অনেক দিন পর পুরনো দুই বান্ধবীর দেখা হয়েছে শপিং মলে। একজন বললেন, “তোর শরীর এত খারাপ হলো কী করে?’” অপরজন তো অবাক! বললেন, “বলিস কী? আমি তো মুটিয়ে গেছি!” প্রথম বান্ধবী হেসে বললেন, “আমি তো সেটাই বলছি। স্বাস্থ্য খারাপ মানে শুধু শুকিয়ে যাওয়া নাকি?”… কথা বলছি- স্থূলতা বা অবেসিটি নিয়ে!
স্থূলতা বা অবেসিটি কী?
গল্পটা আর দীর্ঘ না করে আসল কথায় আসা যাক। মোটা শরীর বা স্থূলতা কিন্তু আসলেই এক ধরণের অসুস্থতা। আপনার বি.এম.আই. যদি ৩০ এর বেশি হয়, তাহলে আপনি নির্ঘাত মোটাদের দলে পড়েছেন। মোটা শরীর মানেই সবল শরীর নয় বরং মোটা ব্যক্তির যে কোন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি।
স্থূলতা বা অবেসিটি কী কী কারণে হয়?
স্থূলতার কারণ নানাবিধ। যারা অতিরিক্ত শর্করা, চর্বি বা আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করেন অথবা শরীর চর্চা করেন না অথবা ঘরে বা বাইরে কম কাজ করেন, তারা দ্রুত মুটিয়ে যান। ফলে ওজন বৃদ্ধি পায় খুবই দ্রুত।
জিন অথবা হরমোনের কারণে কেউ কেউ মাত্রাতিরিক্ত মোটা হয়ে যান। মনঃস্তাত্বিক কিছু কারণেও কেউ কেউ জীবনের কোন একটা পর্যায়ে মুটিয়ে যান। অনেকে মোটা হন ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়। ইদানিং সমাজে জাংক ফুড খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। ফলে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একটা বড় অংশ স্থূলতায় আক্রান্ত। এর পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে, তা যদি অভিভাবকেরা স্পষ্ট ভাবে জানতেন, তাহলে ভুলেও তাঁদের সন্তানদের ঐ Slow poison খাওয়াতেন না।
আরো একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। যাদের ওজন একটু বেশি, তাদের শরীরে খাবারের চাহিদা বেশি (অনেকটা বড় গাড়ি যেমন বেশি জ্বালানী খরচ করে, সেরকম)। খাবারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে যারা বেশি খান, তাদের শরীরে মেদ বেশি জমে। এ যেন এক অচ্ছেদ্যচক্র! কারো কারো আবার মেদ বেশি নেই, কিন্তু শরীরটা স্থূল এবং ভারী।
মোটা শরীরকে এককালে ধনাঢ্যতা বা আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা এবং প্রাপ্ত ফলাফলের বিশ্লেষণে দেখা যায় স্থূলতার কোন উপকারিতা নেই; বরং তা মানুষকে ক্রমেই মৃত্যূর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। হৃদরোগ, নিদ্রাহীনতা, ডায়াবেটিস (টাইপ-২), নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সার, হাড়ের বাত ইত্যাদি রোগের বড় কারণ স্থূলতা বা অবেসিটি । স্থূল শরীর সৌন্দর্যকে কমিয়ে দেয়, কমিয়ে দেয় শরীরের কর্মদক্ষতা। কাজেই নিজের ওজনের ওপর যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ রাখুন, বাঁচুন সুস্থ্য ও সুখী হয়ে।
এক নজরে স্থূলতার কারণসমূহ-
- অতিরিক্ত শর্করা, চর্বি বা আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ
- শরীর চর্চা বা ভারী কাজ না করা
- জিনগত বা হরমোনগত কারণ
- মনঃস্তাত্বিক কিছু কারণ
- ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- জাংক ফুড খাওয়া
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক