রাজশাহী অ্যাকুয়ারিস্টস | শখের মাছ পালন - Shajgoj

রাজশাহী অ্যাকুয়ারিস্টস | শখের মাছ পালন

cover

শখের জন্য মানুষ কী-ই বা না করে? সমুদ্রের তলদেশ থেকে থেকে শুরু করে পাহাড়ের চুড়ায় পর্যন্ত যেতে দ্বিধা করে না শুধুমাত্র শখটাকে জয় করবে বলে।  আর শখ পূরণটা যদি দল বেঁধে করা যায়? তবে অনেক বেশি গুছিয়ে এগোনো যায় আর শখটিকে খুব বড় একটি রূপ দেয়া যায়।

আজকে কথা বলব সেরকম একটি দলবদ্ধ শৌখিন মানুষদের নিয়ে। ‘রাজশাহী অ্যাকুয়ারিস্টস’  নামের এই ফেইসবুক গ্রুপটি তৈরি হয়েছে রাজশাহীর শৌখিন মাছ পালকদের জড়ো করার একটি লক্ষ্য নিয়ে। গ্রুপের প্রায় শুরু থেকেই লেগে থাকা সদ্য কৈশোর পেরোনো রকিব হাসান। চলুন শুনে আসি তার শখের গল্প।

নিজের সম্পর্কে একটু বলুনমাছ পালনের শখ জাগল কীভাবে?

বাবার কাছ থেকে পশু-পাখি পোষার শখটা পেয়েছি। ছোটবেলা থেকেই পাখি পুষতাম। ছোটবেলায় খলিসা, নীল কৈ সহ আরও অনেক রঙীন মাছ কিনে প্লাস্টিকের বয়ামে রাখতাম। এখন অবশ্য সেইসব মাছ আর দেখা যায় না। এক সময় বাসার জন্য অ্যাকুয়ারিয়াম কেনা হলো। দোকান থেকে কেনা সহজ সাধারণ অ্যাকুয়ারিয়াম, মাছ নিয়ে যত সমস্যা সব দোকানদারদের কাছে বলে সমাধান নেওয়ার চেষ্টা করতাম। একদিন হাতে বেশ কিছু টাকা পেলাম। ভাবলাম নিজের রুমে ছোট্ট আলাদা ধরনের একটা অ্যাকুয়ারিয়াম করবো। অ্যাকুয়ারিয়াম কিনলাম ছোট একটা। মাছ কিনতে গিয়ে হঠাৎ ইচ্ছা হলো ছোট ধরনের কোন মাছ যদি অ্যাকুয়ারিয়ামে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফোটায় ব্যাপারটা মন্দ হয়না। গাপ্পি, মলি নামের মাছগুলো সবাই চেনে তাই ভাবলাম আলাদা কিছু করা, যেটা আমার শহরের কেউ কখনও করেনি। ব্যস, সিদ্ধান্ত নিলাম রাজশাহীর প্রথম ফাইটার (siemese fighter / betta) ব্রিডার আমিই হবো। ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করতে করতে বাংলাদেশ অ্যাকুয়ারিস্ট গ্রুপের খোঁজ পেয়ে গেলাম। একদল মানুষ পেলাম যারা এই মাছ পালনের শখটাকে অন্যরকম একটি চেহারা দিয়েছেন। জানলাম তারা অ্যাকুয়ারিস্ট। ব্যস! আমারও সাধ জাগলো অ্যাকুয়ারিস্ট হওয়ার। তারপর থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

bird

পোষা ককাটেল পাখির সাথে রকিব

গ্রুপের যাত্রা শুরুর গল্পটি বলুন। অ্যাকুয়ারিস্ট কম্যুনিটি কীভাবে গড়ে তুললেন?

আনন্দ যেহেতু ভাগ করে নিলে বাড়ে তাই আমাদের মানে মাছ পালকদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া উচিত। তবে আমাদের আনন্দটা আমরাই বেশি বুঝবো তাই আশেপাশে আরও অ্যাকুয়ারিস্ট থাকা উচিত। আর আমাদের শহরে অ্যাকুয়ারিয়ামতো ভালোই বিক্রি হয়, তার মানে অ্যাকুয়ারিস্ট কম্যুনিটি করা সম্ভব। এটাই ছিল গ্রুপ তৈরির পেছনের মূল চিন্তা। ‘বাংলাদেশ অ্যাকুয়ারিস্ট’ গ্রুপকে দেখে মনে হলো আমাদের শহরের মানুষগুলোকে এভাবে এক করতে পারলে শহরে যারা মাছ পোষেন তাদের কাছে পৌঁছনোটা সহজ হবে। রাজশাহীর দুইজন বড় ভাই পেয়ে গেলাম। তারপর তাদের সাথে নিয়ে আমাদের গ্রুপের যাত্রা শুরু। এরপর ফেইসবুক আর অ্যাকুয়ারিয়াম শৌখিন আর অ্যাকুয়ারিয়ামের দোকানে যাওয়া আসায় পরিচিত শৌখিনদের একজন একজন করে জড়ো করে নিয়ে গ্রুপ গড়ে তুলেছি সবাই মিলে।

Capture

ক্রাউনটেইল ফাইটার ফিশ

বর্তমানে কী কী করছেন গ্রুপ থেকে? ভবিষ্যতে আরও পরিকল্পনা আছে?

ফেইসবুক গ্রুপে আমাদের প্রতিনিয়ত মাছ সম্পর্কিত সকল আপডেট, সুসংবাদ, খারাপ সংবাদ, অনুসন্ধান, ছবি, নতুন করা কোন কাজের ফল, সবকিছুই সবাই শেয়ার করি। প্রথমদিক থেকে সবাইকে অ্যাকুয়ারিয়াম করার উপায়, রক্ষণাবেক্ষণ, মাছ পরিচিতি, অ্যাকুয়ারিয়াম সামগ্রী, মাছের রোগ বালাই ইত্যাদি নিয়ে সঠিক তথ্য জানাতে চেষ্টা করছি। এটাই মূলত আমাদের গ্রুপের প্রধান উদ্দেশ্য। দোকানে গিয়ে দেখেছি দোকানদাররা ভুল কথা বলে কাস্টমারদের ঠকাচ্ছে, রোগের ভুল চিকিৎসা জানাচ্ছে, অনেক বেশি দামে মাছ, খাবার ইত্যাদি বিক্রি করছে। তাদের এই ভন্ডামি বন্ধ করতে চাওয়াটাও আমাদের গ্রুপ গঠনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। এখন মাঝে মাঝে আমরা অ্যাকুয়ারিস্টরা একসাথে কোথাও বসে আড্ডার ছলে অ্যাকুয়ারিয়ামের প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। এভাবে নতুনদের শেখার একটা সুযোগ হয়। ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করি সেগুলো হাতে কলমে শেখাতে নিয়মিত ওয়ার্কশপের আয়োজন করা। যেমন আমরা একদিন একটা প্ল্যান্টেড অ্যাকুয়ারিয়াম তৈরির ওয়ার্কশপ করে সবাইকে হাতে কলমে দেখাতে পারি কীভাবে অ্যাকুয়ারিয়ামে গাছ লাগাতে হয়, ফার্টিলাইজার ব্যবহার করতে হয়।

group

রাজশাহী অ্যাকুয়ারিস্টদের প্রথম সম্মেলন

এখনও পর্যন্ত গ্রুপ নিয়ে কোন সমস্যা হয়েছে কী? কীভাবে সমাধান হল সেগুলোর?

মানুষের ভুল ধারণা কাটাতে গিয়ে দোকানদারদের কাছে প্রথম দিকে কয়েকবার অপমানিত হতে হয়েছে। এছাড়া অনেক টাকা খরচ অনেক রকম মাছ একসাথে রাখে এমন কিছু মানুষকে মাছের কম্প্যাটিবিলিটি বোঝাতে গিয়ে বা কোন মাছ কোন পানির এসব বোঝাতে গিয়ে তাদের বাজে মন্তব্যের স্বীকার হতে হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। দোকানদারদের সমস্যাটা সমাধান হয়নি। তবে যারা আসলে আমাদের কথা শুনতে চায় না, বরং দোকানদারদের ভুল কথা শোনে তাদের সাথে কোন রকম তর্কে না গিয়ে ধৈর্য্যের সাথে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করি। প্রায় সবাইই শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারে। আরও একটি সমস্যা আছে। আগে জানতাম না কিন্তু এখন জানি কোনটা লবণাক্ত পানির মাছ আর কোনটা মিঠা পানির। লবণাক্ত পানির অ্যাকুয়ারিয়াম করাটা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ, তাই এটা খুব কম দেখা যায়। কিন্তু দোকানে অনেক সময় দেখি লবণাক্ত পানির সুন্দর মাছগুলোকে মিঠাপানির অ্যাকুয়ারিয়ামে রাখা হয়েছে বা দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে। তখন নিজের কাছে অনেক বেশি কষ্ট লাগে মাছটার কষ্টের কথা ভেবে!

sh

রেড চেরি শ্রিম্প

এই প্রজেক্ট শুরুর পর থেকে কোন পরিবর্তন এসেছে কি সামগ্রিক পরিস্থিতিতে?

গ্রুপের যারা নিয়মিত সদস্য তাদের অ্যাকুয়ারিয়াম সম্পর্কে ধারণা পুরোপুরি পাল্টেছে। প্রায় সবাই নতুন নতুন ইচ্ছা আর সমস্যা প্রকাশ করছে। বুঝতে পারছি তারা শিখছে। তবে এখনও অনেক বেশি মানুষ তাদের এই শখটাকে দোকানদারদের মুখের কথায় আটকে রেখেছেন। তাদেরকে প্রতিনিয়ত বোঝাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি গ্রুপের সবাই। গ্রুপের বর্তমান দেখে বোঝা যায় বেশ পরিবর্তন এসেছে ব্যাপারটায়, এটা দেখে ভবিষ্যতের কাজের নতুন আশা জাগে।

বাংলাদেশে অ্যাকুয়ারিস্টদের সামগ্রিক অবস্থান কেমন?

একটা সময় ছিল যখন অ্যাকুয়ারিয়াম বলতে গোল্ডফিশ বুঝতাম শুধু। এখন আকুয়ারিস্টদের প্ল্যান্টেড, মেরিনসহ অনেক রকম ট্যাংকের সাজ আর পরিবেশ দেখে বোঝা যায় আমরা এদিকে কতটা এগিয়েছি। প্রায়ই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে আমাদের দেশের আকুয়ারিস্টদেরদের ট্যাংকের ছবি দেখতে পাই! সেটি অবশ্যই আমাদের এগিয়ে যাওয়ারই লক্ষণ।

10947846_902754716435800_920024371_n

রাজশাহী অ্যাকুয়ারিস্টদের তৈরি সাধারণ ও প্ল্যান্টেড অ্যাকুয়ারিয়ামের এলইডি লাইট

নতুন আকুয়ারিস্টদের জন্য কোন পরামর্শ আছে কি?

নতুনদের উদ্দেশ্যে একটা কথা না বললেই নয়। আপনারা যখন এই শখটাকে চর্চা করছেন, তখন মাথায় রাখতে হবে যে আপনাদের হাতেই রয়েছে কিছু অবলা প্রাণীর জীবন। আপনি চাইলে সেগুলোকে কষ্টে রাখতে পারেন, বা তাদের খুশি রেখে নিজের আনন্দটাকে হাজারগুণ বাড়াতে পারেন। নতুন মাছ কেনার আগে অবশ্যই মাছটার থাকার পরিবেশ, খাবার, স্বভাব সম্পর্কে ভালোমত জেনে নিন। আপনি তখনই পুরো আনন্দটা পাবেন যখন তাদের আপনি বুঝতে শিখবেন। তাই তাদেরকে জানাটা আপনার শখ পূরণের জন্য অত্যন্ত জরুরী।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেনঃ নুজহাত ফারহানা

ছবিঃ রকিব হাসান

0 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort