হুট করে আমার ভাগ্নির মাথায়, মুখে এক ধরণের পানিযুক্ত গোটা দেখা দিল। দেখেই প্রথমে মনে হল চিকেন পক্স বা জলবসন্ত। ভাবনাটাকে তখনই তাড়িয়ে দিলাম কারণ এটা জলবসন্ত হওয়ার সময় নয়। সাধারনত শীতের শেষে বসন্তের শুরুতে এ রোগ হয় বলে বাংলায় একে জলবসন্ত বলে। যাই হোক আমরা হন্তদন্ত হয়ে ডাক্তারের কাছে ছুট দিলাম। আমাদের অবাক করে দিয়ে ডাক্তার বলল এটা চিকেন পক্স। আমরা রীতিমত ভয় পেয়ে গেলাম এই ভেবে যে আমাদের সোনামণির চিকেন পক্স এই অসময়ে! ডাক্তার বললেন ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বর্তমানে বাংলাদেশের ঋতুচক্রের পরিবর্তনের পাশাপাশি রোগচক্রেরও পরিবর্তন ঘটেছে। রোগ তো আর বোঝে না কোন ঋতু চলছে, রোগ শুধু বোঝে তাপমাত্রা, বৃষ্টি, বাতাসের পরিবর্তন।
সোনামণির চিকেন পক্স বা জলবসন্ত আসলে কী?
ভেরেসেলা জোস্টার ভাইরাস এর প্রভাবে জলবসন্ত হয়। প্রথমদিকে ছোট ছোট চুলকানিযুক্ত গোটা মাথায়, মুখমন্ডলে, গলা থেকে হাত পায়ের তালুতেও দেখা দেয়। ধীরে ধীরে আকার বড় ও তরলপূর্ণ ফোস্কার মতো হয়ে থাকে। সাধারনত ৭ থেকে ১২ দিন স্থায়ী হয়ে থাকে। পাশাপাশি শরীরে জ্বর অনুভূত হয়। ১৬ বছরের নিচে ৯০ ভাগ মানুষের চিকেন পক্স বা জলবসন্ত হয়ে থাকে ।
সোনামণির চিকেন পক্স বা জলবসন্ত হলে করণীয় কী?
১. শিশুর চুলকানি রোধ ও ফোস্কা শুকানোর জন্য ক্যালামিন লোশন দিন। পাশাপাশি বিশ্রাম এবং প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে দিন।
অনেকেই জলবসন্ত হলে বাচ্চাকে আমিষ এবং শাক-সবজি জাতীয় খাবার থেকে বিরত রাখেন। এই ভুল অবশ্যই করবেন না। জলবসন্তকালীন সময়ে বাচ্চার জ্বরের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও শাক-সবজির প্রয়োজন হয়।
২. একটি ভুল আমরা অনেকেই করে থাকি, জলবসন্ত হলে বাচ্চাকে গোসল করতে না দেওয়া, বরং নিয়মিত গোসল করানো উচিৎ কারণ এটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। একটি ফোস্কা ভেঙ্গে সেই জীবাণু থেকে একাধিক ফোস্কার জন্ম হয়। সম্ভব হলে নিমের পানি দিয়ে গোসল করাতে পারেন। যব গোসলের পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন।
৩. আপনার শিশু যদি ডাইপার পরে থাকে তাহলে ফোস্কা শুকিয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ডাইপার পরানো থেকে বিরত থাকুন। বাচ্চাকে ঠাণ্ডা পরিবেশে রাখার চেষ্টা করুন। ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য আপনার শিশুর জামা-কাপড়, বিছানার চাদর এবং ব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণুনাশক দ্রব্য দিয়ে পরিষ্কার করে দিন।
কোন উপসর্গগুলো দেখলে ডাক্তারের কাছে যাবেন?
সাধারণত চিকেন পক্স খুব স্বাভাবিক হলেও মাঝে মাঝে এই রোগ ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। চলুন জেনে নিই কিছু উপসর্গ যেগুলো আপনার বাচ্চার জন্য ভয়ঙ্কর, এমনকি মৃত্যুর করণও হতে পারে।
১. শিশুর জ্বর ১০২ ডিগ্রির উপরে ৩ থেকে ৪ দিন স্থায়ী হয়।
২. ফোস্কাগুলো ক্রমে ফুলে উঠে এবং হলুদ পদার্থ নিঃসৃত হতে থাকে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
৩. ঘাড় এবং পিঠ শক্ত হয়ে উঠে কিংবা তীব্র কাশি শুরু হয়।
উপরের উপসর্গগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি পরিলক্ষিত হলে আর দেরি না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
সোনামণির চিকেন পক্স বা জলবসন্ত ঠেকাতে প্রতিষেধক
বর্তমানে চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নয়নের ফলে জলবসন্তেরও প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে। আপনার শিশুর বয়স ১৩ মাসের বেশি হলে আর দেরি না করে এখনি চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন দিয়ে ফেলুন।
১৩মাসের বড় যে কারোর জন্যই ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের ব্যবধানে ২ বার এই ইনজেকশন দিতে হয় । বাংলাদেশে বর্তমানে সব হাসপাতালেই চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন পাওয়া যায় এবং অবশ্যই চিকেন পক্স আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ থেকে আপনার শিশুকে দূরে রাখুন। সুস্থতায় বেড়ে উঠুক আপনার সোনামণি।
ছবি – সংগৃহীতঃ ফটোগ্রাফারস ডট ক্যানভেরা ডট কম, সাজগোজ.কম