‘ত্বকের ধরন বোঝার উপায় কি?’ এ প্রশ্ন আমরা প্রায় শুনে থাকি। সাধারণত ৪ ধরনের ত্বক আমরা দেখে থাকি। নরমাল, শুষ্ক, তৈলাক্ত এবং সেনসিটিভ। কিছু মানুষের আবার মিশ্র ত্বক বা কম্বিনেশন স্কিন-ও থাকতে পারে। সময়ের সাথে সাথে আবার ত্বকের ধরন বদলে যায়। যেমন- তরুন তরুণীদের ত্বক বয়স্কদের তুলনায় অনেকাংশে নরমাল হয়ে থাকে। ত্বকের ধরন বোঝার উপায় নিয়ে জানার পূর্বে জেনে নিন যে ত্বকের ধরন কেমন হতে পারে তা নির্ভর করে কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর যেমন-
১) ওয়াটার কন্টেন্ট (কোমলতা নষ্ট করবে)
২) অয়েল কন্টেন্ট (ময়লা আটকাবে)
৩) সেনসিটিভ লেভেল (চর্ম রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে)
ত্বকের ধরন বোঝার উপায় কি?
১. নরমাল ত্বক
নরমাল ত্বক খুব বেশি শুষ্ক নয় আবার খুব বেশি তৈলাক্ত নয়। তবে-
(১) কিছু ইম্পেরফেকশান থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে।
(২) খুব বেশি সেনসিটিভ হবে না।
(৩) অল্প বিস্তর দাগ থাকতে পারে।
(৪) খুব বেশি উজ্জ্বল হবে না।
২. শুষ্ক ত্বক
(১) রাফ স্কিন
(২) লালচে আভা
(৩) ছোট ছোট দাগ
(৪) দেখা যায় এমন কিছু বলিরেখা
শুষ্ক ত্বক ফেটে যাওয়া, চামড়া ওঠা, জ্বালা পোড়া, চুলকানো, চামড়া ফুলে যাওয়া এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। যদি আপনার ত্বকের ধরন শুষ্ক হয়ে থাকে তাহলে আপনার হাত, পা, কনুই এবং মাথার স্কাল্প অতিরিক্ত মাত্রায় শুষ্ক থাকবে।
শুষ্ক ত্বক বিভিন্ন কারণে হতে পারে অথবা জন্মগত ভাবেও হতে পারে।
(১) হরমোন অথবা বয়সের কারণে
(২) আবহাওয়ার পরিবর্তন ( শীত/ রোদ/ বৃষ্টি)
(৩) আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি
(৪) ঘরের অভ্যন্তরীণ উত্তাপ
(৫) অনেক সময় নিয়ে গরম পানিতে গোসল
(৬) অতিরিক্ত ওষুধ সেবন
শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিতে কিছু বেসিক টিপস
(১) দৈনিক এক বারের বেশি গোসল করা উচিত না
(২) সাবান ব্যবহারে সতর্ক হন (মাইল্ড এন্ড জেন্টেল সোপ), ডিওডরেন্ট সাবান পরিহার করুন
(৩) ত্বকের যে জায়গা বেশি শুষ্ক সেখানে স্ক্রাব ব্যবহার করবেন না
(৪) গোসলের পর পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। লোশান এর চেয়ে ক্রিম অথবা অয়েনমেন্ট দিলে ভালো।
(৫) ঘরের আর্দ্রতা বজায় থাকলে ভালো, খুব বেশি উত্তাপ যেন না হয়
(৬) ঘরের কাজের জন্য ডিটারজেন্ট ব্যবহার করার আগে গ্লাভস পড়ুন
৩. তৈলাক্ত ত্বক
(১) বড় বড় গর্ত তৈরি হতে পারে
(২) গায়ের রঙ ঘন উজ্জ্বল কিন্তু নিষ্প্রাণ হয়ে যেতে পারে
(৩) ব্ল্যাকহেডস, ব্রণ অথবা কিছু খুঁত হতে পারে
সময়ের সাথে সাথে তৈলাক্ত ভাব কমে যেতে পারে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে স্কিন টোনেও পরিবর্তন আসতে পারে। তৈলাক্ত ত্বক অনেক কারণে হতে পারে-
(১) হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স
(২) উচ্চ রক্তচাপ / দুশ্চিন্তা করা
(৩) প্রখর রোদ অথবা অতিরিক্ত আর্দ্রতা
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে
(১) অতিরিক্ত ঘামলে ২ বার করে গোসল করতে পারেন কিন্তু এর বেশি নয়
(২) জেন্টেল ক্লিঞ্জার ব্যবহার করুন স্ক্রাব এর পরিবর্তে
(৩) ব্রণ খুঁটিয়ে তুলবেন না। ব্রণ নখ দিয়ে খোঁচালে দীর্ঘ সময় ধরে ভালো হবে না
(৪) যে প্রোডাক্ট ব্যবহার করছেন তার গায়ে “noncomedogenic” লেখা দেখে নিন। এই ধরনের ক্রিম গর্ত রোধ করে।
৪. সেনসিটিভ স্কিন
যদি আপনার স্কিন সেনসিটিভ হয়ে থাকে তাহলে আপনি সমস্যা গুলো খুঁজে বের করুন যেগুলো আপনি সহজে দূর করতে পারেন। বিভিন্ন কারণে স্কিন সেনসিটিভ হয়ে থাকে তবে বেশিরভাগ সময়ই আপনি না জেনে যে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করছেন সেগুলো দায়ী। শুষ্কতা, লালচে ভাব, চুলকানি, জ্বালা পোড়া, ব্রণ, একনে, র্যাশ প্রবলেম… এ ধরনের সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে।
৫. মিশ্র ত্বক
মিশ্র ত্বক শুষ্ক হতে পারে আবার নরমালও হতে পারে আবার কিছু জায়গা তৈলাক্ত হতে পারে (যেমনঃ নাক/ কপাল/ থুতনি)। অনেকেরই মিশ্র ত্বক থাকতে পারে ফলে তাদের কিছু বিশেষ যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হয়। যে ধরনের সমস্যা গুলো মিশ্র ত্বকে হতে পারে-
(১) অদৃশ্য কিছু গর্ত
(২) ব্ল্যাকহেডস
(৩) অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা
বেসিক স্কিন কেয়ার
আপনার ত্বক যে ধরনেরই হোক না কেন এই টিপগুলো আপনাকে সাহায্য করবে ত্বককে ভালো রাখার জন্য।
(১) UVA &UVB রশ্মি প্রতিরোধ করে এমন সানস্ক্রিন ক্রিম / লোশান ব্যবহার করুন। রোদে হ্যাট অথবা সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
(২) ধূমপান / নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকুন।
(৩) অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
(৪) ঘুমানোর আগে অবশ্যই মেক-আপ তুলুন।
ত্বকের ধরন বোঝার উপায় এখন বেশ জেনে গেলেন। তাই নিজেই এখন নিজের স্কিন টাইপ পরীক্ষা করুন, সুস্থ থাকুন।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; সাটারস্টক, রাহাত আমিন চৌধুরী (ArchQuad Photography)