গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে ব্যথা হওয়ার ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ জানা আছে কি?

গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে ব্যথা হওয়ার ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ জানা আছে কি?

pain-in-pregnency

মা হওয়ার সময় একটি মেয়ের শরীর ও মনে ঘটে নানারকম স্বাভাবিক পরিবর্তন ও প্রতিক্রিয়া। প্রায় প্রতিটি মেয়েরই এমন কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় যা বিপদ ডেকে আনে। গর্ভাবস্থায় মায়েদের পেট ব্যথা বা জরায়ুতে ব্যথা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, বেশ স্বাভাবিক ব্যপার। কারণ এসময়ে নারীদের দেহের অনেক অঙ্গের মাঝে পরিবর্তন ঘটে, জরায়ু আকারে বড় হয়ে যায়, লিগামেন্ট (ligament) টানটান হয়ে যায়। এছাড়া সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মর্নিং সিকনেস তো আছেই। কিন্তু যখন এই ব্যথা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখন অবশ্যই চিন্তার কারণ রয়েছে ও সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে ব্যথা হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এই কারণগুলো আমাদের অনেকেরই জানা নেই তাই এর প্রতিকার করাও সম্ভব হয় না। আজকে আমরা আপনাদের জানাবো গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে(uterus) ব্যথা হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে।  

গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে ব্যথা হওয়ার কারণ 

বিভিন্ন কারণে এই ব্যথা হতে পারে। কিছু কারণ ঝুঁকিময় নয় আবার কিছু আছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আজকে আমরা আপনাদের গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে ব্যথা হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো সম্পর্কে ধারণা দিবো।

যে সমস্ত কারণে হতে পারে ব্যথা

  • জরায়ুর আকার বড় হয়ে যাওয়া
  • রাউন্ড লিগামেন্টের ব্যথা
  • কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস

এরকম কারণে পেটে ব্যথা হলে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু এখন আমরা যে কারণগুলো বলতে যাচ্ছি, সেগুলোর কোনটা আপনার মাঝে বর্তমান থাকলে, যদি আপনি সন্তান সম্ভবা হয়ে থাকেন তবে আপনার অবশ্যই এগুলোর ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে হবে।

(১) ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন 

গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে ব্যথার কারণ ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন - shajgoj.com

প্রেগন্যান্সির ৬ সপ্তাহ কেটে গেলেই ইউরিনারি ট্রাক্ট (urinary tract) বা ব্লাডার ইনফেকশনের (bladder infection) ঝুঁকি বাড়ে। প্রস্রাবের সময় জ্বালা করে, তলপেটে চাপ, বারবার প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা হয়। গর্ভাবস্থায় এই ঝুঁকি বাড়ে। জরায়ুর ওজন বাড়তে থাকলে তা ব্লাডারে চাপ দেওয়ার ফলে প্রস্রাব ঠিক মতো বেরোতে পারে না। ফলে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। সাবধান না হলে কিডনির উপর প্রভাব পড়তে পারে। সময়ের আগেই গর্ভযন্ত্রণা শুরু হতে পারে। অস্বাভাবিক কম ওজনের শিশু জন্মানোরও ঝুঁকি থাকে।

(২) মিসক্যারেজ 

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে মিসক্যারেজ (miscarriage) হয় বেশি। আট সপ্তাহের মাঝে মিসক্যারেজের লক্ষণ হতে পারে হালকা থেকে ভারী রক্তপাত, পেটে তীব্র ব্যথা এবং হালকা থেকে তীব্র পিঠব্যথা।

(৩) পূর্বের সিজারিয়ান সেকশনের ব্যথা

আগে সিজার করা থাকলে এবং পুনরায় গর্ভবতী হলে গর্ভধারণের শেষের দিকে জরায়ুতে ব্যথা হতে পারে। আগের সেলাই যদি ঠিকমত না দেয়া হয় তবে কাটা জায়গায় টান লেগে ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় জরায়ু বড় হতে হতে ফেটেও যেতে পারে। তাই আগে সিজার করানো থাকলে পরের গর্ভধারণে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সামান্য ব্যথাও অবহেলা করা ঠিক নয়।

(৪) প্রসব বেদনা

কিছুক্ষেত্রে ৩৭ সপ্তাহের আগেই প্রসব বেদনা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে তলপেট ও পিঠে ব্যথার পাশাপাশি থাকতে পারে ইউটেরাইন কনট্রাকশন্স (Uterine Contraction), রক্তপাত ও পানি ভাঙা। এমনকি পিরিয়ডের সময় যেমন ব্যথা হয়, তেমন ব্যথাও দেখা দিতে পারে। ৩৭ সপ্তাহের পরে এই ব্যথা হলে তাকে প্রসব বেদনা বলেই ধরে নেওয়া যায়।

(৫) একটোপিক প্রেগনেন্সি 

গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে ব্যথার কারণ একটোপিক প্রেগনেন্সি - shajgoj.com

জরায়ুর বাইরে, বিশেষ করে ফ্যালোপিয়ান টিউবে (Fallopian tube) ভ্রূণ বড় হতে পারে। আলট্রাসাউন্ড (ultrasound) করে তা নিশ্চিত হওয়া যায়। কিন্তু আলট্রাসাউন্ডের আগে যদি আপনি টেস্ট করে জেনে থাকেন আপনি গর্ভবতী এবং পেটে ব্যথা হয়, তাহলে তা একটপিক প্রেগনেন্সি (Ectopic pregnancy) হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে আলট্রাসাউন্ড করে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।

(৬) ব্রাক্সটন হিকস কনট্রাকশন 

এটা প্রেগন্যান্সির সময় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। জরায়ুর পেশীর সংকোচনের কারণে পেটে চাপ অনুভূত হয়। গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহ পর্যন্ত মাঝে মাঝেই এরকম হতে পারে। যদি খুববেশি সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানান। ডেলিভারির সময় এগিয়ে এলে কিন্তু এই ব্যথা গর্ভযন্ত্রণার লক্ষণ হতে পারে।

(৭) ভ্রূণীয় আবরণ বা প্লাসেন্টা ফেটে যাওয়া

প্লাসেন্টা (placenta) বা গর্ভফুল হচ্ছে গর্ভস্থ শিশুর জন্য অক্সিজেন ও পুষ্টির উৎস। এটি সাধারণত জরায়ুর উপরের স্তরের সাথে যুক্ত থাকে ও শিশুর জন্মের পর এটা আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের মাথায় প্লাসেন্টা জরায়ুর গা থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে, যা থেকে হতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। জরায়ু খুবই শক্ত হয়ে যায় এবং কালো লাল রঙের রক্ত বের হতে পারে যোনি দিয়ে, যা সহজে জমাট বাঁধে না। এক্ষেত্রে হয়তো সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চাকে জন্ম দেয়াতে হবে। তবে এ ঝুঁকি তাদেরই বেশি যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে।

কিছু সাধারণ উপদেশ 

  • বিশ্রাম নিন
  • ধীরে শোওয়া-বসা করুন
  • হাঁচি বা কাশির সময় সামনের দিকে ঝুঁকে কাশুন
  • চিকিৎসকরা এই সময় কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজের (Stretching Exercises) পরামর্শ দিয়ে থাকেন
  • সারা দিন ধরে অল্প অল্প করে খেতে থাকুন
  • পানি ও তরল বেশি করে খান
  • সচল থাকুন
  • এমন খাবার এড়িয়ে চলুন যা থেকে গ্যাস হতে পারে
  • কার্বোনেটেড বেভারেজ (Carbonated Beverage) একেবারেই চলবে না
  • ডায়েটে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখুন
  • চিকিৎসককে সমস্যার কথা জানান ও প্রয়োজনে ঔষধ খান

পরিবারের অনেক বড় একটা ভূমিকা রয়েছে গর্ভবতী ও গর্ভের শিশুর ভালো থাকায়। নারীদের শরীরে নানা রকম পরিবর্তন হয়। এগুলোকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে সাহায্য প্রয়োজন পরিবারের কাছ থেকে। ঠিক তেমনিভাবে যে কোন বিপদ সংকেতকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে দ্রুত সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক

125 I like it
27 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort