মেকআপ করতে আমরা কমবেশি সবাই পছন্দ করি। বাইরে বের হলে কাজল বা আইলাইলার দিয়ে চোখ সাজানো আর ঠোঁটে একটু লিপস্টিক না লাগালেই নয়, তাই না? কিন্তু গরমে মেকআপ করে কি খুব একটা শান্তি পাওয়া যায়? না! মেকআপ করলেই তো ফেইস অনেক ঘামে আর এর কারণে মেকআপটা লং লাস্টিং হয় না। এমন অভিযোগ অনেকের কাছেই শুনেছি। গরমে খুব হালকা মেকআপ করলেও অনেক সময় ঘেমে মেকআপ নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে আন্ডার আই, নাকের দুই পাশ, ঠোঁটের উপরে ও নিচে এবং কপালের জায়গাটা কেমন যেন দেখায়! এই প্রবলেম সল্ভ করতে দরকার একটু এক্সট্রা কেয়ার এবং কিছু মেকআপ হ্যাকস। তাহলে এখনই জেনে নিন গরমে লং লাস্টিং মেকআপের জন্য কার্যকরী কিছু টিপস ও হ্যাকস।
ফাউন্ডেশন ব্যবহার না করেও মেকআপ বেইজ
ন্যাচারাল বা লাইট ওয়েট মেকআপ বেইজের প্রথম শর্ত হল স্কিনটোনের সাথে ম্যাচ করে লাইট ওয়েট ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা। কিন্তু গরমে অফিস, ভার্সিটি অথবা আউটিংয়ে যাওয়ার সময় ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পরিবর্তে যদি ফেইস পাউডার অথবা প্রেসড পাউডার ব্যবহার করা যায়, তাহলে কিন্তু ফেইস অনেকটাই কম ঘামে। তবে আমাদের স্কিনে কিছু স্পট থাকে, যা শুধু ফেইস পাউডার দিয়ে কভার করা যায় না। যদি ডার্ক সার্কেল, স্পট এবং পিগমেনটেশন থাকে, সেই জায়গাগুলোতে কনসিলার দিয়ে ফিক্স করে নিয়ে এরপর ফেইস পাউডার দিয়ে বেইজ করে নিতে হবে। তবে বেইজ করার আগে কিছু টিপস মেনে চললে মেকআপ হবে ফ্ললেস এবং লং লাস্টিং।
বেইজ মেকআপের আগে স্কিন প্রিপেয়ারিং
১। ফেইস ওয়াশ বা ক্লেনজার দিয়ে ভালোভাবে মুখ ওয়াশ করে নিয়ে আইস কিউব (বরফ) দিয়ে পুরো ফেইসে একটু রাব করে নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় পাতলা কাপড়ে আইস কিউব নিয়ে তারপর ফেইসে রাব করলে, এতে ফেইসে হার্শনেস ফিল হবে না।
এখন বলি আইস কিউবের বিউটি বেনিফিট। গরমে অনেকেরই স্কিনে রেডনেস দেখা যায় বা সেনসিটিভিটির কারণে ইরিটেশন বা অন্যান্য প্রবলেম দেখা দেয়। ফেইসে আইস কিউব রাব করে নিলে রেডনেসের প্রবলেম হয় না! এটা ছাড়া আরও একটা কারণ আছে যেই কারণে আইস ম্যাসাজ খুবই কার্যকরী, আর সেটা হলো আইস কিউব ফেইসে রাব করে নিলে স্কিনের পোরস মিনিমাইজ হয়, এতে স্কিন সহজে অয়েলি হয়ে যায় না। পোরের ভিজিবিলিটি কম হলে মেকআপ ফ্ললেস দেখায়। ফলে গরমে মেকআপ বেইজ করে নেয়ার আগে আইস কিউব রাব করে নিলে স্কিনের অয়েলিনেস কন্ট্রোলে থাকে এবং মেকআপ লং লাস্টিং হয়।
২। আইস কিউব রাব করে নিয়ে কিছুক্ষণ পর ফেইস মিস্ট বা হাইড্রেটিং টোনার ফেইসে অ্যাপ্লাই করে নিলে লং টাইম পর্যন্ত স্কিন থাকবে হাইড্রেটেড।
৩। এরপর স্কিন টাইপ অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে নিতে হবে। আর এরপর স্কিন বেইজ মেকআপ করার জন্য একদম পারফেক্ট।
৪। দিনের বেলায় সানস্ক্রিন ইউজ করা মাস্ট। বেসিক স্কিনকেয়ার শেষে ত্বকের সুরক্ষার জন্য আপনার স্কিনের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করে নিন। লাইট ওয়েট, ম্যাট ফিনিশিং দেয় আর দ্রুত অ্যাবজর্ব হয়ে যায়, এমন সানস্ক্রিন গরমের দিনে ইউজের জন্য বেস্ট অপশন।
কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে মেকআপ বেইজ
স্কিন প্রিপেয়ার হয়ে গেলে স্কিনটোন অনুযায়ী কনসিলার দিয়ে স্পট, ডার্ক সার্কেল হাইড করে নিতে হবে। এরপর স্কিনের শেইড অনুযায়ী ফেইস পাউডার বা কমপ্যাক্ট অ্যাপ্লাই করে নিন। অয়েলি স্কি হলে লুজ পাউডার ফেইসের টি-জোন ( T-zone) এ ভালোভাবে ডাস্টিং করে নিতে হবে। এতে ফেইসে যে অতিরিক্ত অয়েল প্রোডিউস হয় তা কন্ট্রোলে থাকবে। অয়েলি স্কিনের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মেকআপ স্টেপ। ব্যস! বেইজ রেডি হয়ে গেলো। লাইট ওয়েট হওয়াতে এই বেইজ মেকআপ গরমে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত একদম সেট থাকবে।
গরমে চোখের সাজ
আই মেকআপ আপনার বিউটিকে অনেকটাই রিপ্রেজেন্ট করে। চোখের সাজের উপর অনেকক্ষেত্রেই পুরো মেকআপের আউটপুট নির্ভর করে। তবে গরমে চোখের সাজ যত সিম্পল রাখা যায় ততই ভালো। সিম্পল চোখের সাজের জন্য আই লাইনার বা কাজল এবং সাথে মাশকারা হতে পারে বেসিক আই মেকআপ আইটেম। দারুণ কিছু হ্যাকস ফলো করলে আই মেকআপ থাকবে লং লাস্টিং। জেনে নিন সেগুলো-
১। আইব্রো আর্ট করতে ব্রো পমেড বা আইব্রো জেল ইউজ করলে তা স্ম্যাজ হয় না সহজে। তাই গরমে ঘামলেও সমস্যা হবে না।
২। চোখে কাজল দিলে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ওয়াটারপ্রুফ ও সোয়েটপ্রুফ কাজল বেছে নিতে পারেন, কাজল দিয়ে জাস্ট চোখের নিচে একটু পাউডার ডাস্টিং করে নিলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সেটা সেট থাকবে, ছড়িয়ে যাবে না। কাজলের পরিবর্তে ওয়াটার প্রুফ আই লাইনার ইউজ করতে পারেন।
৩। মাশকারা অ্যাপ্লাই করার আগে আইল্যাশে একটু পাউডার দিয়ে তারপর মাশকারা দিলে ল্যাশগুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগে এবং গরমে সহজে স্ম্যাজ হয়ে যায় না।
লিপস্টিক ছড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধে করণীয়
গরমে অনেকেরই দেখা যায় লিপস্টিক ছড়িয়ে যায়, ঠোঁটের চারপাশ ঘেমে লিপস্টিক আস্তে আস্তে উঠে আসে। তাহলে কীভাবে লিপস্টিক লং টাইম পর্যন্ত ঠিক রাখা যায়? এটাই তো ভাবছেন, তাই না? কিছু হ্যাকস মেনে চললে কিন্তু গরমেও লিপস্টিক ঠিকঠাক ক্যারি করা যাবে।
১। সপ্তাহে ১-২ দিন মধু, চিনি আর লেমন জুস মিক্স করে নিয়ে লিপ স্ক্রাব করে নিতে হবে। এতে লিপস স্মুথ ও সফট হবে। ফলে লিপস্টিক ঠোঁটে ঠিকমতো বসবে এবং ক্র্যাক হবে না।
২। লিপস্টিক দেয়ার পর ঠোঁটের উপর টিস্যু পেপার দিয়ে এর উপর পাউডার ব্রাশ দিয়ে হালকা করে একটু পাউডার পাফ করে নিলে লিপস্টিকের স্টিকি ভাবটা থাকে না, ম্যাট লুক দেয় এবং গরমে ঘেমে ছড়িয়ে যায় না।
সবশেষে মেকআপ ফিক্স করার জন্য সেটিং স্প্রে
যখন আমরা মেকআপ করে বাহিরে যাই, তখন ফেইস ঘেমে যা যা ফেইসে অ্যাপ্লাই করি সবকিছু কেমন যেন এদিক সেদিক হয়ে যায়! এই মেকআপ সেপারেশন যাতে না হয় এজন্য সেটিং স্প্রে পুরো ফেইসে অ্যাপ্লাই করে নিলে ৫-৬ ঘণ্টা পর্যন্ত মেকআপ ফিক্স থাকে। গরমে সেটিং স্প্রে মিস করলে কিন্তু চলবে না!
শেষে একটা কথা বলতে চাই, স্কিন ব্যারিয়ার যত স্মুথ হবে, মেকআপ ততই ফ্ললেস হবে। মানে আপনার স্কিন যদি সুন্দর হয়, তাহলে মেকআপ ভালোভাবে বসবে। তাই বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলুন, ত্বকের যত্ন নিন। আর গরমে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাহলে বডি ও স্কিন হাইড্রেটেড থাকবে সবসময়। তাছাড়া যাদের গরমে স্কিন ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়, তারা স্কিনে কিছুক্ষণ পর পর হাইড্রেটিং মিস্ট বা রোজ স্প্রে দিয়ে নিলে রিফ্রেশিং ফিল পাবেন।
তো, এই ছিল আজকের টিপস ও হ্যাকস। অথেনটিক মেকআপ প্রোডাক্টস পেয়ে যাবেন সাজগোজে। অনলাইন কিংবা আউটলেট, আপনার সুবিধামতো কিনতে পারবেন। অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ