রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া | কারণ ও প্রতিরোধে ১২টি খাদ্যাভ্যাস

রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া | কারণ ও প্রতিরোধে ১২টি খাদ্যাভ্যাস

রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া - shajgoj

রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া আমাদের দেশের নারীদের কাছে একটি অতি পরিচিত নাম। শুধু নারী কেন পুরুষেরাও অ্যানিমিয়ার শিকার হয়ে থাকেন। তবে সার্ভেতে দেখা গিয়েছে নারীদের সংখ্যাটাই যেন বেশি। আপনার শরীরের রক্তে যখন রেড ব্লাড সেল বা হিমোগ্লোবিন কমে যায় তখন সেই অবস্থাকে অ্যানিমিয়া বলে। এই পরিস্থিতির সম্মুখীন তখনই হতে হয় যখন শরীরে আয়রনের অভাব হয়। রক্তে অপর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রনের কারণে আমাদের দুর্বল লাগে, বমির ভাব আসে, সারাদিন ঘুমঘুম ভাব থাকে আর চেহারা হয়ে যায় ফ্যাকাসে। আমার আজকের লেখার মুখ্য উদ্দেশ্য অ্যানিমিয়ার ভয়ংকর ছোবল থেকে প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে আপনাদের রক্ষা করা আর সেই সঙ্গে অ্যানিমিয়ার আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরা।

রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাব্য কারণ

রক্তক্ষয় হলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে। অনেকদিন ধরে ধীরে ধীরে শরীর থেকে যদি রক্তের ক্ষয় ঘটতে থাকে তাহলে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। ধীর গতিতে রক্তের এই অপচয় আলসার, ক্যান্সার, মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত অথবা সন্তান জন্মের সময় রক্ত ক্ষরণের কারণে হতে পারে। অপর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্নের কারণেও অ্যানিমিয়া হয়ে থাকে।

Sale • Pigmentation, Serums, Talcum Powder

    আর এই অল্প লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্নের পেছনে দায়ী হল –

    ১. সিকেল সেল অ্যানিমিয়া

    সিকেল সেল ও নরমাল ব্লাড সেল - shajgoj.com

    জেনেটিক কারণে লোহিত রক্তকণিকা crescent আকার ধারন করে ফলে তারা দ্রুত ভেঙ্গে যায় আর আমরা রক্তশূন্যতার কবলে পড়ি।

    ২. ভিটামিনের অভাব

    ভিটামিন ১২ বা ফোলেটের অভাবে এই সমস্যার শুরু হয়। কারণ এই ২টি ভিটামিন শরীরে রেড ব্লাড সেল উৎপন্ন করে।প্রয়োজনের তুলনায় কম মাংস খেলে শরীরে ভিটামিন ১২ এর অভাব দেখা দেয়। অন্যদিকে সবজি ওভার কুক করলেও তাতে বিদ্যমান ফোলেট থেকে আমরা বঞ্চিত হয়।

    ৩• আয়রনের অভাব

    সাধারণত খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত আয়রনের অভাবেই আমাদের দেশের নারীরা রক্তশূন্যতার শিকার হয়ে থাকেন। অপর্যাপ্ত আয়রনের কারণে রেড ব্লাড সেলের জন্য আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় পরিমাণ হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে না। ফলে আয়রনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়া আমাদের আক্রমণ করে। তাছাড়া ঘন ঘন রক্তদান, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণও শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

    ৪• বোনম্যারও এর সমস্যা

    হাড্ডির মাঝে থাকা অস্থিমজ্জা হিমোগ্লোবিন তৈরি করার জন্য আয়রনের সাহায্য নেয়। যখন বোনম্যারও রেডিয়েশন, ওষুধ, ইনফেকন, লেড অথবা কেমোথেরাপি দ্বারা ইনজুরি হয় তখন আর প্রয়োজনীয় রেড ব্লাড সেল তৈরি করতে পারেনা। আর তখন একে বলে বোনম্যারও সমস্যাজনিত অ্যানিমিয়া।

    অ্যানিমিয়া মোকাবেলায় কিছু ঘরোয়া টিপস

    ০১. ভিটামিন সি খাদ্য থেকে আয়রন শোষণে সাহায্য করে। টমেটো, লেবু, টক জাতীয় ফল, ক্যাপসিকাম এগুলো ভিটামিন সি এর ভালো উৎস।

    ০২. খাদ্যতালিকায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। যেমন মাংস, মাছ, বাদাম, সবুজ শাকসবজি, কচু, কলিজা এসব খাবার প্রচুর পরিমাণে খাবেন।

    ০৩. ইস্পিরিলুনা একটি নীলাভ সবুজ algae যা অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার জন্য উপকারী। ডেইলি ১ চা চামচ রসই যথেষ্ট। তবে আজকাল ক্যাপসুল আকারেও ইস্পিরিলুনা পাওয়া যায়।

    ০৪. কফি, চা রেড ওয়াইন আয়রন শোষণে বাঁধা দান করে। তাই আমাদের যাদের অ্যানিমিয়া আছে তাদের এসব পানীয় পরিহার করাই স্বাস্থ্যসম্মত।

    রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে ইপসম লবণ - shajgoj.com

    ০৫. ইপসম লবণের নাম অনেকেই হয়ত শুনেছেন। আধা বালতি পানিতে ২ টেবিল চামচ ইপসম লবণ মিশিয়ে প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। দেখবেন অনেকটা উপকার পাচ্ছেন।

    ০৬. প্রতিদিন এক চা চামচ মধু আর এক চা চামচ ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করুন। আপনি চাইলে এই সবগুলো একসাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। মধুতে যথেষ্ট পরিমাণে আয়রন, মেঙ্গানিজ, কপার আছে।

    ০৭. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন বি ১২ আর ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। কমলা, কলা, মটরশুঁটি, দুদ্ধজাত খাদ্য, ডিম এইগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন বি১২ আর ফোলেট আছে।

    ০৮. অ্যানিমিয়ার রোগীর জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে সবচেয়ে উপকারী চিকিৎসা হলো হাত, পা ম্যাসাজ করা। এতে করে শরীরে রক্ত চলাচল সঠিক উপায়ে হবে।

    ০৯. আয়রন দিয়ে বানানো পাত্রে রান্না করার চেষ্টা করুন। এটা প্রমাণিত হয়েছে এসব পাত্রে রান্না করা খাবারে আয়রনের পরিমাণ অনেকখানি বেড়ে যায়।

    ১০. এক কাপ আপেলের জুসের সাথে এক কাপ বিট রুটের জুস আর চিনি মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে খান।

    রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে টমেটোর জুস - shajgoj.com

    ১১. আপেল আর টমেটোর জুসও অ্যানিমিক রোগীর জন্য ভালো।

    ১২. একটি পাকা কলার সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খাবেন। এভাবে প্রতিদিন ২টি করে কলা মধুর সংমিশ্রণে খেতে হবে। আমরা সবাই জানি কলাতে অনেক আয়রন আছে সেই সঙ্গে মধুও যোগ করা হল। তাহলে এর থেকে পুষ্টিকর খাবার এক জন রক্তশূন্যতার রোগীর জন্য আর কি কিছু আছে?

    আসলে অ্যানিমিয়া সারাবার মুল মন্ত্রতন্ত্র খাবারের মধ্যেই নিহিত আছে। আপনি যদি রক্তশূন্যতায় ভুগেন তাহলে সবার আগে নজর দিবেন আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। আর চেষ্টা করবেন অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর এর প্রতিকার না খুঁজে প্রথম থেকেই এর প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলার। কারণ একবার কোন অসুখ বিসুখে জড়িয়ে গেলে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সত্যি অনেক কষ্টকর। আর হবু মায়েদের বলছি সঠিক নিয়মে খাওয়া দাওয়া করুন নাহলে এর প্রভাব আপনি এবং আপনার অনাগত সন্তান ২জনের উপরেই পড়বে। আপনাদের সবার জন্য শুভ কামনা রইল।

    ছবিঃ সংগৃহীত – লার্ন.জেনেটিক্স.ইউটিএএইচ.এডু, ফার্মাসিকিউটালনেটওয়ার্কিং.কম, বডিঅ্যান্ডসোওল.কম

    113 I like it
    20 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort