ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস… খুব পরিচিত… খুব মধুর একটা দিন! অনেকে এই দিবসটিকে খুব পছন্দ করেন। অনেকে আবার ঢং বলেও সম্বোধন করেন! কারণ ছেলেমেয়েরা এই দিন নাকি হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়ায়!! হাহাহা!! তবে দিনটা কিন্তু সত্যিই একটা সুন্দর উৎসবের মতো। অনেক কাপল একে অন্যের সাথে এই দিনটাকে উদযাপন করেন। যেমন বলতে পারেন- ‘Celebration of Love’-এর মতো এই আর কী!
কিন্তু এই যে এতো ফান করা, এতো সেলিব্রেশন হয় এই দিবসটি নিয়ে… কোথা থেকে এলো এটা? কেনই বা এই দিনটাকে এতো বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়? ভ্যালেন্টাইন’স ডের পেছনের রহস্যটাই বা কী? কী এর মাহাত্ম্য? জানেন?
ভ্যালেন্টাইন’স ডে
হ্যাঁ উপরের প্রশ্নের উত্তরে সবাই ১৪ই ফেব্রুয়ারি বলে লাফাচ্ছেন জানি। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন’স ডে আসলে কী? গুগলে সার্চ করলে পাবেন এর আরও দু’টো নাম- Saint Valentine’s Day এবং Feast of Saint Valentine! সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন… কে সে?
ইতিহাস কিন্তু বলে কয়েকজন ভ্যালেন্টাইনের কথা! তবে যেই ঘটনাকে আসল বলা হয় তাই ৩টি পয়েন্টে সাজিয়ে দিলাম এখানে-
১) সেইন্ট ভ্যালেন্টিনাস (বা ভ্যালেন্টাইন) ছিলেন তৃতীয় শতাব্দীতে রোমের এক চার্চের পাদ্রী। রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তরুণ ছেলেদের জন্য বিয়ে নিষিদ্ধ করে দেন। তার মতে, অবিবাহিতরা বিবাহিত পুরুষদের তুলনায় সৈনিক হিসেবে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ভ্যালেন্টাইন এই অন্যায় মেনে নেন নি, বরং গোপনে তরুণ প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিয়ে দেন। অতঃপর ক্লডিয়াস এ ব্যাপার আবিষ্কার করা মাত্র ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করেন।
২) সে সময় কারাবন্দী থাকাকালীন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন রোমান কারারুদ্ধ খ্রিষ্টানদের কারাগারের নির্যাতন থেকে বাঁচতে সাহায্য করেন। এসময় অ্যাস্টেরিয়াস নামক এক জেলারের অন্ধ মেয়ের প্রেমে পড়েন। বলা হয়ে থাকে, ভ্যালেন্টাইনের সাহায্যেই নাকি সেই মেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে এবং অ্যাস্টেরিয়াস খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন।
৩) অতঃপর ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে ভ্যালেন্টাইনকে মেরে, পাথর নিক্ষেপ করে এবং শেষে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করে দণ্ড দেয়া হয়। মৃত্যুর আগে সেই মেয়েকে লেখা শেষ চিঠির উপসংহারটা হয় চিরপরিচিত লাইন দিয়ে- “From your Valentine”।
সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের এই পবিত্র ভালোবাসাকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা করেই উদযাপিত হয় ভ্যালেন্টাইন’স ডে। আর হ্যাঁ, সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের আংটিতে নাকি কিউপিডের ছবি ছিল।
ভ্যালেন্টাইন’স ডে স্পেশাল গিফট আইডিয়া
চকোলেট, চিঠি, ফুল বা পুতুলের বাইরেও কিন্তু ইউনিক ধরনের গিফট দেয়া যায় ভালোবাসার মানুষটাকে। কী রকম?
১. ভালোবাসার বার্তা ডেট জারে
একটি কাচের জারে চিকন করে লম্বা লম্বা রঙিন কাগজ কেটে অথবা হার্ট শেইপে কাগজ বা কার্ডবোর্ড কেটে তাতে বিভিন্ন ভাষায় পছন্দের ভালোবাসার কথা বা ধরুন নিজস্ব ভাষায় পছন্দের বার্তা দিয়ে ভরে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়া যায়।
২. অরিগ্যামি ফরচুন টেলার
অরিগ্যামি সবারই কিন্তু মোটামুটি পছন্দের হয়। আর এ ধরনের ফরচুন টেলার খুব সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন ইন্টারনেটের সাহায্যে। আর এই কাগজের জিনিসটিকে সাজিয়ে তুলতে পারেন মজার মজার ভালোবাসার কথা দিয়ে!
৩. ডিআইওয়াই মগ
সাদা মগ যে কোনো ক্রোকারিজের দোকানেই পাবেন। এরপর শুরু হবে আসল কাজ। খুব ইজি করা- পার্মানেন্ট মার্কার বা অ্যাক্রেলিক পেইন্ট দিয়ে সুন্দর কিছু লাইন লেখা বা আঁকিবুকি করা কিংবা একটি বাটিতে হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে ফোঁটায় ফোঁটায় বিভিন্ন রঙের নেইল পলিশ ফেলে তাতে মগের বাহিরটা ডুবিয়ে নকশা করা… ব্যস! কাজ শেষ। অদ্ভুত সুন্দর একটা গিফট এটা। ট্রাই করে দেখতে পারেন।
ভ্যালেন্টাইন’স ডে স্পেশাল কিছু মুভি সাজেশন
এই দিনটায় আমি পার্সোনালি মুভি দেখতাম খুব আর বই পড়তাম আমার সিঙ্গেল লাইফে। বিয়ের পর আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে আমার এই প্রথম ভ্যালেন্টাইন’স ডে। ভাবলাম ওকে নিয়ে মুভি দেখবো। আপনাদের সাথেও তাই শেয়ার করা। কারণ ভালোবাসা দিবসটা নিজের জন্যও কিন্তু, শুধু দোকলারাই এটা পালন করবে তা নয়! অসংখ্য মুভির নাম মাথায় গিজগিজ করছে। তার মধ্য থেকে ৩টার নাম দিলাম।
১) দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস (The Fault in Our Stars)
জন গ্রিনের অসাধারণ একটা রোম্যান্টিক বইয়ের উপর ভিত্তি করে এই মুভিটি বানানো হয়েছে। হ্যাজেল আর অগাস্টাসের অসমাপ্ত ভালোবাসার দারুণ একটা কাহিনী। জীবনটাকে প্রতি পদে পদে নতুন করে ভালোবাসতে শেখানোর মতো একটি মুভি এটি।
২) প্রাইড অ্যান্ড প্রিজুডিস (Pride & Prejudice)
জেইন অস্টেন আমার অসম্ভব প্রিয় একজন লেখিকা। আর ‘প্রাইড অ্যান্ড প্রিজুডিস‘ তার লেখা অসম্ভব জনপ্রিয় একটা প্রবন্ধ। এলিজাবেথ আর মিঃ ডার্সির অদ্ভুত এক প্রেমের গল্প। আমি কোন ডিটেইলস বলতে চাচ্ছি না, শুধু বলবো মুভিটা দেখবেন।
৩) দ্য নোটবুক (The Notebook)
আমার আরেকটা প্রিয় লেখক নিকোলাস স্পার্কসর রচিত নভেলের উপর বেইজ করে তৈরি আরেকটা প্রিয় মুভি এটি। “ভালোবেসে থাকবো সারা জীবন আমাতে-তোমাতে মিশে দু’জন”…এই ব্যাপারটাকে এতোটা সুন্দরভাবে নোয়াহ ও অ্যালি- এই দু’টো চরিত্রের ভালোবাসা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে, যা আমি খুব কম মুভিতেই পেয়েছি। গ্যারান্টি দিচ্ছি, দেখে ভালো লাগবে।
আর হ্যাঁ, বইগুলো সময় করে পড়ে দেখবেন। দারুণ লাগবে।
ভ্যালেন্টাইন’স ডে স্পেশাল ফুড প্ল্যান
ভাবছেন এবার একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো? হাহাহা! একদম না! ভালোবাসায় কোন কার্পণ্য নয়! রান্না করে প্রিয় মানুষটাকে খাওয়ানোর মজাই আলাদা। ৩টা দারুণ সহজ ও মজাদার রেসিপি শেয়ার করলাম আপনাদের জন্য।
১. ভি ডে স্প্যাগেটি
২ জনে খাবার মতো মেপে স্প্যাগেটি (পাস্তাও দিতে পারেন) নিয়ে সেদ্ধ করে নিন (পানিতে তেল ও লবণ দিয়ে নিবেন)। একটি প্যানে মাখন বা অলিভ অয়েল নিয়ে তাতে রসুন কুঁচি, সসেজ টুকরো, চিংড়ী ও মুরগীর মাংসের টুকরো দিয়ে পরিমাণমতো লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়ো ছিটিয়ে দিন। রান্না হয়ে গেলে বড় এক টুকরো লেবুর রস ও সামান্য টমেটো সস দিন। নেড়েচেড়ে তাতে সেদ্ধ স্প্যাগেটি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে উপরে চিজ গ্রেট করে ছড়িয়ে মৃদু আঁচে দের থেকে ২ মিনিট রাখুন। ব্যস, মজাদার ভি ডে স্প্যাগেটি তৈরি! উপরে ধনেপাতা ছড়িয়ে দিন।
২. চিকেন পটেটো চপ
খুব ইজি একটি রেসিপি। মুরগীর মাংস কিমা করে পেলে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা কুঁচি, গোলমরিচ গুঁড়ো, লবণ, সামান্য সস ও জিরা দিয়ে রান্না করুন। এবার সেদ্ধ আলু চটকে তাতে মরিচ কুঁচি, নরম করে ভাঁজা পেঁয়াজ, সামান্য গোলমরিচ, সামান্য জিরার গুঁড়ো ও পরিমাণমতো লবণ দিয়ে ভালো করে মেখে গোলগোল পেটি বানিয়ে নিন। প্রত্যেকটা পেটির ভেতর রান্না করা চিকেনের পুর ভরে গোলগোল চপ বানিয়ে ফেলুন। চপগুলোকে প্রথমে ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে তারপর ব্রেড ক্রাম্বে মেখে ডুবো তেলে ভাঁজুন। সোনালী করে ভেঁজে ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে উপভোগ করুন সুস্বাদু চিকেন পটেটো চপ।
৩. ভি ডে স্পেশাল ফিরনী
এক লিটার দুধে চিনি, ২টা দারুচিনি ও ৩টা এলাচ দিয়ে ফুটিয়ে নাড়তে নাড়তে একদম ঘন ক্রিমি বানিয়ে ফেলুন। থকথকে হলে নামিয়ে ফেলুন। পছন্দমতো বাদাম ও কিসমিস দিয়ে সাজিয়ে ফ্রিজে ৬ ঘণ্টা রেখে দিন। মজাদার ফিরনি খেয়ে উদযাপন করুন ভালোবাসা দিবসটিকে।
আমাদের দেশে কিন্তু দিনটা একটু বিশেষভাবেই পালিত হয়
জি, কথা সত্য! কারণ আগের দিনটি থাকে পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিন। তবে এবার বসন্ত ও ভ্যালেন্টাইন্স ডে কিন্তু একই দিনে! বাসন্তী রঙে রাঙিয়ে দেয় প্রকৃতি সবাইকে। মাথায় ফুল, গালে আল্পনা… কাউকে যদি দেখা যায় অমনি শুরু হয় দৌড় “কোথায় পাবো, কথায় পাবো” করে! তাই দু’টো দিন দারুণ রকম উৎসবমুখর থাকে দেশটা।
যদি ভালোবাসার মানুষকে খুশি করতে হাতে লাল গোলাপ আর একটি গিফট বক্স নিয়ে ইউশ করতে চান, তবে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন তাহলে সাজগোজ হতে পারে আপনার জন্য একটি ভালো অপশন। যদি অনলাইনে কিনতে চান, তাহলে শপ.সাজগোজ.কম এ অর্ডার করতে পারেন! উল্লেখ্য যে, সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে যার একটি যমুনা ফিউচার পার্কে ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত।
চেষ্টা করলাম ভালোবাসা দিবসটাকে মুঠোভরে আপনাদের সামনে তুলে দিতে! কতটুকু সার্থক হবো জানি না। তবে কিছু জানানোতে একটা আলাদা সুখ আছে। প্রিয়জনকে নিয়ে ভালোবাসা দিবসটাকে বাসন্তী রঙে মাখিয়ে উপভোগ করুন। নিজেকেও ভালোবাসুন।
ছবি- সংগৃহীত: সুরজিৎ শুভ্র + সাজগোজ