বাচ্চাদের টয়লেট ট্রেনিং দেওয়ার ৭টি কার্যকরী টিপস অ্যান্ড ট্রিকস!

বাচ্চাদের টয়লেট ট্রেনিং কীভাবে দিবেন?

potty training

দেখতে দেখতে আদরের সোনামণিটা বড় হয়ে যাচ্ছে! ছয় মাসের পর থেকে সলিড বা দানাদার খাবার খাওয়া শুরু করেছে। আবার আধো আধো কণ্ঠে বাবা মা ডাকটাও শিখে গেছে। এই সময় সব মায়েদের চিন্তা কীভাবে সন্তানকে টয়লেট ট্রেনিং দিবো! আমরা অনেকেই জানি, ২২ থেকে ৩০ মাসের মধ্যে বাচ্চার পটি ট্রেনিং করে ফেলা উচিত। যদিও অনেক বাচ্চারাই দেরিতে টয়লেট ব্যবহার করা শেখে। ২ বছর আদর্শ সময়, সচেতন মায়েদের উচিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বাচ্চাদের টয়লেট ট্রেনিং দেওয়া। নতুন মায়েরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না, কখন থেকে সন্তানকে এই বিষয়ে শেখানো উচিত বা কীভাবে প্রশিক্ষণ দিলে তারা দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে যাবে। বাচ্চাদের টয়লেট ট্রেনিং কীভাবে দিবেন, চলুন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই!

বাচ্চার টয়লেট ট্রেনিং দেওয়ার উপযুক্ত সময়

আপনার বাচ্চা টয়লেট ট্রেনিং নেওয়ার জন্য প্রস্তুত কি? সেটা বোঝার জন্য কিছু উপায় আছে! শিশুর পেশি মজবুত হয়েছে কি না, ঠিকমতো বসতে পারছে কি না, এগুলো নিশ্চিত করবেন। যদি ডায়াপার অনেকক্ষণ পর্যন্ত শুকনো থাকে ও দিনের নির্ধারিত সময়ে পটি করে, তাহলে তার টয়লেট ট্রেনিং প্রয়োজন। আচরণগত সংকেত খেয়াল করুন যে, পটি করার বেগ পেলে সে ইশারা করছে কি না, নিজে নিজে পোশাক খুলতে বা পরতে চাচ্ছে কি না আর ভেজা অবস্থায় থাকলে অস্বস্তিবোধ প্রকাশ করছে কি না, যদি আপনার সাধারণ নির্দেশগুলো সে বুঝতে শিখে যায়, তাহলে আর দেরি না করে বাচ্চার টয়লেট ট্রেনিং শুরু করুন!

বাচ্চার টয়লেট ট্রেনিংয়ের কিছু কৌশল

কখন ও কীভাবে পটি করতে হবে তা ছোটোদের শেখানোর জন্য কিছু কৌশল রয়েছে। বাচ্চার পটি প্রশিক্ষণ কিন্তু অনেক ধৈর্যের ব্যাপার। বাচ্চার ভালোর জন্য মায়েরা সবকিছুই করতে পারেন। যারা নতুন মা হয়েছেন, তারা অনেক সময়  বুঝে উঠতে পারেন না যে কীভাবে বাচ্চাকে পটে বসতে অভ্যস্ত করতে হয়। জেনে নিন বাচ্চার টয়লেট ট্রেনিংয়ের কিছু কৌশল সম্পর্কে।

১) টয়লেট পটের সঙ্গে পরিচয় করানো

আপনার বাচ্চাকে বাথরুম বা পটি সিটের ব্যবহার সম্পর্কে জানান। পটি করা যে খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক একটা ঘটনা, এটা বাচ্চাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। গল্পের ছলে তাকে এই বিষয়গুলো জানানো যেতে পারে। তাকে তার ইচ্ছায় বসতে এবং উঠতে অনুমতি দিন। বকাবকি করবেন না একদমই। টয়লেট পটটি আরামদায়ক না হলে এবং উচ্চতা ঠিকমতো না হলে কিন্তু বাচ্চা বসতে চাইবে না। দেখতে আকর্ষণীয় ও ব্যবহার করে আরাম পাবে, এমন পট কেনায় ভালো।

২) সঠিক পোশাক নির্বাচন করুন

বাচ্চার প্যান্ট যদি চেইনযুক্ত হয়, তাহলে সে একা খুলতে বা লাগাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। ইলাস্টিক দেওয়া প্যান্ট সবথেকে ভালো যাতে ঝটপট গোড়ালি পর্যন্ত নামিয়ে নেওয়া যায়। প্রথম কয়েকদিন আপনি তাকে প্যান্ট পরতে ও খুলতে সাহায্য করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে সে নিজে নিজেই এটা করতে আগ্রহী হবে।

৩) বাচ্চাকে প্রশংসা করুন ও উৎসাহ দিন

তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে তাকে এই ব্যাপারে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। বাচ্চা টয়লেট পটে পটি করলে তাকে একটু আদর করে দিন বা বাহবা দিন। তাহলে এই বিষয়ে সে আরও আগ্রহ পাবে। বাচ্চার বাচ্চাদের টয়লেট ট্রেনিং করানোর সময় আপনার এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো অনেক হেল্প করবে।

৪) তার পটির রুটিন বুঝুন

মা হিসাবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে খাওয়ানোর কতক্ষণ পর বাচ্চার টয়লেট হচ্ছে। সাধারণত এই বয়সী বেবিরা সকালে ঘুম থেকে উঠে টয়লেট করে। তাই এই সময় আপনার বাচ্চাকে পটিতে বসাতে পারেন। সময়টা খেয়াল করবেন যে রোজ কোন সময়ে তার পটি হচ্ছে। পটি করার আগে বাচ্চারা কিন্তু মুখের একটা এক্সপ্রেশন দেয় বা চাপ দেয়, সেটা মায়েরা দেখেই বুঝতে পারেন। তাই সে সময় দ্রুত তাকে পটিতে বসান। হাঁটতে জানা বাচ্চারা সাধারণত প্রতি ২ ঘন্টায় একবার প্রস্রাব করে। বাচ্চা কখন কতটুকু লিকুইড খাচ্ছে, সেটার উপরও এটা নির্ভর করে। সেই সময় অনুযায়ী মা তার সন্তানকে পটে বসাবেন।

৫) অনুকরণ করে দেখান

শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। অনেক বাচ্চারা একদমই পটে বসতে চায় না, তাদের জন্য নতুন কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। মা নিজেও বসে দেখাতে পারেন বা বাচ্চার পছন্দের পুতুলটি বসিয়েও দেখাতে পারেন। এতে সে দেখে শিখবে এবং তার আগ্রহ তৈরি হবে। আজকাল টয়লেট ট্রেনিং নিয়ে অনেক ধরনের অ্যানিমেটেড কার্টুনও ইউটিউবে পাওয়া যায়। সেগুলোও বাচ্চাকে দেখানো যেতে পারে। অনেকে পটের পাশে পুতুল আর খেলনা দিয়ে সাজিয়ে রাখে, এতে বাচ্চার আগ্রহ বাড়বে।

৬) পরিচ্ছন্ন থাকতে শেখান

এই বয়সে একা একা সে পরিচ্ছন্ন হতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক। তাকে শেখাতে হবে, বাচ্চাকে পরিষ্কার করানোর সময় প্রত্যেকটি ধাপ তাকে মুখে বুঝিয়ে বলুন। শুনে ও দেখে সে কিন্তু বুঝতে পারবে যে পটি করার পর পরিচ্ছন্ন হতে হয়। বাচ্চার হাতে কোনো নোংরা লাগলে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ক্লিন করে ফেলুন। টয়লেট ট্রেনিং করানোর সময় এটা বিশেষ একটি পার্ট। কারণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে।

৭) পট হাতের নাগালে রাখুন

টয়লেট পট এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে সে সহজেই তা নাগাল পায়। বেগ পেলে শিশু যেন ইঙ্গিত করে আপনাকে দেখাতে পারে, বা নিজেই যেয়ে বসতে পারে, এমন স্থানে রাখুন। এতে সে তাড়াতাড়ি এই ব্যাপারটা শিখে ফেলবে।

কোন বিষয়গুলোতে খেয়াল রাখা উচিত?

পটি প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় কিছু বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সেগুলো এক নজরে দেখে নিন।

১) তাড়াহুড়ো করবেন না বা রাগ দেখাবেন না। রাগ করতে দেখলে বাচ্চারা ভয় পেয়ে যাবে বা সেই বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।

২) টয়লেট বা পটের জায়গার বাইরে পটি করে ফেললে কখনোই বকবেন না। প্রথম প্রথম ভুল তো হবেই! এই বিষয়ে ভীতি তৈরি হয়, এমন কোনো কাজ না করায় ভালো।

৩) একদমই না করতে চাইলে ছবি দেখিয়ে বাচ্চাকে গল্প করে করে বোঝাবেন। বাচ্চারা যে কোনো নতুন বিষয়ে খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। একটু সময় দিন ও ধৈর্যশীল হোন।

 

তাহলে জেনে নিলেন, বাচ্চাদের টয়লেট ট্রেনিং দেওয়ার কিছু কৌশল। নতুন মায়েদের জন্য এগুলো বেশ কাজে লাগবে। মনে রাখতে হবে, অনেক বাচ্চাদের হাঁটা শুরু করতে, বসতে বা নিজে নিজে পটি করাতে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। এতে ভয় পাবার কিছু নেই। তারপরও যদি বাচ্চার আচরণে অস্বাভাবিক কিছু খেয়াল করেন, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। নিরাপদে থাকুক প্রতিটি শিশু।

ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক

 

 

69 I like it
18 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort