৫টি শীতকালীন সবজি | জেনে নিন এগুলোর পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতার কথা!

৫টি শীতকালীন সবজি | জেনে নিন পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতার কথা!

৫টি শীতকালীন সবজি খাচ্ছেন একজন

শীতকাল এক মায়াবিনী ঋতুর নাম। জীবনকে মায়ার বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধে এই ঋতু। ঠিক বছর ঘুরতেই যেন শীতকালের অপেক্ষায় থাকতে হয়। কী নেই শীতের দিনগুলোতে? শীতকাল মানেই কি পিঠা-পুলি আর খেজুর রসের গল্প? শীতের দুপুরে, রাতের আহারে কবজি  ডুবিয়ে যখন মাছে-ভাতে বাঙ্গালী না হলেই নয়, তখন তার সাথে শাক-সবজি না হলে কেমন করে হয়? বাহারি শাক-সবজিতে সমৃদ্ধ শীতকাল মাছে-ভাতে বাঙালি পরিচয়টিকে যেন আরও পাকাপাকি করে তোলে একটি পরিপূর্ণ আহারের মাধ্যমে। কথা বলবো ৫টি শীতকালীন সবজি নিয়ে। এই ৫টি শীতকালীন সবজি খেতে দারুণ স্বাদের! জানুন তবে ৫টি শীতকালীন সবজি ও তাদের উপকারিতা সম্পর্কে !

৫টি শীতকালীন সবজি ও তাদের স্বাস্থ্যোপকারিতা

১. ফুলকপি

বড় বড় সবুজ পাতার মধ্যেখানে সাদা সাদা একগুচ্ছ ফুল! বলুন দেখি কোন ফুল? হুম, মোটেই ফুল নয়! এই সবুজ-সাদা শুভ্র গুচ্ছ ফুলটি হলো আমার খুব পছন্দের একটি সবজি, ফুলকপি! ভাজি, নিরামিষ, মাছের তরকারি, পাকড়া যেভাবেই খান না কেন ভালো লাগে প্রতিবারই!

পুষ্টি উপাদান-

ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে যা আমাদের দেহে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। এছাড়াও রয়েছে আয়রন, সালফার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবার।

উপকারিতা-

ফুলকপির রয়েছে নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা। তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো-

১) ক্যান্সার- ফুলকপিতে বিদ্যমান সালফারযুক্ত সালফোরাফেন উপাদানটি ক্যান্সার সেল ধ্বংস করে এবং যেকোনো টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।

২) সবল হৃদযন্ত্র- ফুলকপির সালফোরাফেন রক্ত চাপ কমায় ও রক্ত প্রবাহ নিয়মিত রেখে হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে।

৩) পরিপাকে সহায়ক- ফাইবার ও সালফার সমৃদ্ধ ফুলকপি পরিপাকে সহায়ক।

৪) স্মৃতিশক্তি বান্ধব- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও সচল রাখতে ফুলকপির ভিটামিন বি ও বি কমপ্লেক্সযুক্ত কলিন অনেক উপকারি। এছাড়াও ফুলকপি মস্তিষ্কের দূর্বলতা ও স্মৃতিবিভ্রমের সমস্যায় সহায়ক।

৫) ঠাণ্ডা জাতীয় সমস্যার প্রতিষেধক- ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি শীতকালের ঠাণ্ডা জ্বর, সর্দি, কাশি ও টনসিলের প্রদাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

৬) দেহ গঠনে- ফুলকপি কোলেস্টেরলমুক্ত তাই দেহ গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

৭) রক্ত উৎপাদক- ফুলকপির আয়রন দেহে রক্ত উৎপাদক। গর্ভবতী মা ও বাড়ন্ত শিশুর আয়রনের চাহিদা মেটাতে তাই ফুলকপি একটি বেস্ট অপশন।

২. বাঁধাকপি

পাতার পরে পাতার পরত! হ্যাঁ, বাঁধাকপির কথা বলছি। তবে অনেকে এই সবজিকে পাতাকপিও বলে থাকে। বাঁধাকপির ভাজি, ডালনা, ফাস্টফুড আইটেম-এ কোলস্লো…উফফ! জিভে জল চলে আসছে! থাক, বাঁধাকপির আইটেম চিন্তা না করে আসুন এর পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতা কী কী তা জেনে নেই।

পুষ্টি উপাদান-

বাঁধাকপি প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফোলেট, ফাইবার, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, প্যান্টোথেনিক এসিড, বিটা ক্যারোটিন, এন্টি-অক্সিডেন্ট ইত্যাদি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।

উপকারিতা-

বাঁধাকপি ও ফুলকপির স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেকটাই একই রকম। তবুও চলুন দেখে নেই কী কী উপকারিতা রয়েছে বাঁধাকপির?

১) ক্যান্সার প্রতিরোধক- বাঁধাকপি খুব ভালো ক্যান্সার প্রতিরোধক একটি সবজি।

২) ওজন কমায়- বাঁধাকপি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এই সবজি খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমাতে সহায়ক।

৩) হাড় মজবুত করে- এই সবজিতে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি হাড়কে করে দৃঢ় ও মজবুত।

৪) আলসার প্রতিষেধক- যাদের আলসার-এর সমস্যা রয়েছে, তারা বাঁধাকপি রস খেতে পারেন। এটি একটি প্রাকৃতিক আলসার প্রতিষেধক।

৫) চোখের যত্নে- বাঁধাকপিতে বিটা ক্যারোটিন আছে যা আমাদের চোখের জন্য খুবই ভালো।

৬) ত্বক ও চুলের যত্ন- বাঁধাকপির বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের চুলের জন্য অনেক উপকারি। আর বাঁধাকপিতে বিদ্যমান ফাইটো-ক্যামিকেলসমূহ আমাদের ত্বকের প্রদাহ জনিত সমস্যা থেকে দূরে রাখে।

৭) ডিএনএ পুনর্গঠন করে- পাতাকপির ফলিক এসিড বা ফোলেট আমাদের শরীরের ডিএনএ পুনর্গঠন করে থাকে।

৮) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- এই সবজিতে বিদ্যমান ভিটামিন সি ও এন্টি- অক্সিডেন্ট আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও আমাদের সুস্থ রাখে!

৩. টমেটো

স্বাদে টকটক আর পাকলে লাল টুকটুকে রসালো ছোট্ট একটি সবজি! এটা টমেটো বৈ আর কিছুই নয়! সালাদ, ভর্তা, ভাজি বা তরকারি যেভাবেই খান টমেটো যে চাই-ই চাই! এখন আসুন জেনে নেই এই সুস্বাদু টমেটোর পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতা।

পুষ্টি উপাদান-

টমেটো ভিটামিন সি-তে ভরপুর একটি সবজি। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ফাইবার, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, রিবোফ্লাবিন, থায়ামিন ও সামান্য পরিমানে ভিটামিন ডি, সালফার ও প্রচুর পানি আছে।

উপকারিতা-

টমেটোর উপকারিতা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো-

১) দাঁতের সুরক্ষা- টমেটোর ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁতের জন্য খুবই উপকারি।

২) হৃৎপিন্ডের সুস্থতায়- টমেটো থায়ামিন সমৃদ্ধ হওয়াতে এটি হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে।

৩) রোগ প্রতিরোধক- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়াতে টমেটো আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা করে।

৪) দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে- টমেটোতে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন- এ, যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এমনকি টমেটো রাতকানা রোগও নিরাময় করতে সক্ষম।

৫) ক্যান্সার প্রতিরোধক- টমেটো ফুসফুস ক্যান্সার ও যকৃত ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। কারণ, এতে রয়েছে সালফার।

৪. মূলা

মাটির নিচের লম্বা শেকড়, রঙটি সাদা তুলার মতন! বাহ সুন্দর তো! মূলাকে এমনভাবেও বলা যায়! তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূলা সাদা রঙের দেখা গেলেও এই সবজি লালও কিন্তু হয়! এখন জানার পালা মূলা সম্পর্কে।

পুষ্টি উপাদান-

মুলা ও এর শাকে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার, পানি ইত্যাদি।

উপকারিতা-

মুলার স্বাস্থ্য উপকারিতাসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো-

১) শর্করার নিয়ন্ত্রক- মূলা শাকে বিদ্যমান ফাইবার রক্তের শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

২) হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে- মূলা ও মূলা শাক হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষায় বেশ উপকারি।

৩) রোগ প্রতিরোধক- মূলাতে বিদ্যমান ভিটামিন সি আমাদের দেহকে বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখে।

৪) রুচি বর্ধক- মূলা রুচি বর্ধক একটি সবজি। এটি রুচি বাড়িয়ে দেয়ার ফলে ক্ষুধাও বৃদ্ধি পায়।

৫) কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে- মূলা ফাইবার বা আঁশ সমৃদ্ধ হওয়াতে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে ও নিরাময়েও সাহায্য করে থাকে।

৫. লাউ

শীতকালে আমার আরও একটি আকর্ষণ হলো দুধ লাউ। শুধু আমার কেন সবার খুবই প্রিয় এই দুধ লাউ। আর তরকারি তো স্বাস্থের জন্য উপকারিতা আর বলার কোনো অপেক্ষাই থাকে না! শীতকাল ফুরোলেই তাই সাধের লাউয়ের জন্য বৈরাগী হতেও আর দ্বিধা থাকে না।

পুষ্টি উপাদান-

লাউ মূলত পানিপূর্ণ ঠাণ্ডা জাতীয় একটি সবজি। এতে সবচেয়ে বেশি রয়েছে পানি। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ফাইবার, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিংক ইত্যাদি।

উপকারিতা-

১) হৃদরোগের সুস্বাস্থ্যে- লাউয়ের জিংক উপাদানটি আমাদের দেহকে হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে।

২) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাউকে পথ্য হিসেবে ধরা হয়। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।

৩) স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে- লাউ খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

৪) দাঁত ও হাড় মজবুত করে- লাউয়ে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড়ের মজবুত গঠনে সহায়তা করে।

৫) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে- লাউ একটি পানি জাতীয় সবজি বলে এটি সহজেই আমাদের দেহের পানিশূন্যতা দুর করে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আমাদের দূরে রাখে।

৬) অনিদ্রা দুর করে- লাউ খেলে ঘুম ভালো হয় এমনকি এটি ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা্র জন্য বেশ উপকারি একটি সবজি।

এইতো হল ৫টি শীতকালীন সবজি নিয়ে অনেক কথা! এই জানুন এ ৫টি শীতকালীন সবজি খাদ্যের তালিকায় রাখুন। শীতের সবজির কী আর শেষ আছে! শিম, মটরশুঁটি, পালংশাক, লেটুস, ওলকপি, শালগম আরও কত কী! যেকোনো খাবারেই সবজি যোগ হলেই সে খাবারের স্বাদের মাত্রা উঠে যায় এক ধাপ উপরে। শুধু স্বাদই পাচ্ছেন? উঁহু, শীতকালের সবজি আপনাকে পুষ্টি দিচ্ছে উজার করে! তাই, শীতকালে সুস্থ থাকতে উপভোগ করুন রকমারি সব টাটকা সবজি!

ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক

3 I like it
2 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort