ভ্যাজাইনা সম্পর্কে ৯টি জরুরি তথ্য যেগুলো সবারই জানা উচিত

জেনে নিন আপনার ভ্যাজাইনা সম্পর্কে ৯টি জরুরী তথ্য!

female-reproductive

ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন বা যোনী এলাকায় সংক্রমণ মেয়েদের বেশ প্রচলিত সমস্যা। শুষ্কতা, চুলকানি, অস্বস্তিভাব এই সমস্যার লক্ষণ। আবার অনেক সময় নারীরা তলপেটে অসহ্য ব্যথা অনুভব করেন। এটা কোনও সাধারণ ব্যথা নয়, এটা অনেক সময় নারীর গোপন রোগের ইঙ্গিত দেয়। অশিক্ষিত, দরিদ্র নারীদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশি, কারণ তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার খুবই অভাব রয়েছে। তবে প্রতিদিনের জীবন যাপনে কিছু বিষয় মেনে চললে সমস্যাগুলো এড়ানো যায়। আসুন জেনে নেই ভ্যাজাইনা বিষয়ে কিছু গুরুত্বপুর্ণ তথ্য।

 ভ্যাজাইনা সম্পর্কে কিছু জরুরী তথ্য

১. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা 

ভ্যাজাইনা বা যোনী আলাদাভাবে পরিষ্কার করতে হয় না। সৃস্টিকর্তা প্রাকৃতিকভাবেই এই স্থান পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তবে যোনী পথের আশেপাশের স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার রাখতে হয়।

আলাদা করে কোন প্রকার সাবান, স্প্রে, ক্রিম ইত্যাদি কোন কিছুই যোনীতে ব্যবহার করা উচিত নয়।

২. ভ্যাজাইনার সুরক্ষা ব্যবস্থা

ভ্যাজাইনার সুরক্ষার জন্য কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্ট থাকে, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে নরমাল ফ্লোরা (Normal Flora) বলে। এই সমস্ত ব্যাকটেরিয়াগুলো ভ্যাজাইনার অভ্যন্তরীণ পরিবেশে স্থিতি বজায় রাখে।

ভ্যাজাইনাতে সাবান, স্প্রে ব্যবহার করলে এর ph level, অ্যাসিডিটি দুর্বল হয়ে ইনফেকশন দেখা দেয় - shajgoj.com

এরা ভ্যাজাইনার সাধারণ পিএইচ (ph level) লেভেল, অ্যাসিডিটি, এমনকি অন্যান্য ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। সাবান, স্প্রে বা এ ধরনের পদার্থ ব্যবহার করলে এই ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যায় এবং বিভিন্ন ইনফেকশন দেখা দেয়।

৩. নিজস্ব গন্ধ

প্রতিটি মানুষের নিজস্ব একটি গন্ধ থাকে। ভ্যাজাইনাতেও হালকা কিছু গন্ধ থাকা খুবই স্বাভাবিক। মাসিকের ধরণ, খাবারদাবার, শরীরে পানির পরিমাণ ইত্যাদি কারণে এই গন্ধে পার্থক্য থাকে। এই গন্ধ দূর করতে ভ্যাজাইনাতে আলাদা করে সেন্ট, পারফিউম বা অন্য কোন সুগন্ধি প্রোডাক্ট ব্যবহার করার দরকার নেই।

তবে যদি মনে হয় যে অতিরিক্ত বাজে দুর্গন্ধ হচ্ছে, তাহলে সব থেকে ভালো সমাধান হচ্ছে একজন গাইনী চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।

৪. নিজে নিজেই চিকিৎসা নয়

অনেকেই আছেন ভ্যাজাইনার ইস্ট জাতীয় ইনফেকশন দূর করতে সেখানে টক দই অথবা রসুন ব্যবহার করেন! তারা দাবি করেন যে এধরনের ইনফেকশনের কারণে যে চুলকানি হয় তাতে টক দই দিলে কিছুটা আরাম লাগে, রসুন ব্যবহারে আরোগ্যলাভ হয়!

ভ্যাজাইনা ইস্ট জাতীয় ইনফেকশন - shajgoj.com

কিন্তু এতে ভালো না হয়ে বরং ক্ষতি আরো বেড়ে যায়। টক দই ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ইনফেকশন বাড়িয়ে দেয়। আর রসুন জায়গাটা পুড়িয়ে ফেলে। আর এধরনের ইনফেকশন ঠিকমত চিকিৎসা না হলে তা শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

৫. ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ বা সাদা স্রাব

নারীরা গোপন কোন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগলে তা সাধারণত লজ্জার কারণে কাউকে বলতে চায় না। সাদা স্রাব বা লিউকেরিয়া এমনই একটি রোগ। মাসিকের আগে আগে অনেকেরই হালকা সাদা স্রাব হতে পারে। এটি স্বাভাবিক, কিন্তু অনেক সময় অতিরিক্ত পরিমাণ সাদা বা হলুদ স্রাব হয় যা অতি দুর্গন্ধযুক্ত।

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ বা সাদা স্রাব - shajgoj.com

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস, জননাঙ্গ পরিষ্কার না রাখা, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের আক্রমণ ইত্যাদি কারণে এটি হতে পারে। এই রোগ নিরাময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মত ওষুধ সেবন ও অয়েন্টমেন্ট ব্যাবহার করাই সবথেকে উপকারী। ঘরোয়া পদ্ধতি বা বিভিন্ন হার্বাল পদ্ধতি মেনে সরাসরি ভ্যাজাইনায় কিছু ব্যবহার করলে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে।

৬. অন্তর্বাস নির্বাচনে সচেতনতা

ফ্যাশনের চাইতে আরামটাকেই গুরুত্ব দিন অন্তর্বাস বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে। এই পোশাকটি আপনি বলতে গেলে সারাদিনই পরিধান করেন, তাই এটা আরামদায়ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্তর্বাসের ক্ষেত্রে ফেব্রিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

ভ্যাজাইনা সুরক্ষায় অন্তর্বাস নির্বাচনে সচেতন হন - shajgoj.com

খুব বেশী মোটা কাপড়ের অন্তর্বাস পরিধান করবেন না। এতে পোশাকটি ভিজে গায়ের সাথে লেপটে থাকবে এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মে ত্বকের নানান রকম অসুখে আক্রান্ত হবেন আপনি। খুব বেশী পাতলা অন্তর্বাসও পরিধান করবেন না। সুতি বা প্রাকৃতিক তন্তু  হতে তৈরি এমন অন্তর্বাস বেছে নিন।

৭. চুলকানি মানেই ইনফেকশন নয়

ইনফেকশন ছাড়াও এমন অনেক কারন আছে যার কারণে ভ্যাজাইনায় চুলকানি হতে পারে। আপনার ব্যবহার করা অপরিষ্কার কাপড়, লন্ড্রি প্রোডাক্ট যেমন সাবান বা ডিটারজেন্ট-এর ব্যবহার বা অনেক সময় আশেপাশের স্থান শেভ করার কারণেও চুলকানি হতে পারে। চুলকানি মানেই যে ফাঙ্গাল ইনফেকশন, তা কিন্তু নয়। ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশনও হতে পারে।

আবার অনেক সময় বিভিন্ন যৌন রোগের কারণেও চুলকানি হতে পারে যার ট্রিটমেন্ট সম্পূর্ণ আলাদা। তাই ভ্যাজাইনায় চুলকানি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত অন্য কিছু ব্যবহার করবেন না। এতে ভ্যাজাইনার সেনসিটিভ ত্বকে নিজের অজান্তেই আরো বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারেন।

৮. সঠিক নিয়মে শৌচকর্ম

ভ্যাজাইনা থেকে মলদ্বার এর দূরত্ব খুবি অল্প। তাই সঠিক নিয়মে শৌচ করতে জানাটা জরুরী। শৌচ করার সময় সব সময় সামনে থেকে পেছনে যেতে হবে। পেছন থেকে সামনে নয়। এতে মলদ্বার থেকে জীবাণু ভ্যাজাইনায় চলে আসতে পারে এবং সেই জীবাণুর কারণে ইনফেকশন হয়ে তা জরায়ু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

৯.ভ্যাজাইনার আদ্রতা 

ভ্যাজাইনা এমনিতেই সাধারণত একটু ভেজা ভেজা থাকে। তবে শরীরে ইস্ট্রজেন হরমোন এর তারতম্য হলে বা পানির অভাব হলেও ভ্যাজাইনা ড্রাই হয়ে যেতে পারে। তাই ভ্যাজাইনা অতিরিক্ত শুষ্ক মনে হলে বেশি বেশি পানি, ফলের জুস, শরবত খান।

আর তাতেও কাজ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিন্তু ঘরে বসে কোন প্রকার লুব্রিকেন্ট, তেল, লোশন বা অন্য কোন জড়িবুটি ব্যাবহার করবেন না। এতে তাৎক্ষনিক ভাবে ভ্যাজাইনার শুষ্ক ভাব কমলেও পরবর্তিতে বিপদ হতে পারে। ভ্যাজাইনার ত্বক পাতলা হয়ে যায় এবং ক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

১০. ভ্যাজাইনাল টাইটনেস

ভ্যাজাইনাল টাইটনেস - shajgoj.com

ভ্যাজাইনা এক ধরনের ইলাস্টিক তন্তু জাতিয় মাসল দিয়ে গঠিত। যা অল্প বয়সে টাইট বা শক্ত থাকে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বা সন্তান জন্মদানের পর আস্তে আস্তে তা লুজ হতে শুরু করে। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা আপনি চাইলেই পরিবর্তন করতে পারবেন না।

তবে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে এই প্রক্রিয়া ধীর করতে পারেন। যেমন, ভারী জিনিস উত্তলন না করা, পুষ্টিকর খাবার খেয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা, কেগেল ব্যায়াম করা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে বাজারের বিজ্ঞাপন দেখে কোন কিছু ব্যবহার করা কোন কাজে আসে না।

যোনী বা ভ্যাজাইনা মেয়েদের শরীরের গোপনতম অঙ্গ। যা সম্পর্কে অনেকেই অনেক ভুল ধারণা নিয়ে থাকেন, অনেকেই লজ্জায় নিজের অনেক গোপন সমস্যা সম্পর্কে কাউকে লজ্জায় কিছু বলতে পারেন না। যার ফলে ছোটখাট বিষয় থেকে অনেক বড় সমস্যা তৈরি হয়। তাই লজ্জা ভেঙে নিজেকে জানুন, সুস্থ থাকুন।

ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক

179 I like it
26 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort