ফাগুন আর ভালোবাসা - Shajgoj

ফাগুন আর ভালোবাসা

valentines-day-roses-flowers

আমরা বাঙালীরা অনেক বেশি উৎসবপ্রবণ।দেশি হোক আর বিদেশি, যেকোন উৎসব আমরা গ্রহন করি সাদরে,আর উদযাপন করি প্রাণ ভরে।যেমন বিদেশ সংস্কৃতির ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালোবাসা দিবস এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব পরিনত হয়েছে,বিশেষ করে তরুন তরুনীদের জন্য। ভালোবাসা দিবস আর তার একদিন আগের পহেলা ফাল্গুন নিয়ে আবেগ,আনন্দ,চিন্তা আর উদ্বেগ চলতে থাকে একমাস আগে থেকেই।কিভাবে সাজব,কোন শাড়ীটা পরা হবে,প্রিয়জনকে কিভাবে চমকে দেয়া যায়,কি উপহার দেয়া যায় আরো কত কি…

শুরুতেই আসি সাজগোজের কথায়…

মনে রাখবেন শুধু একদিন মেকআপ করে আপনার সেরা সৌন্দর্য্যটি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়।সৌন্দর্য্যের প্রথম শর্ত হচ্ছে স্বাস্থ্যজ্জল ত্বক।ত্বক সুন্দর তো আপনি সুন্দর।সুস্থ ত্বকে মেকআপ সহজে বসে।এক সপ্তাহ হাতে রেখে ফেসিয়াল করে নিতে পারেন পার্লার থেকে।এমন কোন ফেসিয়াল করুন যেটা আপনার ত্বকের সাথে মানানসই।ত্বকের ধরন বুঝে স্পা ফেসিয়াল,অরেঞ্জ ফেসিয়াল,ভেজিটেবল পিল ফেসিয়াল,হারবাল,গোল্ড বা ডায়ামন্ড ফেসিয়াল(২৫বছরের উপরে) করতে পারেন।মুখে লোম থাকলে করে নিতে পারেন ফেয়ার পলিশও।থ্রেডিং,মেনিকিউর-পেডিকিউর সেরে ফেলুন পাশাপাশি।নিউ লুক আনতে চুলে নতুন কোন কাট দিতে পারেন।ট্রাই করতে পারেন কোন হেয়ার কালার ও।তবে অবশ্যই ৭-১০ দিন আগে।

পহেলা ফাল্গুনের উৎসবগুলো সাধারনত দিনের বেলাতেই হয়ে থাকে।তাই ন্যাচারাল লাইট মেকআপ বেশি ভালো লাগবে।নিজেকে সাজান বাঙ্গালী সাজে।সাজে রাখুন সবুজ,কমলা আর লালের ছোঁয়া।গাঢ় করে কাজল পরুন চোখে।ঠোঁট রাঙান কমলা লিপস্টিক বা লিপগ্লসে।সেটা হতে পারে ম্যাক, মোরাঞ্জ,ওয়েট& ওয়াইল্ডের পার্টি পারসিমন বা জ্যাকলিনের পামকিন পাই/অরেঞ্জ।

শাড়ি হিসেবে সুতি,কোটা বা জামদানি বেছে নিতে পারেন।একরঙা লাল পেড়ে বাসন্তি শাড়ির বদলে কমলা/বাসন্তি,সবুজ,লালের মিশেলের শাড়ি এখন বেশি পড়া হয়।বিশেষ করে রেইনবো শাড়ি এবার বেশ জনপ্রিয়। শাড়ি বদলে সালোয়ার কামিজও পরতে পারেন তবে থাকা চাই বাসন্তি ছোঁয়া।আর যাই হোক গাঁদা ফুল ছাড়া ফাল্গুন অসম্পূর্ন।গাঁদা,চন্দ্রমল্লিকা ফুলের মালা জড়িয়ে নিন খোঁপায় বা বেনিতে।হাতে বা গলায়ও পরতে পারেন মালা।তবে হাত ভর্তি রঙবেরঙের কাঁচের চূড়ি থাকা চাই-ই চাই।

ভালোবাসা দিবস বলতেই একেকজনের চোখে ভেসে ওঠে একেক রং।কারো লাল,কারো গোলাপী,আবার কারো নীল। এই তিন রঙের যেকোনটি বেছে নিতে পারেন।হতে পারে শাড়ি,সালোয়ার কামিজ,ফতুয়া,বা অন্য যেকোন পোশাক যাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।আপনি ও আপনার প্রিয় মানুষটি একি রঙের পোশাক পরতে পারেন।এখন ফ্যাশন হাউসগুলোতে যুগল পোশাক পাওয়া যায়।সময় থাকলে অর্ডার দিয়েও বানিয়ে নিতে পারেন।

আগের দিন চুল শ্যাম্পু করে ব্লো ড্রাই বা আয়রন করে নিন।চুল খোলা রাখতে পারেন।রিক্সায় আপনার উড়ন্ত খোলা চুল পাশে বসে থাকা আপনার প্রিয়মানুষটির ভালো লাগবে নিশ্চিত।দিনের সাজে হাল্কা,সফট,রোমান্টিক লুক বেছে নিন।চোখে কপার,ব্রাউন,গোল্ড,লাইট পার্পাল শ্যাডো,উইং আইলাইনার দিন।সাজে ভিন্নতা আনতে চোখে লেন্স পরতে পারেন।অব্যশই যদি আগে অভ্যাস থাকে।ব্রাঊন,হ্যাজেল,গ্রে শেডগুলো সব ধরনের ত্বকেই মানিয়ে যায়।লিপস্টিক হিসেবে বেছে নিন গোলাপী,লাল,বেরী,মোভ,ফুশিয়া এই ধরনের রঙ।MUA funk, Lime crime velvetiness-Red velvet, pink velvet, centrifuchsia, MAC- ViVa glam, Girl about town ,all fried up রঙগুলো মানাবে সবার ত্বকেই। রাতের পার্টিতে বেছে নিন লাল রঙের পোশাক সাথে ব্লাক স্মোকি আই আর গাঢ় লাল ঠোঁট।

সাজগোজ তো হলো এবার উপহারের পালা।মনে রাখবেন উপহার খুব দামি কিছু হতে হবে এমন নয়।উপহার নয়,এরসাথে জড়িয়ে থাকা ভালোবাসা আর আবেগটাই প্রধান।এখন বইমেলা চলছে।বই পড়ার অভ্যাস থাকলে তাকে সাথে নিয়ে কিনতে পারেন তার প্রিয় কোন উপন্যাস বা কবিতার বই।কবিতা বা গানের সিডিও হতে পারে সুন্দর উপহার।বইএর উপর আপনার মনের কিছু কথা লিখে ফেলুন।নিজের হাতে কার্ড বানাতে পারেন।আর আর্চিস,হলমার্ক তো আছেই।কৌসলে জেনে নিন তার কি প্রয়োজন।প্রয়োজনীয় জিনিসটি উপহার পেলে অনেক বেশি খুশি হবে।ছেলেদের জন্য ভালো উপহার হতে পারে আফটার শেইভ,শেভিং কিট,বডি স্প্রে,পারফিউম,ঘড়ি,লাইটা্‌র,সানগ্লাস।ইলেক্ট্রনিক্স পছন্দ করে না এমন ছেলে খুঁজে পাওয়া যাবে না।বাজেট বেশি হলে দিতে পারেন মোবাইল বা এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ।সবকিছুর সাথে একগুচ্ছ ফুল দিতে ভুলবেন না।মেয়েদের জন্য ভালো উপহার হতে পারে বই,ফুল,শাড়ি,চকলেট বক্স,টেডি বেয়ার,পায়ের নূপুর,পারফিউম,তার প্রিয় কোন কসমেটিক্স।ভালোবাসা দিবস কিন্তু শুধুমাত্র বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।বাবা মা,ভাইবোনের জন্য কিনে ফেলুন বই,শাড়ি বা তাদের প্রিয় কোন কিছু।বলে ফেলুন আপনি তাদের কত ভালবাসেন।

পহেলা ফাল্গুনে দল বেধে বেড়াতে যেতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাতে।ওখনে ফাগুনের নানা উৎসব চলে দিনভর।ভালোবাসা দিবসে প্ল্যান করতে পারেন রোমান্টিক লাঞ্চ বা ডিনার।বেছে নিতে পারেন বুফে লাঞ্চ বা ডিনা্র,অনেকক্ষন ধরে খাওয়া দাওয়া আর গল্পের জন্য।তারপর হতে পারে রিক্সাভ্রমন আর সিনেপ্লেক্স বা ব্লকবাস্টার সিনেমায় মুভি টাইম।আপনার ভ্যালেন্টাইন্স যদি হয় আপনার স্বামী বা স্ত্রী,তাহলে নিজের হাতে রান্না করে ফেলুন তার প্রিয় সব খাবার।বাসায় হতে পারে রোমান্টিক ক্যান্ডেল লাইট ডিনার।

ফাগুনের রঙে আর ভালোবাসার সুবাসে রঙিন হয়ে উঠুক আপনার জীবন।

লিখেছেনঃ মৌসুমি তানিয়া

ছবিঃ মাইকোটসগার্ডেন

1 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort