আগুন থেকে দূরে থাকার জন্য মানতে হবে যা কিছু (দ্বিতীয় পর্ব)

আগুন থেকে দূরে থাকার জন্য মানতে হবে যা কিছু (দ্বিতীয় পর্ব)

4

হরহামেশাই দেশে অগ্নিকান্ড হচ্ছে। প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের অগ্নিকান্ডে শত শত মানুষ হতাহত হয়। অথচ একটু সচেতন হলে বড় বিপদ থেকে নিজেকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে রক্ষা করা যায়। প্রথম পর্বে আমরা আগুনে পোড়ার রকমভেদ এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনেছি। এই পর্বে আমরা জানবো আগুন থেকে বাঁচতে বা কোথাও পুড়ে গেলে, এক কথায় আগুন থেকে দূরে থাকতে যে সমস্ত তথ্য জানা জরুরী সে বিষয়ে।

প্রথম পর্বের লিংকঃ জেনে নিন আগুনে পোড়ার রকমভেদ ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত 

আগুন থেকে দূরে থাকতে হতে হবে বাড়তি সতর্কঃ

১। শীতকালে আগুনের তাপ নেয়ার সময় কাপড়ে আগুন লেগে শরীরের নিম্নাংশ পুড়ে যায়। এ সময় তলপেট, উরুসহ নিম্নাংশগুলো আগুনে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করে। তাই আগুন পোহাতে গেলে গায়ের কাপড় সাবধানে রাখা অত্যন্ত জরুরী।

২। অনেক সময় শীতকালে ঘর গরম করার জন্য অনেকে হিটার ব্যবহার করেন। বিছানা অথবা জানালার কাছে হিটার রাখলে তা থেকে চাদরে বা পর্দায় আগুন লেগে যেতে পারে। অমনোযোগী হয়ে এমন কাজ যেন না হয় অবশ্যই এসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

Heater

৩। ঘরে হামাগুড়ি দেয় এমন শিশু থাকলে তাদের আশেপাশে গরম পানি বা গরম কিছু ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

৪। ঘর গরম করার জন্য বা কাপড় শুকানোর জন্য অনেকেই চুলা জ্বালিয়ে রাখেন। এতে যেমন গ্যাসের অপচয় হয়, তেমনই এ থেকে মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে গিয়ে বা চুলার উপরে শুকাতে দেয়া কাপড়ে আগুন লেগে ঘরে আগুন ধরে যেতে পারে।

৫। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে বা শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লাগলে প্রথমেই মেইন সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে।

৬। বাসায় দাহ্য বস্তু থাকলে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আগুনের উৎস থেকে যথেষ্ট দূরে থাকে।

৭। ছোট বাচ্চা কাচ্চা কোলে নিয়ে কখনোই চা,কফি,গরম স্যুপ বা গরম কোনো খাবার খাওয়া উচিত নয়। বাচ্চারা নড়াচড়া বেশি করে অথবা সামনে যা দেখে তাই ধরতে চায়। সে সময় একটু অসাবধান হলেই হাতের গরম তরল বস্তু ছলকে বাচ্চার শরীরে পড়তে পারে।

৮। বয়স্ক ডায়াবেটিক রোগীদের পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির কারণে হাত পায়ের সেনসেশন কমে যায়। অনেক সময় হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে গরম সেঁক নেয়ার সময় তারা তাপমাত্রার তারতম্য টের পান না। এক জায়গায় অনেকক্ষণ গরম হট ওয়াটার ব্যাগ ধরে রাখার কারণে ড্রাই হিট বার্ন বা ফার্স্ট ডিগ্রী বার্ন হতে পারে।

৯। পানি গরম করার ইলেকট্রিক কয়েল বা রড ব্যবহার করে পানি গরম করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী হওয়ায় পানির তাপমাত্রা হাত দিয়ে চেক করার সময় কারেন্টের সুইচ বন্ধ না থাকলে অসাবধানতাবসত কারেন্ট শক লাগতে পারে।

Main switch

আগুন থেকে দূরে থাকতে যে কাজগুলো একেবারেই করা যাবে না

১) আতংকিত হয়ে ছোটাছুটি করা যাবে না। এতে শরীরে আগুন জলন্ত অবস্থায় থাকলে তা আরো ছড়িয়ে যেতে পারে বা কোনো কিছুর সাথে ঘষা বা ডলা লেগে চামড়া উঠে যেতে পারে।

২) অনেক সময় পোড়া ক্ষতে টুথপেস্ট, লবণ, ডিমের সাদা অংশ বা পেঁয়াজের রস দিতে দেখা যায়। এ কাজ কখনোই করা যাবে না। এটি পোড়া রোগীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব ব্যবহারের ফলে পোড়া জায়গার তাপ বের হতে পারে না এবং সেকেন্ড ডিগ্রী বার্ন থার্ড ডিগ্রী হয়ে যায় ।

৩) ত্বকের পোড়া স্থানে ফোসকা পড়লে তা কখনোই গলানো যাবে না। ফোসকার ভেতর যে পানি থাকে তা প্রোটিন জাতীয় পদার্থ এবং তা শরীরে আবার শোষণ হয়ে যায়।

৪) কখনো কম্বল জড়িয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। কম্বল আগুনের তাপ দেহের মধ্যে আটকে রাখে এবং তাতে ত্বকের দগ্ধতা বৃদ্ধি পায়।

কোন ধরনের আগুন কীভাবে নেভাবেন? 

১) যে কোনো ধরনের শুকনো বস্তু যেমন কাপড়,কাগজ,বাঁশ,কাঠ বা দালান কোঠায় আগুন লাগলে তা নেভানোর সবচেয়ে ভালো উপায় পানি। তবে বাসা বাড়িতে আগুন লাগলে পানি দেয়ার আগে কারেন্টের মেইন লাইন বন্ধ করে নিতে হবে।

২) পেট্রোল, ডিজেল বা তেল জাতীয় পদার্থে আগুন লাগলে নেভানোর জন্য পানি দিলে বিপদ আরো বাড়বে। পানির কারণে তেল ছড়িয়ে গিয়ে তার সাথে সাথে আগুনও ছড়িয়ে যায়। তাই আগুন লাগার পরিধি ছোট হলে বালি, বস্তা, ভেজা কাঁথা বা কম্বল এর মত ভারী কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

Fire extinguisher

৩) জ্বালানি তেলের আগুন নেভাতে ফেনা জাতীয় পদার্থ ভালো কাজে দেয়। গ্যাসের আগুন নেভাতে কার্বন ডাই অক্সাইড সবচেয়ে ভালো কাজ করে। উভয় ক্ষেত্রেই ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করাই উত্তম।

৪) যে কোনো ধরনের গ্যাস থেকে আগুন লাগলে গ্যাসের মেইন লাইন বন্ধ করে দিতে হবে। তারপর পানির জোর ঝাপটা দিয়ে আগুন নেভাতে হবে। যদি গ্যাস লিক করছে বোঝা যায় তাহলে কোনোভাবেই সেই স্থানের কাছে দিয়াশলাই, সিগারেট, জ্বলন্ত মোমবাতি এ ধরনের কিছু নেয়া যাবে না।

৫) ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগলে কোনোভাবেই তাতে পানি দেয়া যাবে না। পানি বিদ্যুৎ সুপরিবাহী বলে যে কেউ সহজেই বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমেই কারেন্ট এর মেইন সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। তারপর নিরাপদ দূরত্ব থেকে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সব থেকে ভালো হয় ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করতে পারলে।

আগুন লাগলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা তো অবশ্যই নিতেই হয়। তবে চেষ্টা করতে হবে যেন ভুলবশত নিজের কোনো কাজের জন্য শরীরে আগুন লেগে না যায়। তাই সবার আগে জরুরি সাবধানতা। আগুনের পাশে যে কাজই করা হোক না কেন, সব সময় নিজেকে সেইফ রেখে কাজ করতে হবে।

 

ছবিঃ সাটারস্টক

1 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort