মাঙ্কিপক্স | আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন!

মাঙ্কিপক্স | আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন!

4

মাঙ্কিপক্স এক বিশেষ ধরনের বসন্ত রোগ। প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এ রোগটি সংক্রমিত হয়। কাঠবিড়ালি, গাম্বিয়ান পোচড ইঁদুর (আফ্রিকান বড় ইঁদুর), বিভিন্ন প্রজাতির বানর এবং অন্য অনেক প্রাণীতে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই ভাইরাস অর্থোপক্স গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। গুটিবসন্তের ভাইরাস ভ্যারিওলাও এই গোত্রের। জলবসন্ত বা গুটিবসন্তের প্রতিকার সহজ হলেও মাঙ্কিপক্স নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আফ্রিকাতে এ রোগে আক্রান্তদের গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্টের কাছাকাছি বেশি পাওয়া যাচ্ছে যেখানে ভাইরাস বহনকারী প্রাণী রয়েছে।

মাঙ্কিপক্স কি নতুন কোনো রোগ?

কোভিড-১৯ যখন প্রকোপ ছড়ানো শুরু করে তখন সেটি প্রতিকারের জন্য বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের তেমন কিছু জানা ছিল না। কারণ করোনা ভাইরাস ছিল একদম নতুন একটি ভাইরাস। এদিক থেকে মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা কিছুটা কম। কারণ এটি একদম নতুন কোনো রোগ নয়।

১৯৫৮ সালে প্রথম এ রোগটি সম্পর্কে জানা যায়। তখন রোগটির বাহক ছিল বানর। এরপর ১৯৭০ সালে আফ্রিকার কঙ্গোতে প্রথম এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কথা শোনা যায়। পরে অবশ্য মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার কঙ্গো, ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওনে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণের কথা জানা যায়। রোগটির কথা খুব বেশি প্রচলিত হয়নি কারণ আফ্রিকার বাইরে এ রোগের প্রাদুর্ভাবও বেশি ছিল না। মাঙ্কিপক্স পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব হয়নি। অনেক বছর পর আবার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে রোগটির।

মাঙ্কিপক্স

কীভাবে ছড়ায়?

রোগটির সন্ধান প্রথম বানরের মধ্যে দেখা গিয়েছিল বলে এর নামকরণ করা হয়েছিল মাঙ্কিপক্স। এটি এক ধরনের জুনোটিক ডিজিজ অর্থাৎ প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এটি ছড়ায়। যে কয়েকটি মাধ্যমে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে পারে-

১) বন্য পশু-পাখির মাংস যেমনঃ বাদুর, বানর, পশুর কামড় বা স্ক্র্যাচ, শরীরের তরল, দূষিত বস্তু থেকে।

২) সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে।

৩) সংক্রমিত বানর, ইঁদুর ও কাঠবিড়াল এবং ভাইরাসযুক্ত বস্তু যেমন বিছানাপত্র ও জামাকাপড়ের সংস্পর্শে এলে।

৪) আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেট (শ্বাস-প্রশ্বাস) থেকেও রোগটি ছড়াতে পারে।

উপসর্গ

গুটিবসন্তের সাথে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গের কিছুটা মিল রয়েছে। তবে এ রোগের উপসর্গ বেশ মৃদু। কীভাবে বুঝবেন মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত হয়েছেন কিনা-

১) মাঙ্কিপক্সের উপসর্গগুলো সাধারণত সংক্রমিত হওয়ার ৫-২১ দিন পর দেখা দেয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেকে ২-৪ সপ্তাহ পর বুঝতে পারে।

২) এই রোগটি সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা এবং ক্লান্তির মতো ফ্লু-এর উপসর্গ দিয়ে শুরু হয়, যা এক বা দুই দিন স্থায়ী হতে পারে। লসিকা গ্রন্থিও ফুলে যেতে পারে।

মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ

৩) জ্বরের প্রায় ১-৩ দিন পর মুখ থেকে শুরু করে পুরো শরীরে ছোট ছোট ফুসকুড়ি বের হয়। বসন্তের মতো শুরুতে ফুসকুড়িগুলো লাল এবং ভেতরে সাদা এক ধরনের তরল থাকে। সেগুলো তখন ফোসকায় পরিণত হয়। শেষের দিকে শুকিয়ে পড়ে যায়। ২-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত রোগটি স্থায়ী হয়। সাধারণত নিজ থেকেই রোগটি সেরে যায়। তেমন বড় কোনো জটিলতা এ রোগের ক্ষেত্রে হয় না।

চিকিৎসা

মাঙ্কিপক্সের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সংক্রমিত হলে কিছু বিষয়ের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে-

১) কোনো ব্যক্তির যদি জ্বরের সাথে সাথে শরীরে ফুসকুড়ি, অবসাদগ্রস্ত কিংবা অস্বাভাবিক দুর্বলতা দেখা দেয়, তবে তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের পরীক্ষা করাতে হবে। এ রোগ শনাক্তের ক্ষেত্রে পিসিআর পরীক্ষাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। এক্ষেত্রে ত্বকের ক্ষত স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

২) মাঙ্কিপক্সের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই বলে লক্ষণ বুঝে চিকিৎসক ওষুধ দিয়ে থাকেন। সে অনুযায়ী মেডিসিন গ্রহণ করা উচিত।

৩) জ্বর বা শরীর ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যায়।

৪) প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং পানি পান করতে হবে।

৫) নিয়মিত বিশ্রাম নিতে হবে।

৬) অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা কার্যকর হলেও এখন পর্যন্ত এ রোগের জন্য অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসার কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।

ফুসকুড়ি

প্রতিরোধ

ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, “Prevention is better than cure“। তাই রোগটি সংক্রমণের আগেই একে প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া যায়-

১) ভাইরাস বহন করতে পারে এমন প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

২) অসুস্থ ব্যক্তি বা প্রাণীর সংস্পর্শে থাকা বিছানাসহ ব্যবহার করা যে কোনো জিনিস যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

৩) সংক্রমিত প্রাণী বা ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

৪) রোগীর যত্ন নেওয়ার সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (PPE) ব্যবহার করতে হবে।

৫) ব্যক্তিগত হাইজিন মেনটেইন করতে হবে। হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে নিতে হবে।

৬) রান্নার সময় মাংস ভালো করে সিদ্ধ করা।

মাঙ্কি পক্সের কোনো সুনির্দিষ্ট টিকা নেই। তাই সুস্থ থাকতে হলে ব্যক্তিগত সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতাই এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 

 

ছবিঃ সাটারস্টক

5 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort