কনট্যাক্ট লেন্সের খুঁটিনাটি - Shajgoj

কনট্যাক্ট লেন্সের খুঁটিনাটি

cl

আধুনিক নারীদের সাজসজ্জায় কনট্যাক্ট লেন্স একটি জনপ্রিয় উপকরণ। কনট্যাক্ট লেন্স ছাড়া যেন সাজে পূর্ণতা আসে না। পাওয়ারফুল লেন্সের পাশাপাশি কসমেটিকস লেন্সেরও কদর বেড়েছে। ফ্রেশলুক, ইগো বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে আর দামেও সস্তা তাই দেদারসে বিকিয়েও যাচ্ছে। এটা সত্যি যে ফ্যাশন লেন্সের বদৌলতে আপনি এক জোড়া মোহনীয় চোখের অধিকারী হচ্ছেন সেই সঙ্গে অনেকের মাঝে অন্যতম হয়ে উঠছেন। কিন্তু সব কিছুরই সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও আছে। পাওয়ারফুল লেন্সের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই যেহেতু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই কিনে সবাই। সাধারণত কালারফুল লেন্সটাই আমরা নিজের পছন্দমত কিনে থাকি। কনট্যাক্ট লেন্স পাতলা বক্র আকৃতির প্লাস্টিক ডিস্ক যা কর্নিয়া ঢেকে রাখে। কালারফুল লেন্স শুধু মাত্র চোখের সৌন্দর্যে পরিবর্তন আনে, কিন্তু চোখের দৃষ্টির উন্নতি ঘটায় না। আজ আমরা কনট্যাক্ট লেন্সের ক্ষতিকর দিক সহ আরও খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানবো।

[picture]

কনট্যাক্ট লেন্স পরার সঠিক নিয়মঃ

লেন্সটিকে আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে কাপের মত শেপ বানান। এবার আঙ্গুলটিকে সরাসরি চোখের সামনে নিন, এমন ভাবে তাকান যেন আপনি ওই কাপের দিকে তাকিয়ে আছেন। তারপর চোখ বড় বড় করুন আর লেন্সটি পরে ফেলুন।

contacts-lens-

contact-lens

কনট্যাক্ট লেন্সের ক্ষতিকারক দিকঃ

ডেকোরেটিভ কনট্যাক্ট লেন্সের সঠিক ব্যবহার না করলে চোখের অনেক ধরনের সিরিয়াস সমস্যা দেখা দেয়। সেই সব সমস্যার মধ্যে চোখের ইনফেকশন, কর্নিয়াল আলসার অন্যতম। এছাড়াও কর্নিয়াল আ্যাবরাশন, আ্যালাজিক রিঅ্যাকশন, অন্ধত্ব, দৃষ্টি শক্তি লোপ পেতে পারে। সারাক্ষণ লেন্স পরলে চোখে এক ধরনের প্রোটিন তৈরী হয় আর সেখান থেকেই শুরু হয় আ্যালাজিক রিঅ্যাকশন। যদি চোখে অস্বস্তি হয়, অতিরক্ত পানি পড়ে চোখ দিয়ে, লাল হয়ে ফুলে যায় অথবা ব্যথা করে তাহলে বুঝবেন চোখের ইনফেকশন হয়েছে।

আ্যালার্জিক কনজাংটিভিটিজঃ

আ্যালার্জিক কনজাংটিভিটিজ হলো আ্যালার্জির কারণে কনজাংটিভিতে জ্বালাযন্ত্রণা। আর কনজাংটিভিটা হলো একটি পর্দা যা চোখের সাদা অংশকে ঢেকে রাখে। এটি সাধারণত থায়োমারসালের (লেন্স সংরক্ষনের জন্য এক ধরনের প্রিজারভেটিভ) কারণে হয়ে থাকে। লেন্স পরার পর যদি চোখ লাল হয়ে যায় চুলকায় তাহলে অতিসত্বর কোন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ নিন।

কর্নিয়াল হাইপোকসিয়াঃ

হাইপোকসিয়া মানে অপর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন। লেন্স দ্বারা যে অক্সিজেন উৎপন্ন হয় তা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিফিউজ না হয় তাহলে কর্নিয়াল হাইপোকসিয়া দেখা দিতে পারে। শরীর এই সময় ওই কর্নিয়াতে পুষ্টি উপাদান, অক্সিজেন পৌঁছে দেয় নতুন ব্লাড ভেসেলের মাধ্যমে। এই অতিরিক্ত ব্লাড ভেসেলকে Corneal neovascularization বলে। ফলে চোখ থেকে পানি পড়ে, লাল হয়ে যায়, আলো সহ্য করার ক্ষমতা কমে যায়। তাই সব সময় কোয়ালিটিফুল লেন্স কেনা উচিত।

মাইক্রবিয়াল কেরাটাইটিসঃ

দীর্ঘ দিন দীর্ঘ সময় ধরে লেন্স পরলে মাইক্রবিয়াল কেরাটাইটিস হয়। প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে ২-৪ জনের হয়ে থাকে। অনেকক্ষণ লেন্স পরে থাকলে মাইক্রব কর্নিয়াল সারফেসে আটকে যায়, ফলে মাইক্রবিয়াল কেরাটাইটিসের আশংকা থাকে।

টাইট লেন্স সিনড্রোমঃ

টাইট লেন্স সিনড্রোম তখনই হয় যখন সফট কনট্যাক্ট লেন্স চোখের কর্নিয়ার সাথে টাইট হয়ে আঁটকে থাকে। যদি সারা রাত লেন্স পরে থাকা হয় তাহলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। লেন্স সারারাত কোন নড়াচড়া করেনা ফলে কর্নিয়ায় আটকে থাকে। লেন্স শুষ্ক হয়ে গেলেও টাইট লেন্স সিনড্রোম হতে পারে। সফট কনট্যাক্ট লেন্স অনেকদিন ধরে ব্যবহার করলে ময়েশ্চার কম আ্যাবসরব করে। আবার যদি লেন্স সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করা না হয় তাহলেও লেন্স শুষ্ক হয়ে যায়।

কনট্যাক্ট লেন্সের যত্নঃ

কসমেটিক লেন্সের আর সলিউশনের অপর্যাপ্ত যত্ন চোখের ইনফেকশনের আশঙ্কা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। এই অবস্থা খুব তাড়াতাড়ি এবং সিরিয়াস আকারে ধরা দেয়।

০১. প্রথম এবং প্রধান ধাপ হচ্ছে লেন্সটিকে পরিস্কার রাখা, disinfect করা। পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে শুধু মাত্র recommended সলিউশন ব্যবহার করবেন।

০২. দ্বিতীয়ত লেন্সটিকে রাব আর রিন্স করা। যদি আপনি disinfection case এ লেন্স ভালো ভাবে মুছে নেন তাহলে মাইক্রোঅরগানিসমের আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়, ফলে ইনফেকশন হওয়ার চান্স কমে যায়। আর disinfection সলিউশনের কার্যকারিতা বেড়ে যায়।

contact-lens-case-

০৩. প্রত্যেকবার ব্যবহারের পর নতুন সলিউশনের মধ্যে ডুবিয়ে রাখবেন। অনেকেই একই সলিউশনে বারবার ব্যবহার করেন। এটা একদম ঠিক না। লেন্স ব্যবহার করার পর আগে disinfection case পরিষ্কার করবেন, শুকিয়ে নেবেন তারপর নতুন সলিউশন দিয়ে লেন্স সংরক্ষণ করবেন।

০৪. লেন্স সংরক্ষনের জন্য কখনই ডিস্টিলড ওয়াটার, ট্যাপের পানি অথবা ঘরে বানানো স্যালাইন ব্যবহার করবেন না। এতে করে Acanthamoeba keratitis হয়, যার কোন চিকিৎসা নেই।

০৫. মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে লেন্স আর ব্যবহার করবেন না। অনেকে ভাবেন – “এত টাকা দিয়ে কিনে ৬ মাস বা ১ বছর হলে ফেলে দেব? থাক আর কয়টা দিন পরে নিই,কি আর হবে?’’ যদি আপনি এমনি ভেবে থাকেন তাহলে খুব ভুল করছেন। কারণ এই কয়টা দিনেই আপনার চোখের চরম ক্ষতি হতে পারে। এমনকি মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সলিউশনও ফেলে দেবেন।

সতর্কতাঃ

– আপনি যেমন আপনার দাঁতের মাজন কারও সাথে শেয়ার করেন না তেমনি কনট্যাক্ট লেন্সটিও শেয়ার করবেন না। কারণ মাইক্রোঅরগানিসমের গ্রোথ এভাবেও হয়।

– লেন্সটি ছোঁয়ার আগে হাত অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নিবেন। কারণ আপনার হাতের জার্ম লেন্সে লেগে আপনার চোখের ক্ষতি করবে।

– লেন্স পরার পর চোখের মেক-আপ নেবেন। আর মেক-আপ তোলার আগে লেন্স খুলে ফেলবেন।

– দেখে শুনে বুঝে ভালো দোকান থেকে লেন্স কিনবেন।

– দীর্ঘ সময় ধরে লেন্স পরে থাকবেন না। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় তো অবশ্যই খুলে রাখবেন।

– লেন্স পরার পর যদি চোখে জ্বালাযন্ত্রণা হয় বা চোখ লাল হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে খুলে ফেলুন। কারণ ফ্যাশনের চেয়ে চোখ রক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য রঙ বেরঙের লেন্সের ব্যবহার করুন কিন্তু খুব সাবধানে। কারণ সবার চোখ খুব নাজুক। এর একবার কোন ক্ষতি হলে হাজার খেশারত দিয়েও অনেক সময় চোখের আলো ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই সময় থাকতেই সচেতন হন। সম্ভব হলে লেন্স কেনার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর চোখের কোন সমস্যা দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে ডাক্তারের কাছে চলে যান। এই পরামর্শগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন। আশা করছি লেন্স ব্যবহার জনিত অনেক সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন।

লিখেছেনঃ রোজেন

ছবিঃ ইউনিভার্সালভিশানঅপ্টিকাল.সিএ, অলএবাউটভিশান.কম

3 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort