আচ্ছা, গ্রিন টি কি সবার জন্য সেইফ? - Shajgoj

আচ্ছা, গ্রিন টি কি সবার জন্য সেইফ?

g-tea

কথা বলছিলাম ইন্টারনেট, ফেসবুকের গ্রুপ, নিউজ পোর্টাল এসব মাধ্যমে দেখা, শোনা এবং মাঝে মাঝেই আলাপ করা হয় এমন কিছু আধুনিক কুসংস্কার আর গুজব নিয়ে। আর গুজব ছড়ানোর লিস্টে টপ ফাইভেই গ্রিন টি রিলেটেড টপিক গুলো পাওয়া যাবে। গ্রিন টি খেলে এটা হয় ওটা হয়, মেয়েরা এটা খেতে পারবে না, অমুকে খেতে পারবে না তমুকে ছুঁতে পারবে না… এমন অজস্র বাণী রোজ যেমন ফেসবুকের গ্রুপ গুলোতে দেখি তেমনই দেখি সাজগোজের কমেন্ট সেকশনে!

তো চলুন এই গুজবগুলোর ভিত কতটুকু শক্ত একটু দেখে আসি।

১) গ্রিন টি খেলেই সবাই শুকিয়ে যায়!

প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে ‘গ্রিন টি’ আসলে কি? অনেকেই জানেন না যে গ্রিন টি আর আমাদের বাসায় রাখা জার  ভর্তি চা পাতা একই গাছ থেকে আসে। আমাদের চা পাতা যেভাবে গাছ থেকে ছিঁড়ে নেয়া হয়, সেই একই গাছের পাতা থেকে গ্রিন টির জন্য পাতা ছেড়া হয়। তাই ‘গ্রিন টি’ দেখেই এলিয়েন দেখার মতো আঁতকে ওঠার কোন কারণ নেই

গ্রিন টি খেলেই কি আপনি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবেন?- না। এতে আছে কিছু এক্সট্রা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা নরমাল চা পাতায় থাকে না।

কেন?- কারণ গ্রিন টি প্রসেস করার সময় কেয়ারফুলি এই উপাদান গুলোকে রক্ষা করা হয়। আর ব্ল্যাক টি বা ‘আমাদের চা পাতা’ প্রসেস করার সময় এক্সট্রা কালার, সুবাস, ক্যাফেইন- এসব যাতে বেশি থাকে সেটা নিশ্চিত করা হয়। ফলে ব্ল্যাক টি তে ওই নির্দিষ্ট উপাদানগুলো কমে যায়।

গ্রিন টি ডেইলি ৩-৪ কাপ খেলে সর্বচ্চ ৭০ ক্যালরি কমতে পারে। কারণ গ্রিন টি মাত্র কিছু সময়ের জন্য আপনার দেহের ক্যালরি খরচ করার হার বাড়িয়ে দেয়। এই টাইম টুকু পার হয়ে গেলে আবার দেহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। ক্যালরি বার্ন আরও বেশি হয় কিসে জানেন? ব্ল্যাক কফিতে! কিন্তু রোজ ৪ কাপ কড়া ব্ল্যাক কফি খেলে ঘুম নষ্ট হয়ে, কন্সটিপেশন হয়ে এবং স্কিন নষ্ট হয়ে যে অবস্থা আপনার হবে সেটা কারই কাম্য নয়!! তাই একটু এক্সট্রা  ক্যালরি বার্ন করার জন্য হালকা গ্রিন টি-ই ডাক্তাররা দুধ চা, চিনি দেয়া রঙ চা বা কফি থেকে বেশি সাজেস্ট করেন।

তো? ডেইলি এই এক্সট্রা ৭০ ক্যালরি পুড়ে গেলেই কি আপনি মাসে ১০ কেজি কমিয়ে ফেলতে পারবেন? একটু তুলনা করি?

  • একটা ডিমে আছে ৮০ ক্যালরি
  • ডিম ভাজায় আছে প্রায় ১০০ ক্যালরি
  • একটা বড় সিঙ্গারায় আছে প্রায় ৩০০ ক্যালরি!!

ধরুন,  গ্রিন টি তো খাচ্ছিই!! ভেবে এক বিকেলে ৪ টা সিঙ্গারা খেয়ে ফেললেন? কি হবে তখন? কমবে ওজন?

উত্তরটা নিজেই দিন। অনেকে আবার শুকিয়ে যাওয়ার ভয়ে গ্রিন টি খান না। তাদের জন্যও একই কথা, গ্রিন টি আপনার মেটাবলিজম বাড়াতে একটু হেল্প করে। এটা গ্রিন টির আরও অনেকগুলো বিশাল বিশাল উপকারিতার একটি মাত্র। তাই এই একটা পয়েন্ট-কেই মেইন ধরে নিয়ে গ্রিন টি খাবই না অথবা রোজ খালি গ্রিন টি-ই খাব, এমন একটা জেদ ধরে বসে থাকবেন না। এটা একটা হেল্পফুল বেভারেজ, সেভাবেই এটাকে দেখুন।

২) গ্রিন টি মেয়েদের খাওয়া ঠিক না, আয়রন কমে যায়!

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউশন অফ হেলথ, আমেরিকার জার্নাল ‘মেডিসিন প্লাস’ কি বলে দেখি-

গ্রিন টি তে থাকা ট্যানিন আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের আয়রন এবং বি-১২ ভিটামিন শোষণ একটু কমিয়ে দেয়। কারণ এই ট্যানিন অনু আয়রনের সাথে বিক্রিয়া করে তাকে বেঁধে ফেলে।

ওকে বোঝা গেল। তার মানে কি? বাপ বাপ বলে গ্রিন টি সব ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে ফেসবুকে “গ্রিন টিতে মৃত্যু” নামক পোস্ট লিখে ঢোল পিটাতে হবে? নাকি ব্রেন একটু ইউজ করব? একটু দেখব ‘আয়রন কমে’ বলেই বাংলার সব গ্রিন টি নামক ছাই পাশ খেকো মেয়েদের কালকেই অ্যানিমিয়া হয়ে যাবে কি না?

প্রথমত, আয়রন আর বি-১২ শোষণ কমলে ছেলে মেয়ে, বাচ্চা বুড়ো সবারই কমবে । তাই মেয়ে মানেই আয়রন সমস্যায় ভোগে, মেয়ে মানেই গ্রিন টি নিষিদ্ধ এটা একেবারেই ভুল।

দ্বিতীয়ত, লেখাটা আবার পড়ুন, “আয়রন এবং বি-১২ শোষণ একটু কমিয়ে দেয়” মানে অলরেডি যে খাবার আপনার পাকস্থলীতে পরিপাক হচ্ছে সেখান থেকে দেহ একটু কম আয়রণ শোষণ করবে।

এই জার্নাল ‘কান নিয়েছে চিলে’-বলে পাড়া মাথায় তুলতে যারা ভালবাসেন তাদের জন্য আরও কি বলে দেখি-

বেলজিয়ামের এক ইউনিভার্সিটি রিসার্চে খুব ক্লিয়ারলি দেখা গেছে যে- গ্রিন টি দেহের এক্সিজটিং আয়রন লেভেলে তারতম্য আনে না।

 গ্রিন টি-এর সাথে এক স্লাইস লেবুর রস খেলেই এই আয়রন শোষণজনিত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। কারণ লেবুর ভিটামিন সি আয়রন শোষণ বাড়ায়। কাপের ভেতরে একটু লেবুর রস গ্রিন টি-এর স্বাদ বাড়াতেও সাহায্য করবে।

 এবং গ্রিন টি খাওয়ার সাথে অ্যানিমিয়া বা আয়রন ডিপ্লিশনের কোন সম্পর্কই আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। সুতরাং চিলের পেছনে দৌড়ানো বন্ধ রাখতে পারেন।

৩) প্রেগন্যান্ট অবস্থায় গ্রিন টি খাওয়া!

আগের দুই পয়েন্টে হাস্যকর লজিকে গ্রিন টি না খাওয়ার কারণগুলো দেখেছি। এবার দেখি আরেক লজিক যেখানে বলা হয়- যেহেতু প্রেগন্যান্ট সেহেতু কফি বা দুধ চার বদলে রঙ চা বা গ্রিন টি খাওয়া ভালো!

এখানেও একই প্রশ্ন, রঙ চা, দুধ চা, গ্রিন টি- এই সব চা পাতা কোথা থেকে এসেছে সেটা কি আপনি জানেন? ভুলে গেলে প্রথম পয়েন্ট আবারো একটু দেখে আসুন। কফিতে থাকে প্রচুর ক্যাফেইন, রঙ চা ডেইলি ২-৩ কাপ খেলেও অতিরিক্ত ক্যাফেইন ইনটেক হয়ে যায়। দুধ চায়ের বেলায়ও একই, সাথে আছে আনহেলদি গুঁড়ো দুধ, কনডেনসড মিল্ক আর অতিরিক্ত চিনি। এসবই প্রেগন্যান্ট নারী এবং অনাগত শিশুর জন্য খারাপ।

কিন্তু গ্রিন টি ডেইলি ৩ কাপ প্রেগন্যান্ট অবস্থায় খেলে কি হবে? প্রথমত কম হলেও একটা পরিমাণে ক্যাফেইন আপনার দেহে ঢুকবে। যেটা কাম্য নয়। প্লাস গ্রিন টি-এর ট্যানিন অনাগত শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। একারণে ডাক্তাররা গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি-ও এড়িয়ে চলতে বলেন।

তো, গর্ভাবস্থায় কি খেতে পারেন? চা বা একটু উষ্ম বেভারেজ খাওয়ার হ্যাবিট থাকলে অনায়াসে বেছে নিতে পারেন ক্যামোমাইল টি, এটা ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। শুধু আদা চা খেতে পারেন (চা পাতা ছাড়া) , এটা মর্নিং সিকনেস কমাতে সাহায্য করবে।

শেষ কথা এই যে, এক মাত্র গর্ভবতী নারী ব্যতীত  আর কেউই গ্রিন টি খেয়ে বড় কোন ঝুঁকিতে পড়ছেন না। আর যেসব খুব ছোট খাটো দোষ মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, তার ১০০ গুণ দিনে ৪-৫ কাপ পাম ওয়েল দিয়ে বানানো কনডেনসড মিল্ক আর ৩ চামচ চিনি দেয়া দুধ চা খেয়ে অলরেডি নিজের দেহে নিয়ে বসে আছি।

গ্রিন টি অন্যান্য বেভারেজের মতই একেবারেই নরমাল একটা ড্রিংক। প্রসেসিং এর কারণে আমাদের সাধারণ চা থেকে এটা একটু ভালো। তাই সাধারণ চা, এক্সট্রা চিনি- এসবের বদলে গ্রিন টি খেলে ভালো, খেতে না চাইলেও জোর করে খাওয়ার দরকার নেই। একে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আকাশে তোলা বা খেলেই অ্যানিমিয়া হবে, পড়ে বাচ্চা হবে না এসব গুজব রটিয়ে কাদায় ফেলা, দুটোই আপনার মূল্যবান সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

16 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort