প্রিভেনশন আর কিওরের ভেতরে তফাৎ আমরা অনেকেই করতে পারি না তাই না? ব্ল্যাকহেডের মতো ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে একটু চিন্তা করলেই সেটা বোঝা যায়। আজকাল দেখা যায়, একটু আধটু নিজের ত্বক নিয়ে ভাবেন এমন সবাই মোটামুটি মেনেই নিয়েছেন –
(১)পার্লারে অথবা বাসায় একটা স্টিলের টুকরো দিয়ে মুখে খোঁচাখুঁচি না করলে,
(২) সপ্তাহে ২-৩ বার পিল অফ মাস্ক নামক টর্চারের ভেতর দিয়ে না গেলে
(৩) ঘরের সব আঠা দিয়ে ইউটিউবে দেখে শেখা ‘হোমমেড’ পিল অফ মাস্ক বানাতে না পারলে ব্ল্যাকহেডের মতো মোটামুটি তুচ্ছ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার কোন উপায়ই নেই।
সত্যি কথা বলি? মশা মারতে কামান দাগছেন। যে কামানে ব্ল্যাকহেডের আগে আপনি নিজেই উড়ে যেতে পারেন। ব্ল্যাকহেডের মতো একটা নরমাল স্কিন কন্ডিশন নিয়ে এতটা প্যারানয়েড হবার কি কোন বিশেষ দরকার আছে যাতে ক্র্যাফট গ্লু মুখে মেখে ব্ল্যাকহেড টেনে তোলার মতো বিটকেল সলিউশন বের করতে হবে?
[picture]
নিশ্চয়ই চান স্কিন প্রবলেম নিয়ে চিন্তা করার মতন মিনিমাম একটুখানি সুস্থ স্কিন মুখে থাকুক?
ধরে নিচ্ছি চান, তবে এখন খুব ধীরে ধীরে রসুনের পেস্ট, টুথপেস্ট, গ্লু, ব্রণ কাঠি এসব বিধ্বংসী মরনাস্ত্র হাত থেকে নামিয়ে রাখুন। তারপর আসুন আমরা এই কমন প্রবলেমটা কীভাবে খুব ইজিলি কন্ট্রোল করা যায় সেটা নিয়ে একটু কথা বলি-
প্রথমত , মেনে নিতে চেষ্টা করুন, যে ব্ল্যাকহেড খুব কমন এবং নরমাল, আপনার মুখেও যেমন ক’টা ব্ল্যাকহেড আছে, ঐশ্বর্য রাইয়ের মুখেও আছে, সো, ম্যাগাজিনের ফটোশপড কাভার দেখে, আমার স্কিন এত্তগুলা পচা! বলে রণহুংকার দিয়ে নাকের উপরে গ্লু বর্ষণের আগে ‘ব্ল্যাক হেড আপনার শত্রু নয়’ সেটা মেনে নিন।
মানুষের মুখে হাজার হাজার রোমকূপ আছে, সেগুলো সারাদিন তেল তৈরি করে, সেই রোমকূপগুলোর মাঝে কিছু কিছু, একটু এক্সট্রা তেল তৈরি করে ফেলে, বা মেকআপ, ধুলা ময়লায় চাপা পড়ে তেলটুকু বাইরে বের করতে পারে না। আর সেই জমা তেলটাই বাতাসের সাথে থেকে একটু কালো হয়ে ব্ল্যাকহেড হয়, এইতো ব্যাপারটা? এখন হাজার হাজার রোমকূপের মধ্য থেকে কিছু যে পারফেক্ট হবে না সেটাই স্বাভাবিক, তাই বলে কাঠি দিয়ে গুঁতো দিয়ে ত্বকের ভেইন ছিঁড়ে ফেলতে হবে? রসুন মেখে মুখ পুড়িয়ে ফেলতে হবে? গ্লু দিয়ে টেনে টেনে স্কিন ঝুলিয়ে ফেলতে হবে? পারফেক্ট স্কিন বলে কিছুই নেই, কিন্তু বোকামির উপায় আছে হাজার হাজার। তাই না?
[picture]
সো, চিল। আয়নায় নাক লাগিয়ে না দাঁড়ালে নরমাল ব্ল্যাকহেডের উপস্থিতি বোঝাই যায় না। সো ১০ ফিট দূর থেকে আপনাকে কেউ দেখে ‘ওমা কত্ত ব্ল্যাকহেড!’ বলে চিৎকার করে উঠবে এমনটা ভেবে টিনএজ বা আর্লি টুয়েনটিজে সেলফ কনশাস হবার কোন প্রয়োজন নেই।
খুব ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন-
– ব্ল্যাকহেড কিছু না কিছু সবসময়ই ত্বকে থাকাটা স্বাভাবিক, খুব সহজে এগুলো কনট্রোলে রাখা যায়।
– কিন্তু, চিরতরে ব্ল্যাকহেড দূর করে ফেলা যায় না। আপনাকে যেমন দিনে -২-৩ বার খেতে হবে, তেমনি রেগুলার নিজের যত্নও নিতে হবে।
– রসুনে পোড়া ত্বক, বা ত্বকের ছিঁড়ে যাওয়া ভেইন, বা ঝুলে পড়া স্কিন দূর করতে যে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের দরকার হবে, দেশের ৯৫% জনগনের ত্বকের পেছনে খরচের সেই সামর্থ্য নেই। সো মোস্ট লাইকলি ওই ক্ষতগুলো আপনাকে বছরের পর বছর মুখে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে।
সো, দ্বিতীয়ত, বোকামি করবেন না।
সো এবার প্রিভেনশন নিয়ে বলি? নিচের স্কিন কেয়ার স্টেপ গুলো রেগুলার ফলো করার মাধ্যমে স্কিনে ব্ল্যাকহেডের পরিমান মিনিমাম রাখা সম্ভব।
স্যালিসাইলিক এসিড
স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে ২% স্যালিসাইলিক এসিড খুব সহজে ত্বকের অতিরিক্ত তেল সরিয়ে ফেলে এবং রোমকূপের ভেতর থেকে জমে থাকা তেল রেগুলার ব্যবহারে পরিস্কার করে ত্বককে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে। ফেইসওয়াশ এবং টোনার স্টেপে স্যালিসাইলিক এসিড ব্যবহার করাটা বেস্ট। নিচে খুব বিখ্যাত কিছু প্রোডাক্ট সাজেশন দিচ্ছি-
(১) Neutrogena oil free acne wash : এটা একটা ফেইসওয়াশ। দাম ৯০০ টাকার মতো।
(২) Stridex Strength Medicated Pads: অতিরিক্ত ব্ল্যাকহেডে অথবা ব্রনে ভুগছেন যারা তাদের জন্য ভালো টোনার / ট্রিটমেন্ট স্টেপ। দাম ৩০০০ টাকার মতো।
(৩) Thayer’s witch hazel toner: ন্যাচারাল স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত প্রোডাক্ট। স্টেপ- টোনার। দাম প্রায় ২০০০ টাকার মতো।
(৪) Cosrx BHA blackhead power liquid: এতে আছে একটু মৃদু শক্তির বিটেইন স্যালিসিলেট। কাজ একই। স্টেপ- এসেন্স। দাম ১৫০০ টাকার মতো।
সপ্তাহে ৩-৪ বার স্যালিসাইলিক এসিডের প্রপার ইউজ মুখে গ্লু মাখার চেয়ে সহজ বৈ কঠিন হবার কথা নয়। আর পেইনফুল পিল অফ মাস্ক থেকে তো হাজার গুনে ইজি।
ক্লিঞ্জিং
ফেইসওয়াশের সময় খুব হালকাভাবে নাক এবং আসে পাশের জমে থাকা ডেড সেল দূর করতে ক্লিঞ্জিং ব্রাশ, কঞ্জাক স্পঞ্জ বা ফেইস টাওয়েল ইউজ করতে পারেন। ডেইলি একবার , প্রেফারেবলি রাতে মেকআপ, ধুলা ময়লা পরিস্কার করতে এদের থেকে বেটার কিছুই নেই। ক্ল্যারিসনিক, ফোরেও হচ্ছে ক্লিঞ্জিং ব্রাশের মধ্যে বেস্ট অপশন।
এক্সফলিয়েশন
ত্বকের ডেড সেল দূর করতে সপ্তাহে দুইবার ম্যানুয়াল বা কেমিক্যাল এক্সফলিয়েশন করাটা খুবি জরুরী। সো কোনভাবেই এটা বাদ দিয়ে মুখে রসুন মেখে ফলাফল পাবার চেষ্টা করে খুব একটা লাভ করতে পারবেন না। একেবারেই এক্সফলিয়েটর কিনতে না চাইলে জাস্ট চালের গুঁড়া আর পানি ইউজ করুন। তাতেও চলবে।
কি খুব নতুন কোন ইনফো কি পেলেন? যা আগে কখনোই দেখেননি? মোটেও না। এসব স্কিনে অতিরিক্ত ব্লকড পোর কমানোর জন্য একেবারেই বেসিক যেটুকু করা দরকার সেটুকুই। কিন্তু আলসেমি আর বোকামি এই দুইয়ের মিশ্রণে ফেভিকল মুখে মাখার চেষ্টা যে করে তার মাসেও একবার ঠিকভাবে মুখে এক্সফলিয়েশন করা হয় না। কি করলে প্রবলেম কমবে সেটা জানাতে পারি, কিন্তু আপনি সহজ সরল ভালোমানুষের মতো সপ্তাহে নিয়ম করে দুই তিনবার এক্সফলিয়েট করবেন? নাকি কোন সুদূর প্রাচ্যের ইউটিউবার কে দেখে জেলাটিন গ্লু এসব মুখে মেখে সেটা টেনে তুলে গুনে গুনে দেখবেন কটা ব্ল্যাকহেড উঠলো, সেটা একেবারেই আপনার পার্সোনাল চয়েস।
আর এই চয়েসটা করার আগে খুব ভালোভাবে ভেবে নেবেন আপনি দেশের সেই লাকি ৫% এর ভেতরে পড়েন কিনা, যারা লাখ টাকা দিয়ে কসমেটিক ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিজের বোকামি ধামাচাপা দেবার সামর্থ্য রাখে।
লিখেছেন – তাবাসসুম মীম