স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ জানা আছে কি?

স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ জানা আছে কি?

স্ট্রোকের লক্ষণ বোঝাতে ব্রেনে রক্ত জমাট বাঁধা - shajgoj.com

বর্তমান সময়ে তরুণ বয়সে স্ট্রোকের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলে বা কখনো রক্তনালি ফেটে গিয়ে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে মস্তিষ্কের কোনো অংশের কোষে যে স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়, সেটাই স্ট্রোক। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য, ধূমপান ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। সময়মতো স্ট্রোকের লক্ষণগুলো বুঝতে পারলে ও দ্রুত চিকিৎসা নিলে ক্ষতিকর দিকগুলো অনেকটাই এড়ানো যায়। সময় থাকতে সাবধান হলে এর থেকে অনেকটাই নিজেকে বাঁচানো সম্ভব। তাই আসুন স্ট্রোকের (stroke) লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক!

স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ

লক্ষণ

স্ট্রোকের লক্ষণগুলোর মধ্যে নিচে ছবিসহ ৪টি মূল লক্ষণ দেয়া হলো-

স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ - shajgoj.com

  • হটাৎ শরীরের যে কোন এক পাশ অবশ বা দূর্বল হয়ে যাওয়া।
  • তীব্র মাথা ব্যথা ও বমি।
  • হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা হাঁটা চলার সময় হঠাৎ পরে যাওয়া।
  • কথা জড়িয়ে যাওয়া, কথা বলতে না পারা।

 

কিভাবে বুঝবেন রোগী স্ট্রোক করেছে?

স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ সনাক্তকরণ - shajgoj.com

  • রোগীকে দাঁত বের করে হাসতে বলবেন, দেখবেন মুখের কোন পাশ অবশ বা ঝুলে পড়ে কিনা।
  • দুই হাত সোজা মাথার উপরে উঠাতে বলবেন, দেখবেন পারে কিনা।
  • পুরো একটি বাক্য বলতে বলবেন, দেখবেন স্পস্ট শুনে একই কথা আবার বলতে পারে কিনা।

এই ৩টি বিষয় যেকোনো একটিও উপস্থিত থাকলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

যদি স্ট্রোক হয়ে যায় তাহলে কী করবেন?

১) নিজে থেকে স্বপ্রনোদিত হয়ে কোন প্রকার কবিরাজি বা চায়নিজ বা হারবাল বা ফেসবুকীয় চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ না করে রোগীকে বাসার সবথেকে কাছের হাসপাতালে যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে যাবেন। কানে বা হাতে ফুট করে চিকিৎসা দেয়ার পদ্ধতি ইন্টারনেটে বা ফেইসবুকে দেখা যায়, আদতে এসবে কিছুই হয় না। বরং দেরি করলে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়।

২) ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্যই মাথার একটা সিটি স্ক্যান করাবেন।

স্ট্রোক করলে রোগীকে না জেনে ঔষধ বা খাবার না দেয়া - shajgoj.com

৩) নিজে থেকে রোগীকে কোন প্রকার প্রেশারের ওষুধ বা অন্য কোন কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। এমনকি পানিও না। কারণ, স্ট্রোকের রোগীর মুখের মাংসপেশীগুলো প্যারালাইজড অবস্থায় থাকে। ওই রোগীকে যদি কিছু জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয় তাহলে সেটা খাদ্যনালীর পরিবর্তে শ্বাসনালীতে চলে যেতে পারে। আর একবার যদি খাবার শ্বাসনালীতে যায় তাহলে বেশীরভাগ সময়ই মৃত্যু অবধারিত।

স্ট্রোক প্রতিরোধে যা করণীয়

  • ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোলে রাখবেন।
  • নিয়মিত হাঁটাচলা করবেন।
  • সাদা ভাত, সাদা চিনি, সাদা লবণ খাওয়ার অভ্যাস একেবারে বাদ দিতে হবে।
  • সিগারেটের ধোয়া থেকে দূরে থাকবেন।
  • ডায়াবেটিস বা অন্য কোন রোগ থাকলে কন্ট্রোলে রাখবেন।
  • নিয়মিতভাবে কোলেস্ট্রেরল লেভেল চেক করাবেন।
  • তীব্র মাথাব্যথা বা হটাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যাবেন।

স্ট্রোক সতর্কতা

স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমে হয়ে থাকে কারণ, বাথরুমে ঢুকে গোসলের সময় আমরা প্রথমেই মাথা এবং চুল ভেজাই যা একদম উচিৎ নয়। এটি ভুল পদ্ধতি। এভাবে প্রথমেই মাথায় পানি দিলে রক্ত দ্রুত মাথায় উঠে যায় এবং কৈশিক নালী ও ধমনী একসাথে ছিড়ে যেতে পারে। ফলস্বরুপ ঘটে স্ট্রোক এবং মাটিতে পড়ে যাওয়া।

কানাডার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্ট্রোক বা মিনি স্ট্রোকের কারণে যে ধরনের ঝুঁকির কথা আগে ধারণা করা হতো, প্রকৃতপক্ষে এই ঝুঁকি দীর্ঘস্থায়ী এবং আরো ভয়াবহ। বিশ্বের একাধিক গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী, গোসলের সময় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।

চিকিৎসকদের মতে গোসলের সময় কিছু নিয়ম মেনে গোসল করা উচিত। গোসল করার সময় প্রথমেই মাথা এবং চুল ভেজানো একদম উচিৎ নয়। কারণ, মানুষের শরীরে রক্ত সঞ্চালন একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় হয়ে থাকে। শরীরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। চিকিৎসকদের মতে, মাথায় প্রথমেই পানি দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত সঞ্চালনের গতি বহুগুনে বেড়ে যায়। ফলে বেড়ে যায় স্ট্রোকের ঝুঁকিও। তা ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত রক্তচাপের ফলে মস্তিষ্কের ধমনী ছিড়ে যেতে পারে।

স্ট্রোক সতর্কতায় গোসলের সঠিক নিয়ম

  • প্রথমে পায়ের পাতা ভেজাতে হবে।
  • এরপর আস্তে আস্তে উপর দিকে কাঁধ পর্যন্ত ভেজাতে হবে।
  • তারপর মুখে পানি দিতে হবে।
  • সবার শেষে মাথায় পানি দেয়া উচিত।

এই পদ্ধতি যাদের উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং মাইগ্রেন আছে তাঁদের অবশ্যই পালন করা উচিত এবং এই তথ্যগুলো বয়স্ক মা বাবা এবং আত্মীয়-পরিজনদের অবশ্যই জানিয়ে রাখা উচিত। এই তথ্যগুলো জানা থাকলে অনেকের জীবন বাঁচাতে পারে।

প্রায়ই রোগীর লোকজন কমপ্লেইন করেন যে সরকারি হাসপাতালে তাঁদের রোগীর কোন চিকিৎসা হচ্ছে না। রোগীকে কোন প্রকার চিকিৎসা ছাড়াই ফেলে রাখা হয়েছে। এই কথাটা আপনারা ইমোশনালি বলে থাকেন, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কনজারভেটিভ ট্রিটমেন্ট ছাড়া আসলে কিছুই করার নাই। আপনি ঢাকা মেডিকেল বা সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালের ফ্লোরে থেকে যে চিকিৎসা পাবেন, স্কয়ার/ইউনাইটেড/অ্যাপোলো বা মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালেও একই চিকিৎসা পাবেন। দুনিয়ার এমন কোন মেডিসিন নেই যা খেলে স্ট্রোকের রোগী একদিন খেয়েই দৌড়াতে শুরু করবে। রোগী যদি ৪৮-৭২ ঘন্টার মধ্যে চোখ খুলে তাকায় তাহলে সাধারণত সে যাত্রায় বেঁচে যায়। এ ক্ষেত্রে আপনাদের কাজ আপনার ডাক্তারের পরামর্শ মত রোগীর সেবা করা। স্ট্রোক পরবর্তী সময় আপনার রোগীর সারভাইভাল আপনার আন্তরিক সেবার উপর নির্ভরশীল।

ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; ইমেজেসবাজার.কম; হপকিনসমেডিসিন.কম

58 I like it
9 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort