চিনি | এর চেয়েও বড় ৬ ভিলেন কোনগুলো জানেন কি?

চিনি | এর চেয়েও বড় ৬ ভিলেন কোনগুলো?

sugar

ইন্টারনেট আর স্মার্টফোন-এর যুগে কোনটা হেলদি আর কোনটা খারাপ- আমরা একটু আধটু সবাই বুঝি, তাই না? কিন্তু তারপরেও এদের সবার মধ্যে সবচেয়ে বাজে উপাধি পেয়ে এসেছে চিনি, হোক সে সাদা চিনি, ব্রাউন সুগার, খোলা বা সুন্দর করে প্যাকেট করা, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য ঠিক রাখতে চাইলে খাবারে চিনি দেয়া একেবারেই নিষিদ্ধ!!

কিন্তু, চিনি একাই কেন নির্বাসিত হবে? আধুনিক স্মার্ট ডায়েট, ফাস্ট লাইফস্টাইল-এ এমন আর কী কী আছে যা রোজ খেয়ে নিজের ক্ষতি আমরা দিনকে দিন করছি??

আসুনতো দেখি ডাক্তার আর নিউট্রিশনিস্ট-রা কোন কোন ধরনের খাবারকে চিনির চেয়েও বেশি অপছন্দ করেন? আর কেনই বা করেন?

চিনি বা সুগার-এর চেয়েও বড় ৬ ভিলেন

১. আর্টিফিশিয়াল সুগার

ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে বা পড়বে পড়বে করছে? এক্ষেত্রে আমাদের দেশে মানুষ চিনি খাওয়া ছাড়বার অভ্যাসটা করার চেষ্টাও করে না, সরাসরি গাদাগাদা আর্টিফিশিয়াল সুইটেনার কিনে এনে সকাল বিকাল ৩-৪ কাপ দুধ চা খাওয়া শুরু করা হবে। তাই না? কি আর হবে চিনি তো আর খাচ্ছি না!!

আর্টিফিশিয়াল সুগার একই সাথে দুটো কাজ করে-

১) ব্রেইন-এর যে সেন্সর দেহে চিনি ঢুকেছে কিনা সেটা মনিটর করে তাকে অকেজো করে দেয়। তাই ব্রেইন যে সিগনাল-টা দিত, যে হ্যাঁ, যথেষ্ট সুগার এসেছে, এখন খাওয়া বন্ধ করো, সেটা আর আসে না। তখন কী হয়? কিছুক্ষণ পরপর মিষ্টি কিছু খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু ঐ যে, আসল মিষ্টি তো শরীর পাচ্ছে না। তাই ক্রেভিং-টা দূর হয় না। দেখা যায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ার আগে যে মানুষ মাসে একবার মিষ্টি খেত না সে রোগে পড়ার পর রোজই এখন পারলে মিষ্টি খাচ্ছে!!

২) দীর্ঘদিন একনাগাড়ে আর্টিফিশিয়াল সুগার রোজ খেলে সেটা শরীরের ফ্যাট মেটাবোলিজম-এর হারে গোলমাল করবেই করবে। ফলে যতই কম খাবেন, কোনভাবেই ওজন কমাতে বা কনট্রোলে রাখতে পারবেন না।

২. এনার্জি ড্রিংকস

সুস্থ থাকতে চাইলে এনার্জি ড্রিংক নামক কিছুই খাওয়া যাবে না। কারণ এগুলো রঙ মেশানো চিনি আর ক্যাফেইন-ওয়ালা পানি ছাড়া আর কিছুই না।

প্রতি বোতলে ৩০ গ্রামের বেশি চিনি থাকে এনার্জি ড্রিংক-এ, যা ডেইলি যা খাওয়া উচিত তার চেয়ে প্রায় ৮ গুণ বেশি, আর প্রতি বোতলে থাকে ম্যাক্সিমাম যেটুকু ক্যাফেইন একজন মানুষের খাওয়ার কথা তার চেয়েও বহু বহুগুণ!! মাত্রা ছাড়া এক্সেস চিনি আর ক্যাফেইন হঠাৎ সিস্টেমে চলে যাওয়ায় ১৫ বছরের বাচ্চা হার্ট অ্যাটাক করেছে এমন উদাহরণ পৃথিবীতে অনেক আছে। তাই নিজেই বুঝে নিন কেন এই জিনিস ডাক্তাররা এতো ঘৃণা করে!

৩. কোল্ড ড্রিংকস

কোল্ড ড্রিংক আজ পর্যন্ত বহু ল্যাবরেটরি আর প্রাকটিক্যাল টেস্ট-এ নিঃসন্দেহে কী কী শারীরিক সমস্যার কারণ হিসেবে নিঃসন্দেহে প্রমানিত হয়েছে জানেন?

  • এক্সেস ক্যালোরি ইনটেক
  • দরকারের চেয়ে ১০-১২ গুণ বেশি চিনি ইনটেক
  • বাচ্চাদের ক্ষেত্রে টাইপ ২ ডায়াবেটিস
  • অ্যাডালট-এর ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক-এর রিস্ক
  • কিছু কিছু ধরনের ক্যান্সার সেল বৃদ্ধি

নিজের বা নিজের সন্তানের ক্ষেত্রে উপরের ঝুঁকিগুলো নিয়েও কোল্ড ড্রিংক খেতেই হবে আপনার? এমনই নেশা?? আবারো নিজেই ভাবুন…!

৪. ট্রান্স ফ্যাট

প্রেশার বা হার্টের সমস্যা থাকলে ডাক্তার যে কতোভাবে বুঝানোর ট্রাই করে যে প্লিজ প্লিজ এইসব খাবারগুলো খাবেন না!! কিন্তু কার কথা কে শোনে? ৫ দিন কনট্রোল করে ৬ দিনের দিন কবজি ডুবিয়ে মাংস মেখে ভাত না খেলে আমরা আর কিসের বাঙালি?? সাথে ধুনো দেয়ার জন্য আত্মীয়রা তো আছেই! প্রবলেম বুঝে না বুঝে একই কথা-

“একটু খান, একটু খেলে কি হয়?”

‘একটু’ খেতে গিয়ে আমাদের রাস্তা প্রথমে হয় এনজিওগ্রাম-এর রুমে, এরপর রিং পরানো… সবশেষে ম্যাসিভ অ্যাটাক!

প্রবলেম কী? গালি দেবার জন্য ডাক্তার তো আছে!!! আমাদেরতো কোন দোষ নাই! সুস্থ মানুষ দাওয়াত খেয়ে এসে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করলো! ডাক্তারের দোষ ছাড়া আর কী? তাই না??

রেড মিট, ভাঁজা-পোড়া, চিংড়ির মাথা, মাখন, ঘি, এক্সেস তেল- এসব পরিমিত খাওয়া বা কম খাওয়ার জন্য ডাক্তারের ধমকের অপেক্ষা করবেন কেন? আজ থেকেই কমিয়ে দিন! বা আরও ভালো, বাদই দিন ভাঁজা-পোড়া, রেড মিট। বাকি সব একটু পরিমিত… আজকে বয়স কম বলে ৩ বেলা বিরিয়ানি খেয়েও সুস্থ? কালকের দিনটা যে দেখবেন কিভাবে ভাবলেন?

হার্টের প্রবলেম হওয়ার আগেই হুঁশ ফেরত আসা ভালো না? দাঁত থাকতেই তোঁ দাঁতের মর্ম বুঝতে হয়!

৫. ফুড কালার

আর্টিফিশিয়াল ফুড কালার বাচ্চাদের ভেতরে ব্রেইন একটিভিটি আর মনোযোগের স্থায়ী ঘাটতি ঘটিয়ে দিতে পারে।

Attention Deficiency Disorder (ADD)-সহ অন্যান্য লারনিং ডিসঅর্ডার-এ এদের ভূমিকা প্রমানিত হয়েছে। তাই বাচ্চাকে কতগুলো কালারড ক্যান্ডি আর রঙ-বেরঙের জুস খেতে দিচ্ছেন একটু নজরে রাখুন।

৬. মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন

ইউএসএ ফুড অ্যান্ড ড্রাগ সেফটি অ্যাসোসিয়েশন নিঃসন্দেহে দেখেছে মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন ব্যাগ মাইক্রোওয়েভ-এর এক্সেস হিট-এ কিছুটা ব্রেক ডাউন করে এবং পপকর্ন-এ Perfluorooctanoic acid (PFOA) মিক্স করে দেয়। এই যৌগ ল্যাবরেটরি টেস্ট-এ ইঁদুর আর গিনিপিগ-এর দেহে ক্যান্সার তৈরি করে এবং নিঃসন্দেহে মানুষের দেহেও ক্যান্সার তৈরিতে ভূমিকা রাখে (অবশ্যই মানুষের দেহে ক্যান্সার হয় কিনা দেখার জন্য একটা মানুষ ধরে টেস্ট করা হবে না!!)।

আমি তো ল্যাব টেস্ট দেখেই প্যাকেজ পপকর্ন খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। আপনি কি করছেন?

তবে ভাববেন না, পপকর্ন ভুট্টা দানা দিয়ে ঘরে ভালোভাবে বানিয়ে যতখুশি খেতে পারেন। জাস্ট মাইক্রোওয়েভ প্যাকেজ কিনবেন না।

উপরের খাবারগুলো ছাড়া বাঁচা কিন্তু ওত কঠিন নয়। একদম ছাড়তে না পারলেও, চেষ্টা করি সবাই মিলে একটু পরিমিত ডায়েট মেনটেন করতে! দিনশেষে শরীরটাতো আমারই! রাইট ??

 

ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ

1 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort