ব্যায়াম শুরুর পরিকল্পনা করছেন? জেনে নিন জরুরি কিছু বিষয়

ব্যায়াম শুরুর পরিকল্পনা করছেন? জেনে নিন জরুরি কিছু বিষয়

5

স্থুলতাকে বলা চলে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে অবহেলিত এক রোগ। স্থুলতা পরিহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় ব্যায়াম। এই সমস্যা বাদ দিলেও ব্যায়াম যে কারো স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী এক উপায়। ব্যায়াম করার অভ্যাস শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি দেয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ব্যায়াম করা নিছক কোনো শখের ব্যাপার নয়, রীতিমতো চর্চার ব্যাপার। ব্যায়াম শুরুর পরিকল্পনা তো করলেন, কিন্তু একে ধরে রাখতে দৃঢ় মানসিক সংকল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিকল্পনারও দরকার রয়েছে। আপনার যদি ব্যায়াম করার আগ্রহ থাকে, তবে এর শুরুতেই যা কিছু দরকার, তার খুঁটিনাটি জেনে নিন এই লেখায়।

ব্যায়াম শুরুর পরিকল্পনা করা কেন জরুরি?

কেবল ব্যায়াম নয়, বরং যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই সেই কাজের পেছনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা খুব জরুরি। তাই ব্যায়াম করার পরিকল্পনার আগেই আপনার জেনে নেয়া দরকার আপনি ঠিক কেন ব্যায়াম করবেন। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে আপনার শরীর অনেক সুস্থ থাকবে। একইসঙ্গে ওজনের ভারসাম্য, পেশি গঠনসহ অনেক জটিল রোগের ক্ষেত্রে (স্থুলতা, ডায়াবেটিস) উপকারে আসতে পারে ব্যায়ামের অভ্যাস। এছাড়াও গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ব্যায়ামের ফলে আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে পারে, বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এটি বেশ সহায়ক। এমনকি ঘুমের বেলাতেও মিলবে এর সুফল।

exercise1

কীভাবে শুরু করবেন?

ব্যায়ামের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে থাকলে কিছু বিষয় অবশ্যই আগে থেকে নিজের মাঝে যাচাই করে নেয়া উচিত। চলুন জেনে নেই এ সম্পর্কে-

নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা 

যদিও এই ব্যাপারে অনেকেই অবহেলা করেন, তবে ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের সঙ্গে একবার দেখা করে নিলে ভালো। বিশেষ করে যারা ভারী জিনিস ওঠানোর মতো ব্যায়াম করার পরিকল্পনায় আছেন, তারা চেষ্টা করবেন অবশ্যই যেতে। এটি আপনার নিজের ও ট্রেইনারের জন্য হেল্পফুল হবে। নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কী ধরনের ব্যায়াম করা দরকার বা আপনার শারীরিক সক্ষমতা ঠিক কতটুকু।

প্ল্যান অনুযায়ী টার্গেট সেট করা 

নিয়মিত ব্যায়াম করার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলার পর আপনার দরকার একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। যে পরিকল্পনায় অবশ্যই এমন টার্গেট সেট করা থাকবে, যা আপনার পক্ষে সত্যিই অর্জন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়, শুরুতেই ছোট ছোট টার্গেট সেট করে নিলে। পরবর্তীতে শরীর যখন অভ্যস্ত হয়ে যাবে তখন ধীরে ধীরে টার্গেট বড় করা যেতে পারে।

ধরা যাক, আপনার টার্গেট ৫ কিলোমিটার দৌড়ানো। শুরুতেই আপনি এতটা পথ দৌড়াতে পারবেন না। তাই শুরু করুন ১ কিলোমিটার পথ দৌড়ানোর মধ্য দিয়ে। এইটুকু পথ পাড়ি দেয়ার জন্য বডি সেট হতে সপ্তাহখানেক বা ১০ দিন লাগতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। এভাবে প্ল্যান অনুযায়ী টার্গেট করলে ব্যায়াম করতে আপনারও ভালো লাগবে, সেই সাথে শরীরও অভ্যস্ত হবে। আপনিও উৎসাহ পাবেন।

অভ্যাস হিসেবে গড়ে তোলা 

ব্যায়াম করলে এর বেনিফিট কে না চায় বলুন? সেজন্য একে অবশ্যই অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। যদি কেউ ব্যায়াম করাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করতে পারেন অথবা দীর্ঘদিন একই নিয়মে চালিয়ে যেতে সক্ষম হন, তবে সাফল্যের সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায়। এক গবেষণায় দেখা যায়, আপনার কোনো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস যদি স্বাস্থ্যকর কোনো অভ্যাসের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করে নিতে পারেন, তবে দীর্ঘদিন সেটা ধরে রাখা সম্ভব। সেই সাথে প্রতিদিন একই সময়ে ব্যায়াম করলেও দ্রুত তা অভ্যাসে পরিণত হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে অভ্যাসে পরিণত হবে, সাপ্তাহিক এমন একটি তালিকা দেখে নেই চলুন-

cycling

১ সপ্তাহের ব্যায়াম তালিকার নমুনা

সোমবারঃ মাঝারি গতিতে ৪০ মিনিট দৌড়ানো কিংবা দ্রুত হাঁটা
মঙ্গলবারঃ বিশ্রাম
বুধবারঃ দশ মিনিট দ্রুত হাঁটা। এরপর নিচের ব্যায়ামগুলো পরপর-
চক্র ১- ৩ সেটে প্রতি পায়ে ১০ বার লাঞ্জ, ১০ বার পুশআপ, ১০ বার সিটআপ
চক্র ২- ৩ সেটে ১০ বার চেয়ার ডিপ, ১০ বার জাম্পিং জ্যাক, ১০ এয়ার স্কোয়াট
বৃহস্পতিবারঃ বিশ্রাম
শুক্রবারঃ ৩০ মিনিট সাইক্লিং কিংবা মাঝারি গতিতে দৌড়ানো
শনিবারঃ ৪০ মিনিটের জন্য জগিং, দৌড়ানো কিংবা হাঁটা

নতুনদের জন্য কিছু পরামর্শ

যথেষ্ট পানি পান করুন

শরীরে পানির ভারসাম্য রাখার জন্য সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টানা ব্যায়াম করার সময় শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে, তাই ব্যায়ামের মাঝেই পানি পান করতে পারেন। এতে ক্লান্তি কিছুটা দূর হয় এবং পরের অনুশীলনের জন্য বডি রেডি হয়।

water

পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন 

শুধু ব্যায়াম করলেই যে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে তা নয়। এর জন্য অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শরীরে যথেষ্ট শক্তি পেতে, সেইসঙ্গে ব্যায়ামের সুফল পেতে সঠিক খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- শর্করা গ্রহণ করলে পেশি ব্যায়ামের পূর্বে যথেষ্ট শক্তি অর্জন করে। একইসঙ্গে ব্যায়ামের পরপরই গ্লাইকোজেন ঘাটতি পূরণ করতে এবং অ্যামিনো অ্যাসিড শোষণের ক্ষেত্রেও শর্করা ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ব্যায়াম শেষে পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণের দিকে মনোযোগ দিন। কারণ পেশি তৈরির প্রধান উপাদান হচ্ছে প্রোটিন। সেই সাথে জমে থাকা চর্বি ঝরাতে এবং বেশিক্ষণ  কার্যক্ষম থাকার জন্য অবশ্যই স্নেহ জাতীয় খাবার খাবেন।

ওয়ার্মআপ করুন 

ব্যায়াম শুরুর আগে ওয়ার্মআপ করে নেওয়া খুবই দরকারি। হালকা ওয়ার্মআপ আপনাকে ইনজুরি থেকে দূরে রাখবে, সেইসঙ্গে কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে, শরীরের সহনশীলতা বাড়াবে এবং ব্যথা কমাবে। সাধারণ কিছু কাজের মাধ্যমে ওয়ার্মআপ করতে পারেন। যেমন- হাত পা নাড়ানো বা লাঞ্জ। বিকল্প হিসেবে চাইলে যে ব্যায়াম করতে চান, তার হালকা চর্চা করা যেতে পারে। যেমন- দৌড় শুরুর আগে হালকা হেঁটে নেওয়া।

warm up

বিশ্রাম নিন

ব্যায়ামের মাঝে কিছুটা বিশ্রাম নিতে হবে। এতে শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কয়েক মিনিটের জন্য শান্ত হয়ে বসলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং পেশির ক্লান্তি কমে।

আমরা অনেকেই প্রতিদিন ব্যায়াম করাতে অভ্যস্ত নই। এ কারণে শুরুর দিকে কিছুটা অস্বস্তি লাগতে পারে বা শরীর ব্যথা হতে পারে। এমন হলে একটানা ব্যায়াম না করে কিছু সময় বিশ্রাম নিন। নইলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। একবার অসুস্থ হলে ব্যায়াম করা থেকে আপনার আগ্রহ কমে যেতে পারে। তাই শুরুতেই খুব বেশি সময় না নিয়ে ধীরে ধীরে একে অভ্যাসে পরিণত করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 

ছবিঃ সাটারস্টক

12 I like it
4 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort