স্কিনকেয়ার রুটিনে কোন কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যাবে এবং কীভাবে ব্যবহার করলে বেস্ট রেজাল্ট পাওয়া যাবে- এ দু’টো প্রশ্ন নারীদের কাছ থেকে আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। নিজের সৌন্দর্য নিয়ে যারা সচেতন, তারা সবাই চান ত্বক যেন সবসময় হেলদি ও গ্লোয়িং থাকে। কিন্তু চারদিকে এতো অপশনের ভিড়ে নিজের স্কিনের জন্য কোন প্রোডাক্টগুলো পারফেক্ট হবে সেটি নিয়ে সবারই কনফিউশন কাজ করে। বিশেষ করে যাদের বয়স ২২-২৫ এর মধ্যে এবং স্কিনকেয়ার শুরু করতে চাইছেন, তারা নিজেদের জন্য পারফেক্ট একটি স্কিনকেয়ার রুটিন খুঁজে পেতে বেশ স্ট্রাগল করেন। তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের জন্য একটি মিনিমাল স্কিনকেয়ার রুটিন সম্পর্কে চলুন জেনে নেই।
তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের জন্য ৪টি বেসিক স্টেপস
জাপানিজ বা কোরিয়ানদের অনেকগুলো স্টেপের স্কিনকেয়ার রুটিন দেখে মোটামুটি সবার মনেই একটা ধারণা গেঁথে গেছে যে স্কিনকেয়ার মানেই বুঝি লম্বা সময় আয়নার সামনে বসে অনেকগুলো প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করা। তবে মেডিকেল সাইন্সের মতে, মাত্র ৪টি বেসিক স্টেপেই আপনারা পেতে পারেন সুস্থ ও সুন্দর স্কিন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেই স্টেপগুলো।
ক্লেনজিং
যেকোনো স্কিনকেয়ার রুটিন ফলো করে ভালো রেজাল্ট পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো খুব ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করে নেওয়া। আগেকার দিনে মনে করা হতো, শুধু পানি ইউজ করলেই ত্বক পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু এ সময়ে এসে বিশেষ করে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় যে পরিমাণ দূষণ বেড়ে গেছে তাতে শুধু পানি দিয়ে ফেইস ক্লিন করা একেবারেই এনাফ নয়। আপনাদের অবশ্যই নিয়মিত ক্লেনজার ব্যবহার করতে হবে।
কোন ক্লেনজার ব্যবহার করবেন?
সবসময় মাইল্ড ক্লেনজার বেছে নেয়ার ট্রাই করুন। মাইল্ড ক্লেনজারে pH লেভেল কম থাকে বলে স্কিনের ক্ষতি হয়না। খুব হার্শ কেমিক্যালযুক্ত ক্লেনজার ব্যবহার করলে ত্বকের জন্য তা হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই যে ক্লেনজার খুবই মাইল্ড তা ত্বকের জন্য বেশ ভালো কাজে দেয়।
কতবার ক্লেনজিং করবেন?
ত্বকের ধরণ ও প্রয়োজন বুঝে ক্লেনজিং করতে হয়। প্রতিদিন সকাল ও রাতের বেলা ক্লেনজিংয়ের আদর্শ সময়। বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ত্বক ক্লেনজিং করা মাস্ট। কারণ সারাদিনের ধুলো ময়লা ত্বকে নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া কোনোভাবেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়।
ময়েশ্চারাইজিং
স্কিন ব্যারিয়ার শব্দটি হয়তোবা অনেকেরই পরিচিত। আমাদের ত্বকের ওপর এপিডার্মিস নামে খালি চোখে দেখা যায়না এরকম একটি সূক্ষ্ম লেয়ার আছে। মূলত এই লেয়ারটিই আমাদের ত্বককে বাইরের সমস্ত ধুলোবালি থেকে বাঁচায়। বাইরের সমস্ত ডার্ট, ধুলো কিংবা মেকআপ রেসিডিউ এই লেয়ারে এসে জমা হয় এবং ক্লেনজিং এর সময় সেগুলো ধুয়ে যায়। এই লেয়ারের নিচে ডার্মিস নামের আরেকটি লেয়ার রয়েছে যেখানে থাকা সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে ন্যাচারাল অয়েল প্রোডাকশন হয়। যতবার আমরা মুখ ধুই ,ততবার ত্বক এই ন্যাচারাল অয়েল হারাতে থাকে। এই অয়েলকে রিস্টোর করতে এবং ত্বকের ব্যারিয়ারকে সুরক্ষিত রাখতে ক্লেনজিং করার পর একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কোন ময়েশ্চারাইজার কিনবেন?
আপনার ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করতে পারেন। বাজেট ও ত্বকের ধরন অনুযায়ী নিয়মিত ব্যবহার করা যায় এরকম একটি ময়েশ্চারাইজার বাছাই করুন। যারা এয়ার কন্ডিশনড রুমে থাকেন তাদের জন্য এই স্টেপটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এসির আবহাওয়া আপনার ত্বকের আর্দ্রতা এমনিতেই স্বাভাবিকের চেয়ে কমিয়ে দেয়, তাই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সানস্ক্রিন
কাজের জন্য তো আমাদের নিয়মিত বাইরে বের হতেই হয় আর বাইরে গেলেই স্কিন সান এক্সপোজারে আসে। সান প্রটেকশন ছাড়া সূর্যের তাপে বেশিক্ষণ থাকলে আমাদের ত্বকের নিচের মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে মেলানিনের প্রোডাকশন বাড়তে থাকে, ফলে ত্বকের রঙ আস্তে আস্তে কালো হতে শুরু করে এবং একইসাথে ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যায়। এছাড়াও সূর্যের আলোতে থাকা ইউভি এ ও ইউভি বি রশ্মি স্কিন ক্যান্সার হওয়ার জন্য দায়ী। তাই বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে।
সানস্ক্রিন অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে টু ফিংগার রুলস ফলো করতে পারেন। দুই আংগুল সমপরিমাণ সানস্ক্রিন নিয়ে পুরো মুখে অ্যাপ্লাই করুন। এতে করে ত্বক ম্যাক্সিমাম প্রোটেকশন পায়। সেই সাথে তিন থেকে চার ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন রিঅ্যাপ্লাই করুন।
ভিটামিন এ
চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি মিরাকল প্রোডাক্ট হলো ভিটামিন-এ। ভিটামিন এ আমাদের ত্বকে তিন ধরনের কাজ করে।
- বয়সের সাথে আমাদের কোষের বৃদ্ধি কমে যায়, ভিটামিন-এ এই বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেয়
- ভিটামিন-এ কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়িয়ে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে
- ফ্রি রেডিকেল ড্যামেজ থেকে ত্বককে বাঁচায় এবং ত্বকের যেকোনো কালো দাগ, মেছতা ইত্যাদি দূর করে
মার্কেটে ভিটামিন এ সাধারণত রেটিনল, রেটিনয়েড বা রেটিনয়িক এসিড হিসেবে পাওয়া যায়, তবে সাধারণত রেটিনল সিরাম বা ক্রিম হিসেবেই বেশি পাওয়া যায়।
ভিটামিন এ কীভাবে ব্যবহার করবেন?
রাতের বেলা ত্বক ক্লেনজিং করার পর একটি ভালো ব্র্যান্ডের রেটিনল সিরাম অ্যাপ্লাই করতে পারেন। রেটিনল ত্বকে অ্যাবজর্ব হতে মোটামুটি ১০ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে । এটি অ্যাপ্লাই করার পর একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে ত্বককে হাইড্রেট করে নিতে ভুলবেন না। এভাবে টানা কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার করলে ত্বকের চেঞ্জ নিজের চোখেই দেখতে পারবেন।
লেখার শেষে বলতে চাই, তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের জন্য নিজের স্কিন টাইপ সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী প্রোডাক্ট ব্যবহার করা প্রয়োজন। সেই সাথে সবসময় অথেনটিক ও হাই কোয়ালিটি প্রোডাক্টস ইউজ করা প্রয়োজন। অথেনটিক মেকআপ, স্কিনকেয়ার ও হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্টস আপনারা পেয়ে যাবেন সাজগোজে। ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। সাজগোজের বেশ কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। এই শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টারে অবস্থিত। এই শপগুলোর পাশাপাশি চাইলে অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার দরকারি বা পছন্দের সব প্রোডাক্টস।
ছবিঃ সাজগোজ।