ব্যায়ামের সময় গান শুনলে কী কী উপকার পাওয়া যাবে?

ব্যায়ামের সময় গান শুনলে কী কী উপকার পাওয়া যাবে?

4

সকালবেলা কানে ইয়ারফোন দিয়ে কেউ ব্যায়াম বা জগিং করছে এমন দৃশ্য আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। খেয়াল করে দেখুন, আপনি নিজেও যখন হাঁটতে যাচ্ছেন বা ব্যায়াম করছেন, তখন আপনার কানেও ইয়ারফোন লাগিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু ব্যায়ামের সময় গান কেন শোনা হয়? ব্যায়াম আর গানের মাঝে কি তাহলে কোনো সম্পর্ক আছে? এই দুইয়ের মধ্যে যে যোগসূত্র আছে সেটি বলছে বিজ্ঞানও। চলুন জেনে নেই কেন ব্যায়ামের সময় গান শোনা দরকার।

ব্যায়ামের সময় গান শোনার উপকারিতা

ব্যায়াম শুরু করার আগ্রহ জোগাবে  

সকালে উঠে নানা কারণে অথবা আলস্যের জন্য হয়তো অনেক সময় ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করতে ইচ্ছা হয় না। এমন হলে শুরুতেই গান চালু করে দিন। এতে আপনার মাঝে ব্যায়াম বা দ্রুত গতিতে হাঁটার আগ্রহ তৈরি হবে। যতক্ষণ ব্যায়াম করছেন ততক্ষণ গানই আপনাকে উদ্দীপ্ত রাখবে। নিয়মিত ব্যায়ামে ওজনও কমবে দ্রুত।

ব্যায়ামের সময় গান শোনা

নিজের অজান্তেই বাড়বে ব্যায়ামের গতি

কখনো কি মনে হয়েছে যে, ব্যায়ামের ফলে যেসব শারীরিক বা মানসিক পরিবর্তন আসা দরকার, তেমনটি হচ্ছে না? এমন হলে হাঁটা, দৌড় বা জিমে যাওয়ার আগে পছন্দসই একটি প্লে লিস্ট তৈরি করে নিন। গবেষণা মতে, যে সব কাজ টানা করে যেতে হয়, সেসব কাজে গতি বাড়ানোর জন্য গান খুবই কার্যকরী। যাদের দৌড়ের অভ্যাস আছে, তাদের জন্য গান শোনা এক প্রকার সুখবর বলা যেতে পারে। আপনার যদি দীর্ঘক্ষণ দৌড়ানোর অভ্যাস থাকে, তবে দৌড়ের গতি বৃদ্ধির সঙ্গে আপনার আঘাত পাওয়ার হারও অনেকাংশে কমে আসতে শুরু করবে। এর ফলে আপনার পদক্ষেপ হবে ছোট আর গতিও বাড়বে অনেকখানি। ২৬ জন দৌড়বিদের উপর চালানো এক জরিপ থেকে দেখা যায়, ১৩০-২০০ বিট পার মিনিটের গানের ক্ষেত্রে বিট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ানোর গতিবেগও বাড়ছে। তাই দ্রুত দৌড়াতে চাইলে যে সকল গানের বিট পার মিনিট ১৬০ থেকে ১৮০ এর মধ্যে, তেমন গান বেছে নিলে ভালো।

মুড ভালো রাখবে

গান আপনার মুড ভালো করতে সক্ষম এটা তো সবাই জানেন। এর কারণ হচ্ছে, গানের ধরন আর ভলিউমই ঠিক করে দেয়, আপনি ঠিক কতটা পরিশ্রম করবেন। পছন্দসই গান কিন্তু আপনাকে চটপটে রাখবে, ধরে রাখবে উদ্যম। তবে সবার বেলায় সব ধরনের গান একভাবে কাজ করবে এমন নয়। যদি বিশেষ কোনো গানের সঙ্গে আপনার স্মৃতি জড়িয়ে থাকে অথবা গানের কথা আপনাকে উদ্দীপ্ত করে তবে প্লে লিস্টে সেসব গানও রাখা যায়।

শান্ত থাকতে সাহায্য করবে 

হ্যাঁ, গান আপনাকে চটপটে কিংবা উদ্দীপ্ত করতে পারে এটা যেমন সত্য, তেমনই গান আপনাকে অনেক বেশি শান্ত করতেও বেশ কার্যকরী। সাধারণত যেসব গানে বিট পার মিনিট ৮০-১১৫ এর মাঝে থাকে, সে সমস্ত গান শুনলে হৃদস্পন্দন কিছুটা ধীর হয়ে আসে। এছাড়াও যে কোনো রেস বা প্রতিযোগিতামূলক খেলা শুরুর আগে এই ধরনের কম বিটের গান উত্তেজনা কমানো এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখে। গবেষণা মতে, গান সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও মানুষকে সাহায্য করে।

ব্যায়ামের সময় গান শুনলে মন শান্ত থাকে

কাজে সমন্বয় আনবে 

গানের সবচেয়ে বড় অনুসঙ্গ ছন্দ। গান শুনে ছন্দের সাথে আপনাকে রীতিমতো নাচতে হবে এমন নয়, বরং ছন্দের তালে তালে বডির মুভমেন্ট হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মস্তিষ্কের যে অংশ আমাদের দৈহিক কার্যক্রমের মাঝে সমন্বয় সাধন করে, গানের ফলে সেই অংশের ইলেকট্রিক্যাল কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। আর ঠিক এই কারণেই নিজের পছন্দমতো গানের সাথে আপনার সমন্বয় ভালো হয়।

ক্লান্তিভাব কমায় 

ব্যায়াম করতে করতে ক্লান্তি আসা খুব স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে গান আপনাকে সাহায্য করবে নতুন উদ্যমে জেগে উঠতে। যেহেতু গান আলাদা করে মস্তিষ্কের উদ্দীপনা জোগায়, তাই অল্পতেই ক্লান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসে। ১২ জন সাইক্লিস্টের উপরে চালানো এক জরিপ থেকে দেখা যায়, যখনই তারা সাইকেল চালানোর সময় গান শোনেন, তখন তাদের গড় গতিবেগ বৃদ্ধি পায়। গানের বিট বেশি থাকলে এসব ক্ষেত্রে গতি আরও বেশি থাকে।

আপনার পছন্দসই একটি গান আপনাকে অতিরিক্ত চাপ থেকে দূরে রাখবে। সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ক্লান্তির অনুভূতিও অনেকটাই ফিকে হয়ে আসবে। তবে এর মানে এই নয় যে, গানের কারণে নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়ে পরিশ্রম করতে হবে। যতটুকু দরকার ততটুকুই করুন, শুধু গানকে সাথে রাখুন। সহজ ভাষায় বললে, আপনার নিজের কেয়ার করার জন্য হলেও গানকে সাথে রাখা দরকার।

কঠিন কাজও আনন্দময় হতে পারে 

ব্যায়ামের সঙ্গে গানের সবচেয়ে ভালো যোগাযোগ হলো, স্বাভাবিক সময়ে যে ওয়ার্কআউট আপনার জন্য কঠিন, গান সেটিকেই অনেক সহজভাবে আপনার সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম। ব্যায়ামের সময় সামনে টিউটোরিয়াল ধরে রাখার চেয়ে গান অনেক বেশি কার্যকরী। কারণ, আপনি যখন গানের ছন্দ বা কথার মাঝে ব্যস্ত, তখন মন স্বাভাবিকভাবেই কঠিন কাজের প্রতি মনোনিবেশ করে কম। আর ক্লান্তির কাজগুলো থেকে আপনি যতখানি দূরে সরে যাবেন, কাজটা ধীরে ধীরে তত বেশি আনন্দময় হয়ে উঠবে।

exercise 3

স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে

৬০ জন ব্যায়ামবিদের উপর চালানো এক পরীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, দীর্ঘক্ষণ ব্যায়ামের পর যখন শরীর অনেকটাই বিধ্বস্ত, হার্টবিট অনেক বেশি, তখন গানও সাহায্য করে স্বাভাবিক হতে। এ সময় ধীর গতির গান শুনলে রক্তচাপ এবং হৃৎপিন্ডের গতিও কমে আসে। অর্থাৎ হালকা বিটের গান আপনার কার্ডিয়াক স্ট্রেস কমানোর জন্য দারুণ কার্যকরী।

ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি শরীরের জন্য দরকার। তবে একঘেয়ে লাগলে কখনো কখনো এসবে আগ্রহ কমে যায়। এমন হলে গানকে সঙ্গী করে নিন। একঘেয়ে ভাবও কাটবে, শরীরও থাকবে ফিট। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ছবিঃ সাটারস্টক

4 I like it
3 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort