‘প্রোগ্রামে অ্যাটেন্ড করবো কীভাবে! হেয়ার একদম ডাল ও ফ্রিজি হয়ে আছে! কোনো হেয়ার স্টাইলই তো করতে পারছি না!’ আপনিও কি এই সমস্যায় ভুগছেন? যাদের চুল রাফ ও আনম্যানেজেবল তাদের হেয়ার স্টাইল তো দূরে থাক, চুল ম্যানেজ করাই কঠিন হয়ে যায়! আপনি কি এমন হেয়ার প্রবলেমের ইজি কোনো সল্যুশন খুঁজছেন? এই সমস্যা সমাধানে আমি ইউজ করেছিলাম স্কিন ক্যাফে বানানা শ্যাম্পু। কেন আমি এটি চুজ করেছিলাম এবং স্কিন ক্যাফে বানানা শ্যাম্পু ব্যবহারে কীভাবে ডাল হেয়ার প্রবলেমের সল্যুশন পেয়েছিলাম সেটাই জানাবো আজকের আর্টিকেলে।
চুল কেন ডাল ও ফ্রিজি হয়ে যায়?
প্রোপার ময়েশ্চারের অভাবে চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যায়, হারায় ন্যাচারাল শাইন। সেই সাথে দেখা দেয় ড্রাইনেস, ফ্রিজিনেস ও রাফ টেক্সচারের প্রবলেম। কেন চুল ডাল ও ফ্রিজি হয়ে যায় তার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। যেমন-
- হেয়ার কেয়ার রুটিন মেনটেইন না করা
- পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া
- অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং প্রোডাক্টস ইউজ করা
- সূর্যরশ্মি
- অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম আবহাওয়া
- ভুল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা
- প্রেগন্যান্সি বা হরমোনাল চেঞ্জ
- স্ক্যাল্পে প্রোডাক্ট বিল্ড আপ হওয়া
- নিয়মিত চুল না ধোয়া
- হার্শ কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্টস ইউজ করা
Skin Cafe Banana Shampoo with Egg Protein
ডাল ও ফ্রিজি হেয়ারের সল্যুশনে বানানা ও এগ কিন্তু খুব ভালো কাজ করে। অনেক আগে থেকেই আমাদের মা-চাচীরা এই দুটো ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে ব্যবহার করতেন। কিন্তু বিজি লাইফস্টাইলে প্যাক বানিয়ে ইউজ করা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সেই সাথে ডিমের কড়া গন্ধ তো আছেই! তাই চুলের জন্য বেনিফিসিয়াল জেনেও এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছিল না। ভাবছিলাম কেমন হতো যদি কলা ও ডিম দিয়ে তৈরি কোনো হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট পাওয়া যেত?
আমার এই সমস্যার কথা আমার রুমমেটকে শেয়ার করেছিলাম। তখন সে আমাকে Skin Cafe Banana Shampoo with Egg Protein এর কথা জানালো। তার কথা শুনে সাজগোজের ওয়েবসাইট ভিজিট করে শ্যাম্পুটি সম্পর্কে ডিটেইলস জেনে অর্ডার করে কিছুদিন ইউজও করে ফেললাম। এই শ্যাম্পু ইউজ করে আমার নিষ্প্রাণ চুলের সমস্যা অনেকটাই কমে এসেছে। আজ আপনাদের এই শ্যাম্পুটি সম্পর্কেই ডিটেইলস জানাবো।
কী কী আছে এই শ্যাম্পুতে?
এই শ্যাম্পুতে মেইন ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে আছে বানানা ও এগ। যে কোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার করার আগে সেগুলোর ইনগ্রেডিয়েন্টস সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরি। কীভাবে এই দুটো ইনগ্রেডিয়েন্ট চুলের জন্য বেনিফিসিয়াল সেটা সম্পর্কে চলুন জেনে নেই।
বানানার বেনিফিটস
চুল ভালো রাখতে বানানা ইউজ করা হয় এটা আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু এতে থাকা কোন উপাদানগুলো একে বেনিফিসিয়াল করে তুলেছে চলুন দেখে নেই এক নজরে-
সিলিকা – এই মিনারেল কোলাজেন প্রোডিউস করতে হেল্প করে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে। সেই সাথে ডালনেস কমিয়ে চুলকে কন্ডিশনড করে, নারিশড ও সফট রাখে।
পটাশিয়াম, ভিটামিন ও ন্যাচারাল অয়েল – এই উপাদানগুলো স্ক্যাল্প ময়েশ্চারাইজড রাখে এবং চুল করে হেলদি ও শাইনি। সেই সাথে হেয়ার স্ট্রাকচারও ইমপ্রুভ করে।
ভিটামিন বি৬ – ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ার করে চুল করে তোলে সফট।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোপার্টিজ – ফ্লেকি ও ড্রাই স্ক্যাল্পকে হিল করে এবং ড্যানড্রাফের সমস্যা কমায়।
এগ এর বেনিফিটস
ডিমের কড়া গন্ধ অনেকেই পছন্দ করেন না। এরপরও কেন এটিকে চুলের যত্নে ইউজ করা হয় বলুন তো? কারণ এতে রয়েছে উপকারী অনেক ইনগ্রেডিয়েন্টস। যেমন-
রিবোফ্ল্যাভিন ও নিয়াসিন – এই দুটো ভিটামিন হেয়ার গ্রোথ করতে বেশ হেল্পফুল। সেই সাথে ড্রাই স্ক্যাল্পে নারিশমেন্ট দেয় এবং ফ্রিজিনেস কমায়।
কেরাটিন প্রোটিন – চুলের ফ্রিজিনেস ইনস্ট্যান্টলি দূর করে এবং হিউমিডিটি থেকে চুলকে সুরক্ষিত রাখে।
বায়োটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই – স্ক্যাল্প হেলদি রাখতে এবং চুল সফট ও শাইনি করে তুলতে এই উপাদানগুলো বেশ কার্যকর।
ফলিক অ্যাসিড – ডাল হেয়ার রিপেয়ার করে, হেয়ার গ্রোথ বাড়ায় এবং ভলিউম অ্যাড করে।
লুটেইন (Lutein) – ডিমের কুসুমে থাকা এই ভিটামিনটি চুলকে ময়েশ্চারাইজড রাখতে খুব ভালো কাজ করে।
প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন
স্কিন ক্যাফে বানানা শ্যাম্পু পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ মি.লি. এর হলুদ রঙের বোতলে। কালার ও ডিজাইন দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে ব্র্যান্ডটি প্যাকেজিং এ এক্সট্রা অ্যাটেনশন দিয়েছে। শ্যাম্পুর কনসিসটেন্সি বেশ থিক এবং ইনগ্রেডিয়েন্টের সাথে মিলিয়ে এর কালারও হালকা হলুদ। এতে ডিমের কড়া কোনো স্মেলই নেই। বরং বেশ মাইল্ড ও রিফ্রেশিং বানানা স্মেল পাওয়া যায়। ব্যবহারের পর এই স্মেল বেশ কিছু সময় থাকবে। শ্যাম্পুর বোতলে প্রয়োজনীয় তথ্য ডিটেইলসে দেয়া আছে। ফ্লিপ ক্যাপ হওয়ায় এটি ট্রাভেল ফ্রেন্ডলি।
স্কিন ক্যাফে বানানা শ্যাম্পু কেন ডিফারেন্ট?
আমাদের দেশের আবহাওয়ায় স্ক্যাল্প বেশি ঘামে। যার কারণে স্ক্যাল্পে ময়লা জমে এবং চুল হয়ে যায় ডাল ও ফ্রিজি। আমিও ঠিক একই সমস্যায় ভুগছিলাম। তবে ডাল হেয়ারের সল্যুশনে কলা ও ডিমের প্যাক ব্যবহার করলেও আমি ডিমের কড়া স্মেলটা নিতে পারতাম না। আর প্যাক বানিয়ে ইউজ করাটাও বেশ হ্যাসেল লাগতো। ডাল হেয়ারের সল্যুশনে স্কিন ক্যাফে বানানা শ্যাম্পুটি আমার কাছে একদম ব্লেসিং!
শ্যাম্পু করার ১/২ দিন পর চুল যে অয়েলি হয়ে যায়, এই শ্যাম্পু ব্যবহারের পর আমি সেই প্রবলেম ফেইস করিনি। বরং এর ব্যবহারে চুলের অয়েলিনেস কমবে, ভলিউম বাড়বে এবং চুল হবে সফট ও শাইনি। তাই আমি বলবো, যারা ডাল ও ফ্রিজি হেয়ারের সল্যুশন খুঁজছেন, তারা এই শ্যাম্পুটি একবার ইউজ করেই দেখুন! সেই সাথে জানিয়ে দেই, এই ব্র্যান্ডের দু’টি শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার রয়েছে।
১) Skin Cafe Banana Shampoo with Egg Protein – যাদের চুল অনেক বেশি রাফ ও আনম্যানেজেবল তারা চুল সফট ও শাইনি করে তুলতে এই শ্যাম্পুটি ইউজ করতে পারেন।
২) Skin Cafe Biotin Shampoo with Onion Extract – চুল পড়া আমাদের অনেকেরই খুব কমন একটি সমস্যা। বায়োটিন ও পেঁয়াজের নির্যাস সমৃদ্ধ এই শ্যাম্পুটি চুল পড়া সমস্যার সমাধান করবে। সেই সাথে চুল হবে ঘন ও মজবুত।
৩) Skin Cafe Silky Tresses Moisturizing Conditioner – ময়েশ্চার লক করে চুল সফট রাখার জন্য ইউজ করতে পারেন এই কন্ডিশনারটি। শ্যাম্পু করার পর চুলের লেন্থ অনুযায়ী পরিমাণমতো কন্ডিশনার চুলে লাগিয়ে ৫/১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর চুল ধুয়ে ফেলুন।
হেয়ার কনসার্ন অনুযায়ী শ্যাম্পু তো আমরা সবাই ইউজ করি। কিন্তু শুধু শ্যাম্পু ব্যবহার করেই যে সব হেয়ার প্রবলেম সল্যুশন হবে মোটেও এমন নয়। চুলের যত্ন নেয়ার সাথে সাথে চেঞ্জ আনতে হবে লাইফস্টাইল ও ফুড হ্যাবিটেও। তবেই হেলদি চুল পাওয়া সম্ভব।
গ্লোবাল ব্র্যান্ডের শ্যাম্পুর সাথে এর পার্থক্য
বাংলাদেশি প্রিমিয়াম একটি বিউটি ব্র্যান্ড স্কিন ক্যাফে। অথেনটিক স্কিন ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টের জন্য ব্র্যান্ডটি বেশ জনপ্রিয়। এর আগে আমি স্কিন ক্যাফে অলিভ, কোকোনাট ও ক্লেনজিং অয়েল ইউজ করেছিলাম। ব্যবহারের পর বেশ ভালো লেগেছিল বলে এবারও বিশ্বাস ছিল বেস্ট প্রোডাক্টটাই চুজ করছি। গ্লোবাল ব্র্যান্ডের কয়েকটি শ্যাম্পু আমি আগেও ইউজ করেছি। তবে পারফরমেন্স অনুযায়ী আমার কাছে সেগুলোর প্রাইস বেশি মনে হয়েছে। স্মেলও লং লাস্টিং হয়নি। সেই তুলনায় প্রাইস, প্যাকেজিং ও স্মেলের দিক থেকে স্কিন ক্যাফে বানানা শ্যাম্পু বেশ প্রিমিয়াম লেগেছে।
প্রতিদিন কি এই শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে?
আপনার যদি হেয়ার ব্রেকেজ না থাকে অথবা চুল বেশি পাতলা না হয়ে থাকে তাহলে প্রতিদিনই আপনি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুতে পারবেন। যদি আপনার চুল নরমাল বা অয়েলি হয়, তাহলে প্রতিদিনই এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারবেন। ড্রাই হেয়ারের প্রবলেম থাকলে সপ্তাহে ২/৩ বার ইউজ করুন। অনেকে ভাবেন, প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, রেগুলার শ্যাম্পু করলে চুল মজবুত ও হেলদি হয়। হেয়ার কেয়ারে সঠিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে চুল ময়েশ্চারাইজড এবং ন্যাচারালি শাইনি থাকে। নারী-পুরুষ উভয়েই শ্যাম্পুটি ইউজ করতে পারবেন।
আমার কাছে ডাল ও ফ্রিজি হেয়ার মানেই ছিল মন খারাপ করা একটি বিষয়। অনেকদিন ধরে এই প্রবলেম নিয়ে সাফার করছিলাম। স্কিন ক্যাফে বানানা শ্যাম্পু ইউজ করার পর এখন আমি বলতে পারি ডাল ও রাফ হেয়ারের প্রবলেমের সল্যুশন হয়েছে। রেগুলার হেয়ার কেয়ার রুটিনে এটি এখন আমার মাস্ট হ্যাভ একটি প্রোডাক্ট! অথেনটিক হেয়ার কেয়ার, স্কিন কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ