আমাদের স্কিন কেয়ার নিয়ে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা আছে—“কেমিক্যাল মানেই ক্ষতিকর” এবং “প্রাকৃতিক মানেই নিরাপদ”। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সব কেমিক্যাল ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয়, আবার সব প্রাকৃতিক উপাদানও উপকারী নয়। তাই স্কিনকেয়ার নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রথমেই জানতে হবে—কেমিক্যাল কি ত্বকের জন্য সত্যিই ক্ষতিকর? নাকি এটি শুধু একটি বিভ্রান্তিকর ধারণা?
চলুন বিষয়টি বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যসহ পরিষ্কারভাবে জানি।
কেমিক্যাল মানেই ত্বকের ক্ষতি নয় কেন?
কেমিক্যাল বা রাসায়নিক শব্দটি শোনার সাথে সাথে অনেকের মাথায় ভেসে ওঠে ক্ষতিকর, বিষাক্ত বা কৃত্রিম জিনিসের ছবি। কিন্তু আসলে রাসায়নিক মানে হলো — যে কোনো পদার্থ, যার একটি নির্দিষ্ট গঠন (composition) আছে এবং যা এক বা একাধিক মৌল দিয়ে তৈরি।
সেই অর্থে পানিও কিন্তু একধরনের কেমিক্যাল। কিন্তু এখন কি আমি বলব পানি আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে? নিশ্চই না। ঠিক এরকমই কিছু কেমিক্যাল ত্বকের জন্য হতে পারে বেশ উপকারী আর সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

কেমিক্যাল ত্বকের জন্য সবসময় ক্ষতিকর নয়
ত্বকের জন্য নিরাপদ এবং উপকারী কিছু কেমিক্যাল
- হায়ালুরোনিক অ্যাসিড (Hyaluronic Acid): এটি একটি জনপ্রিয় হিউমেক্ট্যান্ট, যা ত্বকের ভেতর আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ত্বকের হাইড্রেশন ৯৬% পর্যন্ত বাড়াতে এবং ফাইন লাইনস কমাতে সহায়তা করে (সূত্র: Journal of Clinical and Aesthetic Dermatology, 2014)।
- নিয়াসিনামাইড (Niacinamide): ভিটামিন বি৩-এর একটি ফর্ম, যা প্রদাহ কমায়, ব্রণের লালচে দাগ হালকা করে এবং ত্বকের ব্যারিয়ার মজবুত করে।
- গ্লিসারিন (Glycerin): বহু বছর ধরে ব্যবহৃত একটি নিরাপদ ময়েশ্চারাইজার, যা ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।
কখন কেমিক্যাল ত্বকের ক্ষতি করে?
সব কেমিক্যাল নিরাপদ নয়। বিশেষ করে অবৈজ্ঞানিক, নিম্নমানের, ফেয়ারনেস ক্রিমে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক ত্বকের বড় ক্ষতি করতে পারে।

অতিরিক্ত মাত্রার কেমিক্যাল ত্বকের ক্ষতি করতে পারে
ত্বকের ক্ষতি করতে পারে এমন কিছু কেমিক্যাল
- Hydroquinone: অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় স্কিন ফেয়ারনেস ক্রিমে ব্যবহার
- Topical Steroid: ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড যুক্ত পণ্য ব্যবহার
- অতিরিক্ত Fragrance + Alcohol
এসব উপাদান স্কিন ব্যারিয়ার নষ্ট করে, ত্বক পাতলা করে, দীর্ঘমেয়াদে কিডনি–লিভারের ক্ষতি পর্যন্ত করতে পারে।
প্রাকৃতিক উপাদান মানেই নিরাপদ নয় কেন?
অনেকেই রূপচর্চার ক্ষেত্রে ঘরোয়া পদ্ধতিতে অনেক প্রাকৃতিক উপাদান সরাসরি স্কিনে ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। কিন্তু প্রাকৃতিক উপাদানও ত্বকে অ্যালার্জি, জ্বালা ও পিগমেন্টেশন তৈরি করতে পারে।

প্রাকৃতিক উপাদানের সরাসরি ব্যবহার ত্বক ড্যামেজ করতে পারে
- লেবুর রসঃ অনেকেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে লেবুর রস সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করেন। কিন্তু এতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ত্বকে অতিরিক্ত শুষ্কতা ও জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি সূর্যের আলোতে পিগমেন্টেশনও বাড়াতে পারে।
- হার্শ স্ক্রাবঃ চালের গুড়া, কফি এগুলো প্রাকৃতিক হলেও স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বকের উপরিভাগে মাইক্রো-টিয়ার সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ত্বকের ব্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- আলুর রস: অনেকের ধারণা আলু দাগ-ছোপ দূর করে, কিন্তু এটি সব ধরনের ত্বকে কার্যকর নয় এবং সংবেদনশীল ত্বকে অ্যালার্জি বা জ্বালা তৈরি করতে পারে, পাশাপাশি স্কিন ড্রাই করতে পারে।
কাজেই সব কেমিক্যাল যে ক্ষতিকর তা নয়, আবার সব প্রাকৃতিক উপাদানও যে উপকারী তা নয়। ত্বকের ধরন, সমস্যা এবং বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রোডাক্ট নির্বাচন করাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।
FAQ (Frequently Asked Questions)
প্রশ্ন ১: সব কেমিক্যাল কি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর?
উত্তর: না। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, নিয়াসিনামাইড, গ্লিসারিনের মতো অনেক কেমিক্যাল বৈজ্ঞানিকভাবে নিরাপদ এবং উপকারী।
প্রশ্ন ২: কোন কেমিক্যাল স্কিনে ব্যবহার করা উচিত নয়?
উত্তর: অজানা ব্র্যান্ডের ফেয়ারনেস ক্রিম, স্টেরয়েড ক্রিম, উচ্চমাত্রার হাইড্রোকুইনোন ক্ষতিকর।
প্রশ্ন ৩: প্রাকৃতিক উপাদান কি সবসময় নিরাপদ?
উত্তর: না। লেবু, কফি স্ক্রাব, আলুর রস অনেক সময় ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
প্রশ্ন ৪: কীভাবে বুঝব কোন কেমিক্যাল স্কিনে নিরাপদ?
উত্তর: ডার্মাটোলজিস্টরা যা অনুমোদন দেন, কেমিক্যালের সঠিক কনসেনট্রেশন, ফরমুলেশন ও গবেষণাভিত্তিক ডেটা দেখেই নির্বাচন করতে হবে।






