বর্তমানে অ্যালার্জির সমস্যা বেশিরভাগ মানুষের নিত্যদিনের ভোগান্তির একটি অন্যতম কারণ। ধুলাবালিতে অ্যালার্জি, খাবারে অ্যালার্জি এমনকি কোনো কোনো ঔষধেও অ্যালার্জি হয়, যার কারণে জীবন সংশয়ও দেখা দিতে পারে। আছে আরও কত রকমের অ্যালার্জি! বর্তমানে ঘর থেকে বের হলেই ধুলায় ধূসরিত রাস্তায় চলতে হয়। ধুলা খেতে খেতেই ঘর থেকে বের হয় আবার ঘরে ঢোকে মানুষ! তাই অন্য সব অ্যালার্জির তুলনায় ধুলাবালির অ্যালার্জিতেই বেশি ভুগতে হচ্ছে। আজকে আমরা জানবো ডাস্ট অ্যালার্জি নিয়ে।
লক্ষণসমূহ কী কী?
- অনবরত হাঁচি হতে থাকে
- নাক থেকে পানি ঝরতে থাকে
- চোখ চুলকায়, লাল হয়ে যায়
- চোখ থেকে ক্রমাগত পানি ঝরতে থাকে
- নাক বন্ধ হয়ে থাকে
- নাক, মুখ, গলা চুলকাতে পারে
- মুখের ভেতর তালু এবং গলার ভেতরেও চুলকাতে পারে
- খুশখুশে কাশি হয়
- চোখের নিচে ফুলে যেতে পারে
- শিশুদের ক্ষেত্রে বারবার নাক উপরের দিকে ঘষার প্রবণতা দেখা যায়
যদি অ্যালার্জির সাথে সাথে কারো অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগও থেকে থাকে, তবে সেক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলোর সাথে আরও কিছু প্রবলেম দেখা দিতে পারে। যেমন-
- শ্বাসকষ্ট হতে পারে
- বুকে চাপ ধরা ভাব বা ব্যথা থাকতে পারে
- শ্বাস ফেলার সময় বুক থেকে বাঁশির মত বা কখনও কখনও ঘড়ঘড় শব্দ হতে থাকে
- খুব ঘন ঘন শ্বাস নিতে হয়
- কাশি থাকলে রাতে ঘুমাতেও কষ্ট হয়ে যায়
ডাস্ট অ্যালার্জি যে সমস্ত কারণে হয়ে থাকে
১) পরিবারের কারও আগে থেকে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বাকি সদস্যদেরও হতে পারে, তবে মনে রাখতে হবে এটি ছোঁয়াচে নয়।
২) অল্প বয়স্ক শিশু, হাঁপানি রোগী এবং গর্ভবতী মহিলাদের এ ধরনের অ্যালার্জি হতে পারে।
৩) ডাস্ট মাইটস বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধুলার কণা বা পোকা বাতাসে ভেসে চলাচলের সময় নাকে ঢুকে জ্বালা সৃষ্টি করে। যার ফলে চুলকানি, হাঁচি, কাশি হতে পারে।
৪) ঘাস বা ফুলের রেণু নাকে প্রবেশ করলে তা থেকেও অ্যালার্জিক রিয়েকশন হয়।
৫) আর্দ্র পরিবেশে ডাস্ট মাইটস বেশি থাকে। তাই বাসা বাড়ির পরিবেশ ভ্যাপসা হয়ে থাকলে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।
ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে প্রতিকারের উপায়
- ঘর থেকে বের হলে সবসময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে
- বাসাবাড়ির ফার্নিচারের ধুলা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে
- প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পর এবং ঘুমানোর আগে বিছানা ভালোভাবে ঝেড়ে নিতে হবে
- ঘর ঝাড় দেবার সময় নাক মুখ যতটা সম্ভব ভালোভাবে ঢেকে নিতে হবে
- প্রতিদিনের ব্যবহার্য কাপড়-চোপড়, চাদর, বালিশ ইত্যাদি মাঝে মাঝে কয়েক ঘন্টা কড়া রোদে দিন
- সপ্তাহে অন্তত একবার বিছানার চাদর, বালিশের কভার পরিবর্তন করতে পারলে ভালো
- শোবার ঘরে বইয়ের তাক, ম্যাগাজিন, খবরের কাগজ না রাখা কেননা এগুলোর ওপর সহজেই ধুলা জমতে পারে
- ডাস্ট অ্যালার্জি থাকলে বাসায় কার্পেট না রাখাই ভালো
- বাসায় লোমশ বা পালকযুক্ত প্রাণী না পোষা উত্তম, এসব প্রাণীর শরীরে অ্যালার্জি উদ্রেক করে এমন উপাদান থাকে
- ঘরে যাতে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে
এর চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন
১) অ্যালার্জির জন্য দায়ী ফ্যাক্টর কোনটি তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন। যেমন স্কিন অ্যালার্জি টেস্ট, ব্লাড টেস্ট ইত্যাদি।
২) চুলকানি, অনবরত হাঁচি, চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা চোখ থেকে থেকে পানি ঝড়তে থাকলে অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ খেলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। রিল্যাক্সড থাকুন, চোখ বন্ধ করে একটু রেস্ট নিন।
৩) স্টেরয়েড জাতীয় নাকের স্প্রে ব্যবহার করে নাকের ভেতরের ফোলাভাব কমানো যায়।
৪) নাক বন্ধ হয়ে থাকলে স্যালাইন সল্যুশন দিয়ে নাক পরিষ্কার করা যায়।
৫) যেকোনো অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অ্যালার্জি জাতীয় খাবার যেমন বিফ, ইলিশ মাছ, চিংড়ি, পুইশাক, বেগুন ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো। এতে অ্যালার্জির সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
৬) হঠাৎ ত্বকের কোথাও লাল হয়ে গেলে, চুলকানি হলে ঠান্ডা পানির সেঁক দিলে বা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে আরাম পাওয়া যায়।
অ্যালার্জির সমস্যা যে কতটা কষ্টদায়ক এবং বিরক্তিকর, এটা শুধুমাত্র ভুক্তভোগীরাই ভালো বলতে পারবেন। অ্যালার্জির চিকিৎসা করেও এ সমস্যা থেকে একেবারে পরিত্রাণের উপায় নেই। তবে নিয়ম মেনে চললে এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো ঔষধ সেবন করলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্ভব। তাই ডাস্ট অ্যালার্জি এর সমস্যা থেকে বাঁচতে বাইরে মাস্ক ব্যবহার করুন, হাইজিন মেনটেইন করুন ও সুস্থ থাকুন।
ছবি- সাটারস্টক