চুলের ধরন ও লাইফস্টাইল অনুযায়ী সাজিয়ে নিন হেয়ার কেয়ার রুটিন

চুলের ধরন ও লাইফস্টাইল অনুযায়ী সাজিয়ে নিন হেয়ার কেয়ার রুটিন

2-2

মজবুত ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু ঝলমলে সুন্দর চুল হুট করেই পাওয়া যায় না। তার জন্য নিয়মিত একটি রুটিন মেনটেইন করতে হয়। কিন্তু সেই রুটিন কীভাবে ঠিক করবেন, যখন আপনার সামনে রয়েছে অসংখ্য প্রোডাক্ট? এত এত প্রোডাক্টের মধ্য থেকে নিজের চুলের জন্য সঠিক জিনিসটি বাছাই করে নেয়া আসলেই কনফিউজিং। তবু চুলের যত্ন নেয়া তো আর বাদ দেয়া যাবে না, তাই না? তাই প্রোডাক্ট বাছাই করার আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। সেই সাথে জানতে হবে হেয়ার কেয়ার রুটিন কীসের উপর নির্ভর করে এবং চুলের যত্নে বেসিক কিছু নিয়ম সম্পর্কে। চুলের ধরন ও লাইফস্টাইল অনুযায়ী কীভাবে হেয়ার কেয়ার রুটিন সাজিয়ে নিতে হবে, চলুন জেনে নেই।

হেয়ার কেয়ার রুটিন কীসের উপর নির্ভর করে?

আচ্ছা এই যে আমরা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাওয়ার জন্য হেয়ার কেয়ার রুটিনের কথা বলি, কিন্তু আপনি কি জানেন এই রুটিন কীসের উপর নির্ভর করে? চলুন তাহলে এ সম্পর্কে আগে জেনে নেয়া যাক-

প্রথমত, আপনার চুলের গঠন বিন্যাস বা টেক্সচার কেমন সেটা জানা জরুরি। হতে পারে আপনার চুল সোজা, ঢেউ খেলানো অথবা কোঁকড়া। সব ধরনের চুলেরই সুবিধা-অসুবিধা আছে। যেমন- সোজা চুল দেখতে সুন্দর মনে হলেও খুব সহজে তেলতেলে হয়ে যায়। এছাড়া সব ধরনের হেয়ারেই ফ্রিজিনেস ও স্প্লিট এন্ডের প্রবলেম তো আছেই।

দ্বিতীয়ত, চুলে কোনো রঙ, ব্লিচ বা অন্য কোনো কেমিক্যাল ইউজ করেছেন কিনা সেদিকটাও মাথায় রাখুন। যাদের হেয়ার কালার করা থাকে, তাদের হেয়ার ওয়াশ কম করতে বলা হয়। কারণ সঠিকভাবে যত্ন না নিলে চুলের রঙ দ্রুত ফেইড হতে থাকে এবং চুল ড্রাই ও রাফ হয়ে যায়। আবার ব্লিচ করা চুলে একটু বেশি নারিশমেন্টের দরকার হয়। যেমন- হেয়ার মাস্ক বা কন্ডিশনার নিয়মিত লাগাতে হয়।

ফেইড হেয়ার কালার

তৃতীয়ত, ডেইলি বেসিসে চুলে কোনো স্টাইলিং করছেন কিনা। এখানে কিন্তু লাইফস্টাইলও রিলেটেড।

চতুর্থত, আপনার চুলের নির্দিষ্ট কোনো সমস্যা আছে কিনা, যেটা আপনি দূর করতে চান। যেমন- চুল পড়া, ড্রাই স্ক্যাল্প, ড্যামেজ হেয়ার ইত্যাদি।

এই সমস্যাগুলোর কোনোটা যদি আপনি ফেইস করে থাকেন তাহলে সেগুলো অনুযায়ী হেয়ার কেয়ার রুটিন তৈরি করতে হবে। সেই সাথে প্রোডাক্ট চুজ করার ক্ষেত্রেও কেয়ারফুল থাকতে হবে।

চুলের ধরন ও লাইফস্টাইল

আমাদের লাইফস্টাইল কিন্তু ত্বক ও চুলের উপর ইমপ্যাক্ট ফেলে। প্রফেশনের কারণে অনেকেই রেগুলার চুলে হিট স্টাইলিং টুলস ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজন প্রোপার হিট প্রোটেকশন। যারা অফিস, ক্লাস বা বিভিন্ন কাজের তাগিদে বাইরে যাচ্ছেন; তাদের তো রেগুলার পল্যুশন, কড়া রোদ, ধুলো ময়লা ফেইস করতে হয়। তাদের জন্য প্রয়োজন ডিপ ক্লিনিং শ্যাম্পু। বিজি লাইফে যারা চুলের যত্ন নেয়ার জন্য আলাদা করে সময় বের করতে পারেন না, তাদের জন্য দরকার চটজলদি সল্যুশন, যেমন লিভ-ইন-কন্ডিশনার। তাই হেয়ার কেয়ার রুটিন ফিক্স করার সময় লাইফস্টাইল এর বিষয়টিকে হেলাফেলা করা যাবে না!

হেয়ার কেয়ারের কিছু বেসিক স্টেপস

চুলের ধরন ও লাইফস্টাইল যেমনই হোক না কেন, চুল হেলদি রাখার জন্য প্রোপার হেয়ার কেয়ার রুটিন ফলো করা মাস্ট। চুলের সমস্যা অনুযায়ী রুটিনের কিছু হেরফের হলেও বেসিক স্টেপস একইরকম থাকে। চলুন জেনে নেই এই স্টেপগুলো সম্পর্কে-

হেয়ার ও স্ক্যাল্প ক্লেনজিং

চুলের ধরন অনুযায়ী যে প্রোডাক্টই চুলে ইউজ করা হোক না কেন, খেয়াল রাখবেন চুল যেন সব সময় পরিষ্কার থাকে। নইলে স্ক্যাল্পে ডেড স্কিন সেলস জমে চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। যদি আপনার নিয়মিত সুইমিং পুলে সাঁতারের অভ্যাস থাকে, তাহলে প্রতিবার সাঁতারের পরে অবশ্যই চুল ধুয়ে নিতে হবে। কারণ সুইমিং পুলের পানিতে থাকা ক্লোরিন স্ক্যাল্পে জমে চুল ড্যামেজ করে দিতে পারে। চুল ওভারওয়াশ করা হলে চুলে থাকা ন্যাচারাল অয়েলও ওয়াশ আউট হয়ে যায়, এই ব্যাপারটি খেয়াল রাখতে হবে। চুল ধোয়ার জন্য দুই ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।

চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু

রেগুলার শ্যাম্পু: যেটা আপনি রোজ বা যখন প্রয়োজন তখন ব্যবহার করতে পারেন। চুল পরিষ্কার করার সাথে সাথে এটা চুলকে সিল্কি, শাইনি রাখতেও হেল্প করে।

ডিপ ক্লিনিং শ্যাম্পু: এটা স্ক্যাল্প ও হেয়ার দু’টোকেই ডিপলি ক্লিন করে। মাসে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়াও অ্যান্টি হেয়ার ফল, অ্যান্টি ড্যানড্রাফ, কালার প্রোটেকশন, ড্যামেজ রিপেয়ার শ্যাম্পু পাওয়া যায়। কনসার্ন ও হেয়ার টাইপ বুঝে আপনিও সিলেক্ট করুন রাইট প্রোডাক্টটি।

হেয়ার কন্ডিশনিং

চুলের ন্যাচারাল অয়েল ও ময়েশ্চার রিস্টোর করতে চুল ধোয়ার পরেই কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল যেমন নারিশড থাকে, তেমনই চুলে জট কম লাগে, চুল শাইনি দেখায় এবং ফ্রিজিনেস কমে। রেগুলার ইউজ এর জন্য দুই ধরনের কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও সপ্তাহে একদিন ডিপ কন্ডিশনিং করতে পারেন।

রেগুলার রিনস আউট কন্ডিশনার (Rinse Out Conditioner): এটা শ্যাম্পু করার পর স্ক্যাল্প বাদে পুরো চুলে লাগিয়ে ১-২ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হয়।

চুলের ধরন ও লাইফস্টাইল হেয়ার কেয়ার রুটিনে অ্যাড করুন কন্ডিশনার

লিভ-ইন কন্ডিশনার: এটা চুলে লাগানোর পরে চুল ধোয়ার প্রয়োজন নেই। তাই ব্যস্ততার জন্য শাওয়ার নিতে না পারলে এটা ইউজ করতে পারেন।

ডিপ কন্ডিশনার: শ্যাম্পু করার পর চুলে লাগিয়ে রাখা হয় ৩০ মিনিট। এরপর ধুয়ে ফেলতে হয়। সপ্তাহে একদিন অ্যাপ্লাই করতে পারেন, এতে ভালো রেজাল্ট পাবেন। যারা রেগুলার হিট স্টাইলিং টুলস ব্যবহার করেন, বা যাদের ড্যামেজড হেয়ার; তাদের জন্য ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ট।

অয়েল ট্রিটমেন্ট

চুলের হাইড্রেশন ও ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য সপ্তাহে অন্তত ২/৩ বার তেল দিতে হবে। এতে ড্রাইনেস কমে চুল থাকবে সফট। নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল এগুলো বেশ ভালো অপশন। একসাথে মিক্স করেও স্ক্যাল্প ও চুলে লাগাতে পারেন। ৩০-৬০ মিনিট চুলে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

হেয়ার কেয়ারে কোকোনাট অয়েল

প্রোটিন ট্রিটমেন্ট

চুলে নির্দিষ্ট কোনো সমস্যা থাকলে সেই সমস্যাকে টার্গেট করে রুটিন ফিক্স করে নিবেন। যেমন- ফ্রিজি হেয়ার হলে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করতে পারেন। ডিম, কলা, টকদই দিয়ে ঘরে বসে প্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। অথবা মার্কেটে এখন প্রোটিন ট্রিটমেন্ট হেয়ার মাস্ক পাওয়া যায়, সেগুলোও অ্যাপ্লাই করতে পারেন। প্রতিদিনের ব্যস্ততায় যাদের চুলের যত্ন নেয়ার সময় কম, তারা এই মাস্কগুলো ইউজ করতে পারেন।

তবে যাই করা হোক না কেন, রাতারাতি কোনো ফলাফল পাওয়া যাবে না! চুলে যে কোনো প্রোডাক্ট এডজাস্ট হতেও কিছুটা সময় লেগে যায়। হেয়ার মাস্ক বা প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করালে হয়ত সপ্তাহখানেকের মধ্যে চুলে একটা চেঞ্জ চোখে পড়বে। কিন্তু চুল যদি খুব ড্যামেজ হয় সেক্ষেত্রে ফলাফল পেতে অন্তত এক মাস বা তার বেশি সময়ও লাগতে পারে। আবার যে কোনো কিছু যদি নিয়মিত না করা হয় তাহলে কোনো ফলই পাবেন না। তাই মনে রাখতে হবে কনসিসটেন্সি ধরে রাখা চাই।

সিজন চেঞ্জ হলে প্রোডাক্টে পরিবর্তন আনা

অনেকেই একই ধরনের প্রোডাক্ট দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করেন না। সিজন চেঞ্জ হলে আমাদের চুলের অবস্থাও চেঞ্জ হয়ে যায়। তাই সেটা বুঝে রুটিন ও প্রোডাক্ট দুটোই চেঞ্জ করতে পারেন। যেমন- গরমের সময় চুল বেশি ঘামে, তাই রোজ শ্যাম্পু করার দরকার হতে পারে। স্ক্যাল্পে কুলিং ও সুদিং ফিল দিবে, এমন প্রোডাক্ট আমরা সামারে প্রিফার করি। আর শীতে এমন হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট প্রয়োজন, যা চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখবে।

হিট প্রোটেকটর স্প্রে বা সিরামের ব্যবহার

চুলে হিট যতটা সম্ভব কম দিবেন। হিট স্টাইলিং করতে হলে অবশ্যই আগে হিট প্রোটেকটর সিরাম বা স্প্রে অ্যাপ্লাই করুন, এতে হেয়ার ড্যামেজের সম্ভাবনা কমে যাবে।

হেয়ার প্রোটেক্টিং স্প্রে

রেগুলার হেয়ার ট্রিমিং

চুলে নিয়মিত ট্রিম করালে স্প্লিট এন্ডের প্রবলেম কমে যায়। তাই অন্তত ২ মাস পর পর চুলে ট্রিম করে নিন। আরেকটি বিষয়, হেয়ার ওয়াশ করার সময় কখনোই সরাসরি গরম পানি ব্যবহার করবেন না।

খেয়াল রাখুন আরও কিছু বিষয়ে

চুলে যেন জট কম হয়, সেজন্য চেষ্টা করবেন বাইরে গেলে যথাসম্ভব চুল বেঁধে যেতে এবং ঘুমানোর সময় চুল বেঁধে ঘুমাতে। ভেজা চুল আঁচড়াবেন না, এই সময় হেয়ার রুট নাজুক থাকে। তাই ভেজা চুল আঁচড়ালে চুল পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চুল আঁচড়াতে হলে মোটা দাঁতের চিরুনি বা কাঠের চিরুনি ব্যবহার করবেন। চুলের জট ছাড়াতে হলে আগে চুলে সিরাম দিয়ে নিতে পারেন।

 

চুলের ধরন ও লাইফস্টাইল অনুযায়ী কীভাবে হেয়ার কেয়ার রুটিন সাজিয়ে নিবেন তা তো জানা হলো। এখন নিশ্চয়ই হেয়ার কেয়ার করা নিয়ে আর ভাবতে হবে না। অথেনটিক স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ রিলেটেড প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ণ মল্লিকা, ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।

ছবিঃ সাজগোজ

12 I like it
2 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort