বয়স বাড়লেও মস্তিষ্ক সচল রাখার উপায় | ৯টি কার্যকর পদ্ধতি

বয়স বাড়লেও মস্তিষ্ক সচল রাখার উপায় | ৯টি কার্যকর পদ্ধতি

Untitled design

বয়স বাড়লেও মস্তিষ্ক সচল রাখার উপায় জানেন? আজকের লেখায় থাকছে এমন ৯টি সহজ কিন্তু কার্যকর পরামর্শ, যা আপনার চিন্তাশক্তি, স্মরণশক্তি এবংমানসিক দক্ষতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কেও পরিবর্তন আসে—এটাই স্বাভাবিক। অনেকেই হয়তো খেয়াল করেন, চাবির গোছা কোথায় রেখেছেন ভুলে যাচ্ছেন, কথার মাঝে সঠিক শব্দ মনে করতে পারছেন না কিংবা নাম মনে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। এইসব বিষয় মানেই কিন্তু ডিমেনশিয়া নয়, তবে এগুলো এড়াতে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে কিছু সহজ ও বৈজ্ঞানিক উপায় আছে।

আজকের আলোচনায় জানাবো এমনই ৯টি কার্যকর পদ্ধতি, যা বয়স বাড়লেও আপনার চিন্তাশক্তি, স্মরণশক্তি এবং মানসিক উৎকর্ষ ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

বয়স বাড়লেও মস্তিষ্ক সচল রাখা সম্ভব

বয়স বাড়লেও মস্তিষ্ক সচল রাখার উপায়

১. রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন:

উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে এবং ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে-

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন
  • নিয়মিত হাঁটুন
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • সময়মতো রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করুন

২. ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করুন:

ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করতে পারে এবং স্মরণশক্তি দুর্বল করে।
তাই ধূমপান সম্পূর্ণ ত্যাগ করুন এবং মদ্যপানে সীমারেখা টানুন।

৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম রক্তপ্রবাহ বাড়ায় এবং সেটা মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
হাঁটাহাঁটি করা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা হালকা যোগব্যায়াম মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়।
যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি এক-তৃতীয়াংশ কম।

মস্তিষ্কবান্ধব খাদ্য বেছে নিন

৪. পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন:

মস্তিষ্ককে সচল রাখতে এমন খাদ্য বেছে নিন যা পুষ্টিকর।
মস্তিষ্কবান্ধব খাদ্য, যেমন—সবুজ শাকসবজি, বাদাম, বীজ, সামুদ্রিক মাছ, বেরি ফল ও অলিভ অয়েল ইত্যাদি। এছাড়াও ‘মাইন্ড ডায়েট’ অনুসরণ করলে মস্তিষ্কের বয়সজনিত ক্ষয় কমে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ে।

৫. মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখুন:

আপনার চিন্তাভাবনাকে সচল রাখতে নতুন কিছু শিখুন।
যেমন নতুন ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, বই পড়া, গল্প লেখা ইত্যাদি।
এধরনের কাজ মস্তিষ্কের নিউরনগুলো সক্রিয় রাখে এবং বয়সের সাথে সাথে এর কার্যক্ষমতা কমে না।

সামাজিক সম্পর্কগুলো বজায় রাখলে মন ভালো থাকবে

৬. সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখুন:

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা একাকীত্বে ভোগেন তাদের মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ কমে যায় এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ২৬%-২৮% বেড়ে যায়।
তাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখুন।

৭. নিয়মিত যৌন জীবন বজায় রাখুন:

অনেকেই যৌন জীবনের গুরুত্ব ভুলে যান বয়স বাড়লে, কিন্তু এটি শুধু সম্পর্ক নয়, মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। যৌন তৃপ্তি মানে মানসিক ও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা, যা মস্তিষ্ককে তরতাজা রাখে।

৮. মস্তিষ্কের খেলা খেলুন:

স্মরণশক্তি ও চিন্তাশক্তি বাড়াতে পাজল, দাবা, স্যুডোকু বা স্মৃতিনির্ভর খেলা খেলতে পারেন।
যদিও এগুলো ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করে না, তবে এটি আপনার বুদ্ধির পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের কাজ করে।

দিনে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা গভীর ও টানা ঘুম দরকার

৯. পর্যাপ্ত ঘুমান:

ঘুমের সময় মস্তিষ্ক বর্জ্য পদার্থ দূর করে, যা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়।
দিনে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা গভীর ও টানা ঘুম দরকার।
যারা দিনে ৫ ঘণ্টার কম ঘুমান তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ এবং মৃত্যুঝুঁকি ২.৪ গুণ বেশি।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

বয়সের বাড়ার সাথে সাথে কিছুটা ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক, তবে যদি বারবার একই প্রশ্ন করেন, পরিচিত মানুষের নাম ভুলে যান, দৈনন্দিন কাজে অসুবিধা হয়—তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখা কোনো কঠিন কাজ নয়। একটু সচেতনতা, নিয়মিত অভ্যাস এবং ইতিবাচক জীবনধারা গড়ে তুললেই বয়স বাড়লেও বুদ্ধি ও স্মৃতি ধরে রাখা যায়।
আপনার চারপাশে যদি কেউ বয়সজনিত স্মৃতিভ্রান্তি বা মনোযোগ কমে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন, তাহলে এই লেখাটি তাদের সঙ্গে অবশ্যই শেয়ার করুন।

ছবি- সাটারস্টক

0 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort