জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারের কিছু আদবকেতা - Shajgoj

জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারের কিছু আদবকেতা

fb

জীবনের কাজে-অকাজে নানা ব্যস্ততায় জীবনটা অনেক বেশি যান্ত্রিক বানিয়েই রাখছি আমরা। আজকাল ভাব-ভালোবাসার প্রকাশেও সামাজিক মাধ্যমগুলিকে বেছে নিই। অপরিচিতদের সাথে তো বটেই, কাছের মানুষদেরকেও ভার্চুয়ালি কাছে কাছে রাখছি বেশি। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ এই ভার্চুয়াল দুনিয়াতেই। দিনদিন মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা দেয়ার হারও কমে যাচ্ছে, বার্তা চালাচালি সব ফেসবুক, ভাইবার বা হোয়াটসঅ্যাপে। আমাদের দেশে সবচাইতে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম হিসেবে ফেসবুকের নাম উঠে আসবে নিঃসন্দেহে।

ফেসবুক আইডি আজকাল বারো বছরের ছোট্ট মানুষটিরও আছে, কেননা তার হাতের মুঠোয় ইন্টারনেটের জাদুর চেরাগ দিয়ে রেখেছে অভিভাবক। ঠিক তেমনই ফেসবুকে আইডি খুলতে পারছে নিতান্তই অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী যারা ব্যবহার বিধিমালা জানতেও সমর্থ নয়। অন্যদিকে তথাকথিত শিক্ষিতদের মাঝে রয়েছে এমন সব মানুষ যারা তাদের বিদ্যাকে কাজে লাগিয়েই একের পর এক অনর্থ করে যাচ্ছে। অসভ্যতা যাদের কাছে অত্যন্ত স্বাভাবিক আচরণ।

সব রকমের মানুষ নিয়েই এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি চলছে। ব্যতিক্রম নয় ফেসবুকের নীলসাদা দুনিয়াও। হরেক রকম মানুষের বসতি এইখানে। প্রত্যেক মানুষের জন্য কোন নতুন জিনিষ ব্যবহার করার শুরুতেই তার নিয়ম বা কিছু আদবকেতা জানাটা জরুরী। ফেসবুকেও আছে তেমন কিছু সাধারণ নিয়মনীতি। একজন সভ্য নাগরিক বা নিদেনপক্ষে ভদ্র মানুষ হিসেবে যা আপনাকে মানতেই হবে। অন্যথায় নিজের মান খুইয়ে বসবেন।

ফেসবুকের আদবকেতার মধ্যে আছে এই বিষয়গুলি-

একদমই অচেনা কাউকে বন্ধু হবার অনুরোধ পাঠানো থেকে বিরত থাকাটা সবচেয়ে ভালো, যদি না আপনি তার কাজের মাধ্যমে প্রভাবিত বা তার কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে থাকেন এবং সেই কারনে তাকে বন্ধু তালিকায় পেতে চান। এটা খুবই সাধারণ ভদ্রতা, কারো না বোঝার কিছুই নেই। বন্ধুতালিকা লম্বা বানিয়ে যে কোন মেডেল পাবেন, তা নিশ্চয় নয়!

মিউচুয়াল ফ্রেন্ড দেখলেই রিকোয়েস্ট পাঠাতে হাত নিশপিশ করে, এমন মানুষ কম নেই এই ফেসবুকে। দেখা গেলো অযথাই বেশি আগ্রহী হয়ে নতুন মানুষকে তো পেলেনই না বন্ধু হিসেবে, বরং আপনার পুরনো বন্ধুটিই আপনাকে বিদায় দিলো নিজের তালিকা থেকে! তাই একটু হলেও ভাবুন কী করছেন, কেনো করছেন।

পোক বা গুঁতা দেয়াটা ফেসবুকের অনর্থক এক ফিচার বলে অনেকেই মনে করেন। চেনা নেই জানা নেই হুট করে একদম অচেনা কারো কাছ থেকে পোকড হবার নোটিফিকেশন পেলে সত্যিই বিরক্ত লাগে। ফেসবুকে নতুন হন বা পুরনো, খুব কাছের বন্ধুদের সাথে মজা করা বাদে আর কোন ক্ষেত্রে এই পোক করার স্বভাব বাদ দিন। এই কারণে যদি কোনদিন কারো কাছে অপমানিত হতে হয়, সেটা কিন্তু অযথা হবে না, মনে রাখবেন।

ফেসবুকে ইমোটিকনগুলি আবেগ না বোঝাক, ব্যক্তির সামান্যতম মনোভাব তো বোঝায়ই। তাই ইমোটিকনের ব্যবহার করুন বুঝেশুনে। কাকে দিচ্ছেন, কী কথার প্রেক্ষিতে দিচ্ছেন, আপনাদের সম্পর্ক কেমন, ইমোর আদানপ্রদান নির্ভর করবে এসব বিষয়ের ওপর। কথা বলতে শুরু করেছেন মাত্রই, মানুষটার সাথে প্রথম আলাপ, পরিচয় হবার শুরুতেই তাকে চোখ টিপ দেয়ার ইমো দিয়ে বসলেন আপনি, নিজেই ভাবুন এটা খুব সভ্য আচরণের মাঝে পড়ছে কিনা।

আবার কথা বলছেন এমন কারো সাথে যিনি নিজে ইমোর ব্যবহার বলতে গেলে করছেনই না, তাকে একের পর এক ইমোর সাথে বার্তা পাঠানোটা কি ভালো দেখাচ্ছে? তিনি হয়তো আপনার সাথে খুব জরুরী কাজের কথাটুকু বলার আগ্রহও হারিয়ে ফেলছেন। সব পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখুন নিজেই। নাহয় অন্যের কাছে বিরক্তির কারন হবেন হরহামেশা।

কেউ অনবরত আপনার বন্ধুত্বের অনুরোধ অগ্রাহ্য করছে। মানে আপনার পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট রিমুভ করে দিচ্ছে বারবার। সে হয়তো একেবারেই অপরিচিত, বা স্বল্প পরিচিত আপনার। দেখছেন যখন সে যখন আপনাকে এড়াতেই চাইছে, নিজে থেকে সরে আসাটা কি ভালো নয় আপনার পক্ষে? আপনি অবাক হয়ে থাকলে তাকে একটি মেসেজ দিতে পারেন, কথা বলতে পারেন কিন্তু গোঁয়ারের মতো বারবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে নিজেকেই আরো হাস্যকর বানাচ্ছেন তার কাছে!

আমি এমন মানুষদের চিনি যারা যথেষ্ট ভদ্র ও শিক্ষিত, অন্তত সামাজিক অবস্থানের প্রেক্ষিতে, কিন্তু ফেসবুকে এই ধরনের আচরণ তাদের কাছ থেকে প্রায়ই দেখা যায়। কয়েকবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে তারা এমন একজনের বন্ধু তালিকায় জায়গা করে নেয় এবং সেটা অন্যদের কাছে গল্পও করে! অন্যদিকে সেই অপরিচিত বা স্বল্পচেনা ব্যক্তিটি হয়তো নিতান্তই চক্ষুলজ্জায় পড়ে এমন একটা রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করতে বাধ্য হয়েছেন!

কম পরিচিত বা অপরিচিত যে কাউকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানোর আগে একটিবার তার প্রোফাইলে গিয়ে তার সম্পর্কিত তথ্যের খোঁজ নিয়ে আসুন। কারো কারো প্রোফাইলে লেখাই থাকে তিনি কেমন মানুষের কাছ থেকে বন্ধুত্বের আবেদনে সাড়া দিতে ইচ্ছুক আর কেমন মানুষের বন্ধুত্বের আবেদন তিনি মোটেও গ্রহণ করবেন না। পরে দেখা গেলো আপনার আবেদন সেই “মোটেও গ্রহণ করবেন না” মানুষের দলে পড়ে যাবে। তাই আগে থেকেই জেনে নেয়াটা ভালো নয় কি?

কমেন্টিং বা মন্তব্য করার আদবকেতা জানুন আগে, তারপরই যে কারো পোস্টে মন্তব্য করুন। আপনার কোন মন্তব্য হয়তো পোস্টদাতার কাছে চরম বিরক্তিকর হবে। হয়তো তার কোন গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে আপনি মজা করলেন বা খোঁচা দিয়ে কিছু বললেন, তাতে যে তিনি চটে যাবেন সেটা আপনার বোঝা উচিত আগেই। অনেকেই ফটো কমেন্ট বেশ অপছন্দ করেন। যতোই আপনার নিজের পছন্দের হোক না কেনো তাদের পোস্টে কমেন্ট করার ক্ষেত্রে আপনাকে ফটো কমেন্টের মায়া কাটাতে হবে। অন্যথায় কমেন্ট না করলেও নিশ্চয় কোন ক্ষতি নেই, তাইনা?

মোট কথা, আপনি যেনো কোনভাবেই অন্যের কাছে এড়িয়ে চলার পাত্রে পরিণত না হন সেটা নিশ্চিত করতে হবে আপনাকেই। নিজে ভালো থাকুন এবং সেটা অন্যের কাছে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করে তবেই। হ্যাপি ফেসবুকিং!

লিখেছেন –   মুমতাহীনা মাহবুব

ছবি – ডেইলিমেইল.কো.ইউকে

 

 

0 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort