আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তখন আমি বুঝতেই পারছি আপনার হাতে টেকনোলজির সুবিধা রয়েছে। যার কারণে আপনি এখন চাইলেই যে কোনো ভিডিও দেখতে পারেন, যে কোনো তথ্য সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন। জীবন আগের চেয়ে এখন অনেক সহজ। তারপরও কিন্তু আমরা সবাই কমবেশি স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাই। আর এই স্ট্রেস মানসিকভাবে আমাদের যতটা অসুস্থ করে দিচ্ছে, ঠিক ততটাই এফেক্ট ফেলছে আমাদের স্কিনের উপর। যেমন- স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে, সেই সাথে হচ্ছে ত্বকের নানা সমস্যা। স্ট্রেস কতভাবে স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে স্ট্রেস কমিয়ে আনা যায় তা নিয়েই আলোচনা করবো আজ।
স্ট্রেস কেন হয়?
বিভিন্নভাবে স্ট্রেস হতে পারে। যেমন- এনভায়রনমেন্টাল বা টেম্পারেচার চেঞ্জ (এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর)। ধরুন আপনি অনেকটা সময় ঠান্ডা রুমে ছিলেন। হুট করে যখন গরম পরিবেশে চলে আসলেন তখন শরীরে একটা স্ট্রেস হয়। আবার আর্থিক অবস্থা, লেখাপড়া, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদির কারণে সাইকোলজিক্যাল স্ট্রেস দেখা দেয়।
স্ট্রেস এমন একটি বিষয় যেটার সাথেও আমরা থাকতে পারি না, যেটা ছাড়াও আমাদের থাকা সম্ভব নয়। সময়ের সাথে সাথে আমরা বেশ আধুনিক হয়েছি। নাগরিক অনেক সুযোগ সুবিধাই আমরা এখন ভোগ করছি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, পানি সবই চাওয়ামাত্র পেয়ে যাচ্ছি। এত সুবিধা পাওয়ার পরও স্ট্রেস কিন্তু আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে না। যেহেতু স্ট্রেস সবার জীবনেই কমন একটি প্রবলেম তাই কেউ হয়তো এটি বেশি ফেইস করে, কেউ কম। সবার স্ট্রেস সহ্য করার ক্ষমতা একরকম নয়। এটা পুরোপুরি নির্ভর করে জেনেটিক্স, আমাদের বেড়ে ওঠা এবং জীবনে কত কঠিন সময় পার হয়ে আসা হয়েছে তার উপর। এর কারণে যেমন দিন দিন মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়, তেমনই ত্বকের উপরেও বেশ নেগেটিভ এফেক্ট পড়ে।
স্ট্রেসের কারণে একনে বা অন্যান্য স্কিন প্রবলেম কেন হয়?
স্ট্রেস নানাভাবে আমাদের ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে। হতে পারে একনে, স্কিন হয়ে ওঠে এক্সট্রা সেনসিটিভ, দেখা দিতে পারে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস। স্ট্রেসের কারণে স্কিনে কী কী এফেক্ট পড়ে সেগুলো নিয়ে চলুন আরও কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক-
১) একনে হওয়ার চান্স বেড়ে যায়
আপনি যখন এনভায়রনমেন্টাল স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যান, তখন আপনার বডি কর্টিসল নামে স্ট্রেস হরমোন ক্রিয়েট করে। শরীরের জন্য এই হরমোনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বেশ কয়েকটি কাজ করে। যেমন- ব্লাডে সুগার বাড়ায়, ব্রেনের মাধ্যমে চিনির ব্যবহার বাড়ায়, ব্রেনকে আরও অ্যাকটিভ করে এবং টিস্যু রিপেয়ারের সংখ্যা বাড়ায়। তবে কর্টিসলের পরিমাণ বেড়ে গেলে অন্য সমস্যা হতে পারে। যেমন- এই হরমোনের বৃদ্ধির কারণে স্কিনে আরও সিবাম প্রোডিউস হয়। আর বেশি সিবাম প্রোডিউস হওয়া মানেই পোরস ক্লগ হয়ে যাওয়া এবং একনে ব্রেকআউট হওয়া।
মজার ব্যাপার কি জানেন? একদিকে স্ট্রেসের কারণে একনে বেড়ে যাচ্ছে, আবার একনে কেন হচ্ছে তা নিয়ে আরও স্ট্রেস হচ্ছে। কি অদ্ভুত এক সাইকেল তাই না? যাদের ত্বক এমনিতেই অয়েলি তাদের সিবাম বেশি প্রোডিউস হওয়ার কারণে একনে এমনিতেই বেশি দেখা দেয়। কিন্তু স্ট্রেসের কারণে যদি সব ধরনের ত্বকেই ব্রণ দেখা দেয় তাহলে মেনে নেয়া কিন্তু কিছুটা কঠিন, তাই না?
২) স্কিন এক্সট্রা সেনসিটিভ হয়ে ওঠে
ইমিউনিটি সিস্টেমের উপর স্ট্রেস বেশ প্রভাব ফেলে। সময়ের সাথে সাথে স্ট্রেস স্কিনের ইমিউনিটি কমাতে থাকে। যার কারণে স্কিনে আর্টিকারিয়া নামে এক ধরনের স্কিন প্রবলেম দেখা দেয়। এটি এমন একটি স্কিন ডিজঅর্ডার, যেটির কারণে স্কিন বেশ অ্যালার্জিক হয়ে ওঠে। সেই সাথে স্কিনে দেখা দেয় বড় বড় বাম্পস।
৩) প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দেয়
আমরা জানি যে, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এজিং প্রসেস ডিলে করে দেয়। অপরদিকে প্রো-অক্সিডেন্ট এজিং প্রসেস এর স্পীড বাড়িয়ে দেয়। আমরা যখন ক্রনিক স্ট্রেসে ভুগি তখন বডির পাওয়ার হাউজ নামে পরিচিত মাইটোকন্ড্রিয়া বেশি পরিমাণে Reactive Oxygen Species (ROS) প্রোডিউস করতে থাকে। এগুলো আসলে প্রো-অক্সিডেন্ট – যা সেলের টিস্যু ড্যামেজ করে দেয়, এমনকি প্রভাব ফেলে ইন্টারনাল অর্গানের উপরও।
আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ একটি সেল হচ্ছে ম্যাক্রোফেজ। হেলদি সেলগুলো যখন ড্যামেজ হয়ে যায় তখন এই সেল সেগুলোকে কনজিউম করে ফেলে। প্রতিনিয়ত হেলদি সেল ড্যামেজ হওয়ার কারণে অল্প সময়ে স্কিনে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা যায়। তাই ক্রনিক স্ট্রেস কমানো জরুরি।
৪) সোরিয়াসিসের সমস্যা দেখা দেয়
স্ট্রেসের কারণে আমাদের ইমিউন সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করে না। তখন ইমিউন সিস্টেম হেলদি স্কিন সেলকে আক্রমণ করে এবং দেখা দেয় সোরিয়াসিস। এই সমস্যা যত বাড়তে থাকে তত Scaly Lesions নামক স্কিন ডিজিজের আশঙ্কা বাড়ে। স্কিন ডিজঅর্ডার, ইনফেকশন, অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে গেলে এই ডিজিজটি দেখা দেয়। তখন ডার্মাটোলজিস্টের শরণাপন্ন হতে হয়। এই প্রবলেমকে আরও বেশি ট্রিগার্ড করে স্ট্রেস। অর্থাৎ স্ট্রেস লেভেল যত বাড়ে তত সোরিয়াসিস বাড়তে থাকে, তত Scaly Lesions বেশি দেখা দেয়। তাই যদি আপনাদের কারও স্ট্রেসের কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে সময়ের সাথে সাথে এটি আরও বাড়বে। এজন্য কী করতে হবে বলুন তো? অবশ্যই স্ট্রেস কমাতে হবে!
৫) অ্যাটোপিক ডার্মাটিটিস বা একজিমা হয়
আগেই বলেছি, স্ট্রেসের কারণে প্রো-অক্সিডেন্ট তৈরি হয় এবং একইসাথে ইমিউন সিস্টেম ডাউন হতে থাকে। আর এই সমস্যার কারণেই দেখা দেয় একজিমা বা অ্যাটোপিক ডার্মাটিটিস। সেই সাথে দেখা দেয় কনস্ট্যান্ট স্ক্র্যাচিং। তাই আপনি যদি এখনই স্ট্রেস না কমান এবং স্কিনের কেয়ার করা শুরু না করেন তাহলে স্কিন ইনফেকশনও দেখা দিতে পারে।
স্ট্রেসের এফেক্ট কমানো যায় কীভাবে?
সবার জীবনেই স্ট্রেস থাকে। চাইলেই একে সম্পূর্ণভাবে অ্যাভয়েড করা যায় না। তবে নিজের ভালোর জন্যই একে হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করতে হবে। আমি কয়েকটি উপায়ের কথা বলে দিচ্ছি-
১) স্কিনকে অবহেলা করবেন না। আপনি যতই ক্লান্ত বা স্ট্রেসড থাকুন না কেন স্কিনের যত্ন নিন।
২) নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এটি ত্বকের জন্য তো বটেই, শরীরের জন্যও খুব উপকারী।
৩) দিনে অন্তত ১০ মিনিট হলেও নিজের জন্য সময় বের করুন। বই পড়ুন, মুভি দেখুন, প্রতিদিনের চেয়ে একটু বেশি সময় নিয়ে শাওয়ার নিন।
৪) যখন কোনো কিছুতেই সমাধান পাওয়া যায় না তখন কিছুটা সময় হাঁটুন।
৫) স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক যেমন- ব্রিথিং এক্সারসাইজ, ইয়োগা, মেডিটেশন করুন অথবা চোখে আরাম লাগে এমন দৃশ্য দেখুন। প্রকৃতির সাথে সময় কাটান।
৬) পর্যাপ্ত ঘুমান। রাতে অন্তত ৭/৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
৭) যদি লিমিট ও বাউন্ডারির বাইরে গিয়ে কিছু করতে হয় তবে অবশ্যই না বলুন। এতে স্ট্রেস অনেকটাই কমবে।
৮) স্ট্রেস রিলিফের জন্য কাছের মানুষের সাথে কথা বলুন। সম্ভব হলে প্রফেশনাল থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।
স্ট্রেসের কারণে শুধু মানসিক স্বাস্থ্যই নয়, খারাপ হতে থাকে ত্বকও। তাই বাড়তি দুশ্চিন্তা, হতাশা থেকে নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। স্ট্রেসের কারণে একনে, এজিং সাইনস বা অন্যান্য প্রবলেম দেখা দিলে কার ভালো লাগে বলুন? তাই নিজের খেয়াল নিজেই রাখুন। সেই সাথে ব্যবহার করুন অথেনটিক বিউটি প্রোডাক্টস। অথেনটিক স্কিনকেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক