কন্ডিশনার ব্যবহারের পরও কোন ভুলগুলোর কারণে চুলের ক্ষতি হচ্ছে?

কন্ডিশনার ব্যবহারের পরও কোন ভুলগুলোর কারণে চুলের ক্ষতি হচ্ছে?

conditioner apply

‘কন্ডিশনার’ বর্তমানে পরিচিত একটি টার্ম। চুলের পরিচর্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে হেয়ার কন্ডিশনার। একে চুলের বন্ধুও বলা চলে। কন্ডিশনার চুলকে সিল্কি, সফট, শাইনি করে তোলে, সহজে জট লাগতে বাঁধা দেয় এবং উল্লেখযোগ্য যে কাজটি করে তা হচ্ছে ওয়াটার ড্যামেজ থেকে চুলকে রক্ষা করে। এত উপকার করা সত্ত্বেও কন্ডিশনার ব্যবহারের পরও কিছু ভুল হয়ে যায়, যার কারণে চুল ড্যামেজ হতে থাকে। আজ জানাবো এই ভুলগুলো নিয়েই।

কেন কন্ডিশনার ব্যবহার করা হয়?

কন্ডিশনার ব্যবহারের পরও চুলের ক্ষতি কেন হচ্ছে সেটা জানার আগে কেন এটি ব্যবহার করা হয় তা সম্পর্কে জানা জরুরি। শুরুতেই বলেছি কন্ডিশনার ওয়াটার ড্যামেজ থেকে চুলকে সুরক্ষা দেয়। এই টার্মটি ইদানিং পরিচিতি পেলেও অনেকেই আমরা জানি না এই ড্যামেজটি মূলত কী। পানিকে বলা চলে চুলের শত্রু, কিন্তু শত্রু হলেও মাথার ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেও আবার সেই পানিরই প্রয়োজন। এখন পানি চুলে লাগলে ওয়াটার ড্যামেজ তো কিছু হবেই, তবে চুলে যেন পানি তার ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে না পারে সেই চেষ্টাই করে কন্ডিশনার। চুল ভেজানোর পর চুলের কিউটিকল পানি শোষণ করে কিছুটা ফুলে ওঠে এবং এরপর যতই বাতাসের সংস্পর্শে আসে ততই তা ডিহাইড্রেট হয়ে পড়ে। কন্ডিশনার চুলের উপর একটি কোটিং এর সৃষ্টি করে চুলকে হাইড্রেশন দেয়, আর এজন্যই আমরা হালকা ড্যাম্প চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করি।

কন্ডিশনার ব্যবহারের পরও চুলের ক্ষতি হচ্ছে না তো?

কন্ডিশনার ব্যবহারের পরও চুলের ক্ষতি কেন হয়?

শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহারের অনেক উপকারী দিক আছে কিন্তু তবুও কেন কন্ডিশনার দিলেও অনেকের চুল রাফ হয়, চুল পড়া বেড়ে যায় অথবা খুশকি, বিল্ড আপ হয়? এটা হয় কিছু কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই এবং বাছাই এর কিছু ভুল থেকে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেই ভুলগুলো কী কী।

১) চুলের ধরন বুঝে কন্ডিশনার ব্যবহার না করা

অনেকেই মনে করেন কন্ডিশনার তো একটা হলেই হলো। তাই তারা চুলের ধরন অনুযায়ী কন্ডিশনার বাছাই করেন না। ফলে যাদের চুল ড্রাই তারা অয়েলি হেয়ারের জন্য ফর্মুলেটেড কন্ডিশনার কিনে ফেলেন। অয়েলি হেয়ারের জন্য যে কন্ডিশনার ব্যবহার করা হয় সেগুলোতে হাইড্রেটিং ইনগ্রেডিয়েন্ট বেশি থাকে, কিন্তু ইমোলিয়েন্ট অনুপস্থিত থাকে- যা ড্রাই হেয়ারের জন্য জরুরি। তাহলে কিন্তু আপনি হেয়ার টাইপ অনুযায়ী সঠিক কন্ডিশনার চুজ করলেন না। সঠিক কন্ডিশনার ব্যবহার না করায় ড্রাই হেয়ার হয়ে ওঠে আরও ড্রাই এবং অয়েলি চুল হয় আরও অয়েলি। তাই শুষ্ক চুলের জন্য ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্টে বিভিন্ন ধরনের তেল বা বিভিন্ন বীজের তেল এবং অ্যালোভেরা, গ্লিসারিন ইত্যাদি আছে কিনা দেখতে হবে। অয়েলি হেয়ারের জন্য দেখতে হবে গ্লিসারিন, অ্যালোভেরা সহ আরও বিভিন্ন ধরনের হাইড্রেটিং উপাদান, লাইটওয়েট অয়েল আছে কি না। এভাবে বাছাই করলে চুলের কন্ডিশনার ব্যবহারে সঠিক ফল পাওয়া যাবে।

২) কন্ডিশনারের প্রকারভেদ না জানা

কন্ডিশনারের কিছু প্রকারভেদ আছে যেগুলা আমরা অনেক সময়ই বুঝতে না পেরে ভুলভাবে ব্যবহার করি, যার ফলে চুল নিয়ে আরও সমস্যা বেড়ে যায়৷ চলুন কন্ডিশনারের ধরন সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-

রেগুলার কন্ডিশনারঃ এটি চুলে ৩-৫ মিনিট এর মতো লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে হয় (প্যাকেজিং এর বর্ণনা অনুযায়ী) এবং এগুলো সচরাচর সবাই ব্যবহার করে থাকেন।

ডিপ কন্ডিশনারঃ এটি চুলের স্পেসিফিক কিছু সমস্যা নিয়ে কাজ করে, যেমন- অতিরিক্ত শুষ্ক বা শুষ্ক, আগা ফাটার সমস্যা, শাইনিং বাড়ানো, স্মুথ করা, সিল্কি করা ইত্যাদি। ডিপ কন্ডিশনার কখনোই প্রতিদিন বা প্রায়শই ব্যবহার এর জন্য নয়। সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন ব্যবহার করাই শ্রেয়। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডিপ কন্ডিশনার ১০ মিনিট বা তার থেকে বেশি সময় চুলে রাখতে হয়, এটা চুলের একটি এক্সট্রা কেয়ার। সুতরাং প্রতিদিন কিন্তু ডিপ কন্ডিশনার ব্যবহার উপযোগী নয়।

চুলের ধরন অনুযায়ী কন্ডিশনার ব্যবহার

লিভ ইন কন্ডিশনারঃ এটি অনেক সময় হেয়ার ক্রিম, নো ওয়াশ কন্ডিশনার ইত্যাদি বিভিন্ন নামে প্যাকেজিং হয়। এই লিভ ইন কন্ডিশনার কিন্তু রেগুলার বা ডিপ কন্ডিশনার এর মতো লাগিয়ে ধুয়ে ফেলার মতো নয়। কারণ এটি ৮০% ভেজা ও শুকনো থাকা অবস্থায় লাগাতে হয়, যা আর ধুয়ে ফেলতে হয় না। আর তার থেকেও বড় ব্যাপার হচ্ছে লিভ ইন কন্ডিশনার এ ইমোলিয়েন্ট, হাইড্রেটিং ও ময়েশ্চারাইজিং ইনগ্রেডিয়েন্ট, অয়েল ইত্যাদি বেশ ঘনীভূত অবস্থায় থাকে এবং অ্যাকটিভ উপাদান থাকে। আর তাই লিভ ইন কন্ডিশনার হালকা ড্যাম্প চুলে অল্প পরিমাণ হাতের তালুতে নিয়ে চুলের লেন্থ এ লাগাতে হয়।

কখনো অন্য ওয়াশ অফ কন্ডিশনার এর রিপ্লেসে শুধু লিভ ইন কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এটির কাজ হলো চুলের উপর থেকে একটি সফট সিল্কি ভাব এবং শুকিয়ে যাওয়ার পর চুলকে এক্সট্রা কেয়ারে রাখা। ওয়াশ অফ কন্ডিশনার ব্যবহারের পর কেউ চাইলে চুলের আরেকটু যত্নে লিভ ইন রাখেন। কারণ এগুলো ওয়াশ অফ কন্ডিশনারের সকল ভালো গুণগুলোকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ধরে রাখে।

৩) সঠিকভাবে কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই না করা

ভেজা চুলে অথবা শ্যাম্পু করা চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হয়। চুল থেকে অবশ্যই এক্সট্রা পানি ফেলে তারপর লাগাতে হবে, পারলে পাতলা সুতি বা গেঞ্জি কাপড় দিয়ে চেপে চেপে পানি ফেলে এরপর লাগাতে হবে। এর কারণ হলো যেহেতু কন্ডিশনার খুব স্লিপারি তাই সহজেই তা চুলে লেগে থাকা এক্সট্রা পানির সাথে পিছলে চুল থেকে ঝরে যায়। অনেকেই সম্পূর্ণ ভেজা চুলে এক্সট্রা পানি না ফেলেই কন্ডিশনার ব্যবহার করেন, এতে তারা কন্ডিশনারের বেনিফিটগুলো পান না এবং বুঝতে পারেন না ভুলটা হচ্ছে কোথায়।

কন্ডিশনার ব্যবহারের পরও চুলের ক্ষতি কেন হয়?

আবার অনেকেই আছেন যারা কন্ডিশনার স্ক্যাল্পে ব্যবহার করেন, এর ফলেও স্ক্যাল্পের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কারণ স্ক্যাল্প নিজেই ন্যাচারাল অয়েল প্রোডিউস করে, যা স্ক্যাল্পের উপরের চুলকে কন্ডিশনারের মতোই রক্ষা করে। নিচের চুলগুলোতে দেখা যায় যে, খুবই অয়েলি স্ক্যাল্প না হলে ন্যাচারাল অয়েল পৌঁছায় না, তাই কন্ডিশনার ব্যবহার হয়। কিন্তু স্ক্যাল্পে কন্ডিশনার ব্যবহার করলে তাতে থাকা সিলিকন এবং বিভিন্ন ভারী ইমোলিয়েন্ট একটি কোটিং করে এবং বিল্ড আপ তৈরি করে, যার ফলে বেড়ে যায় চুল পড়ার হার৷ এজন্য অনেকেরই কন্ডিশনার ব্যবহার এর পর চুল পড়ে, অথবা বিল্ড আপ হয় অথবা খুশকি। তাই কন্ডিশনার স্ক্যাল্পে ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। প্যাকেজিং এ যেভাবে ব্যবহারের ইন্সট্রাকশন দেওয়া থাকে, সেভাবেই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। তবেই চুলে ভালো বেনিফিট পাওয়া যাবে।

ওয়াটার ড্যামেজ থেকে কীভাবে সুরক্ষা পাওয়া যাবে?

এতক্ষণ তো কন্ডিশনার ব্যবহারের পরও যে ভুলগুলোর কারণে চুলের ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো সম্পর্কে বললাম। এখন আসি কীভাবে ওয়াটার ড্যামেজ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে। ওয়াটার ড্যামেজ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চুল শ্যাম্পু না করে শুধু পানি দিয়ে ভেজালেও অন্তত রেগুলার কন্ডিশনার অথবা চুল তেমন শুষ্ক না হলে ড্যাম্প চুলে লিভ অন কন্ডিশনার ব্যবহার করতেই হবে। এতে চুল ভালো থাকবে।

 

এই ভুলগুলো সম্পর্কে সচেতন হলে এবং কন্ডিশনার ব্যবহারে গুরুত্ব দিলেই হেয়ার ওয়াটার ড্যামেজ এবং আরও বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে কন্ডিশনারটিও কিন্তু ভালো উপাদান ও ভালো ব্র্যান্ডের অথেনটিক হতে হবে, নন ব্র্যান্ডের ফেইক কন্ডিশনার ব্যবহার হেয়ার ও স্ক্যাল্প উভয়ের জন্যেই মারাত্নক ক্ষতিকর। অথেনটিক হেয়ার কেয়ার, স্কিন কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।

ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক

5 I like it
1 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort