আজকাল প্রায় দেখা যায়, রিপোর্টে গর্ভস্থ ভ্রুণ এর ওজন (fetal weight/growth) সময়ের তুলনায় অনেক কম। এর কারণ আমাদের প্রেগনেন্সি পুষ্টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। খাবার খেলেই হবে না, তিন বেলা ভাত খাওয়া প্রেগনেন্ট মায়েদের জন্য কোনো কাজে আসবে না, যদি না তার খাবারটি সুষম হয়। আজ এই বিষয়ে আমরা পুষ্টিবিদের পরামর্শ জেনে নিবো।
গর্ভাবস্থায় শিশুর সুস্থ বৃদ্ধি ও বিকাশে পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা প্ল্যান করছেন কনসিভ করার, অবশ্যই কিছু সময় আগে থেকে ডাক্তারের পরামর্শ মতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন বা অন্যান্য ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া গর্ভাবস্থার শুরু থেকে অবশ্যই সঠিক আর পুষ্টিকর খাবারে আপনাকে অভ্যস্ত হতে হবে এক্সপার্ট/ পুষ্টিবিদ পরামর্শ অনুযায়ী। আজ আমাদের আলোচনার বিষয় গর্ভস্থ ভ্রুণ এর সঠিক বৃদ্ধিতে পুষ্টিকর খাবারের ভূমিকা নিয়ে।
গর্ভস্থ ভ্রূণ (fetal weight) এর সঠিক বৃদ্ধিতে খাবার
প্রতিটি নারীর জীবনে প্রেগনেন্সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। কাজেই শুরু থেকে যত্নবান হতে হবে। গর্ভস্থ ভ্রূণ (fetal weight) এর ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে যে সব খাবার-
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার- একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন। উৎস : কচুশাক, ডিম, কলা, খেজুর, কিশমিশ, কলিজা, পালংশাক, মুরগীর মাংস, ছোট মাছ।
পটাশিয়াম, জিংক সমৃদ্ধ খাবার- কিশমিশ, মিষ্টি আলু, ব্রকলি, মসুর ডাল, টক দই, কমলার জুস ও পালংশাক
ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণে খাবার- দুধ, চীজ, ডেইরি ফুড
তরল খাবার
পরিমাণমতো পানি ( ২.৫ থেকে ৩ লিটার), তরল খাবার পান করুন। নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে এই সময়। এজন্য সিজনাল ফল বা সবজির জুস, কমলার জুস, ডাবের পানি, লেবু পানি পান করা আবশ্যক।
অন্যান্য খাবার
বিভিন্ন ধরনের বাদাম (কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, কাজু বাদাম), সীড জাতীয় খাবার ( শিমের বিচি, কুমড়ার বিচি), কিশমিশ, দই, পিনাট বাটার, চিড়া, ওটস, দুধ ও দুধের তৈরি খাবার, সামুদ্রিক মাছ, ছোট মাছ, ডিম, বিভিন্ন দেশি মাছ, মিষ্টি আলু, ডাল, সয়া আইটেম ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখলে ভ্রূণের ওজন বাড়বে। জিংক, ফলিক অ্যাসিড, বিভিন্ন ভিটামিন, নায়াসিন যুক্ত খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় আছে কিনা সেটা দেখে নিন। সব খাবার সবার জন্য নয়। রোগের ধরন, প্রেগনেন্সিতে শারীরিক অবস্থা বুঝে খাদ্যতালিকায় খাবার যোগ করতে হবে।
প্রথম ট্রাইমেস্টারে যে খাবারগুলো খেতে মানা করা হয়
- চীজ বা পনির
- প্রক্রিয়াজাত খাবার
- বিভিন্ন প্রকার সি ফুড
- কাঁচা পেঁপে, আনারস, সজনে ডাটা
- কাঁচা ডিম, মেয়োনেজ, আধা সেদ্ধ খাবার
- জাংক ফুড
- অতিরিক্ত ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, অধিক মিষ্টিজাতীয় খাবার
আশা করি, আজকের ফিচারটি হেল্পফুল ছিলো। গর্ভস্থ ভ্রূণ এর সঠিক বৃদ্ধিতে হবু মায়ের খাদ্যতালিকা কেমন হবে এই বিষয়ে সরাসরি জানতে এবং চার্ট নিতে পুষ্টিবিদের কাছে যেতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই, সবাই ভালো থাকবেন।
লিখেছেন- সাদিয়া ইসরাত স্মৃতি, পুষ্টিবিদ, সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল
ছবি- সাটারস্টক