হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে চুল পড়ছে? ন্যাচারালি সল্যুশন পাবেন যেভাবে!

হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে চুল পড়ছে? ন্যাচারালি সল্যুশন পাবেন যেভাবে!

3

‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা’– কবিতার লাইনটি আমাদের খুব পরিচিত। চুল নিয়ে এমন কত কবিতাই তো হয়েছে। কিন্তু এই চুল ভালো রাখতে যে কত ঝক্কি তা কয়জন বোঝে? দিনের পর দিন চুলে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট ইউজ করেও কি চুল পড়া বন্ধ হয়! কখনো ভেবে দেখেছেন, এই চুল পড়ার সমস্যাটি আপনার হরমোনের কারণে হচ্ছে কিনা? যদি হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে চুল পড়ার সমস্যা হয়ে থাকে তবে ইজি কয়েকটি স্টেপ ফলো করলেই পাওয়া যাবে সল্যুশন। তবে সমাধান একদিনে পাওয়া যাবে না, এ জন্য সবার আগে আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে, লাইফস্টাইলে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে এবং রেগুলার হেয়ার কেয়ার রুটিন ফলো করতে হবে।

হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে চুল কেন পড়ে?  

১) টেস্টোস্টেরন

টেস্টোস্টেরন মূলত পুরুষ সেক্স হরমোন হলেও নারীদের শরীরে অল্প পরিমাণ এই হরমোন আছে। সঠিক ডায়েটের অভাব, জেনেটিক্স, পিসিওএস ইত্যাদি নানা কারণে নারীদের শরীরে এই হরমোন বেশি প্রোডিউস হয়। আর এর কারণে দেখা দেয় ফেসিয়াল হেয়ার, ওবেসিটি, হেয়ার লস ইত্যাদি।

হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে চুল পড়ে

২) প্রেগনেন্সি হরমোন

প্রেগনেন্সির ১-৫ মাসের মধ্যে অন্তত ৫০% শতাংশ নারীর এক্সেসিভ হেয়ার ফল হয়। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন লেভেলের পরিবর্তনের কারণে এই হেয়ার লস হয়। সন্তান জন্মদানের পরও হেয়ার লস হতে থাকে। এ সময়ে অনেকের চুল পড়া এতই বেড়ে যায় যে মুঠোয় মুঠোয় চুল উঠে আসতে থাকে, অনেকের মাথায় টাক পড়ে যায়। এই কন্ডিশনকে বলে Androgenic alopecia।

৩) থাইরয়েড হরমোন

হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণেও হেয়ার লস হয়। এই হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে নারীদের শরীরে Alopecia areata নামে এক ধরনের অটোইমিউন কন্ডিশন দেখা দেয়। এই কন্ডিশনে ইমিউন সিস্টেম অ্যাটাক করে হেয়ার ফলিকলসে। এ ঘটনা ঘটার সাথে সাথে চুল পড়া শুরু হয়। এছাড়া পিসিওএসও একটি অটোইমিউন থাইরয়েড কন্ডিশন। এ কারণেও হেয়ারফল বেড়ে যায়।

৪) মেনোপজ হরমোন

নারীদের হেয়ার গ্রোথ সাইকেলে মেনোপজ বেশ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে মেনোপজ শুরু হওয়ার আগে বা পরে যদি Androgenic alopecia কন্ডিশনটি দেখা দেয়। এ সময় সেক্স হরমোনের পরিবর্তন এবং স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণে মেনোপজের পর হেয়ার লস অনেক বেড়ে যায়।

চুল পড়া

৫) স্ট্রেস হরমোন

প্রেগনেন্সি, ডেলিভারি, মেনোপজসহ নানা কারণে কর্টিসল নিঃসরণ হয়। এই কর্টিসল বডির মেইন স্ট্রেস হরমোন। এই হরমোন হেয়ার ফলিকলের যে রেগুলার সাইকেল তাতে প্রভাব ফেলে। যার কারণে বেড়ে যায় হেয়ার ফল।

হেয়ার লস হওয়ার পেছনে কোন হরমোনগুলো দায়ী এ বিষয়ে তো জানা হলো। কিন্তু কীভাবে চুল পড়া কমিয়ে অথবা হরমোনাল ব্যালেন্স করে চুল গজানো বৃদ্ধি করা যায়? এবার জানাবো এ বিষয়েই…

ন্যাচারালি হরমোনাল হেয়ার লস রিডিউস করার উপায়

ডায়েটে পরিবর্তন করা

হরমোনের ব্যালেন্স এবং হেয়ার গ্রোথ ইমপ্রুভ করার জন্য ডায়েটে পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি। শরীর ও মনের উপর হেলদি ফুডের সব সময় পজিটিভ একটি ইমপ্যাক্ট পড়ে। মিষ্টি ও লবণযুক্ত খাবার, ফ্যাটযুক্ত খাবার যেমন- ক্যান্ডি, বার্গার, পিজ্জা ইত্যাদি খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। সুস্থ থাকতে যে খাবারগুলো ডায়েটে যোগ করতে পারেন- পালং, লেটুস, বিটরুট, গাজর, ব্রকলি, টমেটো, শশা, আপেল, কমলা, লেবু, আঙুর, পেঁপে, আনারস, তরমুজ, অ্যাভোকাডো, ডিম, টুনা ফিশ, মুরগীর মাংস, কিডনি বিনস, দুধ, চিজ, বাটারমিল্ক, টকদই, সূর্যমুখী বীজ, আমন্ড, ক্যাশুনাট, অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো অয়েল, ঘি ইত্যাদি।

স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করা

হেয়ার গ্রোথের জন্য স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ খুব ভালো কাজ করে। সপ্তাহে অন্তত দুইবার ১০-১৫ মিনিট কোকোনাট বা আমন্ড অয়েল দিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। এতে ব্লাড সার্কুলেশন ইমপ্রুভ হয়। হেয়ার রুটে পুষ্টি পৌঁছায়। এই ম্যাসাজে বেশ রিল্যাক্সও ফিল হয়।

স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করা

সপ্তাহে অন্তত একবার হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা

হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে চুল পড়ার সমস্যা কমাতে হলে শুধু ইন্টারনালিই নয়, এক্সটারনালিও কিছু কাজ করতে হবে। অর্থাৎ শুধু ডায়েটের পরিবর্তনই নয়, সাথে সাথে স্ক্যাল্প ও হেয়ার হেলথেরও যত্ন নিতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার হেয়ার মাস্ক অ্যাপ্লাই করা।

হেয়ার গ্রোথ করতে হেল্প করবে এমন কয়েকটি হেয়ার মাস্ক
অ্যালোভেরা জেল ও লেবুর রস দিয়ে তৈরি মাস্ক 

৩ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে ১ টেবিল চামচ লেমন জুস নিয়ে ভালোভাবে মিক্স করে নিন। এই প্যাকটি স্ক্যাল্পে অ্যাপ্লাই করুন। ১০ মিনিট সার্কুলার মোশনে স্ক্যাল্পে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ২০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে এই প্যাকটি খুব ভালো কাজ করে।

এগ মাস্ক

ডিমের সাদা অংশ ও কুসুম আলাদা করে নিন। সাদা অংশটুকু ভালোভাবে বিট করে নিন। এবার এর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন ৩/৪ চামচ স্কিনক্যাফে হেয়ার ফল ট্রিটমেন্ট। এই প্যাকটি হেয়ার রুটস থেকে শুরু করে নিচের অংশ পর্যন্ত ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করে নিন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক ব্যবহারে চুল পড়া কমবে, হেয়ার রুট শক্ত হবে এবং নতুন চুল গজাবে।

কোকোনাট ও ক্যাস্টর অয়েল মাস্ক 

সমপরিমাণ কোকোনাট ও ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। স্ক্যাল্প ও হেয়ারে অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। ৪৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করা শেষে অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। স্ক্যাল্পে অয়েল মাস্ক দিয়ে ম্যাসাজ করলে ড্রাইনেস কমে আসে, স্ক্যাল্প নারিশড হয়।

হেনা মাস্ক

৫-৭ টেবিল চামচ হেনা পাউডারের সাথে ২ টেবিল চামচ শিকাকাই ও ১ টেবিল চামচ রিঠা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার এতে যোগ করুন কুসুম গরম পানি। সারা রাত এভাবে রেখে দিন। পরদিন হেয়ারে আগে কোকোনাট অয়েল অ্যাপ্লাই করে নিন। হেয়ার সেকশন করে নিয়ে ব্রাশ দিয়ে অ্যাপ্লাই করে নিন মাস্কটি। ৬০ মিনিট অপেক্ষার পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক ব্যবহারে চুল হবে সিল্কি ও শাইনি, সেই সাথে হেয়ার ফল কমবে, নতুন চুল গজাবে। যদি আপনার চুল কালার করা থাকে তাহলে কিন্তু হেনা ইউজ করা যাবে না। সেক্ষেত্রে শুধু শিকাকাই ও রিঠা ইউজ করতে পারেন।

হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে চুল পড়া কমাতে হেনা মাস্ক

ইয়োগা ও ব্যায়াম করা 

শুনতে একটু অবাক লাগলেও হেয়ার গ্রোথের জন্য ইয়োগা আসলেই উপকারী। ইয়োগা করলে ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি পায় এবং হেয়ার ফলিকলসে পুষ্টি পৌঁছায়। হরমোন ব্যালান্স করার জন্য ইয়োগা খুবই হেল্পফুল। ইয়োগা ছাড়া রেগুলার ব্যায়াম করলেও হরমোনাল ইমব্যালান্সের সমস্যা অনেকটাই কমে আসে। হাঁটাহাঁটি, সাঁতার কাটা, জুম্বা ইত্যাদি যে কোনো এক্সারসাইজই শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট রাখতে সক্ষম। এক্সারসাইজ সেরাটোনিন নিঃসরণ করতে হেল্প করে, এতে শরীরের স্ট্রেস ও ইনফ্ল্যামেশন রিডিউস হয়।

পর্যাপ্ত পানি পান করা

শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে এবং হেয়ার গ্রোথের জন্য যে পুষ্টি পাওয়া যায় তার অনেকটাতেই হেল্প করে পানি। দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত। শুধু পানি ছাড়াও বিভিন্ন ফলের জুস, ফল বা ডিটক্স ড্রিংকসও পান করতে পারেন।

পর্যাপ্ত ঘুম

প্রেগনেন্সি, মেনোপজ, ঘরে বা বাইরে কাজের অনেক প্রেসার, কম ঘুমের কারণে শরীরে কর্টিসল নিঃসরণ হয়। এর কারণে টক্সিনের পরিমাণও বেড়ে যায়। নিয়মিত ৭/৮ ঘন্টা ঘুমালে হেয়ার গ্রোথ সাইকেল পরিপূর্ণ হয়। ফলে চুলের বৃদ্ধি হয়।

 

হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে হেয়ার ফল বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন অনেক নারী। ন্যাচারাল কিছু উপায় ফলো করলে এই সমস্যা কমানো সম্ভব। তবে যদি হেয়ার ফল অতিরিক্ত হয়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই ভালো। হেয়ার কেয়ারের অথেনটিক বিভিন্ন প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন সাজগোজে। অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম অথবা সাজগোজের চারটি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি যে কোনো স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের প্রোডাক্ট।

ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক

23 I like it
3 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort