে পূর্বে কোন সার্জারি করা হলে।

(৪) পূর্বে চারবারের বেশি সন্তান জন্মদান করলে।

(৫) ধূমপান এবং মাদকদ্রব্য সেবন করলে।

(৬) গর্ভে দুই বা ততোধিক সন্তান একসাথে থাকলে।  

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রেগন্যান্সির থার্ড ট্রাইমেস্টার আসতে আসতে প্লাসেন্টা তার সঠিক পজিশনে চলে যায়। এজন্য ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত মেডিকেল চেক আপ করাতে হবে এবং আল্ট্রাসাউন্ড করলে জানা যাবে যে বর্তমানে প্লাসেন্টার পজিশন কি। কিন্তু যদি আপনার ঘনঘন ভ্যাজাইনাল ব্লীডিং হয়, এবং আল্ট্রাসাউন্ডে দেখা যায় যে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া আছে, তাহলে হয়তো ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী –

 – আপনাকে পুরোপুরি বেডরেস্টে থাকতে হতে পারে।

– ভারী কাজ এবং জার্নিতে নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে।

– ফিজিক্যাল ইন্টারকোর্সে ও নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে।  

যদি থার্ড ট্রাইমেস্টারে ও প্লাসেন্টার পজিশন ঠিক না হয়, তাহলে হয়তো ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনাকে সি সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করাতে হতে পারে। কারণ গর্ভফুল যদি জরায়ু মুখকে পুরোপুরি ঢেকেই রাখে তাহলে গর্ভস্থ শিশুর বের হওয়ার প্রক্রিয়াতে টিয়ারিং হয়ে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে , যা মা ও সন্তান উভয়ের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে যদি গর্ভফুল আপনা আপনি সঠিক অবস্থানে চলে যায় (যা আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে জানা সম্ভব), তাহলে নর্মাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি সম্ভব।  

গর্ভাবস্থায় সবসময় নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেক আপ করাতে হবে এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করবেন।

ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক

34 I like it
10 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort