জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া | ইউটেরাইন প্রলাপ্স এর ধরণ, কারণ ও চিকিৎসা কী?

জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া | ইউটেরাইন প্রলাপ্স এর ধরণ, কারণ ও চিকিৎসা কী?

জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া - shajgoj.com

মেয়েদের জীবনকালের কোন না কোন সময়, নিজের বা কাছের কারো জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা।  একটু সচেতন থাকলেই নিজের, কাছের বান্ধবীদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে ফেলতে পারবেন। জরায়ু পেলভিসে আটকে থাকে (পেটের নিচের দিকের অংশে) কিছু মাংস, লিগামেন্ট এবং অন্যান্য কিছু সাপোর্ট দিয়ে। জন্মগত ও জন্মের পরের কিছু কারণে এই মাংস ঝুলে যেতে পারে। বয়সের সাথে স্বাভাবিক ভাবেই ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি হতে থাকে। তখন অনেক মহিলার জরায়ু মুখ যোনির দিকে নেমে আসে। যার ফলে প্রলাপস হয়। এই আর্টিকেলে জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া বা ইউটেরাইন প্রলাপ্সের ধরণ, কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে আপনাদের জানাবো।

ইউটেরাইন প্রলাপ্স বা জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া

ইউটেরাইন প্রলাপ্স এর ক্ষেত্রে ইউটেরাস কোন অবস্থানে আছে তার উপর নির্ভর করে তিন ভাগে ভাগ করা হয় একে। চলুন এ নিয়ে জেনে নেই আরো বিস্তারিত।

Sale • Bath Time, Acne Treatment, Dull Skin Treatment

    প্রলাপসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় –

    ১. প্রথম ডিগ্রিঃ জরায়ু মুখ তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে কিছুটা নিচে নেমে আসে। কিন্তু যোনি ছিদ্রের বাইরে অবস্থান করে না।

    ২. দ্বিতীয় ডিগ্রিঃ জরায়ু মুখ যোনি ছিদ্রের বাইরে বের হয়ে আসে। কিন্তু জরায়ুর শরীরের বেশির ভাগ অংশই  ভিতরে থেকে যায়। সবসময় বেরও হয়ে আসে না। কাশি দিলে, প্রস্রাব করতে গেলে বের হয় আসে। এমন কি বের হলেও হাত দিয়ে ঢুকিয়ে ফেলা যায়।

    ৩. তৃতীয় ডিগ্রিঃ জরায়ু মুখ তার শরীরসহ সম্পূর্ণ রূপে বাইরে বের হয়ে আসে এবং আর ভিতরে ঢুকানো যায় না ফলে প্রস্রাব ও পায়খানা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এই স্টেজে গেলে অপারেশন করা অতিশয় জরুরী হয়ে দাঁড়ায়।

    প্রলাপস সাধারণত একা হয় না, আরও কিছু কন্ডিশন এক সাথে হয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তোলে । যেমন-

    Cystocele – মুত্রথলির একটি অংশ যোনির সামনের দিকের অংশে চাপ দিয়ে ফুলিয়ে তোলে। কাজেই প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাব আটকে থাকা সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

    জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ায় প্রলাপসকে জটিল করে তোলে cystocele - shajgoj.com

    Enterocele – খাদ্যনালীর একটি অংশ ( ক্ষুদ্রান্ত্রের ছোট অংশ ) যোনির সামনের দিকের অংশে চাপ দিয়ে ফুলিয়ে তোলে । দাঁড়িয়ে থাকলে টান লাগার মত অনুভূতি এবং পিঠে ব্যথা হয়। শুয়ে থাকলে ব্যথা কমে আসে।

    জরায়ুকে জটিল করে তোলে Enterocele - shajgoj.com

    Rectocele – রেক্টাম যোনির দেয়ালের পিছনের অংশে চাপ দিতে পারে। ফলে পায়খানা করতে সমস্যা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে যোনির ভিতরে আঙ্গুল দিয়ে রেক্টাম ঠেলে সরিয়ে পায়খানা করতে হয়।

    জরায়ুকে জটিল করে তোলে Rectocele - shajgoj.com

    জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া বা ইউটেরাইন প্রলাপ্সের কারণসমূহ

    ১. জন্মগতঃ যেসব মাংস পেশি জরায়ুকে সঠিক স্থানে ধরে রাখে , তাদের কারো জন্মগত দুর্বলতা থেকে থাকে।

    ২. জন্মের পরঃ জন্মের পরের বলতে এক্ষেত্রে আমরা সন্তান ধারণের সময়টাকেই বুঝি । সন্তান জন্মধারণের পরে বেশ কিছু কারণে প্রলাপস হতে পারে। জরায়ুমুখ সম্পূর্ণ রকমে খোলার আগেই যদি চাপ দেয়া হয়, অতিরিক্ত টানাটানির কারণে হতে পারে। ডেলিভারি বিলম্বিত হলে, প্লাসেন্টা বের করার জন্যে জরায়ুতে নিচের দিকে অতিরিক্ত চাপ দিলে। অনেক বেশি সন্তান ধারণের ফলে হয়। মা খালাদের মধ্যে যাদের চার-পাঁচটা নরমাল ডেলিভারি হয়েছে খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের প্রায় সবারই একটু হলেও এই সমস্যাটা আছেই। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাংস পেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে আসতে থাকে। হরমোনাল সাপোর্টের অভাবও একটি বড় কারণ।

    দীর্ঘদিন ধরে পেটে  চাপ পড়ার মত রোগ যেমন – কাশি , কোষ্ঠকাঠিন্য , পেটে পানি জমে থাকলেও এমন হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন থাকলে পেটের উপর চাপ পড়ে এবং স্বাভাবিক ভাবে পেটের মাংস পেশির উপর ও চাপ পড়ে। ভারী জিনিস ওঠা নামা করালে পেটে চাপ পড়তে পারে। পেলভিসে বড় কোন অপারেশন হলেও সাপোর্ট কমে গিয়ে প্রলাপস হয়ে থাকে ।

    ইউটেরাইন প্রলাপ্সের লক্ষণসমূহ

    ১. মনে হবে যেন পেটের ভিতরটা ভরে আছে বা চাপ অনুভব করবেন ঠিক যেন ছোট্ট একটি বলের উপর বসে আছেন,

    ২. কোন কিছু নিচের দিকে নেমে যাওয়ার মত অনুভূতি হতে পারে,

    ৩. পিঠে ব্যথা ,

    ৪. হাঁটতে কষ্ট হওয়া,

    ৫. প্রস্রাব বা পায়খানা করতে সমস্যা হওয়া।

    ৬. যৌন মিলনে ব্যথা পাওয়া।

    কখন বুঝবেন আপনার ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরী?

    উপরের যে কোন সমস্যা অনুভব করে থাকলে এবং বিশেষ করে যদি জরায়ু মুখ, আংশিক বা সম্পূর্ণ জরায়ু বেরিয়ে আসলে।

    চিকিৎসা

    মাংস পেশি কতটা দুর্বল সেটার উপর নির্ভর করে অপারেশন করা লাগবে কি না। অনেক ক্ষেত্রে এক্সারসাইজ করলে পেলভিক মাংসগুলো আবার শক্তিশালী হয়। ইস্ট্রোজেন ক্রিম বা সাপোজিটরি অনেক ক্ষেত্রে মাংস পেশির হৃত শক্তি ফিরে আনতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখতে হবে এটি মেনপজের পরেই ব্যবহার করা যায় এবং সবাইকে দেয়াও যৌক্তিক নয়।

    বাচ্চা নিতে ইচ্ছুক কিনা তার উপর নির্ভর করে জরায়ুর আশেপাশের কাঠামো ঠিক করা এমনকি জরায়ু সম্পূর্ণরূপে ফেলে দিতে হতে পারে। সাধারণত পেট কেটে জরায়ু ফেলা হয়। কিন্তু যোনি দিয়ে জরায়ু বেরিয়ে আসলে যোনিপথেও অপারেশন করা হয়। পাশাপাশি যোনি দেয়াল, মুত্রথলি, মূত্রনালির ঝুলে পড়াও অপারেশনের সময় ঠিক করে দেয়া হয়।

    আমাদের দেশের বয়স্ক মহিলারা এই সমস্যায় বেশি পড়েন। তাদের মধ্যে অনেকেই অবহেলা ও অযত্নের আশঙ্কায় বলতে চায় না কাউকে এমনকি নিজের পরিবার থেকেও অনেক সময় লুকিয়ে রাখে। আপনার কাছের কেউ যদি এই রোগে ভুগে থাকেন তবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। অনেক বয়স হলেও বড় কোন শারীরিক সমস্যা না থাকলে অপারেশন করা যায়। বয়স হয়ে গিয়েছে ভেবে অবহেলা করা উচিত নয়। শেষ বয়সে এসে প্রস্রাব, পায়খানার কষ্ট কেউই চায় না। সচেতনতাই স্বস্তি।

    ছবি – সংগৃহীতঃ পিন্টারেস্ট.কম

    201 I like it
    32 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort