চিয়া সিডস বা চিয়া বীজ | ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হার্টের সুস্থতার জন্য সুপারফুড

চিয়া সিডস বা চিয়া বীজ | ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হার্টের সুস্থতার জন্য সুপারফুড

chia

খুব বেশিদিন হয়নি বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে নতুন করে জায়গা করে নিয়েছে একটি ছোট্টো উপাদান, চিয়া সিডস বা চিয়া বীজ। বিশেষ করে যারা স্বাস্থ্য সচেতন, তাদের জন্য তো চিয়া সিডস একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। পুষ্টিবিদরাও বলছেন দেখতে ছোটো হলেও গুণে-মানে একেবারেই কম নয় এই চিয়া সিডস। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ব্রেকফাস্ট টেবিলের নতুন এই উপাদানের আদ্যোপান্ত নিয়ে।

কীভাবে খাদ্যাভ্যাসে এলো চিয়া বীজ? 

‘সালভিয়া কলম্বিয়ারিয়া’ নামের উদ্ভিদের ফুল থেকে মূলত চিয়া সিডস পাওয়া যায়। মেক্সিকো ও আমেরিকায় মূলত এই উদ্ভিদ বেশি পাওয়া যায়। চিয়া সিডস দৈর্ঘ্যে সাধারণত ২ মিলিমিটার ও ব্যাসে ০.০৮ মিলিমিটার হয়ে থাকে; রঙ সাধারণত সাদা বা ধূসর। বীজগুলো ছোটো হলেও পানিতে বা তরলে ভিজিয়ে রাখলে এর ওজনের প্রায় ১২ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এক ধরনের মিউসিলজিনাস প্রলেপ তৈরি করে। এ কারণেই চিয়া সিডস দিয়ে নানা ধরনের খাবার যেমন- জেলি, পুডিং বানানো সহজ হয়।

প্রমাণ পাওয়া যায় যে প্রাক-কলম্বিয়ান যুগে অ্যাজটেকরা (মেক্সিকান আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী) এই বীজ অল্প পরিমাণে চাষ শুরু করে এবং আস্তে আস্তে আদি আমেরিকানদের প্রধান খাদ্য হয়ে ওঠে এটি। এরপরের ইতিহাসটা অনেকটাই সহজ। বিশ্বায়নের প্রভাবে এক দেশের খাদ্যাভ্যাস অন্য দেশের মানুষের মধ্যেও ট্রান্সফার হলো। আস্তে আস্তে এই খাবারটি ভারতীয় উপমহাদেশেও জনপ্রিয়তা পেলো। তবে চিয়া সিডস সাধারণ মানুষের ডায়েটে প্রবেশ করার ব্যাপারে সেলিব্রেটিদের ভূমিকাও একেবারে কম না!

চিয়া সিডস বা চিয়া বীজ

সুপারফুড চিয়া সিডস

সুপারফুডের সেরকম সর্বজনীন কোনো সংজ্ঞা না থাকলেও সাধারণত যেসব খাবারে পুষ্টিগুণ আমাদের সুষম খাদ্যের ধারণার সাথে মিলে যায় এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে সেগুলোকে আমরা সুপারফুডের কাতারে ফেলি। চিয়া সিড কী তাহলে সুপারফুড? বলাই যায়! ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস, কী নেই চিয়া সিডসে বলুন তো?

জেনে নেই এর উপকারিতা সম্পর্কে

১) চিয়া সিডসে যে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল থাকে তার ৭০ ভাগই হলো লিনোলেনিক অ্যাসিড ও আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড; এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

২) দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম আছে এবং পালং শাকের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বেশি আয়রন আছে চিয়া সিডসে।

৩) কমলার চেয়ে প্রায় ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে। কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম এবং স্যামন মাছের চেয়ে প্রায় ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে চিয়া সিডসে।

৪) এছাড়াও ভিটামিন এ, বি, ই, ডি ও সালফার আছে। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ ও জিংক রয়েছে এই সুপারফুডে!

চিয়া সিডস

নিয়মিত এই সিডস কেন খাবেন?

সুপারফুড চিয়া সিডসের পুষ্টিগুণ তো জানা হলো, এখন চলুন জেনে আসি কেন আমাদের চিয়া সিডস খাওয়া উচিৎ এবং নিয়মিত এই সিডস খেলেই বা কী হবে।

১) চিয়া সিডসে আছে প্রচুর পরিমাণে অদ্রবণীয় ফাইবার, এই অদ্রবণীয় ফাইবার আমাদের পাকস্থলী অনেক সময় পর্যন্ত ভরা রাখে এবং এতে ক্ষুধা কম লাগে। যার জন্য অতিরিক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ হয় এবং নিয়মিতভাবে চিয়া বীজ খেলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।

২) এতে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড নামে এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা কিনা আমাদের দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ ভালো কাজ করে।

৩) এতে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের সুস্থতার জন্য বেশ উপকারী এবং হার্ট অ্যাটাক সহ আরও বেশ কিছু রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

৪) চিয়া বীজের এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

সকালের নাস্তা

৫) চিয়া সিডসের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের স্কিনের নিউ সেল জেনারেশনে হেল্প করে। তাই এটি অ্যান্টি এজিংয়ে ভূমিকা রাখে; স্কিনের প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস প্রিভেন্ট করে।

৬) এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রোপারটিজ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। চিয়া সিডস আমাদের রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে। এভাবে আমাদের অজান্তেই ছোটো এই বীজ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

৭) প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিডসে প্রায় ৬৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, অর্থাৎ দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খেতে পারেন না তাদের হাড় ও শরীরের গঠন ঠিক রাখতে চিয়া সিডস একটি আবশ্যিক খাবার।

৮) চিয়া বীজে ওজনের প্রায় ১৪ ভাগ প্রোটিন থাকায় যারা নিরামিষভোজী আছেন, তাদের জন্য প্রোটিনের একটি অসাধারণ উৎস এটি।

৯) দেহ থেকে টক্সিক পদার্থ দূর করতে এর জুড়ি নেই। কোলন পরিষ্কার রাখতে চিয়া সিডস খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং এভাবে পরোক্ষভাবে এটি কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

পুডিং

কীভাবে খাবেন? 

চিয়া সিডস খাওয়ার বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। যেহেতু এটি শুকনো বীজ, তাই পানি বা দুধে ভিজিয়ে রেখে তারপর খেতে হবে। কেউ চাইলে পুডিং তৈরি করে খেতে পারেন, দুধ বা দইয়ের সাথে মিক্স করে খেতে পারেন। দুধে ভিজিয়ে সারারাত ফ্রিজে রেখে সকালে আপনার হাতের কাছে থাকা ফল দিয়ে সহজেই ব্রেকফাস্ট করে নিতে পারেন। এছাড়াও ওটস, ফালুদা বা অন্য কোনো ডেজার্টের সাথে টপিং হিসেবেও খুব ভালো যায় চিয়া সিডস। আর এগুলোর কোনোটাই না হলে সুস্বাদু চিয়া স্মুদি বানিয়ে নিতে পারেন ব্লেন্ডারে।

তাহলে জেনে নিলেন এই সুপারফুডটির হেলথ বেনিফিটস সম্পর্কে। তবে খুব বেশি পরিমাণে খেলে এটা থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। যেকোনো খাবারই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন বা হেলদি ডায়েট চার্ট ফলো করার ট্রাই করছেন, তাদের জন্য চিয়া সিডস হাইলি রেকমেন্ডেড। আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 

ছবি- সাটারস্টক

38 I like it
3 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort