গর্ভধারণে ফাইব্রয়েড টিউমার জরায়ুর একটি অতি পরিচিত টিউমার। ৩৫ বছরের বেশি বয়সি নারীদের প্রতি ১০০ জনে ৩৫ জন মহিলার এই টিউমার থাকতে পারে। এই টিউমারের লক্ষণগুলো হল মাসিকের সময় অধিক রক্তপাত ও ব্যথা হওয়া। যদিও ৭৫% ক্ষেত্রে এই টিউমার কোন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। প্রেগ্ন্যান্সির সময় কিংবা অন্যান্য কারণে পেটের আল্ট্রাসাউন্ড করার সময় ধরা পড়ে।
জরায়ুর ফাইব্রয়েড টিউমার এর ধরণ
অবস্থান ভেদে এই টিউমার তিন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন –
১) সাব সেরাস
২) ইন্ট্রা মুরাল
৩) সাব মিউকাস
গর্ভধারণে জরায়ুর ফাইব্রয়েড টিউমার
সাধারণত সাব মিউকাস টিউমারই অধিক জটিলতার কারণ হয়ে থাকে। গর্ভধারণের আগেই যদি এই টিউমার ধরা পড়ে তবে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। টিউমারটি যদি আকারে ছোট হয়ে থাকে এবং বাচ্চা হওয়ার পথে এটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করলে গর্ভধারণের চেষ্টা করে যেতে হবে। এক্ষেত্রে টিউমার অপসারন করার দরকার হবে যদি –
১) দীর্ঘ দিন চেষ্টার পরও গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে এবং বন্ধ্যাত্বের আর কোন কারণ না পাওয়া গেলে।
২) তিন বা এর অধিকবার গর্ভপাত হলে।
বন্ধ্যাত্ব সমস্যার জন্য টিউমার অপারেশন করার আগে কিছু শর্ত পূরণ করা জরুরী। বন্ধ্যাত্বের জন্য অন্য কোন কারণ আছে কিনা তা দেখে নেওয়া, হিস্টারো স্যালফিংগোগ্রাম বা ল্যাপারোস্কপি করে ফেলোপিয়ান টিউব (ডিম্বনালী) খোলা কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে, স্বামীর শুক্রানু বা বীর্য নরমাল থাকতে হবে।
জরায়ুতে টিউমার থাকা অবস্থায় গর্ভধারণ
জরায়ুতে টিউমার থাকা অবস্থায় গর্ভধারণ হয়ে থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা কোন অসুবিধা করে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিউমারের কারণে মা এবং সন্তানের বিভিন্ন জটিলতা হতে পারে যেমন-
- গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে বিশেষ করে টিউমারটি যদি সাব মিউকাস হয়। কারণ সাব মিউকাস টিউমার জরায়ুর ভিতরে অবস্থিত হওয়ায় ভ্রুণ এবং প্লাসেন্টার স্থাপনকে বাধাগ্রস্থ করে।
- প্রেগন্যান্সির কারণে এই টিউমারেরও কিছু পরিবর্তন হয় যা জটিলতা তৈরি করে। যেমন, জরায়ু বড় হবার সাথে সাথে টিউমারের আকার ও সাইজ পরিবর্তন হতে পারে। অনেক সময় টিউমারের মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়ে অথবা পানি জমা হয়ে পেটে প্রচন্ড ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
- প্লাসেন্টা যদি টিউমারের উপর অবস্থিত হয় তবে অনেক সময় প্লাসেন্টা সেপারেশন হয়ে অ্যান্টি পারটাম হেমোরেজ (রক্তপাত) হতে পারে। এছাড়া বাচ্চার ওজন কম হওয়া, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (গর্ভফুল নিচের দিকে থাকা), সময়ের আগে ডেলিভারি হওয়া ইত্যাদি জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ফাইব্রয়েডের কারণে অনেক সময় নরমাল ডেলিভারির পথ বাধাগ্রস্থ হয় এবং সিজারের প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়াও ডেলিভারির সময় এবং এর পরবর্তীতে অধিক রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে এবং সাবধানতা অবলম্বন করার দরকার হয়।
সিজারে জরায়ুর ফাইব্রয়েড টিউমার ফেলে দেওয়া যায় কি?
চিকিৎসা নিয়ে অনেক মায়েরা এ সময় জানতে চান যে সিজারের সময় টিউমার ফেলে দেওয়া যায় কি না। এটি নির্ভর করে টিউমারটি কোথায় অবস্থিত এবং এর আকার আকৃতির উপরে। জরায়ুর বাইরের দিকের টিউমার (সাব সেরাস টিউমার) ফেলে দেয়া গেলেও অন্যান্য টিউমার অপসারণ করা হয় না কারণ এ সময় অধিক রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে। আবার ডেলিভারির পর অনেক টিউমার আকারে ছোট হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে কোন অপারেশন নাও লাগতে পারে।
আজ গর্ভধারণে জরায়ুর ফাইব্রয়েড টিউমার এর ধরণ ও চিকিৎসা নিয়ে আপনাদের ধারণা দিলাম। এখন এই জরায়ুর ফাইব্রয়েড টিউমারের লক্ষণ আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন বলে আশা করি এবং অবস্থা বুঝে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
লিখেছেন- ডাঃ নুসরাত জাহান
সহযোগী আধ্যাপকা(অবস-গাইনি)
ডেলটা মেডিকেল কলেজ,মিরপুর ১,ঢাকা
ছবি – ব্লগডক্টরওজেড.কম