সুস্থ জীবনযাত্রায় জরুরি কিছু কথা

সুস্থ জীবনযাত্রায় জরুরি কিছু কথা

a1

সুস্থতার চেয়ে বড় আশীর্বাদ জীবনে আর কিছু নয়। বাকি যা সব ভালো, সবকিছুই ভরপুর উপভোগ করা সম্ভব যদি সুস্থ শরীর আর মন থাকে। কোনো একটা না থাকলেই জীবন দুর্বিষহ হতে আর বেশিকিছু লাগে না। আর শরীর-মনের সুস্থতার অনেক নিয়মকানুন, কৌশল জানা আছে সবারই। এই লেখাটি আপনার সুস্থ জীবনযাত্রায় জরুরি কিছু কথা নিয়েই সাজানো হয়েছে। মিলিয়ে নিন তো, কোন বিষয়গুলো মানছেন আপনি আর কোনগুলো একেবারেই নয়?

সকাল থেকেই শুরু করা যাক। সকালের খাবারটা কত জরুরি তা নিশ্চয় নতুন করে বলার কিছু নেই, তাইনা? ব্যস্ততা, বাসার ব্যবস্থাপনা, সব মিলিয়ে নিত্যদিন ভালো মতন নাস্তা খাওয়া নাই হতে পারে কিন্তু সেটা যেন প্রতিদিনের অভ্যাস না হয়ে যায়। দুটো টোস্ট আর দুধ বা এক কাপ চা, একটা ফল, ডিম পোচ, কিছু না কিছু খেয়ে ঘর থেকে বের হওয়া চাই। কয়েক মিনিট টেবিলে বসে একটু শান্তি নিয়ে যদি নাস্তা করে দিনটা শুরু করা যায়, তবে আপনি নিজের সুস্বাস্থ্য ভালোভাবেই নিশ্চিত করছেন।

breakfast

আজকে খুব কাজের চাপ, কেমন করে সামাল দেবেন ভাবতে বসেই মাথা ধরে যাচ্ছে। চাপ পড়ছে শরীরের সাথে মনেও। অনবরত অত্যধিক কাজ মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হতেও সময় নেয় না। কাজেই বিপর্যস্ত হওয়ার আগেই নিজেকে ঠেকানো চাই। কাজের চাপ এতটুক থাকবেই, সেটা মাথায় হিসেব কষে নিন ভালো করে। বড় কাজকে ছোট ছোট ভাগে সাজিয়ে নিন। একেক ভাগ কাজ শেষ হবার পর একটু জিরিয়ে নিন। কাজের ফাঁকে বিশ্রাম দিন মগজকে, আর খানিক পরপর চোখগুলোকেও। ঘাড় এবং হাত-পা নাড়াচাড়া করুন। স্থবির হয়ে সেঁটে বসবেন না চেয়ারে। নিজেকে চাঙ্গা রাখার যত কৌশল আছে অবলম্বন করুন। তাতে আপনারই তো ভালো।

ব্যায়াম করার চর্চা রাখতে পারেন সকালবেলায়। নাস্তার আগে মিনিট বিশেক ব্যায়াম, কিংবা বাইরে হেঁটে আসা, এই সবই আপনার সুস্থ থাকার কারণ হতে পারে। দূষণের নগরেও ভোরবেলার বাতাসটা খানিক শুদ্ধ হয় বটে, আর সেটা প্রাণীদেহের বড় বন্ধু।

exercise

দুপুর আর রাতের খাবারে সমতা আনুন। প্রতিবেলায় আমিষ আর নিরামিষের সঠিক সমন্বয় সম্ভব নাও হতে পারে, সেক্ষেত্রে এক বেলায় বেশি খেলে অন্য বেলায় স্বল্পাহারী হওয়াই শ্রেয়। মাছ, মাংস সবকিছু সবসময় একসাথে নয়। এই নিয়ম মানা উচিত আগেভাগেই। সবজিটা দুপুরে খাওয়া না হলে রাতে একটু বেশি করেই সবজি খাওয়া যায়। শাক আর ভর্তায় পেট ভরে ভাত খেয়ে নেয়া সম্ভব। এরকমই তো হওয়া ভালো, তাইনা? অতিরিক্ত মাছ-মাংস, মিষ্টি আর লবণ, এমনকি ঝালও আপনাকে কোনো না কোনো ভাবে অসুস্থ করে তুলবে। বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যার পিছে অতিরিক্ত খাওয়াই দায়ী, এই কথাটা অন্তত মাথায় রাখুন! এবং অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় পানি পান করুন। শরীরে পানির ঘাটতি মানেই খুব বাজে কিছু, তাই কখনো মন না চাইলেও পানি পান করা চাই নিয়মিত। প্রতিদিন ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় গ্রহণে হিসেবি হতে হবে। কয়েক কাপ চা আপনাকে চাঙ্গা হয়তো রাখছে, কিন্তু সারাদিন ধরে কাপের পর কাপ চা বা কফি আপনার শরীরে অসুখের বীজ বুনে চলেছে। তাই রাশ টানুন এইসব পানীয় গ্রহণে।

টানা অনেকদিন ব্যস্ততায় ডুবে ক্লান্ত হয়ে গেলে অবশ্যই নিজেকে খানিক ছুটি দিন। প্রিয়জনদের নিয়ে সময় কাটানো, ভ্রমণে যাওয়া, বাইরে খেতে যাওয়া, এই জিনিসগুলো আপনাকে মন থেকে সুস্থ রাখতে পারে। তাই যতটাই সম্ভব এইসব আনন্দের উপলক্ষ খুঁজে নিন নিজের জন্য। মাস তিনেক কোনো সময় নেই, পুরোদমে কাজ করবেন, এই পরিকল্পনা করে কাজ করতে করতে তিনমাস পর দেখা যাবে ডিপ্রেশনেই পড়ে গেছেন! তাই অবসরের মুহূর্তগুলো হেলায় হারাবেন না। একটা দিনের জন্যেও যদি দারুণ কিছু একটা পরিকল্পনা করা যায়, করে ফেলুন। সপ্তাহব্যাপী আনন্দ ভ্রমণ সামনে তুলে রেখে মাসের পর মাস নিজেকে বিপর্যস্ত করা বোকামি।

ব্লাড প্রেশার নিয়মিত পরীক্ষা করাটা ভালো অভ্যাস। হতেই পারে আপনার ব্লাড প্রেশার একদম স্বাভাবিক, কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ কোনোটা হতেই সময় লাগে না। তাই কয়দিন পরপরই মাপিয়ে নেয়া উচিত, যাতে তারতম্য দেখা গেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

ভালো একটা গোসল প্রাত্যহিক অবশ্য করণীয় কাজগুলোর মাঝে একটা। রাতে ঘরে ফিরতে দেরি হলে বিছানায় লুটিয়ে পড়ার স্বভাব থেকে থাকলে সেটা বাদ দিন। খানিক জিরিয়ে নিয়ে হলেও গোসল সেরে তবে ঘুমের প্রস্তুতি নিন। সারাদিনের ধুলাবালি গায়ে থাকতে দেবেন তো রোগ বাসা বাঁধতে কোনোই আপত্তি জানাবে না!

এবং আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ঘুম। ছয় থেকে আট ঘন্টার ঘুম আপনার দৈনিক চাহিদা। রাতেই পুরোটা ঘুমিয়ে উঠলে তো বেশ ভালো, তা না হলেও রাত আর দিন মিলিয়ে সময় এটা পূরণ করুন। তাতে শরীর খুশি থাকবে। আর শরীর খুশি তো মনও বেজার হবে না নিশ্চয়!

ছবি – সাটারস্টক
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব

3 I like it
2 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort