স্ক্যাল্প একনে কী ও কেন হয়? সমাধান জেনে স্ক্যাল্প রাখুন সুরক্ষিত!

স্ক্যাল্প একনে কী ও কেন হয়? সমাধান জেনে স্ক্যাল্প রাখুন সুরক্ষিত!

1

মুখে বা বডিতে একনে হওয়ার বিষয়টা আমাদের কাছে খুবই কমন হলেও মাথার স্ক্যাল্পেও যে একনে হয় সেটা অনেকেই জানেন না। চুল আঁচড়ানো বা চুল ওয়াশ করার সময় খেয়াল করবেন, হেয়ার লাইনের কাছে বা চুলের ভেতর স্ক্যাল্পে ছোট ছোট একনে দেখা যাচ্ছে। এগুলোর ফলে চুল আঁচড়ানো বা স্টাইল করা একটু ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। এই প্রবলেমটার প্রোপার ট্রিটমেন্ট না করা হলে ব্লিডিং, হেয়ার লস বা স্পট হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে। জেনে নিন স্ক্যাল্প একনে কী, কেন হয় এবং এর ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে।

স্ক্যাল্প একনে কী?

স্ক্যাল্প একনে হেয়ার লাইনে বা চুলের ভেতরেও হয়। এগুলো দেখতে নরমাল একনের মতোই হয়। এরা এক জায়গায় অনেকগুলো বা বিভিন্ন জায়গাজুড়েও হতে পারে। পরিমাণে বেশি হয়ে গেলে পুরো মাথার স্ক্যাল্পেও ছড়িতে যেতে পারে। অনেক সময় স্ক্যাল্পের একনেগুলোই কপাল, ঘাড় এবং কানের দিকে ছড়িয়ে যায়।

স্ক্যাল্প একনে

ফেইস বা বডি একনের থেকে এটা একটু আলাদা। তাই যদি ভাবেন, ফেইসে ব্যবহার করা একনে প্রিভেন্টিং ফেইসওয়াশ দিয়েই স্ক্যাল্প একনে দূর করা সম্ভব তাহলে কিন্তু ভুল ভাবছেন। যে কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে সমাধান করতে যাওয়ার আগে সেই বিষয় সম্পর্কে একটু ধারণা নিয়ে নিলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই স্ক্যাল্প একনে কী সেটা সম্পর্কে একটু ধারণা নিয়ে এরপর চিকিৎসা করা উচিত।

স্ক্যাল্প একনে কেন হয়?

মাথার স্ক্যাল্পে একনে হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। সেগুলো জেনে নিলে বুঝতে সহজ হবে, কোন কারণে আপনার স্ক্যাল্পে একনে হচ্ছে।

১) হেয়ার অয়েলিং

হেয়ার অয়েলিং এর কারণে কীভাবে স্ক্যাল্প একনে হয়? আমরা তো বরং জানি, হেয়ার অয়েল না করলেই চুলের ক্ষতি! অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, স্ক্যাল্প একনে হওয়ার ক্ষেত্রে এই হেয়ার অয়েলিংই কিন্তু সবচেয়ে কমন কারণ। অনেক সময় আমরা চুলে তেল দিয়ে ঠিকমতো শ্যাম্পু করি না বা ১/২ দিন রেখে দেই। যেটা স্ক্যাল্পের জন্য ভালো নয়। কারণ, আমাদের স্ক্যাল্পে নরমালি সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ডস এবং ন্যাচারাল সিবাম প্রডিউস হয়। এর পাশাপাশি এক্সট্রা অয়েল দীর্ঘ সময় থাকলে তা খুশকি এবং একনে সৃষ্টি করে।

শ্যাম্পু না করা

২) পারসোনাল হাইজিন মেইন্টেইন না করা

অনেকেই রেগুলার শ্যাম্পু করতে ভুলে যান বা অলসতার কারণে করতে চান না। যতরকম ধুলো, ময়লা, অয়েল ইত্যাদি কিন্তু দিনশেষে আমাদের স্ক্যাল্পে বসে যায়। তার উপর নিয়ম করে শ্যাম্পু না করলে স্ক্যাল্পে একনে হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

৩) প্রোডাক্ট বিল্ড আপ

দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারের ফলে স্ক্যাল্পে প্রোডাক্ট বিল্ড আপ হতে পারে। যার ফলে হেয়ার ফলিকল ক্লগ হয়ে যায় এবং স্ক্যাল্পে ইরিটেশন হয়। এরপর স্ক্যাল্পে একনে দেখা দেয়। তাই সবসময় চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করা জরুরি। এছাড়া সপ্তাহে একদিন ক্লারিফাইং শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এতে ডেড স্কিন সেলস এবং প্রোডাক্ট বিল্ড আপ থেকে আমাদের স্ক্যাল্প রক্ষা পাবে।

৪) সেবোরেইক ডারমাটাইটিস (Seborrheic dermatitis)

স্ক্যাল্প একনের আরেকটি কারণ হলো সেবোরেইক ডারমাটাইটিস। এটি এক ধরনের সাধারণ চর্মরোগ, যা সাধারণত মাথার ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই রোগের কারণে আক্রান্ত স্থান লাল ও খসখসে হয়ে যায় এবং ছোট ছোট একনে হয়ে থাকে। এটা কিছুটা ড্যানড্রাফের মতোই, দেখতে হোয়াইট বা ইয়োলো ধরনের। যেটা স্ক্যাল্পকে ক্লগ করে দেয়। যার ফলে, স্ক্যাল্পে একনে দেখা দেয়।

ট্রিটমেন্ট কীভাবে করবেন?

স্ক্যাল্প একনে যেন না হয় সেজন্য আগে থেকেই সচেতন থাকতে হবে। যদি একনে হয়েই যায় তখন কীভাবে ট্রিটমেন্ট করবেন জেনে নিন-

১) শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার সিলেকশন করুন বুঝে 

স্ক্যাল্প একনে ট্রিট করার চাবিকাঠি হচ্ছে স্ক্যাল্পের পোরস ক্লগ হওয়া থেকে স্ক্যাল্পকে রক্ষা করা। আপনার শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার থেকেই প্রোডাক্ট বিল্ড আপ হয়ে পোরস ক্লগ হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। চেষ্টা করবেন স্যালিসাইলিক এসিড, গ্লাইকোলিক এসিড, কিটোকোনাজল- এই ইনগ্রেডিয়েন্টসগুলো যেনো শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারে অবশ্যই থাকে।

শ্যাম্পু করা

এই ইনগ্রেডিয়েন্টসগুলো কী কাজ করে? 

স্যালিসাইলিক এসিডঃ এটি একমাত্র বেটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (বিএইচএ), যা ত্বকের সেবাম প্রোডাকশন কমাতে সাহায্য করে এবং লোমকূপ পরিষ্কার রাখে। এই ইনগ্রেডিয়েন্টটি স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েট করে এবং ডেড স্কিন বিল্ড হওয়া থেকে রোধ করে।

গ্লাইকোলিক এসিডঃ এটি একটি বহুমুখী আলফা হাইড্রক্সি এসিড (এএইচএ), যা ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং পোরস মিনিমাইজ করতে সাহায্য করে। এই ইনগ্রেডিয়েন্টটি মাইক্রোব্যাকটেরিয়া কিল করে।

কিটোকোনাজলঃ এই ইনগ্রেডিয়েন্টটি ছত্রাকবিরোধী। এটি খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।

শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারে এই উপাদানগুলো থাকা মানে আপনার স্ক্যাল্প অনেকখানি সুরক্ষিত।

২) হেলদি ডায়েটের পাশাপাশি হোম রেমেডি

আমাদের খাবারদাবারও কিন্তু অয়েল প্রোডাকশন, ইনফ্ল্যামেটরি এবং একনে হওয়ার ক্ষেত্রে ইফেক্ট ফেলে। তবে স্ক্যাল্প একনে ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হেলদি ডায়েটই যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট সম্পন্ন খাবার লিমিটেড করে ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ফাইবার, জিংক, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার বেশী করে গ্রহণ করতে হবে।

স্ক্যাল্প একনে ট্রিটমেন্টের জন্য কয়েকটি হোম রেমেডি

টমেটো জুস

টমেটোতে রয়েছে স্যালিসাইলিক এসিড এবং পিএইচ ব্যালেন্সিং অ্যাবিলিটি। এটি স্ক্যাল্প একনে দূর করতে বেশ কাজের।

যেভাবে স্ক্যাল্পে লাগাতে হবেঃ

একটি পাকা টমেটো ছোট ছোট টুকরা করে নিন। এবার ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটি স্ট্রেইনারের সাহায্যে জুস ছেঁকে আলাদা করুন। এই জুসটুকু একটি কটন প্যাডের সাহায্যে পুরো স্ক্যাল্পে অ্যাপ্লাই করে এক ঘন্টা রেখে দিন। এরপর একটি জেন্টল শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রোপার্টিস। এটি স্ক্যাল্পের ব্যাকটেরিয়া কিল করে এবং স্ক্যাল্পে একনে হওয়ার চান্স কমিয়ে দিতে হেল্প করে। এছাড়াও এতে থাকা পিএইচ ব্যালেন্সিং এজেন্ট স্ক্যাল্পকে অনেক বেশী ড্রাই বা অয়েলি করা থেকে রোধ করে।

স্ক্যাল্প একনে থেকে দূরে থাকতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার

যেভাবে স্ক্যাল্পে লাগাতে হবেঃ

একটি মগে পানি ভর্তি করে এর মধ্যে ২/৩ টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার করার পর এই মিশ্রণটি দিয়ে পুরো চুল ধুয়ে নিন। ১ মিনিট রেখে নরমাল পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

টি ট্রি অয়েল

টি ট্রি অয়েলে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিস, যা স্ক্যাল্পের একনে ট্রিট করতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এটা স্ক্যাল্পের পোরসগুলো আনক্লগ করতে হেল্প করে। এছাড়াও এটি হেয়ার ফল রিডিউস করতে এবং হেয়ার গ্রোথ প্রোমোট করতে সাহায্য করে।

যেভাবে স্ক্যাল্পে লাগাতে হবেঃ

আমন্ড অয়েল বা জোজোবা অয়েলের সাথে ২/৩ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিক্স করে নিন। এই অয়েলটা স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে নিন। এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে নিন।

এই তো জেনে নিলেন, স্ক্যাল্প একনের কারণ এবং ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে। আশা করছি, স্ক্যাল্প একনে যাদের আছে, তাদের অনেকটাই হেল্প হবে।

স্ক্যাল্প একনেসহ অথেনটিক যে কোনো হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন। অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও পছন্দমতো প্রোডাক্টটি কিনে নিতে পারেন।

 

ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক

15 I like it
1 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort